Saturday, June 30, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - ড্যানিয়েল ডিফো আর রবিনসন ক্রুশো - উভয়েই দাস ব্যবসায়ী এবং ব্যবসার মদতদার

প্যাট্রিক ব্রান্টলিঙ্গার ভদ্রভিত্ত ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালির সাদা প্রভুদের কাছা ধরে টান মেরেছেন। এই তিনিটে বই ভিক্টোরিয়, রেনেসাঁসিয় ভদ্রলোকামির বিরুদ্ধে তীব্র কুঠার। বাঙ্গালির স্বপ্নের নায়ক কালো নরখাদকদের উদ্ধার করা ড্যানিয়েল ডিফো আর তাঁর নায়ক রবিনসন ক্রুসো উভয়েই দাস ব্যবসায়ী ছিলেন। ডানিয়েল বিনিয়োগ করেছিলেন দাস ব্যবসায়। রবিনসন ব্রাজিলে বাগিচা কিনে দাস খাটিয়ে লাভ করত। তবে এটাই প্রথম জাতিবাদী উপন্যাস নয়। প্যাট্রিক লিখছেন 'বৈজ্ঞানিক জাতিবাদ' নামক কাঁঠালের আমসত্ত্ব ১৮৮০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আমেরিকায় দাস ব্যবসার সময় উদ্ভুত হয় নি, হয়েছিল নবজাগরণের সময়েই।
তো এখানে টেমিং ক্যানিবল থেকে কয়েকটি স্তবক।
Against Colorblind History
In Defoe’s Robinson Crusoe (1719), the white hero saves black Friday from the cannibals. Friday himself is a cannibal, but after his rescue he grows tame and slavishly loyal to his savior. Several features of Friday’s story are frequently repeated in later colonial discourse: cannibalism is the absolute nadir of human behavior; it is practiced by black or brown savages but not by white Christians, who are horrifi ed by it; cannibals need to be saved from themselves (they are self-exterminating, with or without warring against Europeans); if they can’t all be tamed, it is still worth taming just one, both because a soul will be saved and because a tame cannibal will be a thoroughly grateful servant to his white master.
Before his shipwreck and island exile, Crusoe engages in the slave trade—a trade that Defoe invested in—and is himself enslaved by a “Moor” after Barbary Coast pirates capture him. Robinson escapes and later purchases a “plantation” in Brazil, which he farms with the help of an African slave. Defoe’s novel is not the fi rst text to express white racist assumptions about dark others in relation to cannibalism, slavery, and colonialism. Such assumptions are both expressed and contested in Aphra Behn’s Oroonoko; or, The Royal Slave (1688). Her black hero is not a cannibal but is instead a version of the antithetical stereotype, “the noble savage,” a phrase John Dryden coined in 1672. In any event, the popularity of Defoe’s novel suggests that by the early 1700s, racist assumptions, including the belief that savages are likely to be cannibals, were widespread among the British public. As numerous scholars have shown, moreover, scientific racism did not emerge with the “new imperialism” in the 1880s or even with controversies over slavery in the West Indies and the American South. It emerged instead during the Enlightenment (Hannaford; Poliakov; Valls).

Friday, June 29, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা১ - চন্দ্র ভান ব্রাহ্মণের তারিখিরাজাইদিল্লি - নতুন ধারণার ইতিহাস

আপনাদের অনেকেরই মনে থাকতে পারে মাস ছয়েক আগে মুঘল রাজত্বের অমুসলমান মুন্সি চন্দ্র ভান ব্রাহ্মণকে নিয়ে লিখেছিলাম, তাঁর জীবন, মুঘল আমলের শুলইকুল নীতি কিভাবে কাজ করত ইত্যাদি। তাঁর একটি বইএর কথা রাজীব কিনরা রাইটিং সেলফ, রাইটিং এম্পায়ার বইতে আলোচনা করছেন, নাম তারিখিরাজাইদিল্লি। বইটির একটামাত্র পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে। ২০টি পাতার। খুব বেশি আলোচিতও নয়। কেন নয় তার কিছু কারণ পরের দিকে আলোচনা করা যাবে।
বইতে দিল্লিতে পৌরাণিক আমল থেকে শাহজাহান পর্যন্ত যে সব রাজা রাজত্ব করেছেন, তাঁদের বর্ণনা তিনি লিখেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, বইটি লিখার গবেষণার কাজে বেশ কিছু হিন্দি এবং অন্যান্য বই(আজ কুতুবই হিন্দি ওয়া দিগর জারাইদিতারিখ) এর সাহায্য নিয়েছেন। বইটির নামের সঙ্গে তারিখ শব্দটা জুড়ে থাকলেও এটি কোনভাবেই দিল্লির ইতিহাস নয়, বরং কিছু ছোট্ট মন্তব্য সহ রাজাদের রাজত্বের সন তারিখ। চন্দ্র ভান প্রত্যেক রাজার রাজত্বকালের সময়ের দিনশুদ্ধ বর্ণনা দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলছেন মহাভারতে উল্লিখিত যুধিষ্ঠির হিন্দুস্থানের অন্যতম প্রধান রাজা ছিলেন(আজ বুজুর্গতারিন রাজাহায়ি হিন্দুসথা বুদ), রোজ তিনি দশ হাজার মানুষকে খাইয়ে নিজে খেতে বসতেন, তিনি তেত্রিশ বছর আট মাস এবং পঁচিশ দিন রাজত্ব করেন(হুকুমত কার্দা)। যুধিষ্ঠিরের ভাই অর্জুন, পাণ্ডবদের উত্তরপুরুষ(ওয়াকাতই পাণ্ডবন), জন্মেঞ্জয় চুরাশি বছর, পাঁচ মাস এবং সতের দিন রাজত্ব করেন। তাঁর সময়ে এক লক্ষ শ্লোকওয়ালা মহাভারত রচনা করেন বেদ ব্যাস। ত্রয়োদশ শতকের তোমর বংশের রাজা সুরজ পাল তার সময়ের সব থেকে নামী রাজা ছিলেন এবং তিনি আঠান্ন বছর দুই মাস এবং পাঁচ দিন রাজত্ব(ফারমানডিহি কারদা) করেন এবং তাঁর হাতিশালে ছয় হাজার হাতি ছিল, তার সময়ে তিনি রাজসূয় যজ্ঞ করেন(দার আলমগিরি যজ্ঞয়ি রোজগার বুদ)। ছাব্বিশ বছর নয় মাস এবং সাতাশ দিন রাজত্ব করা রাজা জীবন জিতের গুপ্তবিদ্যায় বিপুল জ্ঞান ছিল(দার মারিফাতি ওয়াজিব সায় মাউফুরা দস্ত)। কিন্তু জ্ঞানটি কি ধরণের সে বিষয়ে তিনি বিশদ কিছু লিখে যান নি। একাদশ শতকে গজনীর মুহম্মদের সঙ্গে বহুবার যুদ্ধ করা দিল্লির রাজা আনন্দ পালের যুদ্ধ হয়। আনন্দ পালের হারেমে সাত হাজার উপপত্নী ছিল এবং তাঁদের সক্কলের সঙ্গে তিনি টানা দুদিন ধরে উপগত হতে পারতেন।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল তিনি ইতিহাসকে দেখছেন নতুন দৃষ্টিতে। দিল্লি, মধ্যযুগে আধুনিক ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় মুসলমান যুগে প্রবেশ করল। আশ্চর্যের চন্দ্র ভান কিন্তু এই যুগ ভাগ করছেন না। তিনি পৌরাণিক কাল থেকে শুরু করে শাহজাহানের আমল পর্যন্ত লিখছেন কিন্তু কোনভাবেই বলছেন না, প্রাচীন কাল থেকে এসে এটি মুসলমানযুগে প্রবেশ করল। তাঁর দৃষ্টিতে আদতে শাসনের ধারাবাহিকতা ধরা পড়েছে – হিন্দু যুগ থেকে মুসলমান যুগে প্রবেশ নয়। যদিও তাঁর লেখায় বোঝা যাচ্ছে তার একটা আবছা ধারণা ছিল যে ভারত ধার্মিক-কৃষ্টির নতুন ধরণের সময়ে প্রবেশ করতে চলেছে। কিন্তু কোথাও তিনি নব্য রাজাদের সময়কে মুসলমান শাসন বা অন্য হিসেবে দেগে দেন নি। রাজাদের উপাধি বর্ণনায় শুধু রাজা থেকে পাদশা হয়েছে, তার বেশি নয়। তিনি বুঝেছিলেন নতুন রাজাদের ধর্ম তাদের নামেই প্রকাশিত। আজ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বা হিন্দু জাতীয়তাবাদী ইতিহাস সূত্রে আমাদের মনে গেঁথে গিয়েছে যে মুসলমান শাসন এই উপমহাদেশে সভ্যতায় বিপুল পরিবর্তন এনেছে। চন্দ্র ভান কিন্তু সেই তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি মনে করছেন না যে উপমহাদেশে কোথাও রাজত্বের প্রবাহমানতায় ছেদ পড়েছে। পুরোনো নামের বদলে নতুন নাম ব্যবহার করছেন মাত্র, এবং রাজত্ব বোঝাতেও যে শব্দ/ক্রিয়াপদ তিনি তথাকথিত হিন্দু যুগে ব্যবহার করছিলেন ঔপনিবেশিক ইতিহাস যাকে মুসলমান যুগ বলছে, সে সময় বর্ণনাতেও তিনি একই শব্দ/ক্রিয়াপদ(হুকুমত কার্দাঁ, সুলতানত কার্দাঁ, ফারমান-দিল্লি কার্দাঁ) ব্যবহার করছেন।

সূত্রঃ রাইটিং সেলফ, রাইটিং এম্পায়ার, রাজীব কিনরা

Monday, June 25, 2018

বড় পুঁজির চরিত্র

বড় পুঁজির সব কিছুই বিপুল বিশাল দেখনদারির চটকদারির হতে হয়। যে গুণমানের লোহা সারা বিশ্বের বিশ্বকর্মারা তার সমাজে কয়েকশ টাকা ব্যয় করে তুড়ি মেরে কয়েকঘন্টায় বানায়, যে মাথার আর চোখের শল্য চিকিৎসা পরম্পরার সমাজ সমাজেই বসে কয়েক মিনিটে করে দেয়, যে বসন্তের টিকা একদা বাংলার বৈদ্যরা অবহেলে দিত ৯৯% একিউরেসিতে, সে জ্ঞান দক্ষতাগুলোকে ধ্বংস করে তার থেকে খারাপ লোহা, তার থেকে খারাপ শল্য চিকিৎসা, টিকা বিপুল বিনিয়োগে তৈরি গবেষণাগারে গবেষনা করে, বিশাল বিশাল কারখানা বা হাসপাতাল বানিয়ে, পাবলিকের পকেট কেটে বড় পুঁজিকে বাজারে আনতে হয়, এবং চোখের পলক না ফেলে বলতে হয় উন্নততর প্রযুক্তির অবদান। এর আগে এগুলো নাকি ছিলই না।
এই সেদিন পর্যন্ত এলোপ্যাথিক ডাক্তারবাবুরা হাতে ওষুধের থলে হাতে বৈদ্যদের দেখানো হাজার হাজার বছরের পরম্পরা মেনে বাড়ি বাড়ি গিয়েই চিকিৎসা করতেন, হাতেগোণা কয়েকজন ছাড়া। এটাই ছিল আমাদের বিকেন্দ্রিভূত পরম্পরা। রোগ সারানোর জন্যে রোগীর পরিবেশ দ্যাখা জরুরি ছিল। আজ পুরো রোগী দ্যাখার কাঠামোটাই ডাক্তারবাবু কেন্দ্রিক হয়ে গ্যাছে। রোগীকে আজ ডাক্তারাবুর দপ্তরে যেতে হয় কুঁথিয়ে কুঁথিয়ে।
কয়েক দিন আগে Arjundeb Sensarma বেহালার এক ব্যক্তির জ্বরের পাঁচনের কথা বলছিলেন,, সেটা কিন্তু উতপাদক এবং গবেষক বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরেই বিক্রি করেছেন এবং গুরুর নির্দেশ ছিল ওষুধের দাম তার উপাদানের খরচের থেকে বেশি নেওয়া যাবে না। তাতেও তিনি বিপুল লাভ এবং সম্পত্তি করেছিলেন।

বিড়লাদের হাতে বেচারা গান্ধীর দশা

ঔপনিবেশিক কিন্তু ঠোঁটকাটা বিদ্যাসাগরের ধারণা ছিল, তিনি দেবী সরস্বতীকে খোলা বাজারে বাঁদর নাচ নাচাচ্ছেন
---
পালিতপুত্রের উত্তরঔপনিবেশিক উত্তরপুরুষের ঠাকুদ্দার প্রতি ব্যবসায়িক শ্রদ্ধার্ঘর নমুনা
চরকা কাটনির নাম করে মিলের সুতোয় তৈরি জামা-কাপড় বেচতেও দাদুকে শিখণ্ডি খাড়া করেছে
মাথা নিচু করে বসে আছেন ন্যাংটা ফকির গায়ে মিলের খদ্দর জড়িয়ে
মুম্বই বিমানবন্দরের কোথাও একটা, জাতির প্রধান পুঁজিপতির ঠাকুদ্দার কর্পোরেটিয় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের বাইরে দাঁড়িয়ে কারিগরদের এক অধম অনুগামীর নথিকরণ

সামাজিক প্রযুক্তির পরিযায়িতা - গণপ্রযুক্তির আসল বিশ্বায়ন

দেখুন কিভাবে আফ্রিকায়, (এবং এশিয়ায় এই উপমহাদেশে আজও) বিশ্বের সেরা লোহা মাত্র কয়েকঘন্টার হাতে তৈরি চুল্লিতে তৈরি হয়। এই প্রযুক্তি বিশ্বের যে কোন প্রান্তে লোহা চুর থাকলেই চালানো যায়। তার জন্যে যায়গা দখল করতে হয় না, বিপুল বিনিয়োগ করতে হয় না, প্রকৃতি ধ্বংস করতে হয় না, মানুষ উচ্ছেদ করতে হয় না, মানুষের সম্পদ লোহাচুর রাষ্ট্রের সেনার মদতে দখল করতে হয় না।
উপমহাদেশে এই ছাগল চামড়ার হাপর হাতে নয় সাধারণত পায়ে চালানো হয়, ঢেকি পাড়ার মত করে। এই পদ্ধতিতে তৈরি হয় বিশ্বের সেরা লোহা। এলুইন থেকে ধরমপাল থেকে আইআইটি থেকে টাটা থেকে জাপানিরা কে না উপমহাদেশের ধাতুবিদ্যা কারিগরি নিয়ে প্রকাশিত-অপ্রকাশিত নথিকরণ করেন নি।
ধরমপাল বলছেন উপমহাদেশে ১৯১০-১৫ সাল পর্যন্ত এই রকম ১৫-২০ হাজার পরিযায়ী চুল্লি ছিল। বহু লোহাকম সম্প্রদায় পরিযায়ী ছিলেন। হীতেশ সান্ন্যাল বলছেন এক সময়ে বীরভূমের ডেউচ্যা এলাকায় লোহা গলিয়ে গ্রামের বাইরে কর্মকার রেখে তাদের দিয়ে তৈজস বানাতেন সাঁওতাল সমাজ।
কর্পোরেটরা ক্রুসিবল ইস্পাত বানানোর প্রযুক্তি চুরি করার চেষ্টা করেছিল। উতপাদনের প্রকৃতির কারনেই পারে নি। আগে উল্লিখিত ২০ হাজার চুল্লির ৩৬-৪৪ সপ্তা কার্যকর থাকত, এগুলোর প্রত্যেকটির বাতসরিক গড় উতপাদন ক্ষমতা ছিল ২০ টন। এই চুল্লি বর্ষার আগে ভেঙ্গে দেওয়া হত, আর আবার বর্ষার পরে আবার তৈরি করে নেওয়া যেত।
আজও কর্পোরেট এই গুণমানের জংবিহীন ইস্পাত তৈরি করতে পারে নি। এখনো পুরোনো পরিবারগুলির পুজোর ঘরের কয়েকশ বছরের পুরোনো নানান জিনিস, রাস্তায় খোলা আকাশের তলায় পড়ে থাকা কয়েকশ কামান, ইওরোপের জাদুঘরগুলিতে রাখা কিছু দামাস্কাস তরোয়াল, দক্ষিণী, মধ্যভারতীয়, পূর্বভারতীয় এবং উত্তরপূর্বের গারোপাহাড় অঞ্চলের লোহাকম কারিগরদের বিপুল দক্ষতার নিদর্শন পেশ করছে।
মুল পোস্টে Blunt Kommunity লিখেছিলেন
The making of an iron tool in West Africa, from building the kiln, smelting and forging the iron into tool to celebrating the successful project.
Soumen Nathদাদা সূত্রে ভিডিওটা জানা গেল।
https://www.facebook.com/biswendu.nanda/videos/10216319223244088/

কেন বই?

For who could be taught the knowledge of experience from paper? since paper has the property to produce lazy and sleepy people, who are haughty and learn to persuade themselves and to fl y without wings …. Therefore the most fundamental thing is to hasten to experience.
—Theophrastus von Hohenheim, called Paracelsus (1493–1541)
এই উদ্ধৃতি দিচ্ছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পামেলা এইচ স্মিথ
WHY WRITE A BOOK? FROM LIVED EXPERIENCE TO THE WRITTEN WORD IN EARLY MODERN EUROPE প্রবন্ধটি লেখার মুখবন্ধ হিসেবে

প্রযুক্তির যুগ ভাগকে গুলি মারি - এই ভাগ তৈরি হয়েছে লুঠেরা প্রযুক্তিকে বৈধতা দিতে

যুগ-ভাগ উপনিবেশ, ঔপনিবেশিক লুঠেরা প্রযুক্তি, ঔপনিবেশিক লুঠ বৈধতা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। 
আজও প্রযুক্তিমদগর্বী ইওরোপ, এশিয়া আফ্রিকা, আমেরিকার কারিগরদের হাতে তৈরি এই গুণমানের লোহা তৈরি করতে বিপুল শ্রম, অর্থ, সম্পদ অপচয় এবং প্রকৃতি ধ্বংস করে। 
আজও উপমহাদেশের লোহাকম, বিশ্বকর্মা, অসুর... সমাজ এই বিপুল গুণমানের লোহা নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে তৈরি করে ফেলেন।
তাদের জ্ঞান আর দক্ষতাকে প্রণাম।

ললিতা ঘোষ

ললিতা, আমার ধারক, অহমিয়া সত্রিয়া, ওজাপালি আর দেওধনী নাচের গবেষণার স্বীকৃতি হাতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দেড় দশক আগে।
শুধু গবেষণা নয়, নাচগুলি গুরু Ramkrishna Talukdarএর অধীনে একমাত্র বাঙালি হিসেবে প্রদর্শন করেন পেশাদার হিসেবে।
ললিতার গবেষণার সময় তাঁর সঙ্গে অসমের সত্র ইত্যাদি ঘুরে, একটা নতুন জগতের দিক খুলে গিয়েছে আমার। কোন ধারণাই ছিল না শঙ্করদেব, মাধব দেব এরা কারা ছিলেন, মাজুলি বা পাঠসালার সত্র কি না জানলে ভারতের বহুধা বিভক্ত সমাজ জানার ক্ষেত্রে একটা ফাঁক থেকে যেত।

দেশিয় ইতিহাস চর্চা - দক্ষিণবঙ্গের সরস্বতী নদী

বাঙালির ইতিহাস- আদিপর্বতে নীহাররঞ্জন রায় আনুগামী হয়ে দেখা যাক সরস্বতী নদী বিষয়ে তিনি কী মত পোষণ করছেন-
ভগীরথ কর্তৃক গঙ্গা আনয়ণ গল্প রামায়ণেও আছে এবং সেখানেও গঙ্গা বলিতে রাজমহল-গঙ্গাসাগর প্রবাহকেই যেন বুঝাইতেছে। যুধিষ্ঠির গঙ্গাসাগর-সংগমে তার্থস্নান করিতে আসিয়াছিলেন, এবং সেখান হইতেই গিয়াছিলেন কলিঙ্গদেশে। রাজমহল-গঙ্গাসাগর প্রবাহই যে যথার্থ ভাগীরথী, ইহাই রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণের ইঙ্গিত, এবং এই প্রবাহের সঙ্গেই সুদূর অতীতের সূর্যবংশীয় ভগীরথ রাজার স্মৃতি বিজড়িত. উইলায়ম উইলককস সাহেব এই ভগীরথ-ভাগীরথী কাহিনীর যে পৌর্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাহা ইতিহাস সম্মত বলিয়া মনে হয় না. পদ্মা-প্রবাহ অপেক্ষা ভাগীরথী প্রবাহ যে অনেক প্রাচীণ এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই. যাহা হউক জাও ডি ব্যারোস(১৫৫০) এবং ভন ডান ব্রোকের নকশায়(১৬৬০) পুরাণোক্ত প্রাচীণ প্রবাহ পথের ইঙ্গিত বর্তমান বলিয়া মনে হয়. এই দুই নকশার তিলনামূলক আলোচনা করিলে দেখা যাইবে, সপ্তদশ শতকে জাহানাবাদের নিকট আসিয়া দুইভাগে বিভক্ত হইয়া দামোদরের একটি প্রবাহ(ক্ষমানন্দ কথিত বাঁকা দামোদর) উত্তর-পূর্ববাহিনী হইয়া নদীয়া-নিমতার দক্ষিণে গঙ্গায়, এবং আর একটি প্রবাহ দক্ষিণ বাহিনী হইয়া নারায়ণগড়ে্র নিকট রূপনারায়ণ-পত্রঘাটার সঙ্গে মিলিত হইয়া তম্বোলি বা তমলুকের পাশ দিয়া গিয়া সমুদ্রে পড়িতেছে. আর মধ্য ভূখণ্ডের ত্রিবেণী-সপ্তগ্রামের নিকট হইতে আর একটি প্রবাহ(অর্থাত সরস্বতী) ভাগীরথীর হইতে বিযুক্ত হইয়া পশ্চিম দিকে দক্ষিণবাহিনী হইয়া কলিকাতা-বেতোড়ের দক্ষিণে পুণর্বার ভাগীরথীর সঙ্গে যুক্ত হইয়াছে. এক শতাব্দী আগে, ষোড়শ শতকে জাও ডি ব্যারোসের নকশায় দেখিতেছি, সরস্বতীর একেবারে ভিন্নতর প্রবাহ. সপ্তগ্রামের(Satigam) নিকটেই সরস্বতীর উত্পত্তি, কিন্তু সপ্তগ্রাম হইতে সরস্বতী সোজা পশ্চম বাহিনী হইয়া যুক্ত হইতেছে দামোদর প্রবাহের সঙ্গে, বাঁকা দামোদরের সঙ্গমের নিকটেই. এই বাঁকা দামোদরের কথা বলিয়াছেন সপ্তদশ শতকের কবি ক্ষেমানন্দ(১৬৪০) তাঁহার মনসামঙ্গল কাব্যে. ...যাহাই হউক, দামোদর বর্ধমানের দক্ষিণে যেখানে হইতে দক্ষিণবাহী হইয়াছে, সেখানেই সরস্বতীর সঙ্গে তাহার সংযোগ- ইহাই জাও ডি ব্যারোসের নকশার ইঙ্গিত.আমার অনুমান, এই প্রবাহপথই গঙ্গা-ভাগীরথীর প্রাচীণতর প্রবাহ পথ, এবং সরস্বতীর পথ ইহার নিম্নঅংশ মাত্র. তাম্রলিপ্তি হইতেই বাণিজ্যপোতগুলি পাটলিপুত্র-বারানসী পর্যন্ত যাতায়াত করিত.
সঙ্গের ছবিটি ভ্যান ড্যান ব্রোকের মানচিত্র

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - নবজাগরিত রমেশ দত্তর উপনিবেশ চিন্তা - পলাশীর আগে চাষীরা অত্যাচারিত ছিল

আমরা কারিগরেরা মনে করি পলাশী ছিল কারিগর চাষীদের পরাধীনতার প্রথম ধাপ। নবজাগরিত ভদ্রলোকেরা যে সেটা মনে করতেন না, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ জমিদার পরিবারের উত্তরপুরুষ রমেশ দত্ত।
---
নিচের লেখাটি ব্রিটিশদের উপমহাদেশিয় সম্পদ লুঠ তত্ত্বের প্রথম দিককার অন্যতম ভগীরথ, উত্তর কলকাতার রামবাগানের রমেশ দত্তের দ্য পিজান্ট্রি অব বেঙ্গলএর তৃতীয় অধ্যায়ের শুরুর স্তবক।
নবজাগরণের অগ্রদূতেদের অন্যতম প্রতিভূ, স্পষ্ট মনে করতেন, ব্রিটিশ আমলে কৃষকেরা অগ্রগতির, উন্নতির স্বাদ পেয়েছে। ঠিক তাই জন্যে তিনি প্রশাসনিক সেবা শেষে, লন্ডনেই থেকে যান এবং জগদীশচন্দ্র যখন বাংলায় চলে আসার জন্যে পাকাপাকিভাবে মনস্থির করে উঠতে পারছেন না, রবীন্দ্রনাথ বার বার জগদীশচন্দ্রকে বাংলায় স্থায়ীভাবে বসতির জন্যে অনুরোধ করছেন, সে সময় রমেশ দত্ত মশাই লন্ডনে তাঁর বাসায় গিয়ে বাংলায় আসতে স্পষ্ট নিষেধ করেন, বলেন দেশে গেলে অকৃতজ্ঞ বাঙ্গালিরা তাকে দেখবে না, তাঁকে না খেয়ে অনাহারে মরতে হবে।
"ইংরেজ শাসনে বাংলার রায়তি প্রজারা
১৭৫৭ খ্রীঃ নাগাদ কিছু মুসলমান আর হিন্দু অভিজাত অতিষ্ঠ হয়ে দেশের অত্যাচারী সুবাদারকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য বিদেশী বণিকদের সাহায্য চাইল। সুযোগসন্ধানী ওই সব বণিকদের কাছে এই প্রস্তাব মোটেও অবহেলার ছিলনা। সঙ্গে সঙ্গে তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল। তারপরে এক শতাব্দীরও বেশি কেটে গেছে। সেই মুসলমান আর হিন্দুরা যে কোথায় হারিয়ে গেছে তার কোনো খবর নেই। তারা যদি বিস্মৃতির অতল থেকে ফিরে আসে তো তাদের দেখে গর্ব হবে যে তারা অন্তত লোক নির্বাচনে তখন কোন ভুল করেননি। অরাজকতার প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক দেশ যা ঘন ঘন বিদেশি আক্রমণের শিকার হোত, যে দেশকে দেশের শাসনকর্তারা নিজেরাই শোষণ করতো, অবাক বিস্ময় তারা দেখবে, সেই দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের বাড়বাড়ন্ত গোটা দেশজুড়ে চলছে। চাষাবাদ সম্পদ বাড়ছে দেশের। তারা আরও খুশি হয়ে দেখে দেশেরই এখানে ওখানে শহর নগর গড়ে উঠেছে। সাহিত্য আর বিজ্ঞানে এদের চেয়ে এগিয়ে চলেছে তা বুঝেও খুশি হবে তারা। আর এই ব্যাপারে এতটাই এগিয়েছে যে অতীতের জ্ঞানীগুণীরা তাদের কাছে কিছুই নয়।
সবশেষে বলি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা, এতদিন সব রাজকীয় শক্তির নিরঙ্কুশ শোষণের যে চিরাচরিত প্রথা জনজীবন থেকে ধন-সম্পত্তির নিরাপত্তা বোধটাই মুছে গিয়েছিল তারা এ দেখে অবাক হবেন যে, সাধারণ মানুষের মন থেকে সেই চিন্তা দূর হয়ে নিরাপত্তা বোধ জেগেছে, সাধারণের মনে স্বাধীনতা ফিরে এসেছে, ভারতের ইতিহাসে এমন ব্যাপার তো অভূতপূর্ব। এমন স্বাধীনতা বা আমাদের শুধু ইচ্ছামতো কাজ করার সুযোগই দেয়নি দিয়েছে বলার এবং চিন্তা করার স্বাধীনতা যা আমাদের শুধু ইচ্ছামত, এমনকি তা যদি আমাদের শাসনকর্তাদের বিরুদ্ধেও হয়। অতীত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে কিছু না কিছু শেখা যায়। তবে অতীতের শাসন অতীতের শাসকদের কিছু উদারনীতির কথা মনে রেখেও তাদের বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে যথেষ্ট বিরূপ মন্তব্য করা চলে। এ ব্যাপারে একশ বছর আগে আমরা কোন পরিবেশে বাস করতাম তার কথাও যেন সম্পূর্ণ না ভুলে যাই। সেই তুলনায় ব্রিটিশ শাসনে আমরা কি আশীর্বাদ ভোগ করছি সে কোথাও যেন মনে করি। এ ব্যাপারে তাদের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বার বার আমাদের স্মরণ করা উচিত।"
অনুবাদক - শিশিরকুমার মজুমদার

কালিমোহন(না কালীমোহন?) ঘোষের একটুকরো লেখা

Sayanসূত্রে পাওয়া কালিমোহন(না কালীমোহন?) ঘোষের একটুকরো লেখা।
"শান্তিদেবের পিতা কালীমোহন ঘোষ শান্তিদেবের জন্মের আগে থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন এবং বিশ্বভারতীর গ্রাম পুনর্নির্মাণ শাখা স্থাপনে রবীন্দ্রনাথকে সহায়কের কাজ করতেন। শান্তিদেবের মায়ের নাম ছিল মনোরমা দেবী। প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ কালীমোহনকে শিলাইদহে গ্রামোন্নয়নের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। পরে তিনি তাঁকে শান্তিনিকেতনে এনে সেখানেই গ্রাম সংস্কারের কাজে নিযুক্ত করেন। কালীমোহন তাঁর ছয় মাসের শিশুপুত্র শান্তিময়কে রবীন্দ্রনাথের কাছে নিয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম পালটে "শান্তিদেব" রাখেন।"
ব্রাহ্মিক(হেঁদুত্বের) চোরা মুসলমান বিরোধিতা ছাড়া গোটা বিষয়ে আমরা একমত।

