কোম্পানির খয়রাতি
যতদিন না মুলার,
মেকলের দেখা পেয়ে
তাঁর মনগড়া আর্যতত্ব শোনাচ্ছেন ততদিন নব্য ভারতের ইতিহাস তৈরি হয় নি, ততদিন
অসম্ভব উচ্চপারিশ্রমিকের বেদ অনুবাদেও কোম্পানি রাজি হয় নি, আর তার অর্থ কষ্টও কাটে
নি।
মুলারের সঙ্গে কোম্পানির যোগাযোগ হল এমন এক সময়ে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঝাঁপ
বন্ধ হবে। সে তথ্য কোম্পানি ১৮৩৩ থেকেই জানে(পরে কোনও দিন সুযোগ হলে এই বিষয়টা নিয়েও
আলোচনা করা যাবে)। মুলার জানেননা। কোম্পানি উঠে যাওয়ার ১৩ বছর আগে মুলারকে কপালে চোখ তোলা পরিমানে অর্থ
বরাদ্দ করছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কয়েক বছর পর সিন্দুকের ডালা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে জেনেও, বিশ্বের প্রথম
কর্পোরেট কোম্পানি মূলারকে চোখ কপালে তোলা অর্থ খয়রাতি করতে দিচ্ছে কেন সেই
প্রশ্নে কোনওদিন কারোর বিন্দুমাত্র খটকাও লাগে নি। কর্পোরেট জগতে
অনুবাদের জন্য অর্থ দান খয়রাতিরই সামিল। কে অনুবাদ করছেন খগ্বেদ! যিনি একদিনের জন্যও ভারতে পদার্পণ করেন নি, আর
সংস্কৃতজ্ঞাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কে অর্থ দিচ্ছে, যে কোম্পানি ভারতকে লুঠকরে ছিবড়ে করে ফেলেছে।
মুলারকে কোম্পানি তার ঋগ্বেদ অনুবাদে(আদতে
আর্যতত্ব) কত সাহায্য করেছিল! ১৮৫৩তে প্রতি পাতা অনুবাদের জন্য মুলার পেয়েছেন
৪ ডলার। “English Education, 1798-1902” পুস্তকে John William Adamson বলছেন যে বছর তিনি
ঋগ্বেদ অনুবাদ শুরু করবেন, ইংলন্ডে পুরুষ শিক্ষকের গড় আয় ছিল বছরে ৯০ ডলার আর
মহিলাদের ৬০ ডলার।
২০০০ সালে বছরে একজন ব্রিটিশ শিক্ষক আয় করতেন ১৮,০০০ ডলার থেকে ৩৬ হাজার ডলারেরমত। সে সময়ে থেকে অর্থাত ২০০গুণ বেশি। ম্যাক্স
মুলার পেয়েছিলেন প্রতি পাতার জন্য ৪ ডলার করে। এডামসনের হিসেব ধরলে ২০১১র হিসেবে ৮০০ ডলার
প্রতি পাতা। ৮০ টাকা ডলারে প্রতি
পাতা ৬৪০০০ টাকা। ২০০ পাতার জন্য ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা!!! আজ যত
বড়ই কর্পোরেটিয় অনুবাদ প্রকল্প হোক না কেন, বিশ্বের সব থেকে মহানতম পুস্তক
অনুবাদ করতে, এই পরিমান অর্থ বরাদ্দ হয় কী! ১৮৩৩এর সনদের পর বাণিজ্য অধিকারটুকুও
ব্রিটিশ সরকার কেড়ে নিয়েছে। সে সময় কোম্পানি স্বপ্নেরও অতীত পরিমান অর্থ
বরাদ্দে মুলারের স্বপ্ন কেন সাকার করছে, সে প্রশ্ন আজও ওঠে নি।
No comments:
Post a Comment