Sunday, April 12, 2020

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - কারিগর-হকার সঙ্গঠনের পক্ষে কতগুলো কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া দরকার - আমরা কেন্দ্রিভূত উতপাদন ব্যবস্থায় নেই

আমরা যারা হকার কারিগর সঙ্গঠন করি, আমাদের ইওরোপিয় নব্য উপনিবেশবাদীদের মত করে এপলোজেটিক হবার যেমন দায় নেই তেমনি আমরা মনে করি না আমাদের ইওরোপিয় কেন্দ্রিভূত বিপুল পুঁজি নির্ভর জ্ঞানচর্চাইয় 'উত্তরণের' দায় আছে। ইওরোপিয় পদ্ধতিতে কারিগর, পশুচারক চাষীদের উচ্ছেদ করে কোকটাউন নির্ভর কেন্দ্রিভূত কারখানার শ্রমিক হিসেবে জুড়ে কেন্দ্রিভূত শ্রম লুঠেরা উতপাদন ব্যবস্থা তৈরি করার দায় আছে।বুঝি, আজও ভদ্রবিত্তের দায় আছে ইওরোপের লুঠ খুন অত্যাচার লুকোবার জন্যে ভদ্রলোক নির্ভর ইওরোপিয় এবং বাংলার নবজাগরণের পাশে দাঁড়াবার দায় আছে।
আবারও বলি আমাদের নেই। আমরা খুব উন্নত ছিলাম, এবং আমাদের সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজকের মত ইওরোপ হতে পারতাম, এরকম কোনও দাবির অঙ্কে আমরা নেই। সঙ্ঘী আর জাতীয়তাবাদীদের 'ও সব আবিষ্কার আমরা ঢের আগে করে ফেলেছি' এই সব ধারণাতেও নেই। আমরা কেন্দ্রিভূত লুঠ নির্ভর উতপাদন ব্যবস্থাতে ছিলাম না, আজও নেই। আমরা ইওরোপ হতে চাই নি, বিকেন্দ্রিত উতপাদন ব্যবস্থায় ছিলাম আছি থাকবও - কারিগর উতপাদন ব্যবস্থায় কেন্দ্রিভূত উতপাদন ব্যবস্থা ছিল না, নবাবি আমল অবদিও কিছু হাতেগোনা কারখানা থাকলেও সেটা ব্যতিক্রমই। ১৬০০র শতে যখন বাংলায় ওম প্রকাশের হিসেবে ১ লক্ষ অতিরিক্ত রোজগার তৈরি হল, তার জন্যে আমরা কারখানা করিনি, কারিগর উচ্ছেদ করি নি, পশুচারক উচ্ছেদ করি নি, আমরা চাষ বাড়িয়েছি, কারিগর বাড়িয়েছি, ভূমিতলে রোজগার বাড়িয়েছি। আজকে কোভিদের ধাক্কায় প্রমান খুন অত্যাচার আর লুঠ করে যে অসহনশীল জীবনযাত্রা ইওরোপ আমেরিকার সাদারা তৈরি করেছে গত ২৫০ বছর সেটি কত ঠুনকো এবং ভেঙ্গে পড়ার মুখে।
আমাদের পথ মিলবে না। এ নিয়ে বৃথা বাক্যব্যয় মনে হয়। মৌলিক জায়গাতেই তফাত। একটা বিকেন্দ্রিত উতপাদন ব্যবস্থা আরেকটা কেন্দ্রিভূত লুঠেরা উতপাদন ব্যবস্থা। আপনারা বাণিজ্যে না পেরে আরবে প্রথমে দখলদারি করতে গিয়েছিলেন, তারা খেয়েছেন, আজও যে যুদ্ধ থামে নি। পিজেরো, লিভিংস্টোন, ডিফো ইত্যাদি ইত্যাদিরা কখন লুঠ শুরু করেছে, পলাশী কখন হয়েছে এবং প্রথম মিল কখন হয়েছে এসব তথ্য চোখের সামনে রয়েছে।
কেমব্রিজ ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরী পি জে মার্শাল তীর্থঙ্কর রায়ের মত বিশ্বাস করুণ লুঠফুট মিথ্যে কথা, নবজাগরণ আদতে ইওরোপের সভ্যতা বিস্তার প্রকল্প।আপনারা যারা ইউরো এপোলেজেটিক আপনাদের সমস্যা বাড়ছে - আপনাদের ক্যাম্প থেকেই অমিয় বাগচি আর মৃদুলা মুখার্জী লুঠ শিল্পায়ন আর ইওরোপের উন্নয়ন নিয়ে বই লিখে ফেলেছেন।
এখনও প্রথম যুগের কলোনিয়াল মার্ক্স বেশ শক্তিশালী বোঝা যাচ্ছে।
শুভেচ্ছা।

Saturday, April 11, 2020

কোভিদ উপসর্গ মাত্র - দক্ষিণ এশিয় উপনিবেশে এ রোগ সারার নয়, বার বার ধাক্কা দেবে

যে উন্নয়ন বাঙ্গালিকে ছিয়াত্তর বিয়াল্লিশ এবং তার মাঝে আরও বহু গণহত্যা দিয়েছে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে তার জমির অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে, ২৫০ বছর ধরে লুঠে ইওরোপের উন্নয়ন করেছে, লুঠের সাম্রাজ্য বজায় রাখতে নবজাগরণ দিয়েছে, সেই উন্নয়নের পথে হেঁটে এর থেকে অন্য কিছু কী পাওনা আমাদের ছিল?
যেটাই আমাদের পাওনা ছিল, সেটাই আমরা পেয়েছি, ইওরোপ আমেরিকা নির্ভর কেন্দ্রিভূত অর্থনীতি, ২৫০ বছরের তৈরি ইসলামোফোমিয়া, অধমর্ণ হিসেবে বিশ্ববাণিজ্যে কাঁচামাল এবং শিক্ষিত শ্রমিক সরবরহ করার দেশ হিসেবে বিকাশ।
নেহেরু ফোর্ড ফাউন্ডেশনকে ডেকে ইওরোপিয় শিল্পায়নের জন্যে সাহায্য চান, তার পরিচালক বলেছিলেন, সারা বিশ্বে আমাদের উপনিবেশ আছে, সেখানে আমরা আমাদেরে বিপুল বিশাল ভর্তুকি নির্ভর কারখানার মাল চালান করি। ভারতের উপনিবেশ কই যে সে বড় কারখানা করে তার মাল বেচবে? নেহেরু তখন পূর্ব আর উত্তর ভারতকে উপনিবেশ বানান। মোদি গোটা দেশকে গুজরাটের উপনিবেশ বানিয়েছেন। আজও আমরা ইওরোপ আমেরিকার উপনিবেশ হিসেবে কাজ করছি। ওদেশের রোগ হলে, অর্থনীতিতে মন্দা দেখা গেলে, নীতি পরিবর্তন হলে, এদেশে তার প্রভাব পড়বে, আমরা দলে দলে মারা যাব, এটাই তো স্বাভাবিক।
সমস্যা হল এই আঁচটা এবারে নবজাগরণীয় শিক্ষিত ভদ্রবিত্তের গায়ে লাগছে। একদা যে রাষ্ট্র তাকে ডেকে ডেকে চাকরি দিয়েছে সে তার চাকরি খাচ্ছে, ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র তৈরি করায় যে ভদ্রবিত্তের অবদান সব থেকে বেশি, তাদের আর দায় নিতে চাইছে না পুঁজি আর পুঁজির চালক রাষ্ট্র। ফলে মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল।
---

বিশ্বায়ন বন্ধ হয়ে গেলে ইংরেজি শিক্ষিত খাবে কী? সে তো বেঁচে আছে পশ্চিমের ওপর ভর দিয়ে

গুরুচণ্ডালীতে প্রকাশিত সোমনাথের এই লেখাটা পড়ুন। হাতে গোনা যে কজনকে আমরা অনুসরণ করি, তার মধ্যে সোমনাথ অন্যতম।ওর লেখাটা পড়ার আগে আমাদের ভূমিকাটা পড়ে নিন।
---
১) সোমনাথের তত্ত্বে দাঁত ফোটানো আমার কম্ম নয়। আমি, আমার বিষয়ের বাইরে যাব না।
২) আমরা লুঠেরা বিশ্বায়নের বিরোধী।
৩) আমার শিক্ষক কারিগর হকারেরা একসময় বিশ্বজুড়ে ব্যবসা করতেন, এশিয়ায় ডাচ ব্যবসা নিয়ে কাজ করা কোনও কোনও ঐতিহাসিক জানিয়েছেন ব্রিটিশ-ডাচ উপনিবেশ পূর্ব এশিয়া ছিল মূলত হকারদের বাণিজ্য নির্ভর, যদিও তা সম্পূর্ণভাবে ঠিক নয়, তাই আমরা লুঠেরা খুনি অত্যাচারী বিশ্বায়নের বিরোধী কিন্তু বিশ্ববাণিজ্যের বিরোধী নই,
৪) কারণ সেই উপনিবেশপূর্ব এশিয় আফ্রিকিয় এবং আমেরিকিয় অর্থনীতি বিশ্ববাণিজ্য নির্ভর ছিল না।
৫) ইওরোপের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া বাণিজ্য করত মোট উতপাদনের ১০%(তাতেই এই ঢক্কা নিনাদ, লক্ষ লক্ষ রজতমুদ্রার গ্রান্টওয়ালা গবেষণা )
৬) বাকি কিছুটা সেট দক্ষিণপূব এশিয়ায়, আরব মধ্য এশিয়ায়, আফ্রিকায় এব থেকে বেড় দেশিয় বাজার।
৭) ফলে মসলিন ইত্যাদি কয়েকটা হাতে গোণা পণ্য বাদ দিলে মূলত উতপাদন হত স্থানীয় অর্থনীতির জন্যে, কিছু উদ্বৃত্ত যেত বিদেশের বাজারে
৮) পলাশীর আগে যে কারিগর তার উতপাদিত পণ্যের দামের ৩৩ শতাংশ পেত মজুরি, সেটা ১৭৭০এ গণহত্যার বছরে দাঁঁড়াল ৬%
৯) শাঁক, সুতো আর ধাতু ছাড়া কারিগরদের মূল কাঁচামাল নিজেদের ছিল
১০) শাহজাহানের ব্যক্তিগত সচিব চন্দ্র ভান ব্রাহ্মণের লেখা থেকে দেখেছি তার দরবারে বিশ্বজোড়া কারিগরদের ঠাঁই ছিল, অর্থাৎ মুঘল আর নবাবি আমল তাক্র পৃষ্ঠপোষনা করেছে
১১) সে দাদন অগ্রিম নিলেও চুক্তি থেকে যে বেরিয়ে যেতে পারত তার বেশ কিছু উদাহরণ সুশীল চৌধুরী, ওমপ্রকাশ কীর্তি নারায়ণ চৌধুরী দিয়েছেন, অর্থাৎ তার সামাজিক গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল
১২) মুঘল এবং নবাবি আমলে বিশ্ববাণিজ্য তুঙ্গ অবস্থানে পৌঁছেছিল, সাফাভি, উস্মানিয় সাম্রাজ্য থেকে অভিজাতরা মুঘল আমলের মনসবদার হতে পালিয়ে আসতেন।
১৩) এইটুকু বিশ্ব বাজার করেও আমরা বিপুল উদ্বৃত্ত তৈরি করতে পেরেছিলাম।
১৪) ওপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার কারিগর হকারেরা বিশ্ব বাণিজ্যে ছিলেন
১৫) মেলিন্দের উপকূলে যখন ভাস্কো ভারত ভারত করে হাতড়াচ্ছেন, ইওরোপিয়রা আমেরিকাকে ভারত হিসেবে গণ্য করছেন, অন্যান্য দেশকে ভারত দাগাচ্ছেন, ইওরোপে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি হচ্ছে(ইস্ট শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ) তখন তাকে ভারতে নিয়ে এসেছিলেন মালামো কানা নামক এক গুজরাটি মুসলমান নাবিক।
১৬) বিশ্বের অন্যতম দুটো পুরোনো মসজিদ একটা কেরলে নবীর জামাইএর তৈরি আরেকটা পূব বাংলায় লালমণিরহাটে। গেনিজায় ভারতের সঙ্গে মিশরের বিপুল বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া গিয়েছে
১৭) পলাশীর পর কারিগর হকারদের যতটুকু বিশ্ববাণিজ্যে অংশিদার ছিল, সেটা থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হল।
১৮) এইসব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচনা করলাম কারণ আমরা বিশ্ববাণিজ্যে ছিলাম, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতাম, কিন্তু বিশ্বজোড়া দখলদারি, উপনিবেশ তৈরির রাজনীতি-অর্থনীতিতে ছিলাম না, কয়েকটা ব্যতিক্রম নিয়ম হতে পারে না।

https://l.facebook.com/l.php?u=https%3A%2F%2Fwww.guruchandali.com%2Fcomment.php%3Ftopic%3D17365%26fbclid%3DIwAR1qo3zt7511nZuuL_7Ri9UReScZaaS8HztrQn-uYgqwKGCY8EhlSJq-7LE&h=AT35bsf4Z2xpYZcmhvucamngNlz_HX1uBgNSkUTq-C5Q4p1Qra4ZTA4WNcOua9ecJaZqR-6my1DUM7Goo1D1JErvE4PubrwT-wWaukV_eFwWClR3LEloIvbeE56GfURedw

পরিবার নিয়ে গ্রামে ফেরা মানুষেদের সিদ্ধান্তের ওপরে নির্ভর করছে পুঁজির প্রাণ ভোমরা

পুঁজিবাদের হাতিয়ার করোনা প্রয়োগ করে এই বিপুল মন্দা থেকে পুঁজিকে উদ্ধারের পরিকল্পনা করছিল। এই পরিকল্পনায় গোচনা ফেলে বিপুল সংখ্যায় কর্মজীবিরা শহর ছেড়ে পরিবার নিয়ে বাসস্থলে ফিরে গিয়েছেন। শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার বিপুল জনস্রোত তৈরি হবে সেটা যতদূরসম্ভব পুঁজি এবং পুঁজির পাহারাদারদের সুদূরতম ভাবনাতেও ছিল না বলেই মনে হয়। এই মানুষদের নিয়ে কী করা যায়, সে ভাবনায় তারা দিশাহারা ছিল।পুঁজির সঙ্গে জুড়ে থাকারা তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার করেছে। এই দুর্ব্যবহারের নিন্দা করছি। পুঁজি মূলতঃ শ্রম বিরোধী। তারা চেষ্টা করছে শ্রম প্রতিস্থাপন করতে। পুঁজির এআই প্ল্যাটফর্ম তৈরি। শ্রমিক ছাঁটাই পর্বও তৈরি। কিন্তু এই পরিকল্পনা হয়ত মার খাবে শ্রমিকদের মাস এক্সোডাসে। কারণ এআই রূপায়ন করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। শ্রমিকের যথেষ্ট সরবরাহ না থাকলে কারখানা চলবে কী করে?
এই মানুষেরা কী করবেন?
এই যে বিপুল সংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে চলে গেলেন, সেই শহর ছাড়াটা পুঁজির বর্তমান কাঠামোর ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার। আমরা যারা পুঁজি নিরপেক্ষ সঙ্গঠন করি, তাদের কাছে এই বিপুল মানুষ কী করবেন, সেটা জানতে বুঝতে খুবই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছি।
পরিবার নিয়ে শয়ে শয়ে কিলোমিটার হেঁটে আসা মানুষদের একাংশও যদি গ্রামে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে পুঁজি অশনিসংকেত দেখবে।
গ্রামের অর্থনীতিতে বদল আসবে।

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - বাংলার নবজাগরণ এবং ইওরোপিয় নবজাগরণের প্রেক্ষিত

(লেখাটা বড় হবে, মাথা ধরানো হবে পড়ার দরকার নেই)

Debottom একটা অসামান্য ভূমিকা লিখেছেন নবজাগরণের চরিত্র বুঝতে। তাঁর সঙ্গেই নবজাগরণ বিষয়ে আরেক জ্ঞানচর্চক Debabrataদা এই সময়টার নানান তথ্য জানা বোঝা, বিশেষ করে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা নিয়ে ইতিহাসের ভাবনা পালটে দেওয়ার কাজ করে চলেছেন।
অন্যদিকে Souvik ইওরোপিয় জ্ঞানচর্চা বিশেষ করে অষ্টাদশ শতকের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সে সময়ের দেশিয় জ্ঞানচর্চা বুঝতে আমাদের ডেকেছিলেন। কেন নবজাগরণ বা কেন ইওরোপ এই নব্য বিজ্ঞানচর্চায় উপনীত হয়েছিল, এই দুটি অবস্থা বুঝতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতটি আমাদের বুঝে নেওয়া দরকার।
তার পরে অন্য কথা।
---
বাংলার নবজাগরণ এবং নবজাগরিত পশ্চিমি জ্ঞানচর্চা আর প্রযুক্তি চর্চার সামগ্রিক আলোচনাকে পুঁজি, সওদাগরি উদ্যম আর উপনিবেশ বিচ্যুত করে দেখলে ভুল হবে।
সার্বিকভাবে পশ্চিমি রাষ্ট্র জ্ঞানচর্চা এবং প্রযুক্তির অন্তর্নিহিত শক্তিকে লুঠ, খুন অত্যাচার আর নজরদারির কাজে লাগিয়েছিল। কেন্দ্রিভূত পুঁজির মতই কেন্দ্রিভূত জ্ঞানচর্চার সমস্যা হল এটা বড় পুঁজিকে সংহত করে এবং অত্যাচার আর লুঠের কাজে লাগায়।
হাজার হাজার বছর ধরে এশিয়া আফ্রিকা আমেরিকার বিকেন্দ্রিত উতপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে পশ্চিম ব্যর্থ হয়েছে, বিশেষ করে বাণিজ্যে। পলাশীর আগে কয়েক হাজার বছর সে এশিয়ার কাছে অধমর্ণ অর্থনীতি হিসেবেই গণ্য হয়েছে। সাতশ বছর আগে পশ্চিম এশিয় বাণিজ্যে দখল নিতে আরবের ওপরে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, কিন্তু উজ্জীবিত ইসলাম তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ইওরোপ কয়েকটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়,
১) পুঁজি সংহত করা, লেভন্ট কোমপানি, মস্কোভি কোম্পানি ইত্যাদি যে সব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিপূর্ব একচেটিয়া সনদী কোম্পানি ছিল সেগুলিকে বাতিল করে পুঁজি সংহত করে ইওরোপ জুড়ে ভেনিসিয় এবং আমস্টার্ডামের ব্যবসায়ীদের জড়ো করে পোপের অনুমতি নিয়ে(প্যাপান বুল) পাঁচটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি করে। এদের সেনাবাহিনী নিয়ে ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয় - অর্থাৎ একচেটিয়া বাণিজ্য এবং সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজের অনুঘটক হিসেবে তৈরি করা হল। রাষ্ট্র যে কাজ করতে পারে নি সেটাকে পুঁজি-রাষ্ট্রজোটের তৈরি করে করার উদ্যম নেওয়া হল। উপনিবেশের মুখড়া তৈরি হল। প্রথম ধাক্কা খেল আমেরিকা। তারপরে আফ্রিকা এবং এশিয়া

২) জ্ঞানচর্চায় এশিয়া/আফ্রিকা/আমেরিকা ইওরোপকে মাত করেদিয়েছিল। ইওরোপ এশিয় প্রযুক্তি নকল/চুরি করে তাদের উতপাদন ব্যবস্থা চালাবার চেষ্টা করেছে বহুকাল ধরে। কিন্তু তারা যা চাইছে - বিশ্ব বিজয় এবং কেন্দ্রিভূতভাবে উৎপাদন বাড়ানোর কাজ - এই জ্ঞানচর্চা আর প্রযুক্তি দিয়ে করতে পারছিল না।
তারা কেন্দ্রিভূত প্রযুক্তি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিল। ঠিক হল কারিগর পশুচারক উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে, চাষীদের জমি দখল নেওয়া হবে কেন্দ্রিভূত উতপাদন ব্যবস্থা তৈরি করতে। লিভার টিভার তৈরির চেষ্টা এশিয়াতে বহু আগে হয়েছিল, লিভার তৈরি হয়েছে আরবে, চিনে ভারতে, আকবরের সময় ফাতাউল্লা সিরাজি্র কাজ প্রকৃষ্ট উদাহরণ, চিনের প্রযুক্তি নিয়ে ইওরোপমন্য নিডহ্যাম প্রচুর উদাহরণ দিয়েছেন। এশিয়া এগুলি পুঁজি কেন্দ্রিভবন এবং সাম্রাজ্য তৈরির কাজে লাগায় নি। ভস্কোর আগে জেং হি সারা বিশ্ব সমুদ্রে ঘুরে এসেছে কিন্তু পথ না হারিয়ে। অর্থাৎ সেই জ্ঞান তার ছিল, কিন্তু সে সেটা তারা সাম্রাজ্য বিস্তারে কাজে লাগায় নি।
ইওরোপ এশিয়া আফ্রিকা আমেরিকার বিকেন্দ্রিভূত জ্ঞান নিয়ে কেন্দ্রিভূত জ্ঞানচর্চা প্রকল্প তৈরি করল। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক গ্যালিলিও বললেন তিনি লিভার দিয়ে পৃথিবী নড়িয়ে দিতে পারেন। গ্যালিলিওর কাজ ছিল কামানের গোলা ছোঁড়াত ট্রাযেকটেরি নিয়ে গবেষণা। তাঁর কাজটাই ছিল সাম্রাজ্যবাদী সামরিক উদ্যমকে সহায়তা করা। ইওরোপের বিপুল সংখ্যার বিদ্বান প্রযুক্তিবিদ সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজে লাগে, শ্রম প্রতিস্থাপন করতে পারে এমন প্রযুক্তি তৈরি করল। কর্পোরেটদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এই কাজগুলি চালিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এই বিদ্বানেদের অনেকেই নতুন কোম্পানিগুলির প্রোমোটার খাতক চাকুরে ছিল। যে জ্ঞানচর্চা চলছিল, তার মূল উদ্দেশ্য হল নজরদারি, বিকেন্দ্রিভূত উতপাদন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে কেন্দ্রিভূত উতপাদন ব্যবস্থা চালাবার মত করে প্রযুক্তি বিকাশ এবং শ্রম প্রতিস্থাপন প্রযুক্তি তৈরি। কোম্পানিগুলি ততদিনে যে ব্যবসা উদ্বৃত্ত নিয়ে আসছে সেগুলো দিয়ে এই গবেষণাগুলো হচ্ছে।তা ছাড়া আফ্রিকা আমেরিকা লুঠ উদ্বৃত্ত তো রইয়েইছে।
নজরদারি নির্ভর শ্রম প্রতিস্থাপন করার প্রযুক্তি না হয় তৈরি হচ্ছিল, যেমন ফ্লাইং শাটল কিন্তু এগুলো কাজে লাগাবে কোথায়? এই খরুচে যে এগুলো চালাতে ভর্তুকি প্রয়োজন, আসবে কোথা থেকে? খুলে গেল আমেরিকা আর আফ্রিকায় উপনিবেশের দরজা। এশিয়ায় পলাশী হল, তার ২৩ বছরের মাথায় তৈরি হল ইংলন্ডের প্রথম কেন্দ্রিভূত কাপড়ের মিল, বিপুল ভর্তুকি ঢুকতে থাকল।মিলগুলি রাষ্ট্রীয় সহায়তায় ছোটলোক চাষী পশুচারক কারিগরদের উচ্ছেদ করল এবং কারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত করল। পেয়ে গেল শস্তাতম শ্রমিক।
অথচ ১৬০০ থেকে ১৬৮০র মধ্যে বাংলায় ১ লক্ষ কাজের পরিবেশ তৈরি হলেও আমরা কারখানা করি না, সেটাকে ব্যবহার করলাম কাজ দেওয়ার চাষ বাড়াবার কাজে। যাইহোক, পলাশীর চক্রান্ত এবং তারপরের লুঠ, ১ কোটি মানুষের গণহত্যা এবং আফ্রিকা থেকে বিপুল শ্রমের রপ্তানি এইগুলি না হলে ইওরোপ আজকেও অধমর্ণ থাকত। এই আলোচনাগুলিও করতে হত না।
এরপরে তৈরি হতে থাকল একের পর এক বিপুল নানান ধরণের কারখানা, উপনিবেশ থেকে লুঠ করা প্রযুক্তির বিনিয়োগে। তাই লুঠ চালিয়ে যেতে হয়, না হলে কারখানা চলে না। উপনিবেশে লুঠ চালাবার জন্যে তৈরি করা হল নবজাগরণ নামক একটি ইওরোপমন্য কাঠামো। তার চালক হলেন তথাকথিত বিখ্যতরা। নবজাগরণের অমুসলমান মাথাদের ওপরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য মৌলিক যে কটি কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব দিয়েছিল ১)লুঠের পরিবেশ চালিয়ে যাওয়া এবং সাম্রাজ্যের লুঠের কাজের ওপর যতটা পারা যায় অবগুণ্ঠন চাপানো, ২) ভদ্রলোকামি এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের গুরুত্ববৃদ্ধি, ৩) ইসলামোফোবিয়া তৈরি ৪) শহরের বাইরে চলা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের থেকে বিচ্ছিন্নতা ৫) কেন্দ্রিভূত পড়াশোনার শেকড় গজানো, ৬) বেকনিয় তত্ত্বে গড়ে ওঠা লুঠেরা এবং খুনি প্রযুক্তির ওপর যতটা পারা যায় প্রগতিশীলতার কাপড় পরানো, ৭) ব্রিটিশ পূর্ব সময়কে কেয়টিক, লুঠেরা এবং হিন্দু বিরোধী প্রমান করা যাতে পলাশীর পরের লুঠের ওপর থেকে দৃষ্টি সরে যায় --- এবং আরও অনেক কিছু - নবজাগরণীয়রা সেগুলি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন এবং তার যথেষ্ট প্রতিদান পেয়েছেন, আজও পেয়ে চলেছেন।
এগুলি সক্কলের জানা কথা, আবার আবৃত্তি করলাম।
ইতিহাস লেখার আগে এই প্রেক্ষিতটি তৈরি থাকা দরকার।

রবার্ট কেনেডি জুনিয়র টিকা করণ নিয়ে গেটসকে বিঁধলেন

ইন্দ্রপ্রস্থীয় খানদানি রাজনীতির ধারক গান্ধী পরিবারের মত আমেরিকায় কেনেডি পরিবারের সেদেশের সমাজ এবং রাজনীতিতে যথেষ্ট আভিজাত্য এবং পকড় রয়েছে। সেই পরিবারের সদস্য, নিহত রাষ্ট্রপতির ভাইপো রবার্ট সরাসরি বিল গেটসের ওপর ভ্যাকসিনেশন করে এপিডেমিক ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন। শেষ স্তবকটায় উনি বলছেন, করোনার সুযোগে তৃতীয়বিশ্বে এতদিন যে এই টিকাকরণ করে এসেছেন সেটা গেটস আমেরিকার ওপরে চাপিয়ে দিতে চান।
বড় লেখা, তাও পড়ুন।
এটার সূত্র Ahmadul Haque

ROBERT F KENNEDY JR DESTROYS "MESSIANIC" BILL MALTHUS GATES

Here is his full Instagram post - which has become viral all over. A lot of people told me funny stuff was happening with it - so keep this copy for reference in case it "disappears".

A condensed review of the vaccine scams by the geek who destroyed Netscape because they had a better OS.

MUST READ.

“Vaccines, for Bill Gates, are a strategic philanthropy that feed his many vaccine-related businesses (including Microsoft’s ambition to control a global vac ID enterprise) and give him dictatorial control over global health policy—the spear tip of corporate neo-imperialism.

Gates’ obsession with vaccines seems fueled by a messianic conviction that he is ordained to save the world with technology and a god-like willingness to experiment with the lives of lesser humans.

Promising to eradicate Polio with $1.2 billion, Gates took control of India ‘s National Advisory Board (NAB) and mandated 50 polio vaccines (up from 5) to every child before age 5. Indian doctors blame the Gates campaign for a devastating vaccine-strain polio epidemic that
paralyzed 496,000 children between 2000 and 2017. In 2017, the Indian Government dialed back Gates’ vaccine regimen and evicted Gates and his cronies from the NAB. Polio paralysis rates dropped precipitously.

In 2017, the World Health Organization reluctantly admitted that the global polio explosion is predominantly vaccine strain, meaning it is coming from Gates’ Vaccine Program. The most frightening epidemics in Congo, the Philippines, and Afghanistan are all linked to Gates’ vaccines. By 2018, ¾ of global polio cases were from Gates’ vaccines.

In 2014, the Gates Foundation funded tests of experimental HPV vaccines, developed by GSK and Merck, on 23,000 young girls in remote Indian provinces. Approximately 1,200 suffered severe side effects, including autoimmune and fertility disorders. Seven died. Indian government investigations charged that Gates funded researchers
committed pervasive ethical violations: pressuring vulnerable village girls into the trial, bullying parents, forging consent forms, and refusing medical care to the injured girls. The case is now in the country’s Supreme Court.

In 2010, the Gates Foundation funded a trial of a GSK’s experimental malaria vaccine, killing 151 African infants and causing serious adverse effects including paralysis, seizure, and febrile convulsions to 1,048 of the 5,049 children.

During Gates 2002 MenAfriVac Campaign in Sub-Saharan Africa, Gates operatives forcibly vaccinated thousands of African children against meningitis. Between 50-500 children developed paralysis. South African newspapers complained, “We are guinea pigs for drug makers”
Nelson Mandela’s formar Senior Economist, Professor Patrick Bond, describes Gates’ philantropic practises as “ruthless” and immoral”.

In 2010, Gates committed $ 10 billion to the WHO promising to reduce population, in part, through new vaccines. A month later Gates told a Ted Talk that new vaccines “could reduce population”.

In 2014, Kenya’s Catholic Doctors Association accused the WHO of chemically sterilizing millions of unwilling Kenyan women with a phony “tetanus” vaccine campaign. Independent labs found the sterility formula in every vaccine tested. After denying the charges, WHO finally admitted it had been developing the sterility vaccines for over a decade. Similar accusations came from Tanzania, Nicaragua,
Mexico and the Philippines.

A 2017 study (Morgensen et.Al.2017) showed that WHO’s popular DTP is killing more African than the disease it pretends to prevent. Vaccinated girls suffered 10x the death rate of unvaccinated children.

Gates and the WHO refused to recall the lethal vaccine which WHO forces upon millions of African children annually. Global public health advocates around the world accuse Gates of – hijacking WHO’s agenda away from the projects that are proven to curb infectious diseases; clean water, hygiene, nutrition and economic development. They say he has diverted agency resources to serve his personal fetish
– that good health only comes in a syringe.

In addition to using his philantropy to control WHO, UNICEF, GAVI and PATH, Gates funds private pharmaceutical companies that manufacture vaccines, and a massive network of pharmaceutical -industry front groups that broadcast deceptive propaganda, develop fraudulent
studies, conduct surveillance and psychological operations against vaccine hesitancy and use Gates’ power and money to silence dissent and coerce compliance.

In this recent nonstop Pharmedia appearances, Gates appears gleeful that the Covid-19 crisis will give him the opportunity to force his third-world vaccine programs on American children.”

কেন ইওরোপে মারণ, এদেশে নয় - হার্ড ইমিউনিটিঃ একটি রাজনৈতিক বক্তব্য

হার্ড ইমিউনিটির মধ্যে একটা ইতিহাস লুকিয়ে আছে। আমরা অনেকেই হয়ত জানি- এই লব্জটা মূলত টিকা করণের আগের সময় থেকে এসেছে। বাংলায় আমরা টিকা দিতাম, এশিয়ার নানান জায়গায় চালুছিল, এটা নিয়ে আমার ফেবুকেই খুবই দীর্ঘ লেখা আছে। এবং এটা জেনারের বহু আগে থেকেই বাংলায় ছিল।
জেনার দেখলেন, মানে পশ্চিম দেখল যারা গরু ইত্যাদি পশুপালের সঙ্গে কাজ করে, বিশেষ করে ভেড়ার পাল চরায় - কেন ভেড়া - যেহেতু ওরা উলের কাপড় ভাল বানাত, তাই প্রচুর ভেড়া পালত, পশুচারণ একটা বড় পেশা ছিল, ইওরোপে যখন গুটি বসন্ত এলাকা কে এলাকা উজাড় করে দিচ্ছে তখন দেখা গেল গরু বা ভেড়ার পালের সঙ্গে যারা থাকে তাদের কিছুই হয় না। যেমন এদেশেও এটা দেখা গিয়েছিল। সেখান থেকে জেনার টিকা করল এবং সেই টিকা বিক্রির জন্যে এদেশে টিকাকরণ নিষিদ্ধ করল।
ইওরোপ গত ২৫০ বছরে এই পশুপালকদের কারখানার শ্রমিক বানিয়েছে, ওদের আর হার্ড ইমিউনিটি নাই। চাইলেও নাই। স্বপ্নই দেখবে। নেতারা হার্ড ইমিউনিটির নাম করে পশ্চিমের লোকেদের মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছে ভবিষ্যতে আরও দেবে। দিন আনি দিন খাইএর যা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা, সেটা আতুপুতু করে বেড়ে ওঠাদের নেই। আমাদের শহুরেদের নেই, যারা পশ্চিমের মত করে সন্তানকে গড়ে তুলেছেন। তারা টুসকিতেই মারা যাবে। আধুনিক চিকিতসা তাদের বাঁচাতে পারবে না - এটা প্রমানিত।
এই সুরক্ষাটা আমাদের দেশে আছে।
এটাই হার্ড ইমিউনিটি। 
এটাই হার্ড ফ্যাক্ট।

Friday, April 10, 2020

শাহজাহানের দরবারে বিশ্ব কারিগর

আমরা যারা কারিগর ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করি, তারা জানি মুঘলেরা কারিগরদের সমর্থন করতেন এবং কারখানাও চালাতেন। কিন্তু মুঘল দরবারে বিশ্বেজোড়া কারিগরেরা উপস্থিত থাকতেন, এমন একটা তথ্য দিচ্ছেন কিন্তু চন্দর ভান।
তিনি চাহার চমন বইতে লিখছেন, ‘[শাহজাহানের ] দরবারে উপস্থিত থাকতেন শ্রেষ্ঠত্ব এবং নিখুঁততার প্রতীক, জ্ঞান বুদ্ধি দক্ষতার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধিরা, কমনীয় এবং বাগ্মিতাসম্পন্ন লেখক, অন্যান্য ধরণের শিল্পী এবং কারিগর এবং সভ্য বিশ্বের(অজ মামুরা-ইয়ি আলম) দক্ষ কারিগররেরা - ছিলেন ইস্তাম্বুল, আলেপ্পো[হালাব], মিশর, বসরা, বাগদাদ, হামাদান, শিরওয়ান, শামাখি, গিলান, মাজান্দারান, তেহরান, ইয়াজদ, ইস্ফাহান, সিমনন, দামঘান, বস্তাম, শবজওর, নিশপুর, মেরভ, মশদ, তুস, তাবাস, কাইন, তুন, ইসফ্রাইন, জাম, হেরাট, খফ, বখতাবর, সিস্তান, ফারওয়ান, কান্দাহার, বলখ, বুখারা, সমরখন্দ, আন্দিজান, তিব্বত, কাশগর, তুর্কিস্তানের নানান অঞ্চলের এবং অন্যান্য প্রান্তিক এলাকার প্রতিনিধিরা'।

ইতিহাসকে নতুনভাবে দেখার কাজ শুরু করতে হবে

প্রকাশিতব্য শাহজাহানের ব্রাহ্মণ সচিব চন্দর ভান - জীবন ও সময় বই থেকে

'প্রভাব কখনো পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায় না, বরং উল্টোটাই হয়'

ইওরোপিয় বাগান স্থাপত্যে মুঘল প্রভাব

‘আ কমপ্লিট তাজমহল’ বিষয়ে নারায়ণী গুপ্ত আর ইরা পাণ্ডেকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ভারতের মুঘল শিল্পকলা বিষয়ে অসামান্য কাজ করা এব্বা কখকে নারায়ণী গুপ্ত প্রশ্ন করলেন ফ্রান্সের বিশেষ করে ভার্সাইয়ের বাগানে কী মুঘল বাগান চিন্তার প্রভাব আছে?
এব্বা কখ জানালেন ইওরোপিয় বাগান ভাবনায় মুঘল বাগানের প্রভাব সর্বাধিক। তিনি বলেছেন জ্যামিতিক আকারে তৈরি ইওরোপিয় বাগানের ভাবনা চিন্তা কিন্তু ইসলামি, বিশেষ করে মুঘল বাগান আঙ্গিকের প্রভাবে অনেকটা প্রভাবিত। কিন্তু এটা ইওরোপিয় বাগান বিদদের বলতে যাবেন না, কেননা সারা পৃথিবী জানে প্রভাব কখনো পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায় না, বরং উল্টোটাই হয়।

[NG[নারায়ণী গুপ্ত]: Is it possible to see the influ ence of Mughal gardens in France, particularly in Versailles...?
EK[এবা কখ]: I think that much of this geometric planning in European gardens has been influenced by Islamic and perhaps even Mughal designs, but don’t tell this to European garden stylers, because, as we all know, influences can only travel from West to East, and hardly ever from East to West! (সুত্র - https://www.jstor.org/stable/23006313)।

লকডডাউন - একটা পর্যালোচনা

আমি বা আপনি কেউ বিশেষজ্ঞ নই - সেটা আমাদের জোর। কিন্তু আমাদের সব থেকে বড় সম্পদ হল আমরা তাত্ত্বিক জ্ঞান নয় সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করি। আমরা নিজের এলাকা ছাড়াও সংগঠন করি বলে বৃহত্তর বাংলার মানুষের সঙ্গে কথা বলি আর ইতিহাস চর্চা করি।
১) এই মুহূর্তে কোনও সরকারের সঙ্গেই কথা বলে কোনও লাভ নেই। পুঁজি এখন নতুন একটা ফেজে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। মানুষ ছাড়া, খুব বড় কাঠামো ছাড়া কারখানা, দপ্তর চালাবার জন্যে পুঁজি তৈরি। সে শ্রমিক ভয় পায়, ঘেন্না করে। তাকে তাড়াবার জন্যেই শ্রম প্রতিস্থাপনকারী যন্ত্রের উদ্ভব গোটা ১৭০০জুড়ে, কাজে লাগল ১৭৮০তে। তার জন্য বাংলাকে লুঠ বাঙ্গালিকে প্রাণ আর আফ্রিকাকে শ্রম দিতে হয়েছে।
২) সেই শ্রম প্রতিস্থাপনকারী ভাবনা আজ নতুন উচ্চতায় পৌছেছে। যে কাপড়ের কল চালাতে ৫০ বছর আগে ৩০০ একর জায়গা লাগত, আজকে ১০ বাই ১০ ঘরে সেটিকে চালানো যায়।
৩) মিতসুবিশি, বোয়িং ইত্যাদির তৈরি আগামীর আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে উৎপাদন এবং সেবা দানের কাজটা চালাবে। ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে বহু বহু মানুষকে তার ছাঁটাই করতে হবে। বহু অর্থে কয়েক কোটি - যত লোক ছিয়াত্তর আর বিয়াল্লিশে মারা গিয়েছিল তার ২০/৩০ গুণ।
৪) তার সঙ্গে ছোট ছোট ব্যবসা, যাকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সেগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে তার ছাঁটাই করা সমস্যার। তার লভ্যাংশ মার খাচ্ছে। ভোট আছে - আমরা চিন নই। পথ করোনা।
৫) যেমন আমাদের প্রতিবাদী বন্ধু Debajyotiর মুড়ির কারখানা। এটা সাধারণ মানুষের পরম্পরার খাদ্য ব্যবস্থার অংশ। তার সঙ্গে আরও কয়েক হাজার ব্যবসা থাকলে সাধারণ মানুষের তার উৎপাদন কাজে লাগে সকালের বা অবসরের খাওয়ার জন্যে। যন্ত্রতে আর রাসায়নিক দিয়ে তৈরি করা দীর্ঘকাল ধরে প্যাকেটে রাখা খাবারের বাজার বাড়ানোর কাজ কিছুটা হলেও আটকাচ্ছে। সরকারের পক্ষে তাদের রাজনৈতিকভাবে উচ্ছেদ করা অসম্ভব। তাই সরকারের একটাই উদ্দেশ্য যতটা পারা যায় লকডডাউন কার্যকর করে তার মত ছোট ছোট কর্পোরেট বিরোধী ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা।
৬)ছাঁটাই ছাড়া লকডডাউনের অনেক লাভ কর্পোরেটদের ভর্তুকি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে গেল। একটাই কথা হবে মাল কী করে বেচব জানি না - সাহায্য দাও। যন্ত্র বসাব - টাকা দাও। বাজার বাড়াব টাকা দাও।
৭)ইতিমধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক সুদের হার কমিয়েছে - ব্যাঙ্ক মার্জার করেছে।জনপ্রতিনিধিদের ৩০% ভাতা কেটেছে, বিজেপির সদস্যদের থেকে মহিলাদের গয়না চেয়েছে। এই আবহাওয়ায় পাবলিকের মাইনে কাটার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে আইন করেও টাকা কাটা হতে পারে।
এটা কর্পোরেটের উইন উইন সিচুয়েশন।
বিপুল মন্দা থেকে কোনও রক্ত না ফেলে উত্তরণের যায়গা তৈরি হল।
--
৮) কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা দাঁড়াল কয়েক লক্ষ ছোটলোক শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া। এটা তারা আন্দাজই করতে পারে নি। এ আই লাগু করতে গেলেও সময় লাগবে, অন্তত এক দেড় দশক। কয়েক লক্ষ পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া এবং তাদের সক্কলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা পুঁজির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এটাই তাদের এখন মাথা ব্যথা।

Thursday, April 9, 2020

বাঙ্গালির গৃহস্থের রান্না - অনন্ত বিন্যাস মিশ্রণ এবং অসীম সম্ভাবনার শিল্প

আজও বাংলা জুড়ে দেখি একেকটা রান্নার জন্যে এক এক রকম করে তরকারি কাটতে। নিমবেগুনের জন্যে যেভাবে বেগুণ কাটা হয়, জিরে ইলিশের জন্যে সেরকমভাবে নয়, আবার মাছের টকের বেগুণ আরেক রকম করে কাটা হয়। পোস্তর আলু যেভাবে কাটা হয়, ঝোলের আলু বা ভাজার আলু সেভাবে কাটা হয় না। আলুভাজার জন্যে আলু কাটার বৈচিত্রের তো শেষ নেই। সেই জ্ঞান শিল্প এবং অভ্যেস আমায় কিছুটা বর্তেছে। আমায় যিনি বিয়ে করেন তাঁর তো তুলনা নেই।
এরকম হাজারো রান্নার আঙ্গিকের উদাহরণ ছড়িয়ে আছে দুই বাংলা জুড়ে। হাজার আমিষ নিরামিষ, বহু ভৌগোলিক এলাকা বহু ধরণের খাবার, বহু অভ্যেস, বহু ধরণের বিন্যাস এবং মিশ্রণ সম্ভাবনার শিল্প বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে আছে।
একজন মহিলা বিয়ের আগে এক ধরণের রান্নায় অভ্যস্ত হন, বিয়ের পরে আরেক ধরণের। তারপরে নিজে যখন সংসারের হাল ধরেন, তখন এই দুটি আর মিলিয়ে মিশিয়ে আরেক ধরণের রান্না তৈরি করেন।
---
এটা যৌথভাবে জ্ঞানচর্চা এবং শিল্প- সব থেকে বড় কথা সুস্থ থাকার উদ্যম, স্বাদের অভ্যেস আর তৈরির সম্ভাবনা শিল্পের মেলবন্ধন।

নুন/লবন সেবন ভাল না - আধুনিক ইওরোপিয় ধারণা

নুন কত সেবন করবেন, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে; কিন্তু 'বেশি লবন সেবন ভাল না', এটা খুবই আধুনিক ধারণা। আমার ছোটবেলা কেটেছিল উপকূল অঞ্চলে মেদিনীপুরে। আমরা টক নুন আর লঙ্কা প্রচুর খেতাম, কলকাতায় আসাতক আজও খেয়ে চলেছি। রোজ একটা টকের পদ না হলে খাওয়া হয় না, আর লেবুতো নিয়মমাফিক খাওয়া আছেই। নুন বেশি খাওয়া ঠিক নয়, এটা ইওরোপিয় চিকতসা শাস্ত্রের নিদান, ঠাণ্ডা এলাকার নিদান, যেখানে ঘামই হয় না সে অঞ্চলের নিদান। আমরা যারা গরম দেশের মানুষ, আমরা যারা সমুদ্র, মালভূমি, মরুভূমি অঞ্চলের মানুষ, আমাদের যাদের প্রচুর ঘাম হয়, তাদের অবশ্যই নুন লাগে। আর আয়োডিন যুক্ত নুন আরও খারাপ - সেটা অন্য বিতর্ক।
বাঙালি যে আজ মোটামুটি দুর্বল, তার বড় কারণ পলাশীর পর প্রায় ৩০ বছর নুনের দাম এত বাড়ে যে বাঙালি বছরে দুমাস নুন কিনতে পারে নি তিন দশকেরে বেশি সময় ধরে। ছিয়াত্তরের ২৫০ বছরে বাঙালি এই তথ্যটা যেন ভুলে না যায়।
আমার শ্বশুর মশাই ডাক্তারদের নিদানে নুন খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় তার সোডিয়াম-পটাশিয়াম ডিসব্যালেন্স হয় এবং ব্রেন হ্যামারেজ হয়, সেরে ওঠার পরে তাঁকে রোজ ১৫ গ্রাম, তিন চা চামচ নুন খেতে হত।
অযথা ভয় করবেন না। আপনি নিজের শরীর সব থেকে ভাল বোঝেন। নিজে বুঝে নুন খান।
আমি আজও করকচ নুন খাই।

ভুলে যাওয়া কিছু অভ্যেস - প্রাকৃতিক জীবানুনাশক

আমাদের দেশে নুন তেল তুলসি মধু আরও কিছু জিনিস ব্যবহার হত প্রক্রিয়াকৃত খাবার বহু কাল জারিয়ে রাখার জন্যে। নুন মধু তেল আর তুলসি বাংলায় প্রচুর পাওয়া যেত আমাদের পূর্বজরা সেগুলো ব্যবহার করতেন। এই চারটেই এন্টিসেপ্টিক, জীবাণু নাশক। এছাড়া জীবাণুনাশ করে কর্পুর আর বেলপাতা। বৈষ্ণবেরা পুজোর নৈবেদ্যতে তুলসি আর শৈব আর শাক্তরা বেলপাতা ব্যবহার করেন, মুসলমানেরা কালোজিরে আর মধু খান। আমার ছোট বেলায় দেখেছি, যখন তথাকথিত মিনারেল ওয়াটার নামক বুজরুকিটা বাজারে আসে নি তখন জলে কর্পুর ব্যবহার হত, বিশেষ করে উৎসব অনুষ্ঠানগুলিতে। এই তত্ত্বগুলো আমাদের মা ঠাকুমা আপা, আম্মারা, বাবা, খালারা খুব ভালভাবেই জানতেন, ফলে খুব সাধারণ রোগ কম হত, বাড়ির পাশে, পাড়ায় একটা-দুটো এলোপ্যাথির দোকান হওয়া এই সেদিনের ঘটনা।

