Friday, April 19, 2019

পলাশীপূর্ব বাংলা নিয়ে ইওরোপমন্য মিথগুলিকে মিথ্যে প্রমান করেছেন সুশীল চৌধুরী

সুশীল চৌধুরী ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন লিখে বাংলাকে নতুন চোখে দেখতে উতসাহ দেন, নানান মিথ ভাঙতে সাহায্য করেন। যে মিথগুলি ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত হয়েছে নানান প্রখ্যাত ইওরোপমন্য ঐতিহাসিকের উদ্যমে - বিশেষ করে কেম্ব্রিজ ঐতিহাসিকদের ভাবনায়, সেগুলি মিথ্যে প্রমান করেছেন।
পলাশীপূর্ব বাংলার মূলত ব্যবসা এবং কিছুটা রাজনীতি নিয়ে যত সব কুৎসিত প্রচার আছে তার অধিকাংশ একে একে বুক চিতিয়ে তথ্য দিয়ে মিথ্যে প্রমান করেছেন অসামান্য ঐতিহাসিক সুশীল চৌধুরী ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন বইটিতে। কীর্তি নারায়ণ চৌধুরী, ওম প্রকাশ, পিটার মার্শাল, ক্রিস্টোফার বেইলি, রজত কান্ত রায়, ব্রিজেন গুপ্ত, তপন রায়চৌধুরীদের মত কেম্ব্রিজ ঘরাণার তাবড় ঐতিহাসিক বা যদুনাথ সরকার বাংলার নবাবি আমল নিয়ে যে সব নিন্দাসূচক মিথ তৈরি করে দিয়েছেন, যে মিথগুলি বাংলা ইতিহাস চর্চার ভিত হিসেবে আজও গণ্য হয়, যেমন
১/ নবাবেরা/সিরাজ তোলাবাজ ছিলেন, এবং নবাবি অত্যাচারে ইওরোপিয়রা বাংলা ব্যবসা এত কমিয়ে দেয় যে বাংলার অর্থনীতি ধ্বংস হয়,
২/ তারা ইওরোপ থেকে এত দামি ধাতু আনত যে বাংলার শ্রেষ্ঠ মহাজন জগতশেঠের কুঠি এবং জমিদার দরবারি অভিজাত ইওরোপিয়দের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং তারা দামি ধাতু আনা কমিয়ে দিলে জগতশেঠেরা অসহায় হয়ে যায় এবং নবাবের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে
৩/ যার ফল পলাশী - এতে ইংরেজদের কোন লেনাদেনা নেই, মুল কারবারী মহাজন/ব্যাঙ্কার, অভিজাত আর জমিদার, ইংরেজরা চতুর্থ পক্ষ ছিল, এটা তাদের কাছে চৌদ্দ আনা বিশেষ,
৪/ দাদনি ব্যবস্থা থেকে গোমস্তা ব্যবস্থায় চলে যাওয়া বাংলার অর্থনীতি পতনের লক্ষ্মণ - পলাশীর আগে ইওরোপিয়রা দামি ধাতু আনা কমিয়ে দেওয়ায়, বর্গীর হামলায় বাংলার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায়, বাজারে পণ্যের দাম লাগামছাড়া হয়ে যাওয়ায় বাংলার ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ধংস হয় এবং দাদনি বণিকেরা দুর্দশাগ্রস্ত হওয়ায় ইওরোপিয়রা এই সামগ্রিক ধ্বংসের প্রভাব থেকে বাঁচতে দাদনি ব্যবস্থা থেকে গোমস্তা ব্যবস্থায় চলে যায়। এই মিথকে অসামান্য বাস্তব ঘটনা এবং তথ্য দিয়ে মিথ্যে প্রমান করেন তিনি।
৫/ পলাশীর জন্যে ব্রিটিশেরা সরাসরি দায়ি নয় এই মিথও মিথ্যে প্রমান করেছেন সুশীলবাবু।
৬/ ব্রিটশরা মিথ্যে ফরমান দস্তক দেখিয়ে ব্যবসা করত
৭/ পলাশীর আগের দু দুশক ইংরেজদের বেআইনি ব্যক্তিগত ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকায় তাদের ব্যবসা কমতে থাকে আর ফরাসীদের বাড়তে থাকে,
৮/ বাংলার বণিকেরা সামগ্রিক ইওরোপিয়দের থেকে দেড়গুণ বেই ব্যবসা করত
৯/ ফলে বাংলার ব্যবসা জগতে পলাশীপূর্ব সময়ে ইওরোপিয়রা কোনও প্রভাব ফেলতে পারে নি
১০/ বাংলার কারিগরেরা বণিকেরা দাদন ফিরিয়ে দিতে পারত
এ ছাড়াও আরও নানান ইওরোপমন্য মিথকে মিথ্যেতে রূপান্তরিত করেছেন প্রণম্য সুশীল চৌধুরী মশাই।
এই বইএর অনুবাদের সঙ্গে জুড়ে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি কারণ বাংলা নিয়ে দৃষ্টিহীন আমি বাংলা মা'কে নতুন রূপে দেখতে পাচ্ছি।
জয় বাংলা!

