Friday, July 26, 2019

কৃষক সমাপ্তি মণ্ডল

বাংলার দামাল মায়ের দামাল মেয়ে - কৃষক সমাপ্তি মন্ডল।
আপনাদের হাতে বাংলা সুরক্ষিত।
আপনাকে প্রণাম!
চিত্রে থাকতে পারে: ১ জন, হাস্যরত, আকাশ, আউটডোর এবং প্রকৃতি

ফড়েদের দায় বনাম কর্পোরেট কৃষি

আমাদের এক সত্যিকারের বুদ্ধিমান ভাই, সমাপ্তি মন্ডলের ইস্যুতে মনে করছে কৃষকদের উদ্বৃত্ত তৈরি হচ্ছে না, এবং সেই উদ্বৃত্ত খেয়ে যাচ্ছে একা ফড়ে। সে চিন্তা করে, অন্য পথে চলার চেষ্টা করে, কিন্তু কোথাও আমাদের মনে হয়েছিল তার যুক্তিতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। 
আমরা বললাম -
//সমস্যা হল তুই সেই ইওরোপিয় বাম্পপন্থীদের মত গোড়া কেটে আগায় জল দিয়ে গাছ বাঁচানোর কায়দায় গোটা বিষয় দেখার চেষ্টা করছিস। ফড়েরা এই কাঠামোর অংশ তো আজকে নয়, হাজার হাজার বছর ধরে। সমস্যা তখন হয় নি আজ কেন হচ্ছে? কেন কর্পোরেট ফড়েরা, সমাজে থাকা ব্যক্তি ফড়েদের দিকে আঙুল তুলতে আমাদের প্ররোচিত করছে? কর্পোরেট ফড়েরা তো এই অর্থনীতির অংশই নয়।
ফড়েদের দায়ের কথা উঠে আসার আগে কেন প্রশ্ন ওঠে না ৬এর দশকে কলকাতাজুড়ে সাম্রাজ্যবাদ ভারত থেকে হাত ওঠাও, গো ব্যাক ম্যাকনামারা ধ্বনি উঠছে সে সময় সুকান্ত ভট্টাচার্যের এক আত্মীয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জমায়েতে ১ টাকা মানি অর্ডার করে যখন বলেছিলেন তোমাদের দেশের যাদের দাস করে এনেছিলে তাদের উপকারের জন্যে বাংলার ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এটা পাঠালাম, ঠিক তার দেড় দশক আগে থেকেই সাম্রাজ্যবাদের মূল দালাল ফোর্ড ফাউন্ডেশন ইত্যাদির উদ্যমে সারা ভারতে রূপায়িত হচ্ছিল কর্পোরেট কৃষির নীল নকশা - পিছিয়েপড়া চাষ ব্যবস্থা দেগে দিয়ে কৃষকের হাত থেকে চাষের উপাদানগুলি বীজ, সার, জল, নাঙ্গল ইত্যাদি কেড়ে নিয়ে চাষের দাম বৃদ্ধি করা হল যাতে কৃষকেরা জমি ছেড়ে দিয়ে শহরমুখী হয় আর কর্পোরেটরা ভারতীয় কৃষিতে জাঁকিয়ে বসতে পারে। রিচারিয়াকে সরিয়ে আনা হল কর্পোরেটদের দাস স্বামীনাথনকে - হাসির হল আজকের ইওরোপিয় নিদানে যে জৈব কৃষির মডেল তৈরি করা হয়েছে তার মাথা সে। সেদিনের কলকাতা অচল করে রাখা নেতারা দেখতে পান নি, কৃষিতে সিঁদ কাটছে না, দরজা হাট করে ঢুকছে কর্পোরেটরা সরকারি উদ্যমে এবং আহ্বানে। সরকারে আসার পর বামফ্রন্ট সরকারের কৃষি দপ্তর ত্রিশ বছর ধরে ছিল কর্পোরেট কৃষির মাঠ দপ্তর।
আগে নিজেদের ভেতরে ঢুকে দেখ।
আজও দেবল দেব অনুপম পাল পথিকৃতদের কাজে পরিষ্কার দেশিয় কৃষিই একমাত্র পথ কর্পোরেট কৃষি নয়। সবার আগে প্রশ্ন কর কর্পোরেট কৃষিকে। ছোটছোট আঞ্চলিক ফড়েরা যে লাভ করে সে লাভ আমার নিজের অর্থনীতিতে থাকে, কর্পোরেটরা যে লাভ করে সেটা চলে যায় সাগরপারে।
ঠিকঠাক প্রশ্ন কর - কৃষকের এই অবস্থার জন্যে কে দায়ি - কেন তার নিজস্ব দেশিয় কৃষিকে পিছনে ফেলে, ভারতীয় কৃষির রাশ কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিল? এই প্রশ্ন কেন উঠবে না? আমার তোর বাড়ির ছেলে/মেয়েরাই ফড়ে। তাদের বলি না দিয়ে প্রশ্নের আঙুল ওঠা মূল শয়তান কর্পোরেটদের দিকে দেখবি আপসেই সমাধান বেরিয়ে এসেছে।//