Wednesday, April 8, 2020

বেশি লবন ভাল না', এটা খুবই আধুনিক ধারণা

নুন তেল তুলসি মধু আরও কিছু জিনিস ব্যবহার হত প্রক্রিয়াকৃত খাবার বহু কাল জারিয়ে রাখার জন্যে। নুন মধু তেল আর তুলসি বাংলায় প্রচুর পাওয়া যেত আমাদের পূর্বজরা সেগুলো ব্যবহার করতেন। এই চারটেই এন্টিসেপ্টিক, জীবাণু নাশক। এছাড়া জীবাণুনাশ করে কর্পুর আর বেলপাতা। বৈষ্ণবেরা পুজোর নৈবেদ্যতে তুলসি আর শৈব আর শাক্তরা বেলপাতা ব্যবহার করেন, মুসলমানেরা কালোজিরে আর মধু খান। আমার ছোট বেলায় দেখেছি, যখন তথাকথিত মিনারেল ওয়াটার নামক বুজরুকিটা বাজারে আসে নি তখন জলে কর্পুর ব্যবহার হত, বিশেষ করে উৎসব অনুষ্ঠানগুলিতে। এই তত্ত্বগুলো আমাদের মা ঠাকুমা আপা, আম্মারা, বাবা, খালারা খুব ভালভাবেই জানতেন, ফলে খুব সাধারণ রোগ কম হত, বাড়ির পাশে, পাড়ায় একটাদুটো এলোপ্যাথির দোকান হওয়া এই সেদিনের ঘটনা। 'বেশি লবন ভাল না', এটা খুবই আধুনিক ধারণা। আমার ছোটবেলা কেটেছিল উপকূল অঞ্চলে। আমরা টক নুন আর লঙ্কা প্রচুর খেতাম, কলকাতায় আসাতক আজও খেয়ে চলেছি। নুন বেশি খাওয়া ঠিক নয়, এটা ইওরোপিয় চিকতসা শাস্ত্রের নিদান। আমরা যারা গরম দেশের মানুষ, আমাদের যাদের বিপুল প্রচুর ঘাম হয়, তাদের অবশ্যই নুন লাগে। আর আয়োডিন যুক্ত নুন আরও খারাপ ব্যপার - সেটা অন্য বিতর্ক। বাঙালি যে আজ মোটামুটি দুর্বল, তার বড় কারণ পলাশীর পর প্রায় ৩০ বছর নুনের দাম এত বাড়ে যে বাঙালি বছরে দুমাস নুন কিনতে পারে নি তিন দশকেরে বেশি সময় ধরে। । আমার শ্বশুর মশাই ডাক্তারদের নিদানে নুন খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় তার সোডিয়াম-পটাশিয়াম ডিসব্যালেন্স হয় এবং ব্রেন হ্যামারেজ হয়, সেরে ওঠার পরে তাঁকে রোজ ১৫ গ্রাম, তিন চা চামচ নুন খেতে হত।

জীবন ফিরে দেখা সূত্রে বই - ওয়ার্লড অব আদার ফেসেস, জীবন পাণি

ছবিতে থাকতে পারে: যে টেক্সটে 'WORLD OF OTHER FACES INDIAN MASKS JIWAN PANI PUBLICATIONS DIVISION' লেখা আছেজীবনকে ফিরে দেখা সূত্রে হাতে উঠে এল জীবন পাণির অসামান্য নথিকরণ ওয়ার্ল্ড অফ আদার ফেসেস - ইন্ডিয়ান মাস্কস। বইটা এক সময়, আজ থেকে এক প্রন্মেরও বেশি সময় ২৫ বছরেরও দূরে, আমাদের কয়েকজনের Bidhan Angira Lalita Bimal জীবনে প্রভূত প্রভাব ফেলেছিল। বইটাকে অবলম্বন করে বেশ কিছু কাজেরও ভাবনা ভেবেছিলাম।
ব্যক্তিগতভাবে আমি যখন এই বিষয়টা বুঝতে আসি, আমার দেহে বামপন্থার সৌরভ ফুটে বেরোচ্ছে, মনে সমাজ পালটানো না হোক, গ্রামীণ অশিক্ষিত মানুষগুলোকে শিক্ষিত করার দৌর্দণ্ড ভাবনা ক্রিয়াশীল ছিল। পৃথিবীকে দেখার ভাবনাটাই ছিল পরস্মৈপদী। বিদ্যালয়ের বাইরের ভদ্রবিত্ত চৌহদ্দির বাইরের শিক্ষকদের সঙ্গে সবে যোগাযোগ হচ্ছে; প্রথমে কলকাতা কৈবর্ত সমিতিতে যাওয়ার কল্যাণে কারিগরদের চিনলাম, ১৯৯৫তে হকার সংগ্রাম সমিতির হাত ধরে দেশের বিক্রেতাদের শিক্ষকরূপে পাওয়া। ঠিক পরের বছর জীবন ওলটপালট করে দেওয়ার ঘটনা ঘটবে কলকাতায় অপারেশন শানসাইন, জীবনের মোড় চিরতরে ঘুরিয়ে দেবে।
সেই জীবন চেনার কাজে আমাদের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক গুরু ছিলেন রঘুনাথ গোস্বামী মশাই। অসামান্য মানুষ, অসামান্য শিক্ষক, অসামান্য বুঝদার এবং অসামান্য কৃষ্টিশীল, অসামান্য জ্ঞানী। তাঁর উদ্বৃত্ত কাজ নির্ভর করে আমাদের দুএক বন্ধু আজও করে খাচ্ছেন। ১৯৯২-৯৩এর পরের দিকের প্রথম যৌবনে তিনি আমাদের পথ দেখাতে দেখাতে না ফেরার দেশে চলে যান। প্রয়াণের ঠিক যাওয়ার এক মাস আগে যতদূরসম্ভব ১৯৯৫তে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে লোক উৎসব হয় কলকাতা কৈবর্ত সমিতির উদ্যোগে, শিশির মজুমদার মশাইএর পরিকল্পনায়। ছিলেন অসামান্য Kanchanদা, তিনি ফোকথিয়েটারের শিক্ষাক্রমে ক্লাসও নিতেন আবার সেই উৎসবে সক্রিয় অংশগ্রহণও করেছিলেন। সেই উৎসবে মুখোশের একটা প্রদর্শনী হয়, রঘুনাথবাবু নিজের সংগ্রহের প্রচুর মুখোশ দেন -সেগুলির মঞ্জুষা আর ইজেডসিসির জাদুঘরে ঝোলার কথা। মেলা সূত্রে হাতে খড়ি পেশাদারিভাবে প্যাভেলিয়ান করার শিক্ষার, সেই প্রথম ডিটিপি দেখলাম এ৩ প্রিন্ট দেখলাম, মাউন্টিং বুঝলাম।
তারপরে আড়াই দশক কেটে গিয়েছে - অপাররেশন শানসাইন, খালপাড় উচ্ছেদ, হকার সংগ্রাম কমিটি, বহু চেষ্টায় বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ গড়ে ওঠা - সার্বিকভাবে জীবনকে অন্যরকমভাবে দেখা বা বোঝার চেষ্টা আজও অব্যাহত।
সর্বাঙ্গে লাল মাখা একদা যুবক বহুকাল পরে চুল পাকার বয়সে দেশের ধুলো মেখে জীবনপাণির বইটা ফিরে দেখে, দুটো গোদা রাজনৈতিক তথ্য উঠে আসে
১) যে রাষ্ট্র ২০২০তে ভদ্রবিত্তের চাকরি খাচ্ছে, ৪০ বছর আগে ১৯৮০তে মধ্যবিত্ত তোষণ করার জন্যে এই ধরণের 'অকাজের' বইটই ছাপত।
২) যে বইটাকে আদর্শ করেছিলাম, সে বইটাই আজ মনে হচ্ছে অকাজের। বাংলা বলতে শুধুই ছো, পূর্বঅঞ্চল বলতে শাহীযাত্রা সেরাইকেলা। বাংলায় যে বিপুল বৈচিত্রের মুখোশের অবস্থান, তার কোনও চিত্রই নেই। বিপুলভাবে দক্ষিণ ভারত নির্ভর বইটা। কীভাবে জনমাধ্যম মানুষের ভাবনাচিন্তায় প্রভাব ফেলে জীবনপাণির বইটা তার হাতে গরম উদাহরণ।
তবুও যৌবনের স্মৃতি সতত সুখের, তাই খুব অপটু হাতে বইটার ডিজিটাল নথিকরণ সম্পন্ন করাগেল।

https://drive.google.com/file/d/1uG0xLBxNnQnyaw438UTucDAIaqW45alZ/view?usp=sharing