Wednesday, April 17, 2019

সন্তোষ ভট্টাচার্য - এক অনন্য ব্যক্তিত্ব

র সমর্থন জানিয়ে এসেছি। এই দুজনেরই স্নেহ আমায় আজও অশ্রুসিক্ত করে।
এই বইএর লেখকের অপার স্নেহ পেয়েছি আমার পিতার কৃতিতে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উল্টোদিকে তাঁর বাড়ি ছিল। আজকের মত এতটা কড়াকড়ি তখন ছিল না। তাঁর বাড়িতে বুড়োদের সঙ্গে গিয়ে নানান বৈঠকী আড্ডায় এমন সব গপ্প শুনেছি - ছাত্রা বস্থায় মিছিলে বোমা চার্জ করা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের বেয়াদপি, সে সব আজ উহ্যই থাক।
কয়েকটা বিষয়ে পথ পার্থক্য ছিল, উনি মুক্ত অর্থনীতির মানুষ- গরবাচভ পন্থী, আমরা ফিদেলের। নানান প্রতিবাদ স্মিত হেসে সহ্য করতেন। আমি অর্থনীতির ছাত্র ছিলাম তিনি বাবার থেকে শুনেছিলেন, বেশ ালোচনা হত। আরও ঘনিষ্ঠতা হল সপ্তাহে। মাঝে মধ্যে লেখা আনতে যেতাম। ২৭৪১৪১এ ফোন করে জলদগম্ভীর স্বরে অনিল ভঞ্জকে বলতেন ইন্দুর ছেলেকে পাঠিয়ে দিও। শেষের দিকে মুখে বলতেন, আমি লিখতাম।
ওনার বাড়ির সব থেকে অসহ্য ছিল অগুণতি বেড়াল। সহ্য করতে পারতাম না। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা খাওয়ার পাত্র।তাঁর আর আরতি জেঠিমার অপার স্নেহ পেত। সিঁটিয়ে থাকতাম। তখন ওভারল্যান্ড পত্রিকা বন্ধ হয়েছে, বাবার মাধ্যমে খবর পাঠালেন আমি তাঁর গাড়িরাখার ঘরটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারি, যদি চাই। তাঁর উদারতা আমায় পেড়েফেলেছিল।
এই বইটার সব কিছুতে আমি সেদিনও একমত ছিলেম না, আজও নই। কিন্তু তাঁর লেখার প্রসাদগুণ আজও টানে। আমি গর্বিত যে সে সময় গর্বাচভপন্থী সপ্তাহ, তাঁর বা সতীন চক্রবর্তীর লেখার সংগে আমাদের দুএকটা প্রতিবাদী লেখাও ছেপেছে।
তিনি সন্তোষ ভট্টাচার্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, যিনি অসভ্য বামেদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষেত্র দখলের চক্রান্ত একাহাতে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি আমার অন্যতম শিক্ষাগুরু, যিনি আমায় শিখিয়ে গিয়েছেন যতদূর সম্ভব নিজের নীতির প্রতি সমঝোতা না করে, অন্যায় অসভ্য প্রতিবাদেও মাথা যতটা পারা যায় না নামিয়ে জীবন কিভাবে কাটানো যায়।
বইটা পড়তে পড়তে আরো অনেক স্মৃতি ভিড় করে আসছে। আজ এই অবদি থাক।
গুরুকে প্রণাম অযোগ্য শিষ্যের।