WATAG(Weavers Artisan & Traditional Performing Artists Guild)-কে অপার বাঙালি ভালবাসায় ঘিরে থাকা বন্ধুরা, আপনাদের নেতৃত্বে চলা WATAG বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে কিছু কথা ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছে হল। বড় লেখা হবে - ধৈর্য হলে দয়া করে পড়বেন, না হলে ছেড়ে চলে যাবেন, গ্রামীনেরা সর্বংসহা, খারাপ লাগে না -
দেশি বিদেশি কর্পোরেট বা দাতা সঙ্গঠনের দান অথবা সরকারি কোন প্রকল্প ছাড়াই একসময় বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘ চলছে, WATAGও সেই পথ বেয়েই নিজের কাজে এগিয়ে চলেছে।
আজও ভাল কাপড় তাঁতে সৃজন হয় - মিলে নয়, ভাল জং ছাড়া লোহার পণ্য বানাতে ডোকরা কামারেরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী - লোহার কারখানায় হয় না, আজও ভাল মাটির কাজ হয় হাতে চালানো চাক আর কুমোরের হাতের জাদুতে, আজও বিষমুক্ত ফসল চাষ করেন চাষী - নিজের হাতে জন্মদেন কোটি কোটি প্রাণের, জীবনদায়ী ওষুধ আজও গাছগাছালি থেকেই গ্রামের পরম্পরার ভিষগেরা তৈরি করেন, ভাল বাঁশের কাজ হাতে হয়, পাটের কাজ তাঁতপোই তাঁতেতে হয় - পাট কলে নয় - বাংলায় রয়েছে প্রচুর শ্রমশক্তি, দক্ষতা, প্রচুর জ্ঞান আর তার নিজস্ব প্রযুক্তি যা দিয়ে বাংলার গ্রাম আজও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, উতপাদক-বিতরকেদের নিয়ে - তাই গ্রামের অর্থনীতির জোরে ২০০৮ সালের বিধ্বংসী কাণ্ডের রেশ ভারতে পড়ে না - সেই বিষ-ঋণের, বড় পুঁজির মদতদার ব্যাঙ্কের দখলি অর্থনীতির জালে জড়িয়ে নেই গ্রাম ভারত - আর তার বিকেন্দ্রিত উতপাদন বিতরণ ব্যবস্থা যেন রক্তবীজের বংশধর, যারা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে জানেন নিদারুণ রাষ্ট্রবিপ্লবেও, বিধ্বংসী শাসকের রুদ্রমূর্তির নিচেও
- একমাত্র দক্ষতা, ঐতিহ্য আর নিজস্ব প্রযুক্তি নির্ভর গ্রামীন উতপাদক, বিক্রেতা আর বিতরকেরা বড় পুঁজির ধ্বংসকর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি
- বাংলার গ্রামের ছোট পারম্পরিক উতপাদকেরা দক্ষতা, জ্ঞান, ঐতিহ্য এবং নিজেদের প্রযুক্তিতে বলবান হয়ে বড় পুঁজির বিরুদ্ধে নিজেদের কৃতকর্মের স্বাক্ষর পেশ করেছেন কয়েক হাজার বছর ধরে - আজও
- এশিয়া, ইওরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকায় তার কয়েক হাজার বছর ধরে নিজেদের উতপাদিত দ্রব্য বিক্রি করেছে ব্রিটিশপূর্ব আমলে বিশিল্পায়ন না হওয়া পর্যন্ত
- ইওরোপকে সে সুতি ভাল রেশম কাপড় পরতে শিখিয়েছে, প্রাকৃতিক নীল রঙ উপহার দিয়েছে, জং ছাড়া লোহা দিয়েছে, প্রায় একচেটিয়া ব্যবসা করেছে ৭০টা শিল্প দ্রব্য আর ১০০টা কৃষি দ্রব্য
- গ্রামীনদের বহু কলা লুপ্ত করে দিয়েছে ক্ষমতাবানেরা, কিন্তু রয়েও গিয়েছে বহু জ্ঞান, দক্ষতা আর প্রযুক্তি - সেটাই বাংলার সম্পদ
