বিগত ৩ নভেম্বর ২০১৩, শেষ হল গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স
ইউনিয়নের সক্রিয় সহযোগিতায় বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘ আর কলাবতী
মুদ্রার উদ্যোগে একটি চার দিনের সফল গড়িয়াহাট কারু প্রদর্শনী আয়োজিত হল।
উত্তর প্রদেশের গ্রেটার নয়ডার প্রদর্শনীতে যাওয়ার সময়েই
হকার্স নেতারা কলাবতী মুদ্রা আর সঙ্ঘের সঙ্গে যোগাযোগ করেন একটি মেলা করার জন্য।
১৬ তারিখ ফিরে এসেই গড়িয়াহাটে তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সঙ্ঘ কলাবতী মুদ্রার
নেতৃবৃন্দ। ঠিক হয় যে শ্যামা পূজা উপলক্ষ্যে চার দিনের একটি মেলা আয়জিত হবে। সঙ্ঘের
অন্ততঃ ২৫ জন সদস্য এই মেলায় অংশ গ্রহণ করবেন। এছাড়াও উদ্যোক্তারা চাইছিলেন
বাংলাদেশের শিল্পীরা এই মেলায় অংশগ্রহণ করুন। আর অন্ততঃ দুটি অভিকর শিল্পীর দল
পুজার বিসর্জন উপলক্ষ্যে কলকাতায় আসুন। প্রাথমিকভাবে ঠিক হল, মেঘমল্লার বাড়ির
পাশের রাস্তার ভেতরেরদিকে এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়ন কলকাতার বাইরের শিল্পীদের
থাকার স্থান আর দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করবে। মেলা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ থেকে ২ তারিখ,
পুজার রাত পর্যন্ত। সঙ্ঘ বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঠিক হয় তারা তিনজন শিল্পী
পাঠাবেন।
কিন্তু তার পরেই কলকাতা তথা বাংলা জুড়ে যে ব্যাপক বৃষ্টি
হয় এবং কলকাতার পথঘাট ভেসে যায় তাতে সঙ্ঘ এবং উদ্যোক্তারা উদবিগ্ন হয়ে পড়েন। আশংকা
দেখাদেয় আদৌ এই মেলা সংগঠন করা সম্ভব হবে কি না। ইতিমধ্যে জেলার সদস্যরা জানতে
পারেন। সম্পাদকেদের সঙ্গে কথা বলে ২৫ জনের একটি দল তৈরিও করা হয়। দিনাজপুরের গমীরা
এবং দার্জিলিংএর নক্সালবাড়ির ধীমালদেরও জানানো হয়।
তিনদিন দীর্ঘ বৃষ্টির পর যৌথ ভাবে ঠিক করা হয় যে, মেলা উঠিয়ে নিয়ে আসা হবে গড়িয়াহাটার মোড়ে উড়ালপুলের তলায় প্রসাধনবাড়ি আর গাড়ি রাখার যায়গার মাঝখানের চাতালে। এই সংবাদ আনন্দবাজার পত্রিকাও তাদের কলকাতার কড়চায় ছাপে।
তো মেলার তারিখ বদল হল। ঠিক হল ৩১ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত এই মেলা চলবে। তবে এই সিদ্ধান্ত যে ঠিক হয় নি তা মেলা চলাকালীন বোঝা গিয়েছে। প্রথম দু দিন বেশ ভাল বিক্রি হল। কিন্তু পুজার দিন আর তার পর দিন অনেকের বউনি হল না। তবুও বলব গড়িয়াহাটে মেলা সফল। প্রথম দুদিন যা বিক্রি হয়েছে তা যদি ধরে রাখা যেত, তাহলে যে যা শিল্পকর্ম নিয়ে এসেছিলেন সে সব তিন দিনেই শেষ হয়ে যেত। তবুও মেলায় আসা দু একজন বাদে সকলেই বিক্রিতে সন্তুষ্ট। সক্কলে মানুষের অংশগ্রহনে বেশ খুশি হয়েই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সক্রিয় সহযোগিতার কথা যত বলা যাবে তত কম মনে হবে। এই সংগঠনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়া বাংলার সবথেকে বড় বাজারে এই মেলা করা সম্ভব ছিল না। ইউনিয়ন যে খাবার শিল্পীদের খাইয়েছে তা যে কোনও মেলা আয়োজকের আদর্শ হওয়া উচিত। প্রত্যেকদিন তারা হয় মাছ বা মাংস বা ডিম খাইয়েছেন। একদিনত তারা ইলিশ খাইয়েছেন। সংগঠনের নেতা দেবরাজ ঘোষের কথা এপ্রসঙ্গে না বললে অপরাধ হবে। দেবরাজ এক রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নেরও বড় নেতা। তবুও তিনি ব্যক্তিগতভাবে মেলার সময়ে প্রত্যেকটি দিন, দিনের বহু সময় এসে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের দুঃখ কষ্ট নিরসন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। মেলায় তিনি ছিলেন অভিভাবক হিসেবে।
মেলা চলাকালীন এসেছিলেন পশ্চিম বাংলা সরকারের ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরের এক আমলা। তিনি অবাক হয়ে বলেছেন, সরকার যে কাজ করতে পারেনি, সঙ্ঘ সেই কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে। অর্থনীতিবিদ ডঃ প্রদীপ হরও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেছেন এই বিষয়ে তিনি সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। এছাড়াও এসেছিলেন বিভিন্ন সওদাগরী/বড় ব্যবসার মাঝারি স্তরেরকর্মীরা। তারা সঙ্ঘকে তাদের সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন।
সঙ্ঘের আশা এইটি এবারে মাসে এক বার ৪ থেকে ৬ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে সঙ্ঘ ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলবে।
No comments:
Post a Comment