Wednesday, December 27, 2017

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা - পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা - ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ১১ - সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - সিদ্ধান্ত

এছাড়াও বলা দরকার ইওরোপিয়রা বাংলার পরম্পরার ব্যবসার সংগঠনকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে নি। তাদের এই পরম্পরার প্রথা, নীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে, তাদের ব্যবসাকে বাংলার ব্যবসার প্রথার মত করে সাজিয়ে গুজিয়ে নিতে হয়েছে। তবে তারা এই ব্যবসা ক্ষেত্রে নতুন কিছু ধারণা দিতে পেরেছে, প্রধান সওদাগরের দপ্তর, অংশিদারি ব্যবস্থা, সোরা ব্যবসায়ীদের দিয়ে অংশিদারি ব্যবস্থার ভিত তৈরি করে দেওয়া যাতে তারা নিজেদের মত করে দাম নির্ণয়ে ভূমিকা পেশ করতে পারে। কিন্তু আধুনিকপূর্ব সামগ্রিক দক্ষিণ এশিয় ব্যবসা ব্যবস্থায় এই পরিবর্তন খুব প্রভাবশালী কিছু ছিল না।
বাংলার ব্যবসা বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল যে বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন সমাজের খুব বড় আর খুব ছোট ব্যবসায়ীর যৌথ অবস্থান। এরা পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্র আর বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকায় ব্যবসা করত। বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে জগতশেঠ, উমিচাঁদ এবং খ্বাজা আহমেদ ছিলেন ত্রিরত্ন, এদের হাতেই বাংলার আর্থ এবং ব্যবসা ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি ধরা ছিল। তাদের কাজের ব্যপ্তি, তাদের বাণিজ্য সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি এবং সাংগঠিত ব্যবসা কর্ম বিশ্লেষণ করে, এশিয় ব্যবসা যে কিছু হকারদের যৌথ সমষ্টি(ordinary entrepreneurial character of the Asian trade was a sum of peddling activities) এই তত্ত্বে উপনীত হওয়া যায় না। ব্যবসাদারদের সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে থাকা মানুষদের যে জোট, সেই জোট তাদের প্রাপ্ত ক্ষমতার বলে বাংলার রাজনীতি, প্রশাসন এবং আর্থিক ক্ষেত্রে বিপুল প্রভাব ফেলেছিল তা এদের কাজকর্ম বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বোঝা যায়।
অষ্টাদশ শতকের প্রথমের দিকে বাংলার সওদাগরেরা ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির আজ্ঞাবহ ছিল না। এশিয় আর ইওরোপিয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে অষ্টাদশ শতকের প্রথমপর্ব পর্যন্ত অংশিদারিত্ব বা পরস্পর নির্ভরশীলতা, পরের দিকে যৌথ উদ্যম(subjugation)ছিল ব্যবসায়িক যোগাযোগকর্মের প্রণোদনা। বাংলা বা ভারতের অন্যান্য প্রান্তে ব্যবসা মূলত ছিল ব্যক্তি ব্যবসায়ীর ভূমিকা, সেখানে গোষ্ঠীর ভূমিকা খুব বেশি ছিল না। ব্যবসায়ীরা মূলত ব্যক্তি বা পারিবারিকভাবে কয়েকজন মিলে ব্যবসা করত। ইওরোপের ব্যবসায়িক সংগঠনে অব্যক্তিক (Impersonal) যে সম্পর্ক সংগঠন গড়ে উঠেছিল, তা এই বিশ্বে অজানা ছিল। এমনকি পরস্পরের মধ্যে হাতধরাধরি করে এগোনোর ভূমিকা ছিল না। তবে ব্যবসায়িক লেনদেন একটি জাতি বা সমাজের বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না – তার বাইরেও প্রভূত পরিমানে হত। মুসলিম ব্যবসায়ীর হিন্দু বানিয়া বা হিন্দু বা আর্মেনীয় ব্যবসায়ীর মুসলমান সঙ্গীর নির্দশনের অভাব ছিল না। শহরে প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়িক শ্রেণী একই জাতিতে সংগঠিত হত মোটামুটি।

বাংলার বস্ত্র বয়ন শিল্পের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য চরিত্র ছিল It was basically a rural domestic handicraft industry with extraordinary diffusion and marked by extreme localization and high specialization। বহু ক্ষেত্রে চাষীরাই তাঁতে বসতেন। তাঁতি ছিলেন স্বনির্ভর কারিগর, স্ত্রী আর সন্তান তার সহায়ক ছিল। পরিবার এখানে সামগ্রিক উৎপাদন দেখত, তার বাড়িটাই ছিল কারখানা। The rudimentary character of the technique with emphasis on simple instruments and a low ratio of. fixed to working capital implied a minimal concentration of labour and capital in individual units of production.। পলাশীপূর্ব বাংলার তাঁতি-কারিগর বিপুল স্বাধীনতা ভোগ করত। উৎপাদনের কাঁচামালের স্বত্ত্ব ছিল তাঁতির নিজের, নিজেই নিজের সুতো কিনত এবং সে যা উতপাদন করত তাত্ত্বিকভাবে তার মালিকানাও তার ছিল। দাদনি ব্যবস্থা উৎপাদকের উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করত না - The dadni system at most promoted the control of merchant capital over the producer and not the process of production itself। পলাশীর পরে তাঁতিরা কোমপানির বেতনভূক কর্মচারী হয়ে পড়ে, এবং উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত কাঁচামালের নিয়ন্ত্রণ সে হারিয়ে ফেলে। 

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা - পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা - ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ১০ - সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - সিদ্ধান্ত

মধ্য অষ্টাদশ শতকে বাংলায় কোন অর্থনৈতিক দুর্যোগও ছিল না। এই তত্ত্বের প্রবক্তারা(যদিও সাম্প্রতিক গবেষণায় সরাসরি কেউই ‘অর্থনৈতিক সঙ্কট’ শব্দবন্ধটা ব্যবহার করেন নি, কিন্তু তাদের প্রত্যেকের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ইঙ্গিত সেই দিকেই ছিল) বলা চেষ্টা করেছেন বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থার পতন ঘটেছিল, ব্যবসা বাণিজ্য ঢালের দিকে এগোচ্ছিল, সওদাগরেরা অস্বচ্ছল হচ্ছিল, খোলা বাজারের পণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছিল, এবং ব্রিটিশ কোম্পানির রপ্তানি কমছিল। আমার এই বইতে আমি প্রমান করে দিয়েছি যে এই ধারণাগুলি ধারনাই, এগুলোর কোন বাস্তবতা নেই। বিশেষ করে ইওরোপিয়দের মোট বাংলা পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন ঘাটতি দ্যাখা যায় নি। ১৭৪০এর শেষ থেকে ১৭৫০এর শুরু পর্যন্ত ব্রিটিশ রপ্তানি কমেছে কিন্তু বাংলার অর্থনীতির ধীরগতির জন্য নয়। বরং ব্রিটিশ অর্থনীতির গতিহীনতাকে পুষিয়ে দেওয়া গিয়েছে এশিয় বাজারে ডাচ(এবং ফরাসী) রপ্তানি বৃদ্ধিতে। এপ্রসঙ্গে বলা দরকার বাংলা থেকে এশিয় বণিকদের রপ্তানি, বিশেষ করে রেশম আর সুতি বস্ত্রে, মধ্য অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলার অর্থনীতি জড়দার করতে বিপুল ভূমিকা পালন করে গিয়েছে।
এই সব উদাহরণে আমরা বলতে পারি না যে পলাশীপূর্ব সময়ে বাংলার ব্যবসা বাণিজ্য এবং বাংলার বণিকেরা সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল। এছাড়াও সম্প্রতিকালে বলা হচ্ছে দাদনি বণিকদের যায়গায় ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি গোমস্তা প্রথা শুরু করায় বাংলার মধ্যসত্ত্বভোগীরা দুর্দশায় পড়ে, এ তত্ত্বও গ্রহণযোগ্য নয়। ডাচেরা ১৭৪৭-৪৯ এই তিন বছর গোমস্তা প্রথা শুরু করেও ১৭৫০এ দাদনি ব্যবস্থায় ফিরে যায়। ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের দাদনি প্রথা থেকে গোমস্তা প্রথায় যাওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের ব্যবসার ঢালপথে দ্রুতগতিতে নেমে যাওয়ার প্রবণতা রোখা এবং আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা বাড়ানোর উদ্যম। আজ এই তথ্য পরিষ্কার যে গোমস্তারা মূল গন্ডগোলের উৎস ছিল। তাদের সক্রিয় সহযোগিতায় ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা বাংলার নানান অগম্য স্থানে প্রবেশ করতে উদ্যমী হয়।
আরও বলা হচ্ছে যে মারাঠা আগ্রাসনে বাংলার অর্থনীতি বিপুল সঙ্কটের মধ্যে পড়ে কারণ সে সময় ইওরোপ থেকে আসা দামি ধাতু কমে যায় কারণ এই আক্রমনে বাংলার পণ্যের মূল্য বেড়ে যায় এবং ব্রিটিশদের কেনার ক্ষমতা কমে যায়। এই তত্ত্বকেও আমরা খারিজ করেছি বাংলার নানান ধরণের বস্ত্র রপ্তানির তথ্য ধরে ধরে এবং সেগুলোর দামের সঙ্গে বাজারের অন্যান্য পণ্যের দামের তুলনা করে – দেখিয়েছি বাজারে পণ্যগুলির হঠাৎ বিপুল দামবৃদ্ধি তত্ত্বের কোন ভিত্তি নেই। বরং ১৭৩০ আর ১৭৪০এর দশকের তুলনায় ১৭৫০এর পরে কোম্পানির খাতা থেকে তথ্য তুলে দেখিয়েছি বাংলা থেকে রপ্তানি হওয়া তিনটি প্রধান পণ্য, মসলিনের খাসা আর মলমলের দাম কমেছে। চাল বা অন্যান্য খাদ্য শস্যের দামেরও লক্ষ্যণীয় বৃদ্ধি ঘটে নি। ফলে বাংলায় মধ্যঅষ্টাদশ শতে কোন রকম অর্থনৈতিক সঙ্কট ছিল, একথা বলা যাবে না।
এটাও বলা দরকার বাংলা বাণিজ্য ক্ষেত্রে ইওরোপিয়দে আনা দামি ধাতুর পরিমান দেখানোয় কিছুটা অতিকৃত চেষ্টা হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতকে বাংলা এশিয় এবং ইওরোপিয় উভয় ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত অর্থনীতি ছিল – বাংলায় পণ্য কিনতে সব্বাইকে দামি ধাতু নিয়ে আসতে হত। পঞ্চদশ শতকে জনৈক চিনা ভ্রমনকারী মন্তব্য করেছেন যে, long-distance. merchants -in Bengal settled· their accounts

with tankas (silver coins)( W.W.Rockhill, 'Notes on the Relations and Trade of China with the Eastern Archipelago and the Coast of the Indian Ocefln during the Fourteenth Century', Toung Pao, 16, pt.2 (1915), p. 144, quoted in Richard M. Eaton, The Rise of Islam, p. 96.)। ফলে বাংলায় দামি ধাতু আসা খুব নতুন ব্যাপার ছিল না। এবং এই কাজে ইওরোপিয়দের ভূমিকা একমাত্র ছিল না এটাও বলা দরকার, একাজে এশিয় বণিকদেরও বড় ভূমিকা ছিল হয়ত ইওরোপিয়দের থেকেও বেশি। তবে ইওরোপিয়রা যে ভাল পরিমানে দামি ধাতু আনত এটা অস্বীকার করা যাবে না – কিন্তু অর্থনীতির ওপরে এর প্রাভব খুব সামান্য ছিল, অর্থনীতির প্রান্তিক ক্ষেত্রটি শুধু এটি ছুঁতে পেরেছিল মাত্র। এই বিপুল সংখ্যায় দামি ধাতু বাংলায় আসত সেটি ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে সওদাগর মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের ভোগে লাগত। 

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা - পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা - ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ৯ - সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - সিদ্ধান্ত

অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে গোটা মুঘল সাম্রাজ্য জুড়ে পতনের, ক্ষয়, অব্যবস্থা এবং অস্থিরতার পরিবেশের মধ্যে বাংলার নবাবি প্রশাসন একমাত্র ব্যতিক্রমিক ভৌগোলিক এলাকা। শুধুমাত্র করদ-রাজ্য হিসেবে বাংলার দিল্লির সঙ্গে একটা প্রায়-ছিঁড়ে যাওয়ার মত সূক্ষ্ম সুতোয় বাঁধা থাকা হলেও বাস্তবিকভাবে দিল্লির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত বাংলার নবাবেরা বাংলাকে স্বাধীন ভৌগোলিক এলাকায় পরিণত করে। নবাবের ব্যক্তিগত কৃপাদৃষ্টির পথে পড়ে শুধু কিছু জমিদার, ব্যাঙ্কার এবং অভিজাত সামরিক ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার কাছাকাছি এসে একটা যৌথ জোটবন্ধন তৈরি করে। এটা কোনভাবেই শ্রেণীবদ্ধতা(class alliance) নয়, বরং সময়ের প্রয়োজনে জোটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষদের ব্যক্তিগতস্তরের স্বার্থ রক্ষা। এই অবস্থা বাংলাদেশে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং একটি জোরালো নিজামতের ভিত্তি তৈরি হয়। এর ফলে আর্থিক ব্যবস্থায়, উৎপাদনে এবং লাভের পরিবেশ তৈরিতে নতুন উদ্যম গৃহীত হয়, ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি আর বাজারের বিস্তার ঘটে। বাংলায় অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে ব্যবসার সমৃদ্ধি এবং শান্তি শৃঙ্খলার স্থায়িত্ব এশিয়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বণিককে টেনে আনে।
ইওরোপিয়দের মধ্যে ডাচ আর ব্রিটিশ ইওরোপিয় কোম্পানি বাংলার ব্যবসা জগতে বেশ সক্রিয় ছিল। একসময় কোম্পানিগুলো ইওরোপ আর মশলাদ্বীপপুঞ্জের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা শুরু করেছিল, সেটি বদলে গেল ত্রিপাক্ষিকতায় এই ব্যবসায় ভারত নামক একটি ভূখণ্ড তার দেশের নানান এলাকায় প্রস্তুত নানান ধরণের শস্তা উৎপাদন নিয়ে ঢুকে পড়ায় – যে ভূখণ্ডের বস্ত্র নিয়ে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি মশলা কিনে ইওরোপে চালান দিত। পরের দিকে এটি ইওরোপ এবং বাংলার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়, যেখানে ১৬৮০র পর থেকে বাংলা এই কোমপানিগুলির এশিয় ব্যবসার অক্ষদণ্ড এবং উত্তমর্ণ রূপে উঠে আসে অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদ পর্যন্ত। অষ্টাদশ শতকে ডাচেরা যদিও বাংলার মোট ব্যবসায় ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির থেকে অনেকটা এগিয়েছিল, ১৭৩০ এবং ১৭৪০এ ব্রিটিশেরা এশিয় ব্যবসায় তাদের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে থাকে, মনে রাখতে হবে বাংলার ঘাঁটি ডাচ ব্যবসা পরিকল্পনায় আন্তঃএশিয় খুব বড় ভূমিকা পালন করেছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলায় ব্যবসা করতে গেলে দামি ধাতু বয়ে নিয়ে আসতে হত। ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি বাংলার পণ্য কিনতে যে সব পণ্য আমদানি করত তার মধ্যে ৭৪ থেকে ৯৪ শতাংশ পণ্যই ছিল দামি ধাতু।

এই উদ্বৃত্ত ব্যবসাটা বাংলার সব থেকে বড় জোর ছিল। এবং এই জন্য বাংলার দখল ইওরোপিয়দের কাছে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। বহুকাল ধরে একটা ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে পলাশীপূর্ব বাংলার রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার জন্যে বাংলা দখলে ব্রিটিশেরা নাক গলাতে পেরতেছিল। কিন্তু এই তত্ত্ব মেনে নেওয়া যায় না। এটাও বলার চেষ্টা হয়েছে সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণায়, পলাশীর অব্যবহিত পূর্বে নতুন নবাব সিরাজের নানান কাজে বাংলার অভিজাতদের শ্রেণীদের যুথবদ্ধ শ্রেণীগোষ্ঠীস্বার্থে আঘাত লাগে ফলে তারা ব্রিটিশদের সাহায্যে প্রত্যাঘাত করে। বলা দরকার অখণ্ড শ্রেণী স্বার্থ বলে কোনদিন বাংলায় কিছু ছিল না, সে অখণ্ড মঞ্চও বাংলায় গড়ে ওঠেনি, যাছিল তা হল ক্ষমতায় থাকা সর্বোচ্চ মানুষটির প্রতি একজন বা কয়েকজনের ব্যক্তিস্বার্থপূরণের প্রতিযোগিতা। মধ্যঅষ্টাদশ শতকে রাজনৈতিক পটভূমিতে কোন কিছুই ঘটা অস্বাভাবিক ছিল না। মুর্শিদকুলিখাঁর মৃত্যুর পরে প্রত্যেকটি সিংহাসন আরোহনের প্রশ্নে দেশের ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা অভিজাতরা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ত, এই ঘটনাটা পলাশীর সময়েও ঘটেছিল। পলাশীতে ব্রিটিশদের পাশে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী সিরাজের ক্ষমতা আরোহনের বিরোধিতা করে। আবার অন্যদিকে বহু জমিদার, ব্যবসায়ী এবং সামরিক অভিজাত সিরাজেরপাশে ছিল। মুর্শিদকুলির মৃত্যুর (১৭২৮/২৯) সময়েও একই বয়ান ছিল আবার সিরাজের সিংহাসনে ওঠার সময়েও একই বয়ান লক্ষ্য করা যায়। ফলে পলাশীকে কোনভাবেই বাংলার অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া যাবে না। 

যৌনতার বঙ্গ ভাষ্য

গর্গ লিখেছে
স্রেফ অসাধারন
যৌনতার এই বঙ্গ ভাষ্য
আমরা যারা ছোটলোক, যাদের জীবনে কাম আর কামকথা গুপ্ত এবং নিষিদ্ধ নয় ধরম ধরার ছাড়ার নয় তাদের কাছে এই তাতত্বিকতা খুব জরুরি
---
বাংলা চটি ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি
জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে ভাষা বনাম ধর্ম (বা ভাষা ছাড়া আর কিছু) - এই নিয়ে প্যাঁচাল-ক্যাঁচাল যারা করে, বা মনে করে জাতীয়তার আর কোনও ভিত্তি আছে, তারা কি বোঝে ভাষার মানে কি? ধরুন একজন হিন্দু ও একজন মুসলমান, তারা বাঙালী, পশ্চিমবঙ্গের। তারা মেশে। আরও মিশলে ভালো হত কিন্তু বাংলায় নেহাত কম মেশে না - আমি শহরের ঢপের মেশার কথা বাদ দিচ্ছি। তাদের মধ্যে এক স্কুলে যাওয়া আছে, বিকেলে একসাথে আড্ডা দেওয়া আছে। এক সাথে বয়ঃসন্ধিতে পা দেওয়া আছে, একরকম প্রজন্ম হিসেবে একসাথে যৌনতাকে চেনার অভিজ্ঞতা আছে। আমার মাতৃভাষা এই অতি নিবিড়, অতি প্রায়-ব্যক্তিগত কিন্তু অস্তিত্বের শর্তমূলক বৈশিষ্ট্যের সাথে সংযুক্ত। আমাদের কলেজ জীবনে “বাংলা চটি” বলে হোস্টেলে আদি-রসাত্মক বই ছিল, যা কিছু বাঙালী ও কিছু ক্ষেত্রে আদিবাসী ( যাদেরকে বাঙালী বুর্জোয়া শুধু ‘সাঁওতাল’ নামে চেনে, তা সে যে জাতি বা গোষ্ঠীরই হোক) ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল (এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে আরও এবং রাষ্ট্রীয় সীমান্ত আর প্রতিবন্ধকতা নয়)। সাংস্কৃতিক ভাবে বাঙালী না থাকা বাঙালীর সন্তান উচ্চবিত্তের জন্য লেখা নয়। তাদের যৌন-কল্পনা আমাদানিকৃত ও সীমিত। কিন্তু এই লেখা বাংলায় সমাজের বিরাট একটি অংশের কথা বলত, তাদের যৌন ফ্যান্টাসির কথা বলত বাংলার সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। সেখানে বড়লোকের বিবরণ খুব প্রকটভাবে একটি শ্রেণী-বিবরণ এবং একটি সাথে একটি স্বপ্নের বিবরণ। বাস্তবতা, কল্পনা ও যৌনতার এই সংযোগের মত এই গুরুত্বপূর্ণ মানব গঠন প্রক্রিয়ার ধারক বাংলা ভাষা। ওই আগের দুটি ছেলে, তারাও হয়তো একইসময়ে এই ধরনের বই পড়েছে। এই মুহূর্তে পড়ছে। হ্যাঁ, ওই চেতনাতেও বাংলা বেঁচে আছে। কিছুই ফেলনা নয়। এটা তো নয়ই। কারণ এই চেতনাবিশ্বে ভাবি ও বৌদি দুজনেরই উপস্থিতি। এবং না, দাঙ্গা হয়নি। বরং ধর্মান্তর না করেই ভাবিকে বৌদি ভাবা গেছে ও বৌদিকে ভাবি। পানি খসেছে না জল খসেছে, এ নিয়েও বিতর্ক হয়নি। হয়না। এতই নিভৃত সেই বিশ্ব। এবং এটা দুই বাংলার অনেক বাঙালী ছেলে, হিন্দু ও মুসলমান, উভয়েই জানে। এটা আজকের ২০১৭র সত্য। এই বিশ্বের কোন “রাজনৈতিক” নাম নেই। কিন্তু এরা আছে - কোটীতে। এদের এই যে মৌলিক চাহিদার কল্পনা ও প্রকাশ বিশ্বের ঐক্য, এর থেকে কাছাকাছি আর কে হতে পারে? এইখানেই ভাষা অনন্য। কিন্তু এই ঐক্যের কোন গুরুত্ব নেই। কারণ আমরা মানবতা ভুলে গেছি। আমরা পারস্পরিক ঘেন্নায় বাস করছি। ভাষার ঐক্য ভয়ানক ঐক্য। এর মানে ও সম্ভাবনা বিরাট। সকল বাঙালীর সেটা জানা উচিৎ। এসব পড়লে অনেকের মাথায় নানা সাম্প্রদায়িক আইডিয়া দিয়ে যা বললাম তা খণ্ডন করার কথা মাথায় আসবে। কে কাকে কবে কাঠি করেছিল। ভালো কথা। সেসব আমিও জানি। উভয়পক্ষেরই কিছু কিছু জানি। কিন্তু কথাটা ভেবে দেখবেন। যে মানুষের যৌন কল্পনার ভাষা ও তার বহু পঠিত উপাদান এক, তারা একে অপরের কৌতুক বোঝে, স্বপ্ন বোঝে, লজ্জা বোঝে, হিংসা বোঝে, লোভ বোঝে, খুশি বোঝে, ভণ্ডামো বোঝে, ভালোবাসা বোঝে, সোহাগ বোঝে। এইটা বড় কম কথা নয়। এর পরিমাপ হয় না। খাদ্য আর পানীয়র পর বাসস্থান আর যৌনতা তৃতীয় পজিশনের জন্য লড়াই করে। বাকি সব তার পরে। ধর্ম, রাষ্ট্র, সব।

Tuesday, December 26, 2017

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা - পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা - ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ৮ - সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - দশম অধ্যায়

সাম্প্রতিক কালে বলা হচ্ছে পলাশী চক্রান্তকে(সুশীলবাবু যদিও রেভলুশন কথা টা ব্যবহার করেছেন) বোঝার জন্য অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় হিন্দু/জৈন ব্যঙ্কিং আর সওদাগর শ্রেণীর সঙ্গে ব্রিটিশ ব্যবসার সঙ্গে সংযোগকে গভীরভাবে দেখতে হবে। কয়েক পাতা আগে আমি যাকে হিলের ভুত বলেছিলাম, সেই মানসিকতা যে গবেষকদের মাথা থেকে বিন্দুমাত্র নামেনি, এই তত্ত্বটা তার প্রকৃষ্ট প্রমান। সম্প্রতিককালে ব্রিজেন কে গুপ্ত (সুজাউদ্দৌলা বইতে - অনুবাদক) এই তত্ত্ব আমদানি করে বলছেন, ইন্দো-ইওরোপিয় সামুদ্রিক ব্যবসায় ‘a community of interest has developed between Hindu mercantile class and the European Companies' এই শ্রেণী স্বার্থই শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের হাতে বাংলাকে তুলে দেয়। সাম্প্রতিককালে আরও বলা হচ্ছে(C.A. Bayly, Indian Society, pp. 49-50, P.J. Marshall, Bengal, pp. 65) বাংলার ব্যবসা বিশ্বে ইওরোপিয় ব্যবসার হাত ধরে বিপুল পরিমানে দামি ধাতু বাংলায় আসতে শুরু করে, যার ফলে বাংলায় ব্যঙ্কিং ব্যবস্থা আর ইওরোপিয় সওদাগরেরা পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে শুরু করে, ইওরোপিয় স্বার্থের সঙ্গে বাংলার ব্যঙ্কিং ব্যবসার স্বার্থ জড়িয়ে যায়। এই তাত্ত্বিকেরা আরও বলার চেষ্টা করেন, বাংলার(উনি লিখছেন ভারতের) ব্যবসায়ী এবং জমিদারদের স্বার্থ ইওরপিয় স্বার্থের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে বাঁধা হয়ে পড়ছিল, তাই কলকাতা থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়ন ব্রিটিশ বন্ধু, বাংলার ব্যবসায়ী এবং জমিদারেরা মেনে নেয় নি, যার ফল পলাশী চক্রান্ত (লিখেছেন রেভলুশন) সফল হওয়া। ভারতীয়দের ঐতিহাসিকদের পক্ষ থেকে আসা এই জোট বন্ধন (কোলাবরেশন) তত্ত্ব আদতে পলাশী চক্রান্তে ব্রিটিশ অংশগ্রহণ অনেকটা লঘু করে ফেলে(সুশীলবাবু P.J. Marshall, Bengal, p.· 77  থেকে উদ্ধৃতি তুলে বলছেন 'By April it was clear to the British that there was a party pf malcontents in Bengal led by the Jagat Sei:hs who were prepared to. try to use British power to gain their ends.' এবং Rajat Kanta Ray 'Colonial Penetration and Initial Resistance', IHR, vol. XII, nos. 1-2, p.15. একই কথা বলেছেন)।
ওপরের সিদ্ধান্তে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য রয়েছে, যাদের বাস্তবতা সম্বন্ধে সাম্প্রতিক গবেষণা যথেষ্ট প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রথম উপপাদ্য হল পলাশীর আশেপাশের সময়ে অর্থাৎ ১৭৫৭র আগে আগে বাংলার ব্যবসা জগতে ইওরোপিয় বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণতম চলক ছিল। এ বিষয়ে সাম্প্রতিক কাজগুলি(আমার ক্ষুদ্র কাজ সমেত) আমাদের এই তত্ত্ব মানতে আমাদের বাধ্য করে(S. Chaudhuri, Trade and Commercial Organization; K.N. Chaudhuri,
Trading World; Om Prakash, Dutch Company)। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিরিন মুসভি এই তত্ত্বকে খারিজ করে জোর দিয়ে বলেছেন হয়ত বা অবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা ছিল, ইওরোপিয়রাই শুধু দামি ধাতু বাংলায় আনত না, এবং তারাই একমাত্র সব থেকে বেশি দামি ধাতুও আনত না(Shireen Moosvi, 'The Silver Influx, Money Supply, Ptices and Revenue Extraction in MughaHndia',JESHO, vol. XX~, 1Q87, pp. 92- 94.)। যে কোন সূত্রই আমাদের যে কোন গুণগত তথ্য দিক না কেন, অষ্টাদশ শতকের চতুর্থ আর পঞ্চম দশকে বাংলায় অবস্থিত এশিয় ব্যাপারীদের ব্যবসার পরিমান মোট ইওরোপিয়দের এশিয় ব্যবসার তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এটাও প্রমান করা যায়, দুটি মূল রপ্তানি পণ্য সুতিবস্ত্র আর রেশমে, বাংলার এশিয় ব্যবসায়ীদের অংশিদারি, ইওরোপিয়দের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ফলে আমাদের বলা দরকার ইওরোপিয়দের মতই এশিয়রাও বাংলায় প্রচুর দামি ধাতু নিয়ে আসত, এবং এই দামি ধাতু দিয়ে ব্যবসা করত, কারণ বাংলা বাজারে এছাড়া কোন পণ্য কেনা যেত না। ফলে ইওরোপিয়রা বাংলার সব থেকে বড় দামিধাতু আমদানি করত এই ভিত্তিহীন তত্ত্বের কোন মূল্য নেই এবং ইওরোপিয় বাণিজ্যের ওঠাপড়ার সঙ্গে পলাশী বিপ্লবের সম্বন্ধও প্রশ্নের মুখে।

দ্বিতীয় উপপাদ্যটাও একইভাবে অনিশ্চিত এবং প্রশ্নবোধক হয়ে রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইওরোপিয় কর্পোরেটদের সঙ্গে বাংলার বণিক আর জমিদারদের ভাগ্য ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল, এবং যেহেতু পলাশীর আগে ইওরোপিয়রা ছিল বাংলার মুখ্য রোজগার সূত্র, তাই ইওরোপিয়দের আনা সম্পদের সূত্রে, বা ইওরোপিয়দের সঙ্গে ব্যবসা সূত্রে বাংলার বাণিকদের ক্ষমতায় আরোহণ। অথচ এর আগে আমরা দেখিয়েছি, বাংলার ব্যবসা জগতে ইওরোপিয়রা মুখ্যভূমিকায় ছিল না বরং তাদের তুলনায় বাংলার এশিয় সওদাগরেরা বাংলা ব্যবসা ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ফলে এশিয় বণিকদের ভাগ্য ইওরোপিয় কর্পোরেট বা সামগ্রিক ইওরোপিয় ব্যবসার সঙ্গে এক সুতোয় ঝুলেছিল এমন কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। আমার এই তত্ত্বকে প্রমাণিত করা যায় বাংলার তখন তিন সব থেকে বড় সওদাগর, জগতশেঠ, উমিচাঁদ এবং খ্বাজা ওয়াজিদ – এরা তিনজন পলাশী চক্রান্তের গুরুত্বপূর্ণতম খেলোয়াড়। ১৭৫৭য় লুক স্ক্র্যাফটন হিসেব দিয়ে বলছেন, জগতশেঠ পরিবারের বাৎসরিক আয় ছিল ৫০ লক্ষ টাকা, যার মধ্যে কোম্পানির বাংলায় আনা দামিধাতু থেকে মুদ্রা তৈরির বাটা এবং ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোকে দেওয়া ধারের সুদ সূত্রে রোজগার হত খুব বেশি হল ১৫ লক্ষ টাকা। এর পরে কি করে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি জগতশেঠের গদির ভাগ্য নির্ভর করত একমাত্র ইওরোপিয়দের আনা দামি মুদ্রার বাটার ওপরে! একইভাবে উমিচাঁদ এবং খ্বাজা ওয়াজিদ যদিও ইওরোপিয় ব্যবসার সঙ্গে অনেক গভীরভাবে যুক্ত ছিল, কিন্তু তাদের মূল রোজগার ছিল বাংলার নুন আর সোরার একচেটিয়া ব্যবসা থেকে। এছাড়াও উমিচাঁদ আফিম এবং শস্য ব্যবসায় হাত দেন আর খ্বাজা জড়িয়ে ছিল সুরাট, লোহিত সাগর এবং পারস্য উপসাগরীয় ব্যবসায় তার নিজের বিপুল বাণিজ্য বহর নিয়ে। এইসব উদাহরণে আমাদের ধারণা হয় না যে বাংলার ব্যবসা সংগঠন কোনভাবে ইওরোপিয় ব্যবসার সংগঠনের ভাগ্যের সঙ্গে সমানুপাতিকহারে জড়িয়েছিল। 

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা - পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা - ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ৭ - সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - দশম অধ্যায়

ফরাসী ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত, কলকাতা ভিত্তিক ব্রিটিশ ব্যক্তিগত(বিশেষ করে কোম্পানি আমলাদের) ব্যবসা পতনের বড় কারণ। ১৭৫২ সালে কলকাতাবাসী ক্যাপ্টেন ফেনউইক লিখলেন, The French it is probable are now in their zenith of trade in Bengal। ডাচ মহাফেজখানায় জাহাজের তালিকা থেকে প্রমান হয় ১৭৫০এর মাঝামাঝি সময়ে বাংলা থেকে চরম শক্তিশালী ফরাসি ব্যবসায়িক জাহাজের বহর ব্রিটিশদের চরম প্রতিযোগিতায় ফেলে দেয় এবং ব্যবসায় ব্রিটিশ প্রাধান্য খর্ব হতে শুরু করে। ১১.২ তালিকায় ১৭৫০এর মাঝামাঝি সময়ের ব্রিটিশ-ফরাসি জাহাজের তালিকা আমার তত্ত্ব প্রমান করতে সাহায্য করবে, তবে তালিকায় কতগুলি শূন্যস্থান থাকায় পরিপূর্ণ সিদ্ধান্তে আসা গেল না।
আলোচ্য তালিকা আমাদের বলে ১৭৫০এর মাঝামাঝি সময়ে ফরাসী ব্যক্তিগত ব্যবসা ডুপ্লের স্বর্ণিল সময়কেও ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। ১৭৫৪ সালে কলকাতায় আসা মোট ব্রিটিশ জাহাজের সংখ্যা ছিল ২০টি(১২টি কোম্পানির, মাত্র ৮টা ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের)। উল্টোদিকে ফরাসী ২৭টি জাহাজের মধ্যে ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদেরই জাহাজ ছিল ২২টা। ১৭৫১ সালে ব্রিটিশ জাহাজের মোট টনেজ ছিল ৭৪২০ টন, সেখানে ১৭৫৪ সালে ফরাসিদের মোট ব্যবসা ছিল ১০৪৫০ টন আর ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের অর্ধেক ৫০২০ টন, আর ফরাসি ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের টনেজ ছিল ৭৪৫০ টন। এর থেকেও প্রমান হয় ফরাসীদের ব্যবসা বিপুলভাবে বেড়েছে।

ব্রিটিশদের ব্যক্তিগত ব্যবসাকে খর্ব করছিল ফরাসীরা, এই তথ্য ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে ভীত করেছিল। ব্রিটিশ ব্যবসায় পতন রুখতে নানান ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রথমটি হল ১৭৫০এর দস্তক সংস্কার, যাতে এশিয় আর ফরাসী ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীরা সেটি ব্যবহার না করতে পারে। তাদের উদ্দদেশ্য ছিল পরিষ্কার ব্রিটিশ আমলা ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেউ এই কর ছাড়ের সুবিধে না পায়। এছাড়াও ১৭৫৩ সালে কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যবসা ছাড়পত্র, ট্রেডিং পাস দেওয়ারও প্রথা শুরু করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যাতে বন্দরে ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের কর দিতে না হয়। কলকাতার কোম্পানির ব্যবসায়ী কর্মচারীদের বাইরে থাকা ব্যবসায়ী জন উড এই প্রথাতে রেগে লেখেন, এর ফলে কোম্পানির কর্মচারীরাই শুধু একচেটিয়া সমুদ্রপথ ব্যবসা করতে পারবে। কোম্পানির দস্তক আর ট্রেডিং পাস সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে জুড়ল ১৭৫৩র বিনিয়োগে দাদনি প্রথা থেকে গোমস্তা প্রথায় সরে আসা। এই যে সংস্কারের ঝড় চলল ফোর্ট উইলিয়ম কান্সিলের পক্ষে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এর কারণ হল কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রচেষ্টা। এতক্ষণ আমরা যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করলা সেটি হল, এক দিকে বাংলা আর অন্য দিকে ফরাসী চন্দননগর দখল করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির বাংলা-আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসার স্বার্থকে বজায় রাখা। 

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা - পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা - ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ৬ - সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - দশম অধ্যায়

১৭৪০এর প্রথমের দিকে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা এতই কোণঠাসা হয়ে পড়ে যে ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল ফরাসিদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ আনে। ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা উদ্ধারে ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল, চন্দনগরের মূল ফরাসি বসতির সঙ্গে সমস্ত রকমের ব্যবসায়িক যোগাযোগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৭৪২ সালে কাউন্সিল এই প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করে, The French having for· some time past been of great disservice to the private trade of this place by the assistance and· supply of money and goods that they have had from Calcutta ·and more particularly to the ports of Judda, Mocha and in the Gulph of Persia and as we have ships bound this year ,to those places. In order therefore to prevent any ill consequence in future such as we have formerly experienced thereby.
Resolved that no merchants of this place white or black either in the Company's service or otherwise under their protection be permitted to sell or furnish the French with any sortments of goods whatever o~ to freight goods on any of the French ships bound out of this river. ... ।(Virginia M. Thompson, Dupleix)
চন্দননগরের গভর্নর হিসেবে থাকাকালীন ডুপ্লে, I made the English tremble for they saw their commerce dwindling and their merchants forced to declare themselves bankrupt. I accomplished all this' in nine years যে লেখাটি লেখেন সেটিকে কি শুধুই বাগাড়ম্বর হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া যায়?
১৭৫০এর প্রথমপাদ থেকে ব্রিটিশ কর্পোরেট কোম্পানি আর ব্যক্তিগত ব্যবসা দুরন্ত সঙ্কটের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। ১৭৪৮ সালে ব্রিটিশ-ফরাসি যুদ্ধের শেষে এবং মারাঠা আর বাংলার নবাবের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি হল, তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার যে ফরাসী আর এশিয় ব্যবসায়ীরা বাংলার আন্তঃএশিয় ব্যবসায় নতুন করে জাঁকিয়ে বসার সুযোগ পেল। বাংলা ব্যবসাকে নতুন উদ্যমে ঢেলে সাজাতে শুরু করল ফরাসীরা হুগলী, কাশিমবাজার, ঢাকা এবং পাটনায় কুঠি খুলে। এর সঙ্গে জুড়ল আর্মেনিয় সহ অন্যান্য এশিয় ব্যবসায়ীদের কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বাংলার মুদ্রা ব্যবস্থার সঙ্কুচনে কোম্পানির পক্ষে বিশেষ করে শেঠেদের মোকামের গদি থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছিল, ৪০এর দশক থেকে কোম্পানি যে ধার নিয়েছে আগে সেগুলি শোধ করলে আগামী দিনে ঋণ পাওয়া যাবে, তারা এমনও শর্ত দিল ব্রিটিশদের।

ব্যক্তিগত ব্যবসা ক্ষেত্রটা খুবই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছিল বাংলায়। consulageএর(বাণিজ্যে যেতে নির্দিষ্ট দেশের দূতাবাসকে দেওয়া শুল্ক) দ্রুত পতনের ফলে কলকাতায় ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা ঢালুর দিকে যেতে থাকে। সে সময়ে কলকাতার দায়িত্বে থাকা রবার্ট ওরমে বন্ধু রবিনসকে লিখছে, The consulage in years of extensive trade used to be from 20 to 30 thousand rupees to the best of my memory, it is now scarce 5· or 6 clear। ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের প্রধান সদস্য চার্লস ম্যানিঙ্গহ্যাম আর উইলিয়ম ফ্রাঙ্কল্যান্ড ক্লাইভকে লেখা চিঠিতে যতদূর সম্ভব ব্যক্তিগত ব্যবসার পতন সম্বন্ধে মন্তব্য করেছে, ... the situation of trade since you left us has continued so bad

Monday, December 25, 2017

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ৫ সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - দশম অধ্যায়

বাংলায় ১৭৫৬-৫৭য় চলা ব্রিটিশ-নবাব দ্বন্দ্বকে বুঝতে গেলে আমাদের দুর্গ তৈরি আর দস্তক ব্যবহারের দুর্নীতির বিষয় আলোচনার বাইরেও বেরোতে হবে। ব্রিটিশ-নবাব দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত এই গোলযোগকে আরও ভালোভাবে বোঝা যায় যদি কোমপানির ব্যবসা আর ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসাকে আমরা নবাবি প্রশাসন এবং ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের মধ্যের নাজুক সম্পর্কর ভিত্তিতে দেখার চেষ্টা করি। ব্রিটিশেরা কলকাতায় বাস শুরু করার পর কলকাতা কোম্পানি আর তার আমলাদের ব্যক্তিগত আন্তঃএশিয় ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠল। কলকাতা ১৭২০র মাঝামাঝি থেকে শুরু করে মধ্য ১৭৩০ পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসার স্বর্ণালী সময়। কিছু প্রাসঙ্গিক চলকের প্রভাব ব্রিটিশ ব্যবসার সহায়ক হয়ে ওঠে। যে বাজারে তারা ব্যবসা করত, সেটা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এবং তারা নির্ভর করত কলকাতা, বম্বে, মাদ্রাজের এক ঝাঁক ব্যক্তিগত ঋণদান ব্যঙ্কার আর এশিয় ব্যবসায়িক সংগঠনের ওপর। তিনটি প্রেসিডেন্সির কোম্পানি আমলাদের মধ্যে গভীর বোঝাপড়া ছিল, তাদের ব্যবসায়ীক সংগঠন এবং অংশিদারিত্ব আর অভিজ্ঞতা ব্যবসার পরিমান বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। এছাড়াও ডাচ ও ফরাসী ব্যবসায়ীদের উচ্চ ৫০% লাভের বিপরীতে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসায়িকরা প্রত্যেক সমুদ্রযাত্রায় মাত্র ২০% লাভ রেখে মালপত্র ছেড়ে দিতেন। এছাড়াও কোম্পানির কর্মচারীরা দস্তক আর ফরমানের আড়াল নিয়ে বিভিন্ন বন্দরে, এশিয় বণিকদের তুলনায় অনেক শস্তায় ব্যবসা করতে পারত। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, ১৭৪০ সালে হুগলির আরমেনিয় ব্যবসায়ি খ্বাজা ওয়াজিদ ফরাসী পতাকা তুলে বসরার উদ্দেশ্যে জাহাজ ছাড়েন তার একটাই কারণ সেখানে ফরাসীরা ৩ শতাংশ শুল্ক দিত আর এশিয়রা দিত ৬ শতাংশ শুল্ক।
কিন্তু কলকাতা থেকে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা ১৭৩০এর পরে দ্রুত কমতে শুরু করে। আর চন্দননগরের উৎসাহী ফরাসী নেতৃত্ব আর ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীরা ডুপ্লের নেতৃত্বে বিপুল উদ্যমে ব্যবসা করতে শুরু করলে ১৭৪০এর পরে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা চরম দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে থাকে। মধ্য ১৭৩০ থেকে চন্দননগরের ফরাসী কর্তৃপক্ষ ১৭২০র পরের খাদে পড়া ব্যবসা টেনে তুলতে শুরু করে এবং তার ব্রিটিশ ব্যবসার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। প্রাথমিকভাবে ফরাসী আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকলেও ১৭২২এর পরে তাদের সেই সুযোগ করে দেওয়া হয়। ফলে ক্রমশঃ তারা ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে শুরু করে। ডুপ্লে নিজে সরাসরি আন্তঃএশিয় ব্যক্তিগত ব্যবসায় যোগ দেওয়ায় এবং ফরাসী ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেওয়ায় ফরাসী ব্যবসা উদ্যম বিপুল বেড়ে যায়। চন্দননগরে ডুপ্লের প্রাথমিক উদ্যম রাজনৈতিক ছিল না, ছিল ব্যবসায়িক। ১৭৩১ সাল থেকে ১৭৪২ পর্যন্ত ডুপ্লে অন্তত ৯০টা সমুদ্র যাত্রা আয়োজন করেছে। সে যে ধরণের জাহাজের চরিত্র বেছেছে, তা Holden Furber(John Company)এর তত্ত্ব অনুযায়ী সে সময়ের ভারতীয় এশিয় ব্যবসার ট্রন্ড অনুযায়ী মূলতঃ পূর্ব-পশ্চিম দিকমুখী।

বাংলার এশিয় ব্যবসায় ফরাসিরা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ অংশিদার হয়ে উঠছে ব্রিটিশদের তুলনায়, সেটা মোটেই ব্রিটিশদের পছন্দের বিষয় ছিল না। ফলে ব্রিটিশ-ফরাসী ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকল। ১৭৪০এর প্রথমের দিকে বাংলায় ব্রিটিশদের প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে থাকে। এই দ্বন্দ্বটির মূল সূত্রটি আমি উল্লেখ করেছি ১১.১ তালিকায় যেখানে আমরা বাংলা থেকে ছাড়া ব্রিটিশ-ফরাসি জাহাজের তথ্য দেখব।

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা - পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা - ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ৬ - সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - দশম অধ্যায়

১৭৪০এর প্রথমের দিকে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা এতই কোণঠাসা হয়ে পড়ে যে ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল ফরাসিদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ আনে। ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা উদ্ধারে ফোর্টউইলিয়াম কাউন্সিল, চন্দনগরের মূল ফরাসি বসতির সঙ্গে সমস্ত রকমের ব্যবসায়িক যোগাযোগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৭৪২ সালে কাউন্সিল এই প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করে, The French having for· some time past been of great disservice to the private trade of this place by the assistance and· supply of money and goods that they have had from Calcutta ·and more particularly to the ports of Judda, Mocha and in the Gulph of Persia and as we have ships bound this year ,to those places. In order therefore to prevent any ill consequence in future such as we have formerly experienced thereby.
Resolved that no merchants of this place white or black either in the Company's service or otherwise under their protection be permitted to sell or furnish the French with any sortments of goods whatever o~ to freight goods on any of the French ships bound out of this river. ... ।(Virginia M. Thompson, Dupleix)
চন্দননগরের গভর্নর হিসেবে থাকাকালীন ডুপ্লে, I made the English tremble for they saw their commerce dwindling and their merchants forced to declare themselves bankrupt. I accomplished all this' in nine years যে লেখাটি লেখেন সেটিকে কি শুধুই বাগাড়ম্বর হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া যায়?
১৭৫০এর প্রথমপাদ থেকে ব্রিটিশ কর্পোরেট কোম্পানি আর ব্যক্তিগত ব্যবসা দুরন্ত সঙ্কটের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। ১৭৪৮ সালে ব্রিটিশ-ফরাসি যুদ্ধের শেষে এবং মারাঠা আর বাংলার নবাবের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি হল, তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার হল যে ফরাসী আর এশিয় ব্যবসায়ীরা বাংলার আন্তঃএশিয় ব্যবসায় নতুন করের জাঁকিয়ে বসার সুযোগ পেল। বাংলা ব্যবসাকে নতুন উদ্যমে ঢেলে সাজাতে শুরু করল ফরাসীরা হুগলী, কাশিমবাজার, ঢাকা এবং পাটনায় কুঠি খুলে। এর সঙ্গে জুড়ল আর্মেনিয় সহ অন্যান্য এশিয় ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বাংলার মুদ্রা ব্যবস্থার সঙ্কুচনে কোম্পানির পক্ষে বিশেষ করে শেঠেদের মোকামের গদি থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছিল, ৪০এর দশক থেকে কোম্পানি যে ধার নিয়েছে আগে সেগুলি শোধ করলে আগামী দিনে ঋণ পাওয়া যাবে, তারা এমনও শর্ত দিল ব্রিটিশদের।

ব্যক্তিগত ব্যবসা ক্ষেত্রটা খুবই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছিল বাংলায়। consulageএর(মানে কি?) দ্রুত পতনের ফলে কলকাতায় ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসা ঢালুর দিকে যেতে থাকে। সে সময়ে কলকাতার দায়িত্বে থাকা রবার্ট ওরমে বন্ধু রবিনিসকে লিখছে, The consulage in years of extensive trade used to be from 20 to 30 thousand rupees to the best of my memory, it is now scarce 5· or 6 clear। ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের প্রধান সদস্য চার্লস ম্যানিঙ্গহ্যাম আর উইলিয়ম ফ্রাঙ্কল্যান্ড ক্লাইভকে লেখা চিঠিতে যতদূর সম্ভব ব্যক্তিগত ব্যবসার পতন সম্বন্ধে মন্তব্য করেছে, ... the situation of trade since you left us has continued so bad

ব্রিটিশপূর্ব বাংলা - পলাশীতে ইংরেজদের ভূমিকা - ব্যবসা, দামিধাতু এবং ক্ষমতায় আরোহণ৪ - সুশীল চৌধুরী - ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন - দশম অধ্যায়

উপসাম্রাজ্যবাদিতার তত্বতে আমরা ফিরে যাই। ১৬৬৯ সালেই সুরাতের প্রেসিডেন্ট এবং বম্বের গভর্নর জেনারেল অঙ্গিয়ার শান্তিপূর্ণ ব্যবসাদার থেকে কোম্পানিকে শস্ত্র নির্ভর ব্যবসায়ীতে রূপান্তরের ডাক দিল যাতে ভারতবর্ষে কোম্পানির ব্যবসা স্থায়ী হতে পারে। ১৬৭৭ সালে তিনি কোর্ট অব ডায়রেক্টর্সকে লিখল, Justice 'and necessity of your estate now require that in violent distempers, violent cures are only successful that the times now require you to manage your general commerce with your sword in your hands। অঙ্গিয়ারের ডাকে লন্ডনে বসে থাকা কর্তাদের কানে জল গেল। আগ্রাসী গর্ভর্নর জশুয়া চাইল্ড ভারতে এগিয়ে যাওয়ার নীতি(forward policy) নেওয়ার ডাক দিলেন। একই সঙ্গে এজেন্ট হেজেস বাংলায় এবং স্যর জন চাইল্ড সুরাটে বহুকাল ধরেই কোম্পানির বসতি সুরক্ষা করেই(দুর্গ প্রতিষ্ঠা করে) ব্রিটিশ ব্যবসা বাড়াবার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন।
১৬৮০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুঘল ভারতে লক্ষ্যগুলির মধ্যে অন্যতমটি ছিল বাংলার বসতিকে দুর্গিকরণ। কোর্ট অব ডায়রেক্টর্স লিখল, We shall be exceeding glad to hear you have obtained a
fortified settlement in Bengal, which if it pleases God to grant us, we would have you cultivate with all the vigour and strength you can; that we may be well fixed and settled, in a good posture of defence before the Dutch can form any design to drive us out; which may. be a means to prevent any attempts from them as well as to secure our interest if they should attempt to disturb us under any colour or pretence ....
আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচ্য বিষয় হল, যুদ্ধটা তারা করতে চাইছিল ভারতে বাণিজ্য চালাবার জন্যে, এবং এই কথাবার্তা ১২ ডিসেম্বর ১৬৮৭ সালের ফোর্ট সেন্ট জর্জএর কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট লন্ডনের কর্তাদের লিখল That which we promise ourselves in a most especial manner from our new President and Council is that they will establish such a politie of Civil and Military power, and create and secure such a large revenue to maintain both at, that place, as may be the foundation of a.large, tvell grounded, sure English dominion in India for all time to come.
ভারতে বিস্তৃত, সুরক্ষিত এবং শক্ত ভিত্তিভূমির ওপরে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপনে মাদ্রাজ কাউন্সিল যে স্বপ্ন দেখছিল, সেটি সফল হল সত্তর বছর পর। ফলে ১৭৫৭র বিজয় কি করে অনভিপ্রেত এবং দুর্ঘটনাপ্রসূত বলা যায়?

মুঘলদের সঙ্গে ব্রিটিশদের যুদ্ধ অসম্ভব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল, ফলে বাংলা বা অন্য কোথাও তাদের বসতিতে দুর্গ স্থাপন করা সম্ভব হল না। কিন্তু সপ্তদশ শতকের শেষে, বাংলায় কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনায় দুর্গ তৈরির ব্রিটিশ স্বপ্ন সফল হওয়ার দিকে এগোল। ১৬৯৬ সালের শোভা সিঙ্গির উৎপাতের ফলে বাংলার সামরিক নেতৃত্ব, মুঘল সুবাদার খুব চিন্তিত হয়ে প্রত্যেক ইওরোপিয়কে দুর্গ তৈরির পরামর্শ দিলে ব্রিটিশেরা খুব তাড়াতাড়ি এই পরামর্শর পথ ধরে দুর্গ তৈরির পরিকল্পনা আঁচতে থাকে। এটা ব্রিটিশদের দুর্গ তৈরির প্রথম পদক্ষেপ এবং বহুসময় তারা নবাবের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে দুর্গ তৈরি এবং তাকে জোরদার করার কাজে এগিয়ে গিয়েছে। ১৭৫৬-৫৭ সালে নবাবা আর ব্রিটিশ দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ ছিল দুর্গ কেন্দ্রিক।

ইংরেজি পারি না, দয়া করে লিখতে বলবেন না


ইংরেজি পারি না, দয়া করে লিখতে বলবেন না। বাঙালি এতদিন বিশ্বকে ইংরেজিতে জ্ঞান দিয়েছে। এবার বাংলায় বাঙালি শুনুক। বিপ্লব দুয়ারেই চাই।
মন্তব্যগুলি
Baidurya Mallik dada apnar english lekha ami dekhechi..jothesto porinoto o prosongshoniyo
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda বরং কুড়মালি, রাজবংশী, সাঁওতালি... আমার কত প্রতিবেশী, কত ভাষা, শিখব, লিখব... 
নারায়ণ মাহাতরা চিসঈ লিপি তৈরি করেছে কুড়মালির জন্য সেটা শিখব।
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda শেষ করা যাবে না - আরও কত কি। অবশ্যই। আমার যৌবনে সিদ্ধার্থ চাকমা বন্ধু ছিলেন। ভাষা বাদে কত কিছু শিখেছি তাঁর কাছে।
পরিচালনা করুন
Farida Majid ingreji hatuRe pashe thak. ei je jaemon aekhon ami Bangla keyboard pacchi na browser-e . . .
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda কোন ভাষার সঙ্গেই বিরোধিতা নেই। ইংরেজিতে কত কিছু তো পড়ি।
পরিচালনা করুন
Anirban Pan মারামারি ফাটাফাটি বাঙলাতেই হোক না...
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda ভদ্র বাঙালি বাংলা বলুক, লিখুক - ইংরেজি ছাড়া তার জীবন অচল এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুক।
পরিচালনা করুন
Uddipan Nath Ekta Daarun..inspirational Bangla medium school toiree korte hobe
পরিচালনা করুন
Uddipan Nath Mother tongue based medium of instruction taa k mainstream korte Hobe. Dorkaar ekhaaneo engineering of consent er
পরিচালনা করুন
Uddipan Nath Mother tongue based education taa k livelihood er saathe link korte Hobe. Promaan korte hobe j respectfully, responsibly o shachhal bhaabe beche thaakar jonno Mother tongue education khuub dorkaar. Tabei...maanush firey ashbe taar roots e..daam debe taar maatri bhasha ke
পরিচালনা করুন
Nazrul Islam বাংলায় আমি বাংলা চায় ৷ আমি বাংলা ভালোবাসি ৷ যে ভাষায় আমি কথা বলি ৷ আমাদের সংস্কৃতির জয় হোক ৷৷
পরিচালনা করুন
Dipankar Shibu প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা অবশ্যিক করা দরকার। আর দরকার ভাষার প্রতি ভালোবাসা তৈরি করা। ভাষাকে জটিল করে না তুলে সহজ করা যায় কীভাবে সেটা দেখা দরকার। বাংলা দেশের বই পত্র সহজ লভ্য হওয়া উচিত। আমরা এখন সহায়িকা প্রকাশনিতে খুব নাম করেছি। 
এখন অন্তত দুটি
 ভাষা জানা দরকার। এতে সুবিধে হয়। বাংলার সাথে ইংরেজি না হিন্দি শিখব সেটাই প্রশ্ন। আমার পছন্দ ইংরেজি কারণ এটা মোটা মুটি সারা বিশ্বেই চলে। তাছাড়া এটা একটা বেশ প্রাচীন ভাষা।ইংল্যান্ড যখন বহিঃবিশ্বে রাজত্ব বিস্তার করেনি তখন ও এই ভাষা ছিল। তাই ইংরেজিকে আমি উপনিবেশিক ভাষা বলতে রাজি নই। কিন্ত হিন্দি হচ্ছে উপনিবেশিক ইংরেজ বণিকদের নির্মাণ করা ভাষা ! তাই হিন্দির প্রতি কোন মোহ নেই আমার।
পরিচালনা করুন