Wednesday, December 20, 2017

ব্রিটিশপূর্ব বাংলায় ব্যবসা - বাংলার ব্যবসা সঙ্গঠন - এশিয় ব্যবসায়ী এবং বস্ত্র রপ্তানি১

বহুকাল ধরে ঐতিহাসিকদের মধ্যে একটা ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে যে দীর্ঘকাল ধরে ইওরোপিয় দুটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ আর ডাচ, অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা থেকে বিপুল পরিমান বুনন রপ্তানি করত। যেহেতু কোম্পানিদের হিসেবের খাতায় বাংলার বুনন ছিল সব থেকে বড় পরিমান, তাই মোটামুটি ধারণা করে নেওয়া হয়েছে যে ইওরোপিয় কোম্পানিদের বুনন রপ্তানি, সেই সময়ের বাংলার অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। ফলে এই উপপাদ্য হিসেবে ধারনা করে নেওয়া হয়েছিল যে বাংলা থেকে এশিয় ব্যবসায়ীদের সব ধরণের বুনন রপ্তানি, ইওরোপিয়দের তুলনায় প্রায় নগণ্য ছিল। সাম্প্রতিক দুটি কাজ থেকে আমি উদাহরণ তুলে এই তত্ত্বের মোদ্দা বক্তব্য বোঝাতে চেষ্টা করব, The development of European trade with Bengal in the late seventeenth century had the effect of shifting the balance radically in favour of the seaborne trade. During the first half of the eighteenth century Europe was unquestionably Bengal's chief trading partner and its textile industry had not only expanded at a rapid rate to keep pace with the increased demand but had also fully adjusted its output, to the special specifications required for selling in Europe.(সূত্র K.N. Chaudhuri, Trading World, p. 24 বাঁকা অক্ষর সুশীলবাবুর)।
আরেকজন বিশেষজ্ঞও দক্ষিণ ভারত বিষয়ে প্রায় কাছাকাছি মন্তব্য করেছেন Before the Europeans came into the textile market, trade in textiles was erratic, seasonal and highly unpredictable .... In such a demand situation,, the weaver could work at leisure and weaving could be carried out side-by-side with cultivating the fields. This in itself contributed to keeping down the price of textiles·. The increased and regular demand caused by the entry of Europeans into the market created more and steady work for weavers ....(সূত্র Arasaratnam, 'Weavers, Merchants and Company', IESHR, vol. XVII, no. 3, p. 262 বাঁকা অক্ষর সুশীলবাবুর)।
সাম্প্রতিককালে আরও একজন গবেষক এই ধরণের মন্তব্য করেছেন যে ইয়োরোপীয় কোম্পানিগুলি বাংলায় ব্যবসা করতে আসার বাংলার আয়, উৎপাদন এবং কর্মনিয়োগ বৃদ্ধি পায়; এবং সে জন্য প্রায় ১ লক্ষ নতুন কাজ সৃষ্টি হয় বাংলায়(সূত্র Om Prakash, Dutch ·Company, pp.242-48, 256। সুশীলবাবু বলছেন, ওম প্রকাশের সমালোচনা তিনি করেছেন European Companies and the Bengal Textile Industry in the Eighteenth Century : The Pitfalls of Applying Quantitative Techniques', MAS, May 1993, pp. 321-40 প্রবন্ধে, আর তার সমালোচনার জবাবে ওম প্রকাশের উত্তর দেখতে একই পত্রিকা দেখতে বলছেন MAS1 pp.34l-56.)। এর একটা বড় কারণ হল এশিয় বণিকদের বাংলার বুনন রপ্তানি বিষয়ে পরিমানগত তথ্যের অভাব এবং হয়ত সব থেকে বড় কথা যে সব গবেষক এই ক্ষেত্রে কাজ করেন, তাদের ইওরোপিয়কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী।

অবশ্যই যে সময়ের কথা আমরা আলোচনা করছি তাতে অবশ্যই বলা দরকার সে সময় বাংলায় ইওরপিয় কোম্পানিগুলি বেশ বড় পরিমানে বস্ত্র রপ্তানি করত, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা এশিয় ব্যবসায়ীদের তুলনায় অনেক বেশি বস্ত্র রপ্তানি করত। ওপরের আলোচনায় আমরা শুধু সমুদ্র বাণিজ্যই দেখেছি, স্থলপথের বিপুল বাণিজ্য, যার পরিমান বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সেটি নিয়ে আলোচনাই করি নি। সাধারণভাবে মোটামুটি ধারণা করা হয় যে মুঘল, অটোমান এবং পারসি সাম্রাজ্যের পতন এবং একই সঙ্গে সুরাট বন্দরের মত গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের পতনে, ভারতজোড়া স্থল বাণিজ্য বিনষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া আরও একটা বড় কারণ হল ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির রপ্তানির পরিমানের বিপুল তথ্যের বিপরীতে এই স্থল বাণিজ্য উদ্যমগুলির ক্ষেত্র মাপনে যথেষ্ট পরিমান গুণগত তথ্যের অভাব। যে সব গুণগত এবং পরিমানগত তথ্য আমাদের হাতে আছে(এবং আরও ইওরোপিয় এবং দেশিয় তথ্য আগামী দিনে উদ্ধার হবে) সে সূত্রে বলতে পারি, এমনকি মধ্য অষ্টাদশ শতকেও ইওরোপিয়দের তুলনায় এশিয় বণিকদের রপ্তানি করা বুননের পরিমান যথেষ্ট বেশি ছিল। 

No comments: