Tuesday, October 15, 2019

কারিগর সমাজ বিবাহ এবং জ্ঞান-দক্ষতার প্রবাহ

সোমনাথ আপনি অবশ্যই বুঝবেন যন্ত্রের যুগ যেহেতু কারিগরদের সমাজ/গোষ্ঠী/গুরু/পরিবার বা স্বঅর্জিত ব্যক্তি/সমাজ/গোষ্ঠী/পারিবারিক জ্ঞান দক্ষতা ধ্বংস করে বিকাশ হয়েছে, তাই তাদের কাছে কারিগরদের বিদ্যুতবিহীন পরিবেশে বিশ্বের যে কোনও যায়গায় উতপাদন করার অনায়াসলব্ধ দক্ষতা আর জ্ঞান খুবই ঈর্ষার বস্তু। কোনও বাস্তবিক সমস্যা কারিগরেরা যে সরল সাধারণ উপায়ে সমাধান করে - এবং তার ফলে উদ্ভূত জ্ঞান আর প্রযুক্তি বাধাহীন থাকে জন ব্যবহারের জন্যে, সেই সমাধানটাই বিদ্যুৎনির্ভর প্রযুক্তিবিদেরা সমাধান করলে তা অবশ্যই জটিল হবে এবং এই কাজে ব্যবহৃত শক্তি কেন্দ্র-নিয়ন্ত্রিত বলে সেটা গণব্যবহার যোগ্য হওয়া সমস্যার। মাছের পিন সহ ম্যাটাডোর বাহিত হয়ে কলকাতায় নদিয়া থেকে আসছিলাম। তাঁরা পা দিয়ে জল ঝাঁকাচ্ছিলেন, এবং যে পিনগুলি মরে ভেসে উঠছিল সেগুলি সংগ্রহ করছিলেন গামছা পাকিয়ে জলে ঘুর্ণি তৈরি করে। কোনও বিদ্যুতনির্ভর প্রযুক্তিবিদদের যদি এই মরা মাছ সংগ্রহ করার যন্ত্র বিকাশের কাজ দেওয়া হত, সেটা কী ধরণের যন্ত্র হত জানি না।
কারিগরদের এক সমাজে ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন ধরণের উতপাদন হত এবং তাদের ব্যবহৃত যন্ত্রেরও কিছুটা সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকত। ফলে যে সমাজে সমাজ/গোষ্ঠী/গুরু/পরিবার ইত্যাদি পরম্পরা বাহিত জ্ঞান, দক্ষতা, বাজারের গুরুত্ব থাকত, তারা ভিন্ন ভিন্ন এলাকার একই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ হত জ্ঞান দক্ষতা এবং প্রযুক্তির পার্থক্য ইত্যাদি আদান-প্রদানের জন্যে - এমন কি এটা হত একই ভৌগোলিক সমাজের নানান পরিবারের মধ্যেও - তাতে আদানপ্রদান চলত মহিলাদের হাত ধরেই। এবং মহিলারা যেহেতু এই প্রযুক্তির দখলদার ছিলেন, তাই মহিলাদের হাত ধরেই এই প্রযুক্তির বিস্তার বিকাশ আর উদ্বর্তন ঘটত।
বড় পুঁজি আর বড় সামরিক পুঁজি আর জ্ঞানজাত পশ্চিম আর তার ঔপনিবেশিক অনুগামীদের কাছে পুঁজির তৈরি সামাজিক সত্য যতটা কদরের, ততটাই পরম্পরার বর্জনীয়। সেই জন্যে অপরম্পরার মানুষদের আধুনিকতা নামক একটা হাতিয়ার ধরিয়ে দিয়েছেন পুঁজির তাত্ত্বিকেরা, যা দিয়ে পরম্পরার দক্ষতাকে নানানভাবে দুচ্ছাই করার সুযোগ মিলে যায়। অথচ পামেলা স্মিথের বডি অব দ্য আর্টিজান পুঁজি নির্ভর সামরিক প্রযুক্তিকে কারিগরেরা কীভাবে প্রভাবিত করেছিল তার বিশদ বর্ণনা আছে।

No comments: