সাম্প্রতিক এক
গবেষণায় দেখা গিয়েছে উৎপাদন এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল ১৭৪৭ থেকে ১৮০০
সালের মধ্যে এবং এই সময়ের মধ্যে তাঁতিদের রোজগার খুব বেশি বাড়ে নি। খাদ্যশস্যের
দাম বিপুলভাবে বাড়ায় আমরা আন্দাজ করতে পারি, তাঁত থেকে তাঁতিদের রোজগার দিয়ে তার
পরিবারের নিত্যদিনের খরচ চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে(Hatneeda
Hossain, Company Weavers, p. 61)। ঢাকা কুঠির সমীক্ষায় তাঁতিদের
জীবনের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা উঠে এসেছে প্রভূতভাবে। ঢাকার একটি বিখ্যাত আড়ং
তিতবাড়ির এক তাঁতি মারা যাওয়ার পরে দেখা গেল সে তার স্ত্রী আর তার সন্তানদের জন্যে
রেখে গিয়েছে কিছু কাপড়, তার সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি, ঢাকাওয়ালা একটা পাত্র, কাঁসার
জলপানপাত্র, চরকা কাটনি আর চাকর(শিক্ষানবিশ?)এর কাছে ধার এবং মোট বাজারে ধার
১৩টাকা ৫০ পয়সা(Beng. Mss. 1.0. 4046, f 100 উল্লেখ্য এই
নথিতে বলা হয়েছে সেখানে একটা রীতি ছিল প্রয়োজনে নফরকে বিক্রি করা যেত)। মসলিন
উৎপাদনের আরেকটি আড়ং সোনারগাঁওএর এক তাঁতি তার স্ত্রী এবং তিন বছরের কন্যাকে রেখে যখন
মারা গেল তারা বাজারে ধার ছিল ১৪১ টাকা ৫০ পয়সা(Beng. Mss.
1.0. 4045, ff. 146-47)। অষ্টাদশ শতকের শুরুতে তাঁতিদের এ ধরণের দারিদ্র্যর কোন
উদাহরণ পাওয়া যায় না। মোটামুটিভাবে বলা যায় কারিগর আর তাঁতিরা অষ্টাদশ শতকের
শুরুতে, অষ্টাদশ শপ্তকের শেষ সময়ের তুলনায় অনেক ঈর্ষনীয় অবস্থায় ছিলেন।
৬.৪ প্রযুক্তির
সমস্যা
ঐতিহাসিকেরা তাঁত
শিল্পে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের অভাবের কারণের সমস্যার নানান ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা
করেছেন। কেউ একে লো-লেবেল ইকুইলিব্রিয়াম ট্র্যাপ বলেছেন যেখানে প্রভূত পরিমানে
উদ্বৃত্ত শ্রম থাকে যার ফলে যন্ত্রপিছু উৎপাদন ক্ষমতা না বাড়িয়েই উৎপাদন বৃদ্ধি
করা যায় এবং একই সঙ্গে শিল্পে অতিরিক্ত বিশেষী করণের ফলে সেখানে very great incentiyes to introduce any change in technology। কেউ কেউ বলেছেন কোটি কোটি কারিগর খুব কম শ্রমের মূল্যে কাজ
করতে ইচ্ছুক ছিল যার জন্যে শ্রম-প্রতিস্থাপনকারী যন্ত্রের উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা
দেখা যায় নি। আরও কিছু মানুষ বলেছেন এর জন্যে জাতিবাদের রূঢ়তা এবং এককেন্দ্রিক
একনায়কোচিত প্রশাসনিক অত্যাচার দায়ি যারা কোনও ধরণের উদ্ভাবনের পুরষ্কার দিতে
ইচ্ছুক নয়(K.N. Chaudhuri, Trading World, pp.
274-275; T. Raychaudhuri, Cambridge Economic
History of India, vol. I, 'p, 295; Irfan Habib, 'The Technology and Economy of Mughal lndia',JESHR, vol. XVII, no.
1, pp. 32-33)। মনেহয় এই সব তত্ত্ব মূলত তৈরি করা হয়েছে এই ধারণা থেকে
যে মূলত সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে ইওরোপিয় বস্ত্রের চাহিদা আগের সময়ের
তুলনায় আকাশ ছোঁয় এবং তার ফলে গবেষকেরা ধারনা করতে থাকেন বাংলার বস্ত্র উতপাদনে প্রাযুক্তিক
পরিবর্তন জরুরি ছিল। তারা মনে করলেন, উৎপাদন ব্যবস্থার মৌলিক কোন পরিবর্তন না করেই
বাংলা এই উৎপাদনের পরিমান বৃদ্ধির সমস্যা সামলালো, অর্থনীতিকে আরও সবল করে - অতিরিক্ত
কর্মসংস্থান তৈরি করে, আংশিক সময়ের কর্মীদের আরও দক্ষ করে তুলে পূর্ণ সময়ের কর্মী
বানিয়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাঁতগুলির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে(S. Chaudhuri, Trade and Commercial Organization, p. 234; Om Prakash, Dutch 9ompany, p. 10 I)।
সত্যই আমাদের
অস্বীকার করার উপায় নেই যে সপ্তদশ শতকের শেষ পাদে এবং অষ্টাদশ শতকের প্রথম পর্বে
বাংলায় ইওরোপিয় বস্ত্র চাহিদা বেশ ভাল রকমের বৃদ্ধি পায়। এই প্রেক্ষিতে আমাদের
প্রশ্ন হল দেশের মোট উৎপাদনের ত্তুলনায় বা এশিয় বণিকদের দেশিয় এবং এশিয় ব্যবসা
হেতু বাংলায় কাপড় কেনার তুলনায় কতপরিমান বেশি ছিল। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখিয়েছি
এবং এখানেও সেই যুক্তি বিস্তার করে বলছি বাংলার ব্যবসার পরিমণ্ডলে ইওরোপিয় ব্যবসা
খুব বড় ভূমিকা পালন করে নি এমন কি মধ্য অষ্টাদশ শতকেও(S. Chaudhury, 'Asian Merchants and Companies in Bengal's Export Trade, circa. mid-18th Century', revised version of the paper presented at the International Seminar oh 'Merchants, Companies and Trade', M.S.H., Paris, 30 May - 1 June 1990. Also see chapters 7 and 8)।
No comments:
Post a Comment