- গত পাঁচ বছরে বাংলা নতুন পথ দেখিয়েছে, আগামী কয়েক দশক সে সেই পথের চলা আরো দৃঢ করবে,
- আজ বাংলার ছোট পরম্পরার উতপাদকেরা এক ছাতার তলায় আসতে প্রস্তুত, নিজেদের এবং আপামর গ্রামীনদের জীবন, জীবিকা, আর্থব্যবস্থা এবং উতপাদন-বিতরণএর পরিবেশ রক্ষায় তৎপর -
-সেই তৎপরতার একটা কাজ হয়েছে Weavers Artisan & Traditional Performing Artists Guild(WATAG) বাংলায় পঞ্জীকৃত হওয়ায়
- এর কাজ অনেকটা চেম্বার অব কমার্সদের মত - কিন্তু খোলা মেলা পুঁজির মত দখলদারির নয় - পেটেন্ট বা কপিরাইটে বিশ্বাস করে না বাংলার গ্রামীনদের মত এই সংগঠন, তাই নিজেদের উতপাদন-বিতরণ-দক্ষতা-প্রযুক্তির স্বার্থরক্ষ - তার জন্য নানান উদ্যম নেওয়া
- নতুন তৈরি হওয়া গিল্ড গ্রামীন-উতপাদক-বিক্রেতা-পরিবেশকদের সম্পূর্ণ স্বার্থরক্ষায় নানান পদক্ষেপের উদ্যোগ কিছু ফল ফলতে শুরু করেছে
- আপনাদের নিরন্তর শুভেচ্ছায় WATAG আজ মাত্র ফেব্রুয়ারিতে পঞ্জীকৃত হয়েই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে শুধু নয়, সে গুটি গুটি পায়ে হাঁটতেও পারছে। WATAG এমন একটি সঙ্গঠন, যেটি পঞ্জীকৃত হয়েছে দিনাজপুরের একটি গাঁয়ের ঠিকানায়
- বাংলা শুধু শহর-ভিত্তিক তাত্ত্বিক-ব্যবহারিক স্থল ছিল না তার ভিত্তি ছিল গ্রাম, সেটি এই পদক্ষেপে পরিষ্কার করে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে
- কলকাতা আর জেলা শহরের বাইরের তাকাতে হবে, যদি বাংলার গ্রামকে স্বনির্ভর করার স্বপ্ন দতে হয়, বাংলা-বাঙালিকে শহরের নির্ভরতরা ত্যাগ করাতে হয়
- WATAG এই মাত্র কয়েকমাসে আপনাদের তাত্ত্বিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি কাজ করেছে-
ক) দক্ষিণ দিনাজপুরের যে গ্রামে সে পঞ্জীকৃত, সেই গ্রামে অন্তত ১০০০ শিল্পী এবং ৪০টা দল নিয়ে একদিনের একটি উত্তররঙ্গ ১৪২৩, দিনাজপুরের গ্রাম সংস্কৃতি উতসব আয়োজন করেছে - সেদিন তিন বেলা সেখানে খেয়েছে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ - এটা হয়েছে কোন বেসরকারি সংগঠন বা সরকারি সাহায্য ছাড়াই - শুধু মাত্র সদস্যদের চাঁদায় বিপুল এই কর্মযজ্ঞ চলেছে - এ কাজে সাঁওতাল সমাজের অংশগ্রহন ভোলার নয়
খ। সদ্য তৈরি হওয়া রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়য়ে একটি গ্রাম-প্রযুক্তি-সংস্কৃতি প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা পেশ করেছে, অবিলম্বে এই ডিপ্লোমা পড়াশোনার কাজটি চালু হতে চলেছে - WATAGও হয়ত বাংলা জোড়া এই ধরণের একটি গ্রামকেন্দ্রিক প্রায়োগিক কিন্তু তত্ত্ব নির্ভর শিক্ষা প্রকল্প রূপায়িত করতে যাচ্ছে -
গ। সোফি-সুজয়এর উদ্যমে শ্রাবন-ভাদ্রমাসে(আগস্ট) ১৫ দিনের একটি কর্মশালা আয়োজিত হতে চলেছে কলকাতায়, যেখানে বাংলা-ইওরোপের প্রযুক্তি এবং কারিগরিকলার যৌথ সঙ্গম হবে, এবং সেই উৎপাদনগুলি ইওরোপে বাজারজাত হবে তার নিজের জোরে। একটি বাংলা-জার্মানি যৌথ কর্মীদল গঠিত হবে, যারা নিয়মিত বাজার নিরীক্ষণ করে নতুন প্রযুক্তি-শিল্পকলা মিশ্রণে নব সৃষ্টির কাজ করবে
ঘ। WATAGএর সদস্যদের জমিতে দেশি প্রথায়(দয়া করে একে বিকল্প বলবেন না, এটাই আমাদের নিজস্ব পদ্ধতি, আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে এখন রাসায়নিক চাষ করি, সবাই একে জৈব বলেন আমরা বলি দেশি পদ্ধতি) ফসল উৎপাদনের কাজ শুরু গত বছর হয়েছে এবছর ব্যাপকভাবে হবে; হচ্ছে ১। ঢেঁকি ছাঁটা চাল, ২। আমাদের নিজস্ব কিছু সুগন্ধী চাল - পাওয়া যাচ্ছে তুলাইপাঞ্জী, ৩। ওষুধরূপে ব্যবহৃত কিছু চাল, যেমন কালোভাত - যা কর্কট রোগ প্রতরোধক ইত্যাদি
ঙ। মুর্শিদাবাদে তুলো থেকে চরকায় সুতো কেটে ফুলিয়ায় প্রাকৃতিক রঙে ছুপিয়ে ঠকঠকি তাঁতে নীলাম্বরী, পীতাম্বরী, রক্তাম্বরী এবং শ্বেতাম্বরী শাড়ি এবং কাপড় তৈরি - ব্যবসায়িকভাবে এটি আমাদের তাঁতিরা করতে পারছেন, এছাড়া সুতো চাষ করছি WATAG, বাঁকুড়ার ছাতনায়, বর্ধমানের আউসগ্রামে আর নদীয়ার চাতরায়
- চাষ হচ্ছে সাদার সঙ্গে দেশি রঙ্গীন তুলোও - আগ্রহ বিটিতুলোকে দেশ ছাড়া করা - এটা চাষ করে আমরাই পারি - সেই স্পর্ধা বাংলার চাষী, চরকা কাটনি রঞ্জক আর তাঁতিরা দেখাতে পেরেছেন নিজেদের মত করে বড় পুঁজির রাঙ্গানো চোখের সামনে দাঁড়িয়ে
চ। WATAGএর নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র গত এক বছর ধরে চালু রয়েছে হাওড়ার অবনী রিভার সাইড শপিং মলে, নাম 'পরম মাটি' - এখানে বাংলার নিজস্ব নানান গ্রামীন উতপাদন যাকে শহুরে শিক্ষিতরা লোকশিল্প বা হস্তশিল্প বলেন, আমরা বলি গ্রাম উতপাদন, বিক্রি হচ্ছে নিয়মিত
ছ। কিছু প্রকাশনা করা হচ্ছে সদস্য সংগঠন কলাবতী মুদ্রার তরফে - সেটা কত সরাসরি বাজারে আসে তার ব্যবস্থা করা - বই প্রকাশিত হয়েছে
* দীপঙ্কর দে'র এক নীলকণ্ঠ ভারতের ইতিবৃত্ত,
* সুনীল চন্দের দিনাজপুর কথার দ্বিতীয় মঞ্জুষ,
* সোমা মুখোপাধ্যায়ের সরযূবালার ভেষজ কথা এবং মণিমালা চিত্রকরের জীবনী(সম্পূর্ণ রঙ্গিন)।
- এছাড়াও আগে প্রকাশিত হয়েছে
* তাঁতি মনোহর বসাকের নীলাম্বরীর নকশা,
* বিশ্বেন্দু নন্দ ও পার্থ পঞ্চাধ্যায়ী সম্পাদিত হকার কথা,
* আর রয়েছে সঙ্গঠনের মুখপত্র মাসিক পরম - ২৩টি সংখ্যা। - মাঝে বন্ধ ছিল আশাকরা যায় আগামী আশ্বিনে নতুনভাবে ২৪ তম থেকে প্রকাশ পাবে - প্রথা অনুযায়ী আগামী এক বছরের বিশদ প্রচ্ছদ ভাবনা - ১। বস্ত্র বয়ন - দ্বিতীয় মঞ্জুষ, ২। বাংলার মুদ্রা ৩। জেলা পরিক্রমা দুই দিনাজপুর, ৪। ছোটলোক, ৫। বাংলায় ডাচেরা, ৬। বাংলার মাটির পুতুল, ৭। প্রাকৃতিক রঙ, ৮। জেলা পরিক্রমা কোচবিহার, ৯। বাংলার অঙ্ক, ১০। পঞ্জিকা, ১১। মোগল আমলে বাংলা, ১২। বাংলায় পর্তুগিজ।