সমাধি দেওয়া কয়েকশ বছরের বাংলার সামাজিক পরম্পরা

জোর দিয়ে বলতে হবে এটা আমার পরিচয়।
তিন বছর আগে 'হরিশপুরে' সমাধি দেওয়াকে কেন্দ্রকরে সনাতন ধর্মের নাম করে একঘরে করার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। তার উত্তরে দীপঙ্করদা একটা প্রকাশনা উল্লেখ করেছেন - যেখানে তারস্বরে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানবাদের দোহাই দেওয়া হয়েছে - তার উত্তরে আমাদের কিছু বলার ছিল -
মনে হয়, 'যুক্তি ও বিজ্ঞানবাদী মানসিকতা' দিয়ে এই পরম্পরাঘাতী প্রবণতা আটকানো যাবে না। ব্রাহ্মণ্যবাদেরও নিজস্ব যুক্তি আছে। পশ্চিমী যুক্তিবাদ দিয়ে এই ধরণের ঘটনা আটকানো যায় নি, আগামী দিনে যাবেও না। শিল্পবিপ্লবীয়, বেকনীয়, অক্ষয় দত্তীয় তথাকথিত যুক্তিবাদের রমরমা গ্রামীন জ্ঞানচর্চা, পরম্পরার ক্ষতি করেছে। আশাকরি এই প্রবন্ধে উল্লিখিত যুক্তিবাদ তার বাইরের বাংলার অসম্ভব বৈচিত্রময় পরম্পরাভিত্তিক।
শুনলাম এই ঘটনায় মতুয়ারা পরিবারটাকে সমর্থন করেছেন।যুক্তিবাদী মতুয়া মানে কি জানি না - পরম্পরাবাদী মতুয়া হলে ভাল হত - এই ঘটনায় মতুয়াদের সংগঠনের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন ছিল - খুব আলগা মন্তব্য করলাম, না জেনেই - মতুয়াদের জীবনধারণের, জীবনযাত্রার, দর্শনের ওপর শ্রদ্ধা আছে বলেই এই দাবি।
বাংলায় বৈষ্ণবদের নিজস্ব যুক্তিবাদ রয়েছে - তার সঙ্গে পশ্চিমী যুক্তিবাদের বিস্তর ফারাক - বাংলার বৈষ্ণব দর্শনের নিজস্ব যুক্তির পরম্পরার ধারাকেই অবলম্বন করতে হবে - মতুয়ারা সেই জোর তৈরি করেছেন নিজেদের জ্ঞানচর্চায়, সঙ্ঘবদ্ধতায় - তাকে কাজে লাগাতে হবে।
বাংলায় বৈষ্ণবদের বহু গোষ্ঠী রয়েছেন যারা মৃত্যুর পরে শবদেহ পোড়ান না। সমাধি দেন, কেউ কেউ বসিয়ে দেন আমি নিজে দেখেছি - আড়ংঘাটায় - যেমন করে বীরেণ শাসমলকে সমাধি দেওয়া হয়েছিল সেভাবে বাংলার বহু বৈষ্ণব মৃত্যুর পরে সমাধি প্রাপ্ত হন। কেউ কেউ নিজের ভিটেতে সমাধি নেন - তার ওপর হরি মন্দির তৈরি করান - মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, নদীয়া ইত্যাদির গ্রামে গ্রামে এই পরম্পরা জোরদার ছিল বহুকাল যাবত। বিশেষ করে জাত বৈষ্ণবেরা এই প্রবণতা মানতেন।
মুশকিল হল এই নানান পারম্পরিক কিন্তু জোরদার প্রথাগুলিকে(যেমন কণ্ঠী বদল করে বিয়ে - তথাকথিত শিক্ষিত বৈষ্ণবেরা খুব বেশি করেন না - না-ই বরাবর - তারা তথাকথিত শাস্ত্রীয় বিয়ে করেন - বা লেখাপড়া করে রাষ্ট্রকে সাক্ষী রেখে করেন - অথচ কণ্ঠী বদল সমাজে গোষ্ঠীতে মেয়েদের স্বাবলম্বন আরও জোরদার করে) কুসংস্কার বলে তথাকথিত ইংরেজি শিক্ষিত, শহুরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত বৈষ্ণবেরা আজকাল এমন নিন্দা করছেন, এই প্রথা মানছেন না, তাতে তথাকথিত ব্রাহ্মণ্যবাদীরা উতসাহিত হচ্ছে - এই পরম্পরা নষ্ট হচ্ছে - বিশেষ করে যারা বড় পুঁজির চাকরি/ব্যবসা করেন, কিছুটা ধনী হয়েছেন, তাঁদের নিজেদের সমাজের এই পরম্পরা থেকে বেরিয়ে আসার প্রাণান্তকর উতসাহ লক্ষ্য করা যায় - এ বিষয়ে জাত বৈষ্ণব অজিত দাসের জাত বৈষ্ণব কথা পড়ে দেখতে পারেন। এতে আমাদের পরম্পরার ক্ষতি হচ্ছে, ইতিহাসবোধও নষ্ট হচ্ছে।
আমরা আমাদের বাংলার নিজেদের ইতিহাস জানিনা, প্রথা জানি না - জানলেও মানতে চাই না। দেশিয় ইতিহাসচর্চা, জ্ঞানচর্চা দিয়ে পরম্পরা নষ্ট করার ক্ষতিকর প্রবণতাকে আটকাতে হবে।
দীপঙ্করদা যে লেখাটি তুলেছেন, সেখানে লেখক বিজ্ঞানবাদ আর যুক্তিবাদ যত প্রবলভাবে বললেন, তত জোর দিয়ে কোথাও বৈষ্ণব সমাজের এই পরম্পরার কথা বললেন না।
কয়েকশ বছরের এই পরম্পরা।
এটা আমার বাংলার পরম্পরা।
এটা আমার পরিচয়।
এটা জোর দিয়ে বলতে হবে।

ঠিকানাটা কেউ বউকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেবেন?

নেপালচন্দ্র সূত্রধর

সক্কালবেলাতেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছো নাচ, মুখা ও ঝুমুর শিল্পী আমাদের যৌথ সম্পাদক, ভারত সরকারের কলামণি সম্মান প্রাপ্ত নেপালচন্দ্র সূত্রধর পায়ের ধুলো দিলেন।

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - শল্য চিকিৎসা এশিয় আর আফ্রিকিয় প্রথা - ইওরোপিয়রা চুরি করেছে

সকালটা সুমধুর করে দিলেন Sharifus Salekin Shahanদাদা। তিনি আফ্রিকার মাথায় শল্য চিকিৎসার চিকিৎসকের কৃতি তুলে ধরেছেন।
আমরা বলব উপমহাদেশের কৃতি। উপমহাদেশে শল্য চিকিৎসা চিকিতসকেদের কাছে দুধভাত খাওয়ার মত স্বাভাবিক ছিল। উপমহাদেশের ইওরোপিয়দের নথিকরণ থেকে অষ্টাদশ শতকের উপমহাদেশের নানান জ্ঞানচর্চার নথিকরণ করেছেন ধরমপাল। তার বক্তব্য আমি যদি আমার দেশের জ্ঞান নিজে নথিকরণ করি, তাহলে ওরা বলবে এটা তুমি সাজিয়েগুজিয়ে বলছ। তাই আমি তাদের কাজকেই তুলে ধরছি।
ধরমপালের প্রবন্ধ নির্ভর করে ডি পি আগরওয়ালের এবং কে নটরাজনের আরও একটা প্রবন্ধ তুলে দিলাম। বছর চারেক আগে এক লন্ডনের ইওরোপিয় ডাক্তার তুলে তুলেধরেছিলেন, কিভাবে প্লাস্টিক সার্জারি তারা উপমহাদেশের চিকিতসকেদের থেকে নকল করেছেন, সে ওয়েবসাইটটা হারিয়েছি।
কিন্তু যা আছে তা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
সেই হারানো জ্ঞানের কাছে প্রণত হই।

এবারে Sharifus Salekin Shahanদাদার লেখাটি
আফ্রিকার এক ঝাড় ফুঁক কবিরাজের ( উইচ ডক্টর ) হাতে ব্রেন সার্জারি।
বর্তমানে আমেরিকা ইউরোপের সবচেয়ে জটিল ও খরুচে চিকিৎসা হল ব্রেন সার্জারি । অদুর ভবিষ্যতেও অবস্থা খুব একটা পাল্টাবে না।
অথচ দেখুন এক্কেবারে সাধারন যন্ত্রপাতি, কোন রকমের অপারেশন থিয়েটার নেই, অকিসজেন নেই এমন কি অজ্ঞান করার জন্য চেতনা নাশক নেই - আফ্রিকার প্রাচিন সেই বিদ্যা ইউরোপীয় আগ্রাসনের কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে সার্জারি চলছে তাই রোগিকে একটু বিশ্রাম দেয়া হল, সে কিছু খাওয়া দাওয়াও করল । সার্জনরাও খানিক বিশ্রাম নিয়ে খাওয়া দাওয়া সারলেন । তারপর আবার সার্জারি শুরু।
ওই গ্রাম্য কাবিরাজের হাতে ব্রেন সার্জারির সফলতার হার - মাত্র ৯৬ %।
https://www.facebook.com/299199820174323/videos/1031924580235173/?fref=mentions

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - পলাশির দুশএকষট্টি বছরে - ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে

১১৬৪র আষাঢের প্রথম হপ্তায় পলাশি ঘটেছিল ব্রিটিশ-অভিজাত-ভদ্র বাঙালির বিশ্বাসঘাতকতায়।
বাংলায় বিশ্বাসঘাতকদের অন্যতম ইঙ্গ-বঙ্গ-প্রতিনিধি খবরদার সরকার মশাইয়েরও বিদায় ঘটল দু'বছর আগে পলাশির দিনেই।
পলাশীর দুশ একষট্টি বছর পর গত দুবছর আগের ব্রিটিশ গণভোট হঠতই যেন ইওরোপের জাতিসত্ত্বার বন্ধ ঝোলার আগল খুলে দিয়েছে। চাপিয়ে দেওয়া ইওরোপিয় ইউনিয়ন যেন সোনার পাথরবাটি মনে হচ্ছে ইওরোপিয়দের।
আজ যেন ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বাংলার তথা বিশ্বের ইতিহাস-অর্থনীতি বদলাবার দিনের বদলা নেওয়ার সময় আগত।
কোমর বাঁধ বন্ধুরা। বড় কর্পোরেট পুঁজির শেষের দিন সমাসন্ন।
এবারে বাংলার পথ বেয়ে গ্রামের দক্ষতা, জ্ঞান, গাঁইয়া প্রযুক্তি, তার নিজস্ব বাজার এবং অকেন্দ্রিভূত পুঁজির নিজের মত করে লড়াই করার দিন আসছে।
চাপানো ভাবনা, তত্ত্বের দিনের পরিসমাপ্তি।
জয় বাংলা!
জয় জয় বাংলা!
জয় কারিগর বাংলা!
জয় বাংলার অদম্য গাঁইয়া জ্ঞানচর্চা।

সৌরভের সময় থেকে Soviet Visualsএ উল্লিখিত

Sunday, June 10, 2018

উপনিবেশপূর্ব বাংলার আন্তর্জাতিক পণ্য - বাংলার আফিম

কোরা রেশম ছাড়া আন্তঃএশিয় পণ্যের মধ্যে গুরুত্বতমটি ছিল আফিম। বহুকাল ধরে ব্রিটিশপূর্ব সময় পর্যন্ত আফিমের মূলত ব্যবহার ছিল ওষুধ তৈরির কাজে। কর্কট রোগ, ব্যথাবেদনা, বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যা সমাধানে আফিমের ব্যবহার ছিল অব্যর্থ। উপনিবেশ সময়ে লুঠেরা ব্রিটিশ এটিকে সাধারণভাবে নেশদ্রব্য হিসেবে বিক্রি করা শুরু করে। তখন বাংলার বদলে বেছে নেওয়া হয় মালিবের আফিমকে।
উপমহাদেশে মূলত দুটো অঞ্চলে আফিম উতপাদন হত, বাংলা-বিহার এবং মালব বা মালোয়া। ব্রিটিশ সময়ের আগে বিহারী আফিং ছিল সব থেকে বড় পণ্য। পোস্ত গাছএর ফলের নির্যাস থেকে আফিম তৈরি হত। ভাল আফিম ছিল বেগুনি রঙের আর খারাপটি লালের কাছাকাছি।
বিহার-বাংলার সব থেকে বেশি আফিম বিক্রি হত ইন্দোনিশিয় দ্বীপপুঞ্জে। রপ্তানি হত মালাবার উপকূল মার্ফত।
বিহার-বাংলায় মোটামুটি ৮৭০০ মন আফিম উতপাদন হত। মোট ৪৮টা পরগণার মধ্যে অর্ধেক ছিল উজির আসাদ খান, নবাব শায়েস্তা খান এবং তার পুত্র বুজুর্গ উম্মেদ খান।
Besides raw silk, the only Bengal item that figured in the Company's intra-Asian trade in a significant manner was opium. The two major centres of production of this drug in seventeenth-century India were Bihar and Malwa. Until about 1670, the main area to which Bihar opium was sent was the Malabar coast, but thereafter the Indonesian archipelago became the principal market for this item. Indeed, Bihar soon became the sole supplier of opium to the archipelago. Opium was obtained from the immature fruits of the opium poppy Papaver somniferum. When incised, the fruit exuded a thick juice that was later dried and cut into cakes. The quality of the dried opium was judged by its colour. The best grade was brown, whereas the worst would have turned nearly red. There was an extensive range in between. Fresh opium could easily be adulterated with sand or other impurities without risk of immediate detection.
A Dutch account pertaining to the year 1688 estimated the annual output of opium in Bihar in a normal year at 8,700 maunds. This amount was produced in forty-eight parganas, half of which were held in jagir by Wazir Asad Khan, Nawab Shaista Khan, and his son Buzurg Ummed Khan, among others. The remaining parganas, accounting for nearly 61 percent of the total output were administered by revenue officials on behalf of the king as khalisa lands.Of the total output, 62 percent was of very good quality. The remaining 38 percent was distributed among various grades in a descending order of quality as follows: Grade II, 8.04 percent; grade III, 9.19 percent; grades IV and V, 8.62 percent each, and grade VI, 3.44 percent. The account went on to suggest further that of the total output, only about 0.6 percent was consumed within Bihar. Another about 10 to 12 percent was sent to other parts of the Bengal region. The exports to Agra and Allahabad reportedly accounted for yet another 34.5 to 46 percent of the total output. The remaining 41 to 55 percent was exported to other national and international markets. The average amount procured annually by the Dutch Company around this time was approximately 1,000 maunds, accounting for about 11.5 percent of the total output. This, of course, does not take into account the illegal private trade carried on by the Company's servants in this item, which often matched the trade carried on by the Company.
ওম প্রকাশের দ্য ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং দ্য ইকনমি অব বেঙ্গল, ১৬৩০-১৭২০

কোরা রেশম - উপনিবেশপূর্ব বাংলার আন্তর্জাতিক পণ্য

এশিয়ার গুরুত্বতম তিনটে রেশম রপ্তানি এলাকা ছিল চিন, পারস্য আর বাংলা। চিন আর পারসি রেশমের দাম বাংলার কাশিমবাজারের রেশমের তুলনায় একটু বেশি, গুণমানেও একটু বেশি। 
বাংলার কোরা রেশম মূলত ডাচ জাপান বাজারের জন্যে রপ্তানি হত। বাংলার রেশম এই দুই বাজারে চিনা আর পারস্য রেশমের থেকে কিছু কম দামে বিক্রি হত। প্রধান ব্যবসায়ীরা ছিলেন আগরা, গুজরাটি এবং মধ্য এশিয় অঞ্চলের। 
কাশিমবাজারে যে রেশম তিনবার উতপাদন হত কার্তিক-অগ্রহায়ণ বা নভেম্বর, ফাল্গুণ-চৈত্র বা ফেব্রুয়ারি-মার্চ, আষাঢ-শ্রাবণ বা জুন-জুলাই মাসে। নভেম্বরের শীতে যেটা উতপাদিত হত সেটা সবার সেরা।
বছরে কত উতপাদন হত তা বলা মুশকিল কিন্তু তাভার্নিয়ে বলছেন, ১৬৬০-৭০এর দশকে ১০০ পাউন্ড বেলের(গাঁটরির) ২২০০০ বেল রেশন উতপাদন হত।
The Company procured raw silk mainly for the Japanese and the Dutch markets. The three important raw silk-exporting areas in Asia were China, Persia, and Bengal. The principal attraction of Bengal silk was that although it cost substantially less than both the Chinese and the Persian varieties, it usually sold in Holland at a price only marginally lower than that fetched by the former and about the same as that fetched by the latter. Prior to the arrival of the Europeans on the scene, there was a substantial interregional and international trade in raw silk from Bengal. The principal merchant groups involved in this trade were those from Agra, Gujarat, and Central Asia. The raw silk procured by the Europeans was produced almost exclusively in the area around Kasimbazar in Murshidabad
district in north Bengal. There were three harvests (called bands) in a year—in November, February-March, and June-July. The lot produced in the November band was by far the best in quality because the dry and cold weather helped the stuff produced by the chrysalis coagulate rapidly. The lot produced in February-March came next, followed by that of June-July.
Information regarding the average annual output of raw silk in Bengal in the seventeenth century is extremely difficult to obtain. The French traveller, Jean Baptiste Tavernier, has suggested that the annual output in the 1660s-1670s was around 22,000 bales of 100 lbs. each. But given that Tavernier's figure of 6,000-7,000 bales as the volume of annual Dutch trade in this item at this time is a gross exaggeration, one wonders what degree of credence to attach to his figure of annual output of raw silk.
ওম প্রকাশের দ্য ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এন্ড দ্য ইকমনি অব বেঙ্গল, ১৬৩০-১৭২০

কোন কোন জিনিস বাংলা থেকে ডাচেরা রপ্তানি করত
চিনি, চাল, গম, ঘি, সরষের তেল, মোম, বোরাক্স, কড়ি, গানি ব্যাগ, কোরা রেশম, সোরা, আফিম এবং অন্যান্য নানান দ্রব্য।
রেশম ছিল আন্তঃএশিয় বাণিজ্যে সব থেকে বড় উপাদান। আফিম এবং সোরা আন্তএশিয় এবং এশিয়-ইওরপিয় বাণিজ্যের গুরুত্বতম পণ্য।
Comparatively minor items (constituting the miscellaneous category) included provisions such as sugar, rice, wheat, clarified butter and mustard oil, wax, borax, sea shells (cauris), and gunny bags. Of the four principal items of export, raw silk played a crucial role first in the Company's intra-Asian trade and subsequently in the trade with Europe. Trade in opium and saltpetre was confined to the intra-Asian and the Euro-Asian branches of trade, respectively. Some varieties of textiles figured in the intra-Asian trade, but the bulk of the procurement was for the European market.
ওম প্রকাশের দ্য ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং দ্য ইকনমি অব বেঙ্গল, ১৬৩০-১৭২০

ব্রিটিশপূর্ব বাংলায় ব্যবসা করতে গেলে কেন দামি ধাতু মার্ফত

ওম প্রকাশ দ্য ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এন্ড দ্য ইকনমি অব বেঙ্গল ১৬৩০-১৭২০ বইতে বলছেন কেন ডাচেদের(এবং অন্য ইওরোপিয় বণিকদের আর ভারত বা বাংলায় ব্যবসা করা সাধারণ ব্যবসায়ীদেরও ) বাংলায় ব্যবসা করতে হত। এসিয়া বা বিশ্বজোড়া যে সব পণ্য বাংলায় আসত তার এখানে চাহিদা তেমন ছিল না। ডাচেরা ইওরোপিয় এবং এশিয় যে সব পণ্য বাংলায় পাঠাত, তার অধিকাংশ দামের দামে বিক্রি করে দেওয়ার অধিকার দেওয়া ছিল কুঠিয়ালদের।
Most of these imports were precious metals because, given the structure of relative prices, the local demand for imported goods was comparatively small. This was more true of goods of European origin than of goods obtained by the Company in other parts of Asia, but even in the latter case the extent of the market was fairly limited. The determining consideration with the Council of the Indies at Batavia when it worked out the mix of the goods to be sent to Bengal in a given year was not the rate of profit to be earned on a particular item but the total amount of purchasing power that the sale of that item was likely to generate over the year. In the case of many of the goods, the Bengal factors were authorized to sell even at cost price. Nevertheless, the sale of goods was limited, and an overwhelming proportion of the imports was of necessity in the form of precious metals.
ওম প্রকাশ দ্য ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এন্ড দ্য ইকনমি অব বেঙ্গল ১৬৩০-১৭২০, ৫৩ পাতা।

Thursday, June 7, 2018

বাংলার ব্যবসা - কোন বন্দর থেকে কতগুলি জাহাজ - জাহাজের মালিকানা

১৬৮০ থেকে ১৭১৮র মধ্যে পারস্য উপসাগর আর লোহিত সাগরে যাওয়া ১০টার সব কটা জাহাজ হুগলি থেকেই ছেড়েছে। এই সময়ে সুরাটের দিকে যাওয়া ১০২টা জাহাজের মধ্যে ৯৪টা হুগলি থেকে ছেড়েছে। করমণ্ডল আর মালাবার উপকূলের দিকে গিয়েছে ১৩৮টা এবং ১২৯টা যথাক্রমে। বালেশ্বর থেকে মালাবারের একটাও জাহাজ ছাড়ে নি। শ্রীলংকায় ১৮টার মধ্যে ১৭টা জাহাজ বালেশ্বর থেকে গিয়েছে। 
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দিকে যাওয়া ৫৩টার মধ্যে ২১টা হুগলি থেকে ৩২টা বালেশ্বর থেকে ছেড়েছে। মালদ্বীপে যাওয়া ৯১টা হাজাহের মধ্যে ২৭টা হুগলি থেকে ৬৪টা বালেশ্বর থেকে।
সুরাটের দিকে যাওয়া ২৬টা জাহাজের মালিকের নাম মিলেছে, ২৬টা গুজরাটিদের। করমণ্ডলের দিকে যাওয়া ৪৫টা জাহাজের মধ্যে তিনটে মালিক বাংলার। মালাবারের দিকে যাওয়া জাহাজের তিনিটির মালিকানা জানা গ্যাছে সব কটা মালাবারি সওদাগর আলি রাজার। ১৬৮০-১৬৮৪র মধ্যে বালেশ্বর থেকে শ্রীলঙ্কার দিকে যাওয়া ১৭টা হুগলি থেকে ছাড়া জাহাজের মধ্যে ১৫টা বাংলার ব্যবসায়ীর। বালেশ্বর আর হুগলি থেকে ছাড়া ৬৫টা জাহাজের মধ্যে ৬০তা বাংলার ব্যবসায়ীদের।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জাহাজের মালিকানার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন ৮ অধ্যায়ে।
All ten ships that are known to have gone from Bengal to the Persian Gulf and the Red Sea between 1680 and 1718 started their voyage at Hugli. Of the 102 ships that went to Surat over the same period, 94 started out from this port. The corresponding figures for the Coromandel coast were 138 and 129, respectively. No ships are recorded as having left Balasore for the Malabar coast during this period. Of the total of 18 ships that are recorded as having left for Ceylon during 1680-1718, as many as 17 started out from Balasore (Bengal shipping lists in the Dutch records). Of the 53 ships that are known to have gone to Southeast Asia from Bengal during 1680-1718, 21 were from Hugli and 32 from Balasore. Of the 91 departures for the Maldive islands over the same period, 27 were from Hugli and the remaining 64 from Balasore (Bengal shipping lists).
For the period 1680-1718, information regarding the ownership and operation of vessels departing from Bengal for Gujarat is available for 26 vessels. As many as 23 of these vessels were on the account of Surat merchants, one on that of the king of Siam1 whereas only two were on the account of merchants based at Hugli. Of the 45 vessels departing for Coromandel for which information regarding ownership and operation is available, only three are known to have been owned by merchants based in Bengal. For Malabar, information regarding the place of domicile of the merchants is available only for the three vessels that left Hugli for this coast in 1713-1714. All these vessels were on the account of the Malabari merchant Ali Raza (Bengal shipping lists). Thus of the 17 vessels that left Balasore for Ceylon between 1680 and 1684, as many as 15 were on the account of Bengal merchants. As for the Maldive islands, information regarding the place of domicile of the merchants is available for 65 vessels that left Balasore and Hugli for these islands between 1680 and 1718. Of these vessels 60 were on the account of merchants based in Bengal (Bengal shipping lists).
ওম প্রকাশের দ্য ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এন্ড দ্য ইকমনি অব বেঙ্গল, ১৬৩০-১৭২০ থেকে

বাংলার ব্যবসা - বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল

উপমহাদেশের উপকূলীয় ব্যবসা ছাড়া বড় ব্যবসা বাংলা করত সিয়াম আর ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে। লোহির সাগর আর পারস্য উপকূলের সঙ্গে বাংলার বাণিজ্য খুবই কম পরিমানে হত। 
বাণিজ্য উদ্বৃত্ত মূলত বাংলার দিকেই ছিল। সেই অঞ্চলগুলো বাণিজ্য ঘাটতি মেটাত মশলা বা হাতির দাঁতের মত দামি পণ্য দিয়ে।
মুঘলেরা পারস্যকে বলত treasure chest। পারস্য, গুজরাট করমণ্ডল, লোহির সাগর, মালাবারের সঙ্গে ব্যবসা হত হুগলি বন্দরের। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ব্যবসা করত বালেশ্বর। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া আর মালদ্বীপের সঙ্গে ব্যবসা করত দুটো বন্দর।
বাংলায় গুজরাট, মালাবার এবং করমণ্ডলের সঙ্গে বাংলার পণ্য নিয়ে ব্যবসা করত্র ঐ এলাকার ব্যবসায়ী। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, মালদ্বীও, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ব্যবসা করত বাংলার ব্যবসায়ীরা।
In addition to a substantial coastal trade, a large amount of trade was carried on with Siam and the Indonesian archipelago. The volume of trade with the Persian Gulf and the Red Sea, however, was quite small. The exports from Bengal included raw silk, opium, sugar, and saltpetre in addition to foodstuffs and textiles, a large part of which were manufactured from coarse cotton. The major import goods were pepper, nonprecious metals, elephants, cauris, areca nuts, and tobacco. The balance of trade was usually favourable to Bengal, and settlement was made by the inflow of a certain amount of specie from such regions as Sumatra, the Coromandel coast, Malabar, Gujarat, and the Persian Gulf. The greater part of this specie was in the form of silver coins, and the largest single contributor to the stream was Gujarat, which itself received large quantities of coins through its trading links with the Persian Gulf and Mocha in the Red Sea, sometimes described as the "treasure chest" of the Mughal empire. Broadly speaking, the trade with the Persian Gulf and the Red Sea, Gujarat, Malabar, and the Coromandel coast was carried on primarily from the port of Hugli, whereas that with Ceylon was largely the preserve of Balasore. Both ports participated in the trade with Southeast Asia and the Maldive islands, though Balasore had an edge over Hugli in this respect. An analysis of the shipping lists also suggests that the trade between Bengal and the ports of Gujarat, the Malabar coast, and the Coromandel coast was carried on overwhelmingly by merchants based at these ports. On the other hand, the trade with Southeast Asia, Ceylon, and the Maldive islands was overwhelmingly in the hands of Bengal
merchants.
ওম প্রকাশের দ্য ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এন্ড দ্য ইকমনি অব বেঙ্গল, ১৬৩০-১৭২০ থেকে