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - একটি অকর্পোরেটিয় রান্নাঘর - স্বচ্ছলতা/সমৃদ্ধির সংজ্ঞা কিভাবে নিরূপিত হয়

এটি বর্ষাভেজা রাঢ়-গ্রাম-বাংলার রান্নাঘর। গ্রামে সাধারণত একটু স্বচ্ছল পরিবারের সঙ্গে থাকেন প্রায় অনাত্মীয়, হয়ত দূরসম্পর্কের আত্মীয়, হয়ত অনাত্মীয়ও। রান্নাঘর আলাদা। এইরকম এক আশ্রিত পরিবারের রান্না ঘর।
আপনার আমার রান্না ঘরে বিপুল ব্যয়ে কেনা গ্যাসচুলা, ইলেক্ট্রিক চুলা, ভাতের ইলেক্ট্রিক হাঁড়ি, একটা মাইক্রোওয়েভ বাক্স আর একটু সৌখিন হলে বার্বিকিউ সেট সাজানো। এই সাধারণ অমধ্যবিত্তিয় গাঁইয়া অস্বচ্ছল পরিবারের রান্না ঘরে চারচারটে ছড়ানো উনোন। তিনটেয় রান্না হচ্ছে। অন্যটাতে হচ্ছে না কিন্তু কার্যকরী - হয়ত নিরামিশ চুলা। তিনটে স্থায়ী, একটা অস্থায়ী। এটিকে কোন যায়গায় তুলে নিয়ে যাওয়া যায় - যেটিকে গনগনে আগুণ জ্বলছে। পোড়া থেকে ভাজা থেকে সেঁকা থেকে ঝলসানো যা ইচ্ছে সব হবে - উৎসবে আচারে রান্নাঘরে বারোমাসে তেরো-হাজার রান্না। ভদ্রবিত্তের রান্নাঘরে আলুপোড়া, পাতুরি, পিঠে কোনও কিছুই ঠিকমত হয় না। তাও আমরা শহুরে পশ্চিমি স্বাচ্ছন্দ্যের ঘেরাটোপে এবং তার সমাজতত্ত্বের তৈরি করে দেওয়া তাত্ত্বিক কাঠামোয় এঁটে নিজেদের কোয়ালিটি অব লাইফের বড়াই করি আর নিজেদের জীবনধারণকে তুলনাকরি ইওরোপ-আমেরিকার অপচয়ী লুঠের সম্পদজাত জীবনধারার সঙ্গে।
এই রান্নাঘরে জ্বালানিটা মূলত গৃহস্থের নিজ নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ যে কি খাবে, কিভাবে খাবে, সেটা নিজে নির্ণয় করে, সরকার নয়। অর্থাৎ আপনার খাদ্যাভ্যাস নির্ণয় করছে রাষ্ট্র আর কর্পোরেট এই তথাকথিত প্রগতিশীল রন্নাঘর তৈরি করে দেওয়ার মাধ্যমে।
রান্নাঘরটার দৈর্ঘ আর প্রস্থও আন্দাজ করুন উন্নতিশীল ইওরোপপন্থী ভদ্রবিত্ত ভাইবোনেরা আপনার নিজেরটির সঙ্গে।
একে সমৃদ্ধি বলবেন না? না বলুন।
কিন্তু কাকে সমৃদ্ধি বলবেন, সে তত্ত্ব খুঁজতে এর পরেও গবেষণার দরকার আছে?

বাঙালির ইওরোপিয়তা

বাঙ্গালি বহুকাল - গোটা ঔপনিবেশিক সময়টা এবং তারপরেও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আর কর্পোরেট পুঁজির আবহাওয়ায় বেঁচে এসেছে - ইন্দিরাগান্ধী তাকে চাকরি দিতে ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রীয়করণ করে। ফলে তার কাছে রাষ্ট্র আর কর্পোরেট ব্যবস্থা দিনের আলোর মত সত্য। নিজের জীবনটা তাই যখন অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করে, তখনও তার সেটি স্বাভাবিক মনে হয়। অন্যের তত্ত্ব তার তার তত্ত্ব। তাই অন্যকে না গালি দিয়ে ভদ্রবিত্তের উচিত সংস্কৃতায়ণ(বা ইওরোপায়ন) কিভাবে তার জীবনে প্রভাব ফেলেছে সেটির পাঁতি নেওয়া।

Saturday, July 13, 2019

ভারতীয়/বাংলাদেশ/পাকিস্তানী জ্ঞানচর্চা প্রযুক্তির ইতিহাস, অউচ্চবর্ণ, কালোঅক্ষরের প্রতি অসামান্য দৌর্বল্য এবং উপনিবেশিকতা

সবার আগে স্বীকার করতে হবে প্রাচীন ভারত/বাংলাদেশ/পাকিস্তানচর্চা একরৈখিক কালো অক্ষরের জ্ঞানচর্চা নয়।এই ভারত/বাংলাদেশ/পাকিস্তানভূমির অনৌপনিবেশিক যতকিছু সব/অধিকাংশ অউচ্চবর্ণের তৈরি, তারপরে অন্যান্য কথা। তথাকথিত ভারতীয় প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে বিপুল কাজ হয়েছে। অসাধারণ সব মানুষজন নানান কাজ করেছেন। কিন্তু যে সব কাজ "প্রামাণ্য" হিসেবে সাধারণভাবে অনুসৃত হয়, সেগুলি অধিকাংশই ইওরোপজাত। আর ভারতবর্ষের যত জ্ঞান, প্রযুক্তির ইতিহাস ইত্যাদি লিখিত হয়েছে তার সবকটি/অধিকাংশই প্রায়, কিছু কাজ বাদ দিলে, লিখিত সংস্কৃত/ইংরেজি সূত্র অনুসারে - অর্থাৎ সাহেবেরা কি বলে গিয়েছিলেন, সেটি আপ্তবাক্য হিসেবে ধরে নিই। ভারত/বাংলাদেশ/পাকিস্তান বলে যে ভূখণ্ড জানি তার প্রযুক্তি জ্ঞানচর্চা কি ছিল সেটার সঠিক মূল্যায়ণ হয় না।
কেন?
যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, সেখানে যাই আগে। আগে স্বীকার করুন এ ভারত/বাঙ্গালাদেশ/পাকিস্তান আদতে অভদ্রলোকেদের জ্ঞানচর্চায় তৈরি হয়েছে - এই যে কৃষক পরনির্ভর ভদ্রবিত্তকে দুমুঠো খেতে দিচ্ছে এই কাঠামোটা অতীতকালেরই তৈরি। বিপুল বিশাল অভদ্রজনের অলিখিত মৌখিক জ্ঞানচর্চা নিয়ে Joya Mitra অনুপম মিশ্র, Shahinur Rashid Tutul Chandan Shafiqul Kabir ইত্যাদি কাজ করেছেন। কিন্তু বাকিরা কালো অক্ষরের প্রতি অসীম শ্রদ্ধায় নত। আমরা ইংরেজি শিক্ষিত প্রগতিশীলেরা - অর্থাৎ যারা আদতে ইওরোপমন্য তারা গ্রাম ভারত/বাংলাদেশ/পাকিস্তানের দিকে চোখ ফেরাই না আমরা ইওরোপের অপার করুণায় প্রচন্ড বিশ্বাসী।গ্রামে যে জ্ঞানচর্চা হত, কাঠামো তৈরি হত এটার ধারণাটাই নেই, তার কারণ উপনিবেশ।
এই ইওরোপমন্যরা দুধরণের তাঁবুতে বিভক্ত
১। সঙ্ঘপরিবারের মতানুযায়ী কিছু মানুষ - যারা মনে করে কোম্পানি ভারতকে উদ্ধার করেছে ম্লেচ্ছদের কবল থেকে, ফলে তারা শুদ্রদের শিল্পকাঠামো ধ্বংস করা ভিক্টোরিয়ার পুজো করে এবং ইওরোপের মতই জাতিরাষ্ট্রবাদী
২। আর বামেদের মত শিক্ষিত যারা, মনে করে ব্রিটিশ ভারতকে উদ্ধার করেছে সামন্ততন্ত্র থেকে। লুঠফুট ধারণা যারা করে তারা ফুটুক।ইওরোপের পায়ে ডাইভ দাও।
আদতে ভারত বললে আদতে গ্রাম বোঝায়, গ্রামীণ প্রযুক্তি বোঝায়। প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তি বোঝাতে প্রগতিবাদীরা সুল্বাসূত্র আর সঙ্ঘীরা গণেশের মাথা জোরা বোঝান। কিন্তু ভারত/পাকিস্তান/বাংলাদেশ চর্চায় যে গ্রামের দিকে তাকাতে হয়, সেটাই আদতে সত্যকারের ভারতবর্ষ/পাকিস্তান/বাংলাদেশ, সেই ধারণাটা বহুকাল ডান বাম কারোর মাথায় আসে নি - সেচ ব্যবস্থা থেকে নানান ধরণের চাষ থেকে নৌকো চালানো থেকে তাঁতের প্রযুক্তি থেকে ধাতু প্রযুক্তি থেকে হাজারো প্রযুক্তি দর্শন।
অতীত ভারত চর্চায় অশিক্ষিত ডানেদের বাদই দিচ্ছি, কিন্তু সার্বিকভাবে কেরলের কিছু জ্ঞানচর্চা আন্দোলন বাদ দিলে, বামেরা দেশজ জ্ঞানচর্চা, লুঠ ইত্যাদি নিয়ে এই সেদিন অবদি খুব একটা মনোযোগ দেন, দিলেও খুব বেশি গুরুত্ব দেন নি। যদিও মৃদুলা মুখার্জী বা ইপিডবলিউ এ বিষয়ে কিছুটা দ্বার খুলেছে। কিন্তু বামেরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আজও ইওরোপমন্য তার প্রধান উদাহরণ ইরফান হাবিবের মুঘল আমলে কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে কাজ এবং তার নেওয়া সিদ্ধান্ত এবং হরবংশ মুখিয়ার সামন্ততন্ত্র বিতর্ক বইতে বামেদের অবস্থান।
অর্থনীতির ইতিহাসে একমাত্র ব্যতিক্রম অমিয় কুমার বাগচী মশাই - যিনি এই সময়টাকে বলছেন ভারতের ওপর চাপিয়ে দেওয়া স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসির সময়।
ফলে প্রাচীন ভারতচর্চা যে একরৈখিক কালো অক্ষরেই লিখিত নেই, এটা মাথায় রাখুন।