* আরও একটা দ্বিভাষিক পত্রিকা 'গ্রাম শিল্প পরম্পরা' প্রকাশিত হবে একই সঙ্গে - তার ১২ সংখ্যার বিষয় ১। দশাবতার তাস, ২। বাংলার চিত্রকলা, ৩। শোলার কলকা, ৪। শাঁখ শিল্প, ৫। বিষ্ণুপুরের দুর্গা পট, ৬। দিনাজপুরের কাঠ ও কাগজের গমীরা মুখোশ, ৭। বানাম, ৮। আলপনা, ৯। দেওয়ালি পিতুল, ১০। পট ১১। পোড়ামাটির তুলসিমঞ্চ, ১২। বাঁশের বুনন, ১৩। পাথরের কাজ(মেদিনীপুর, শুশুনিয়া), ১৪। সাঁওতাল আর শবরদের ঘাসের কাজ, ১৫। তাজিয়া, ১৬। পুরুলিয়ার ছো মুখোশ, ১৭। বাজি, ১৮। বীজের গয়না, ১৯। পিতল-কাঁসা, ২০। রন্ধন শিল্প - প্রথম জেলা ?, ২১। নতুন গ্রামের কাঠের কাজ, ২২। বাংলার মেলা, ২৩। মোষের শিঙের কাজ, ২৪। বাংলার মাটির ঘোড়া।
জ। কাজ চলছে http://watag.in/ নামে একটা ছাতা ওয়েবসাইট তৈরি করা, যেখানে বাংলার গ্রাম উতকর্ষ বিক্রি হবে, জানাযাবে বাংলার পরম্পরা, গ্রামীন উদ্যম, তত্ত্ব, তার সদস্যদের নাম, কাজ জ্ঞান, প্রযুক্তি ইত্যাদি
http://watag.in/র কাজ চলছে। এর অধীনে তৈরি হচ্ছে http://lokfolk.in/ একটা ইকমার্স সাইট, হচ্ছে NILAMBARI.IN শাড়ি বিক্রির জন্য আর হচ্ছে বই পত্রিকা বিক্রির জন্য একটা সাইট
ঝ। WATAGএর বন্ধু তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে - Friends of WATAG. বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন গ্রাম উতপাদকেদের দিকে
\/ এখনও অনেক কিছু বেঁচে আছে বাংলার গ্রামে সেগুলি যেন 'লুপ্ত' বা 'লুপ্তপ্রায়' না হয়ে যায় তা আগ্রহসহকারে দেখা,
\/ নিজেদের উদ্যোগে যারা এই ধরণের কাজ করেন তাদের WATAGএর খবর দেওয়া এবং এক ছাতার তলায় আনা
\/ http://watag.in/এর খবর ছড়য়ে দিন, বাংলার গ্রাম পরম্পরার উদ্যম উঠে আসুক বিশ্বের দরবারে আড়াইশ বছর আগে যেমন ছিল
@ এই কাজে প্রবল সম্পদ প্রয়োজন - WATAGএর সদস্যরা মনে করে না সম্পদ মানে শুধুই অর্থ - অর্থ অবশই প্রয়োজনীয় কিন্তু একমাত্র নয়, সে বিশ্বাস র্থ ছাড়াও করে সম্পদ মানে জ্ঞান, যোগাযোগ, নেতৃত্ব আর সঠিক পথ চিন্তা
@ আপনারা অবশ্যই WATAGএর বন্ধু হোন
@ যারা বাংলার শহরের বাইরে থাকেন, বা গ্রামে পরম্পরার উদ্যমের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে, তারা তাদের অঞ্চলের পরম্পরার উতপাদিত দ্রব্য(শিল্প চাষ আর সেবা) http://watag.in/এ দেওয়ার জন্য WATAGএর সঙ্গে যোগাযোগ করুণ
@ WATAG সাংগঠনিক এবং ব্যক্তি সদস্য করাবার উদ্যোগী হোন, প্রথম বছর ২০০ টাকা পরের বছর ১০০ টাকা - সাংগঠনিক সদস্য হতে গেলে ন্যুনতম ২০ জনকে নিয়ে সদস্য হতে হবে
@ জেলায় জেলায় সাঙ্গঠনিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে পরম মাটির মত আপণ খুলতে উদ্যোগী হোন - WATAG আপনার পাশে দাঁড়াবে
---- আরো সব কিছু ভাবনা ভাবতে শেখান - আপনাদের সংগঠন হিসেবে WATAGএ আপনাদের নেতৃত্ব চাই।