বাংলার আমদানি-রপ্তানি - এক নজরে

ডাচ কোম্পানি বাংলা থেকে রপ্তানি আমদানির বিশদ বর্ণনা লিখে রেখেছিল। সেখান থেকে একটা তালিকা তৈরি করেছেন ওম প্রকাশ।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়া - আরাকান, পেগু, টেনাসারিম, অচিন, কেডা, জাঙ্ক-সিলোন, মালাক্কা, ম্যানিলা
আমদানি - টিন, মশলা, গোলমরিচ, সোরা, তামা, কাঁসা, হাতি, হাতির দাঁত
রপ্তানি - বস্ত্র, চাল, আফিম, ঘি, তেল, সোরা, কোরা রেশম
করমণ্ডল উপকূল - মছলিপত্তনম, মাদ্রাজ, পোর্তো নোভো
রপ্তানি - কোরা রেশম, চাল, বস্ত্র, চিনি, ঘি
আমদানি - বস্ত্র, সোরা, টিন, শাঁখ, গোলমরিচ, কাগজ, সুপুরি, নুন, হাতির দাঁত, চন্দনকাঠ
শ্রীলঙ্কা
রপ্তানি - চাল, বস্ত্র, তেল, কোরা রেশম, আফিম, চিনি
আমদানি - হাতি, সুপুরি, শাঁখ, হাতির দাঁত, গোলমরিচ, নুন
মালদ্বীপ
রপ্তানি - চাল, বস্ত্র, ঘি, তেল, কোরা রেশম, আফিম, চিনি
আমদানি - কড়ি, টিন
মালাবার উপকূল - ক্যাননানোর, কালিকট, কোচিন, নরসাপুর
রপ্তানি - আফিম, বস্ত্র, কোরা রেশম, সোরা, লোহা
আমদানি - মশলা, গোলমরিচ, লেবু, সুতো, সুতো, সুপুরি, নুন
গুজরাট - সুরাট, ক্যাম্বে
রপ্তানি - কোরা রেশম, বস্ত্র, চিনি, লোহা, আফিম, সোরা, চাল, তেল, ঘি
আমদানি - মশলা, তুলো, বস্ত্র, পারসি তামাক, পারসি গোলাপ জল, গোলমরচ, টিন, সোরা, সুতো, সুপুরি, শাঁখ, হাতইর দাঁত, তামা
পারস্য উপসাগর এবং লোহিত সাগর - বন্দর আব্বাস, হরমুজ, জেড্ডা
রপ্তানি - চিনি, বস্ত্র, লোহা, কোরা রেশম, আফিম, সরা, চাল
আমদানি - পারসি আব্বাসি মুদ্রা, তামাক, গোলাপ জল, টিন, সোরা, বস্ত্র, নুন
---
তালিকার শেষে তিনি বলছেন বহু কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের তালিকা তিনি দেন নি। এখানে গুরুত্বের বিবেচনায় ক্রমতালিকা করা হয়েছে।
ওম প্রকাশএর ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এন্ড ইকনমি অব বেঙ্গল, ১৬৩০-১৭২০ বইএর ২৮ পাতা থেকে

বাংলার ব্যবসা তালিকা ও কর্পোরেট গোয়েন্দাগিরি

কর্পোরেটরা আজ অন্যান্যদের বিশেষ করে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর গোয়েন্দাকর্ম চালায়। সেই প্রবণতার সূত্রপাত করে গিয়েছে ৪০০ বছর আগেইওরোপের কর্পোরেটরা।
ডাচ ভিওসি বাংলা থেকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা হুগলি আর বালেশ্বরের বন্দর থেকে কি কি পণ্য, কত পরিমান, কটি জাহাজ যাচ্ছে, কোন বন্দরে যাচ্ছে, দালালের নাম ইত্যাদি লিখে রাখত। যদিও এই তথ্য সপ্তদশ শতকের শেষ ২৫ বছর থেকে পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু সেটাও আবার খাপছাড়া ভাবে, প্রতিবছরের হিসাব নেই। তবুও সেই তালিকা থেকে একটা ধারণা তৈরি করেছেন ওম প্রকাশ, এক নজরে সেই সময়ে বাংলার ব্যবসা। এই তালিকায়।
A description of the barest essentials of the structure can, however, be based on the "shipping lists" for the ports of Hugli and Balasore available in the Dutch documents. The Company liked to keep an eye on the volume of indigenous trade handled at the Bengal ports, and compiled these lists from information obtained from the officials of the imperial customs house. The lists contain, for each ship, the name of the merchant who owned the ship, the port of destination/origin, the cargo carried, and occasionally, the place of domicile of the merchant, the name of the nakhuda (captain of the ship), the name of the agent, if any, who had organised the work of equipping the ship, and the name and type of the ship. Unfortunately, these lists are available only from the last quarter of the seventeenth century on, and even then are not available on a regular basis.

বাংলার ব্যবসাপথ

ঢাকা, হুগলি বা মালদার মত ব্যবসা কেন্দ্র জলপথে গঙ্গা আর তার শাখা নদী বাহিত হয়ে রাজমহল হয়ে পাটনা, বেনারস হয়ে এলাহাবাদ পৌঁছত। সেখান থেকে যমুনা হয়ে আগরা। সেখান থেকে গুজরাট বা রাজস্থান। আরেকটি পথ মালওয়া আর খণ্ডেশ হয়ে পৌঁছত। বাংলার বিপুল এবং বিভিন্ন রকমের খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও আগরায় পৌঁছত মুর্শিদাবাদের কোরা রেশম। আগরা থেকে সেটি কান্দাহার পৌঁছত তুর্কি আর পারস্য। সেখান থেকে ইওরোপ। আর বাংলার এই পথে আসত গুজরাটের তুলো আর বুরহানপুরের কিছু কাপড়।
{ওম প্রকাশ এখানে বলেন নি, গঙ্গার দুপারে দুটি রাস্তা ছিল, একটি উত্তরপথ আরেকটি দক্ষিণপথ। উত্তরপথের গুরুত্ব ছিল শোনপুরের মেলা এবং নেপাল তিব্বত যোগ। দক্ষিণপথে দাক্ষিনাত্যেও পৌঁছনো যেত। এই ব্যবসাটা করতেন যাযাবরেরা।}
Within the subcontinent, the trade from Bengal was carried on both along land and river routes as well as along the coast. A major route connecting centres of manufacturing production such as Malda, Hugli, and Dacca with the important north Indian distribution centre of Agra involved the use of the tributaries of the river Ganga to Rajmahal, the Ganga itself until Allahabad via Patna and Banaras, and finally the river Yamuna from Allahabad to Agra. An important land route from Agra to Gujarat passed through western Rajasthan, while another more easterly route passed through Malwa and Khandesh. In addition to foodstuffs, a substantial quantity of Bengal raw silk was carried to Agra, a part of which eventually found its way to Persia and Turkey via the land route passing through Kandahar. Among the major items of import into Bengal along these routes were cotton from Gujarat and salt from Rajasthan, besides some varieties of textiles from Burhanpur.

ওম প্রকাশএর ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এন্ড ইকনমি অব বেঙ্গল, ১৬৩০-১৭২০ বইএর ২৬ পাতা থেকে

কারিগর অর্থনীতির চার মহাকাব্য

তিনজন বাঙালি 
নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিংহ
কীর্তি নারায়ণ চৌধুরী
সুশীল চৌধুরী
এবং একজন অবাঙ্গালির 
ওম প্রকাশ আগরওয়ালের
লেখা বাংলার কারিগর অর্থনীতি বিষয়ে চারটি মহাকাব্য।