Wednesday, December 20, 2017

ব্রিটিশপূর্ব বাংলায় ব্যবসা - বাংলার ব্যবসা সঙ্গঠন৭

দালালদের ক্ষমতার গল্প৭

কাশিমবাজারের দালালেরা
বাস্তবে অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোর বাংলার অর্থনৈতিক কাজকর্ম সামলাতে বাংলা দালালেরা তাদের পুঁজির ব্যবস্থা করত। একজন দালাল-ব্যবসায়ী আদতে দেশিয় ব্যবসায়ী আর কেন্দ্রিভূত ব্যবস্থাসম্পন্ন ইওরোপিয় কোম্পানির মধ্যেকার কার্যকর যোগসূত্র। ওস্টেনড কোম্পানির বাংলা প্রধান হিউম ১৭৩০ সালে লিখছেন, The Efiglish and Dutch, who'are' the greatest Traders in this Country, do their business wholly by their Brokers who are their principal merchants. Notwithstanding they have num~
hers of Rich men Established in their bounds, who need no, Security but they find their business the best regulated by having their Merchants act in Concert, by means of their Broker, everyone taking upon him according to his force, they know one another better than they can be known by Europeans
তারা দালাল হওয়া সত্ত্বেও হিউম বলছে, এরা দাদনি বণিক ছিল, এরা তাদের নিজেদের নামে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করত। এই ব্যবস্থার সুবিধে সম্বন্ধে হিউম বলছে, By which you secure yourselves from having a Cabal being formed among your Merchants, to prejudice you in the price of your goods
দালালেরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কোম্পানির যোগাযোগের সূত্র ছিল। তারা মধ্যস্থ হয়ে প্রসাসনের সঙ্গে বিবাদ নিরসনের চেষ্টা করত। দালালের পদটা এতই গুরুত্বপূর্ন ছিল যে স্থানীয় শাসকেরাও তাদের কাজকর্মের সুবিধের জন্য দাদাল নিযুক্ত করত। কোম্পানিরাও নজরে রাখত দরবারে কোন দালালের বেশি প্রভাব আছে, তাদের তারা নিযুক্ত করত। দালালদের প্রভাবের একটা উদাহরণ দেওয়া যাক কোম্পানির দালাল, সাবরা মারা যাওয়ার পরে ঢাকার কাউন্সিল তার ভাইপো মাণিকচাঁদকে নিযুক্ত করা হল, কেননা কাউন্সিল লিখছে সে great solicitations have been made to us by the Dellols and Persons of the Greatest Importance। ঢাকা কাউন্সিল not being able to find out a more proper person having great Interest at the Durbar, worth some money and much esteemed in the place বলে ২৭ জানুয়ারি ১৭৩৮ সালে মাণিকচাঁদকে ঢাকার দাদা হিসেবে নিযুক্ত করা হল।
ওপরের উদাহরণ আর বিশ্লেষণগুলি নির্ভর করে সে সময়ের বাংলার অর্থনীতির বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এই মানুষদেরে অবদান আলোচনা করা যাক। এরা মধ্যশ্রেণী, যারা কোম্পানির বিনিয়োজিত অর্থের বিনময়ে পণ্য জোগাড় করে দিত, তারা কোম্পানির কর্মচারী এবং অধস্তন ছিল ঠিকই কিন্তু কোম্পানির আজ্ঞাবহ ছিল না। তারা কোম্পানির পক্ষে শুধুই দাদালি করত না – এটা তাদের কাজের একটা অংশ ছিল মাত্র। সমান্তরালভাবে তারা সমাজের সম্মানজনক ব্যবসায়ীও ছিল এবং কোম্পানির কাজ ছাড়াও নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করত স্বাধীনভাবে। বেনারসী শেঠ, বিষ্ণুদাস শেঠ, শ্যামসুন্দর শেঠদের কাজকর্ম বিশ্লেষণ করলে এই তথ্য প্রকট হয়। বানারসীর কোম্পানির দালাল হিসেবে পদচ্যুতি, তার জীবন ধ্বংস করে নি, সে তার স্বাধীন ব্যবসা দাদালি করার সময়ও সমান্তরালভাবে চালিয়েই গিয়েছে, এবং কোম্পানি তাকে নতুন করে চাকরি দিতে বাধ্য হয়েছে। বিষ্ণুদাসের দালালির গদিচ্যুতিতেও তার ব্যক্তিগত ব্যবসায় কোন প্রভাব ফেলে নি, এবং দালাল পদটি লুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরেও তাকে substantial merchant হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একদন ব্যবসায়ীদলের নেতা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। শ্যামসুন্দরকেও man of fortune and credit রূপে বলা হয়েছে কোম্পানির খাতাকলমে, এবং তার চাকরি চলে যাওয়ার পরেও আরেক দলের নেতা হিসেবে তাকে জামিন রাখা হয়েছে।

আমাদের আলোচ্য দালালগোষ্ঠী যেহেতু শাসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখত, সেই জন্য আমরা কলকাতার বিষ্ণুদাস এবং ঢাকার মাণিকচাঁদের ক্ষেত্রে দেখেছি, দালাল নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলত। বাস্তব যে অষ্টাদশ শতকের প্রথমের দিকের বাংলায় বানারসী শেঠের মত ব্রিটিশ কোম্পানির কলকাতার দালাল  বা ফরাসী কোম্পানির ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর মত চন্দননগরের দালাল  বা হরিকৃষ্ণ রায়ের মত চুঁচুড়ার ডাচ কোমপানির দালালেরা, শুধুমাত্র সাধারণ বাংলা ভাষায় যাদের দালাল বলে তা ছিল না, বরং বড় ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মানুষও ছিল। 

No comments: