Saturday, July 29, 2017

নতুন বাংলার নবোদ্যম - ওয়াপাগ বঙ্গবাসী সম্মেলন - বঙ্গবাসী কলেজ - প্রথম দিন

হারানো বাজার ফিরে পাওয়ার ডাক
চুঁইয়ে পড়া উন্নয়নের তত্ত্ব বর্জনের ডাক
(এই সম্মেলনের প্রথম দিনের নানান ঘটনা বিষয়ে তনুশ্রী দত্ত এবং প্রসূন ভৌমিক বিশদে নানান ছবি দিয়ে প্রকাশনা দিয়েছেন। তাই সেই এক বিবরণ নতুন করে না দিয়ে তাত্ত্বিক অবস্থনটা আবার নতুন করে বোঝাবার চেষ্টা করলাম।)
যাদের হাতে এক সময় উৎপাদনের রাশ ছিল, সেই ব্যবস্থা কেড়ে নিয়ে নিরন্তর কর্পোরেট উৎপাদন ব্যবস্থার জোয়াল চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে - সে কাজে কর্পরেটরা সফল হোক বা না হোক। আজও পলাশীর আড়াইশ বছর পরে বাংলা তথা ভারতের অন্যান্য অঞ্চল খুঁজে চলেছে, পশ্চিমি ধাঁচে বিকাশের অলীক মহা সড়ক।
অথচ কয়েক হাজার বছর ধরে বাংলা তথা গ্রাম ভারতের ছোটলোক উৎপাদকেরা নিজেদের দক্ষতায়, নিজেদের প্রযুক্তিতে, নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতায় বাংলা তথা ভাররতের বিভিন্ন অঞ্চলকে করে তুলেছিল বিশ্বের গন্তব্যস্থল।
১১৬৪/১৭৫৭র পরে সেই উদ্যমে ছাই পড়ল - বাংলার বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের বৈদেশিক বাণিজ্যের উদ্যমটি কেড়ে নেওয়া হল বিশিল্পায়ন করে। মীর কাশিমের সময় থেকে চেষ্টা চলেছিল বাংলার ছোটলোকেদের ব্যবসা দখল করার - দশকের দশক ধরে এই দখলদারির কাজে কর্পোরেটরা সফল হলেও ইঞ্চি মেপে তারা এগোতে পেরেছে। আজও গ্রাম উতপাদনে গাঁইয়ারা ডেঁটে বসে রয়েছেন - আজও বাংলার ্পরম্পরার গ্রাম উৎপাদনের বাজার খুব কম করে ৬০ হাজার কোটি টাকা।
পলাশী থেকে ১৪১৮/২০১১ পর্যন্ত এক ধরণের কর্পোরেটমুখী গ্রাম বিকাশের আয়োজন হয়েছে - যেখানে বিকাশের কাজে সার্বিকভাবে কর্পোরেটদের তাত্বিকতার রমরমা - গাঁইয়াদের উৎপাদন ব্যবস্থাকে পিছিয়ে পড়া সেকেলে অকেজো হস্ত শিল্প বলে দাগিয়ে দিয়ে জাতীয় উতপাদনে যে তাদের কোন অবদান নেই সে কথা বোঝাবার চেষ্টা করেছে চুঁইয়ে পড়া তত্ত্ব প্রচারের মাধ্যমে। কিন্তু বাংলার নতুন সরকার নতুনভাবে বাংলাকে দেখার চেষ্টা করেছে - বাংলার বিকাশের উদ্যম নিয়েছে।
আজও ভাল ফসল না হলে কর্পোরেট জিডিপি নেতিয়ে পড়ে, ভাল বর্ষা না হলে কর্পোরেটদের মাথায় হাত পড়ে, ইওরোপিয় কর্পোরেটদের অতিলোভের নানান বিষ এশিয়ায়, ভারতে বাংলায়, ঢালার সমস্ত চাপ নীলকণ্ঠ হয়ে সামলে দেন পথের ব্যবসায়ী আর গাঁইয়া পরম্পরার উৎপাদকেরা।
---
ঠিক এই পশ্চাদপটে ওয়াপাগের বঙ্গবাসী সম্মেলনের গুরুত্ব। গিল্ডটি তৈরি হয়েছে সারা বাংলার বিপুল পরম্পরার তাঁতি, উৎপাদক এবং অভিকর শিল্পীদের একজোট হওয়ায়।
বঙ্গবাসী কলেজে তারা কাল একজোট হচ্ছেন নিজেদের হক বুঝে নিতে। আজও বহু উৎপাদক জেলা থেকে এসেছেন। কাল আসবেন প্রায় ২০০ জন। আর আসবেন ওয়াপাগের বন্ধুরা - যারা সমস্ত কিছু জ্ঞান, তাদের যোগাযোগ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন গ্রাম বাংলার বিকাশে।
চিন আজ রেশম পথের রাশ ছাড়ছে। বাংলার বৈদেশিক বাজার হারানো প্রম্পরার গ্রামীনেরা আজ নতুন করে বুঝে নিতে চাইছেন তাদের হারিয়ে যাওয়া বিশ্ব বাজার।
বঙ্গবাসী সম্মেলন সেই ডাক দিচ্ছে - আমাদের হক আমরা বুঝে নেব - হারানো বাজারের রাশ আমরা জিনে নেব।

Sunday, July 23, 2017

ওয়াপাগ সংবাদ

প্রথম বছর ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪২৪ ।। জুলাই-আগস্ট ২০১৭
সম্মেলনের পরিকল্পনা
বঙ্গবাসী কলেজের সঙ্গে উইভার্স আর্টিজান এন্ড পার্ফর্মিং আর্টিস্টস গিল্ড-এর ১২, ১৩, ১৪ শ্রাবণ, ১৪২৪, ২৯, ৩০, ৩১ জুলাই ২০১৭য় অনুষ্ঠিতব্য বঙ্গবাসী কলেজে সম্মেলনের প্রেক্ষিতে কিছু তাত্ত্বিক ভাবনা তোলা গেল
সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে রবিবার ১৩ শ্রাবণ, ৩০ জুলাই ২০১৭। ২৯ তারিখ বিকেল ২.৩০ থেকে বাংলার গ্রামশিল্প এবং প্রযুক্তির প্রদর্শনী। এটি চলবে ৩১ তারিখ সন্ধ্যে বেলা পর্যন্ত।
৩০ তারিখ সম্মেলন। সকাল ৯টায় পঞ্জীকরণ। ১০টায় নগর পরিভ্রমণ। ১১টা থেকে সম্মেলন.৩০এ দুপুরের খাবার। ২.৩০এ সংবাদবাধ্যম আর ওয়াপাগের বন্ধুদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলোচনা। ৪টে থেকে বাংলার পরম্পরার কৃষ্টি প্রদর্শনী
১) জিয়ৌ বীরবাহা জুদাঔসি আখড়া – সাঁওতালি নৃত্য - শাল্কু টুডু
২) আদি লোক মঞ্চ – মুখা খেইল - কামেশ্বর দেশি – দক্ষিণ দিনাজপুর
৩) কনকটি বোড়ো কৃষ্টি আফাৎ - মেচ নৃত্য – রাজীব ঠাকুর – আলিপুর দুয়ার
৪) আদিবাসী ছো নৃত্য দল – ছো নাচ – ধর্মেন্দ্র সূত্রধর – পুরুলিয়া
৫) গণাৎ রাভা এবং সম্প্রদায় – রাভা নৃত্য দল - গণাৎ রাভা – জলপাইগুড়ি
৬) দিনাজপুর নাট্য সমাজ – ঢাক ঢোল ক্যাওড়া সানাই – রঘুনাথ দাস – উত্তর দিনাজপুর
৭) গণেশ রবিদাস এবং সম্প্রদায় – খন/নটুয়া – গণেশ রবিদাস – উত্তর দিনাজপুর
৮) দয়াল আধিকারী, বাউল, দক্ষিণ দিনাজপুর
৯) সুবল দাস বৈরাগ্য, বহুরূপী, বীরভূম
১০) মমতা বৈশ্য, দিনাজপুর

সম্মেলন তত্ত্ব
বাঙলা তথা ভারতের পরম্পরার অভিকর শিল্পী এবং গ্রাম উতপাদক-বিতরকেরা মূলত শূদ্র-বৈশ্য সম্প্রদায়ের। সমগ্র ভারতের শুদ্র-বৈশ্যরা কয়েক হাজার বছর ধরে ভারতের উতপাদন-বিতরণ এবং বিনোদন ব্যবস্থা ধরে রেখেছিল, যতক্ষণনা, মির জাফরের আমলের দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার সময় থেকে বাঙালি ভদ্রশ্রেণীকে কাজে লাগিয়ে এই সামগ্রিক উতপাদন-বিতরণ এবং বিনোদন ব্যবস্থা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ধ্বংস করার চেষ্টা করে নি। ১৮০০ সালের বিশিল্পায়ন না হওয়া পর্যন্ত বাঙলা ছিল উদ্বৃত্ত অর্থনীতি, তার সামগ্রিক শ্রেয় যায় এই ছোটলোকেদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, প্রযুক্তি, দক্ষতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর বাজারের পকড়ের জন্য। অন্তত উইলিয়াম এডামের শিক্ষা সমীক্ষায় পাচ্ছি, বাঙলা-বিহারের বিদ্যা চর্চার জগতে ব্রাহ্মণ আর কায়স্থ নয়, ১ লক্ষ ৫৫ হাজার গ্রামে যে ১ লক্ষ পাঠশালা ছিল, সেগুলিতে শূদ্র-বৈশ্য বটুরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ । বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান কারিগরদের উদ্যমের জন্যই লুঠেরা শিল্প বিপ্লব পূর্ব সময়ে ভারত-পারস্য-চিন উতপাদক অঞ্চলে বাঙলা ছিল ব্যবসায়ে উদ্বৃত্ত এলাকা তার জডিপি সংখ্যা ছিল ৬। 
ভারতের ঔপনিবেশিক শহুরে অর্থনীতি কর্পোরেটিয়, পশ্চিমি অর্থনৈতিক, তাত্ত্বিক, তাথ্যিক পক্ষপাতিত্ত্বের নানান ঢক্কা নিনাদ-নিদান সত্ত্বেও, যে সরাসরি গ্রাম বাঙলার অর্থনীতির ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল, এ তথ্য আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না – গ্রামীন উৎপাদন বা কৃষিতে পরিবেশ বিরূপ হলে তার ধাক্কা গিয়ে পড়ে কর্পোরেট উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপুল চলমান গ্রামীন অর্থনীতির নিরাপত্তার মোড়কে দাঁড়িয়ে থাকে কর্পোরেট অর্থনীতি। যারা এ বিষয়ে চর্চা করেন না, তাদের কাছেও এই বাস্তব অবস্থাটি হয়ত প্রকট। অজ্ঞ, মুর্খ, অশিক্ষিত, গাঁইয়া দাগিয়ে দেওয়া গ্রামীন অর্থনীতি তার থেকেও কলেবরে বড়, এই ভাবনাটা তার অস্তিত্বের সামনে প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দেয়, অহংএ প্রবল ধাক্কা দেয়। তাই বড় পুঁজির উতপাদন ব্যবস্থা গাঁয়ের মায়ের আঁচলে বাঁধা একটাকাও দখল করতে চায় গ্রামে স্বাভাবিক বাজার বিকাশে বহু সময় লাগলে, হোস্টাইল টেকওভারের ধারাবাহিক রণনীতি হয়ে ওঠে তার বাজার জয়ের হাতিয়ার
তাহলে প্রশ্নটা হল গ্রামের বাজারটা কত বড় – এই প্রশ্নটিঅন্তত আমাদের সংগঠনের করা আভ্যন্তরীণ সমীক্ষা সূত্রে বলতে পারি ৯ কোটি মানুষের বাংলায় যদি ৬০ লক্ষ পরম্পরার শূদ্র-বৈশ্য উদ্যমী, তাঁতি আর অভিকর শিল্পী থাকেন এবং প্রত্যেককে যদি দৈনিক ৫৫ টাকা করে বছরে অন্তত ২০ হাজার টাকা রোজগার করতে হয়, তাহলে তাকে বছরে অন্তত ১ লক্ষ টাকার ব্যবসা করতে হয়(অনেকে হয়ত এর বেশিই করেন)এই অঙ্কে বাজারটার ন্যুনতম পরিমানটা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে খুব কম করে ৬০ হাজার কোটি টাকা বাংলা বাজারে শুধু ৫% পরম্পরার উদ্যমীদের তৈরি ব্যবস্থা এদের সম্বল পুঁজি নয়, সামাজিক পরম্পরার জ্ঞান, অর্জিত সামাজিক দক্ষতা, নিজস্ব বাজারের প্রজ্ঞা আর গ্রামের শ্রম সম্পদ তার বাইরে চাষ, অপরম্পরার আরও বিপুল অর্থনীতির পদচিহ্ন রয়েছে – সেই অঙ্ক এই সমীক্ষায় ধরা নেই এই বাজারকে সাম্রাজ্যবাদী বড় পুঁজি ছেড়ে দেবেই বা কেন? বামফ্রন্টকে দিয়ে তারা যেমন কলকাতার হাঁটার পথের বাজারটা, মধ্যবিত্তকে ম্যালেরিয়ার ঝুটা ভয় দেখিয়ে খাটাল উচ্ছেদ করে বহুজাতিকের রাসায়নিক দুধের বাজারটা দখল এবং ধ্বংস করতে চেয়েছিল, ঠিক তেমনিই করে গ্রামীন উতপাদকেদের বাজারটা দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে নানান পরিকল্পনায়তারই শেষতম ভারত সরকারের টাকা বাতিলের পরিকল্পনা। টাকা বাতিলের ভারত সরকারের নীতিতে বাঙলার গ্রামের ছোট পরম্পরার উদ্যমী, ব্যবসায়ী আর কৃষিতে অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়েছে এ অভিজ্ঞতা মধ্যবিত্ত ভদ্রমানুষেরা নিজেদের আশেপাশের ঘটনায় চাক্ষুষ দেখছেন।
শিল্প বিপ্লবীয় লুঠেরা, খুনি, অত্যাচারী, অমানবিক বড় পুঁজির তৈরি করে দেওয়া জ্ঞানচর্চা ভিত্তি করে আমাদের বিশ্বাস জন্মেছে যে বাজার একটা তার চরিত্রও একটা। অথচ বাংলায় গ্রামীন বাজার বললে এককেন্দ্রিক বাজার ব্যবস্থা বোঝায় না। প্রত্যেকটি বাজার তার নিজস্বতায়, তার ব্যবস্থা বৈচিত্রে, উতপাদন-বিতরণ বৈচিত্রে একে অপরের থেকে আলাদা। বৈচিত্র তার মূল শক্তি, বিকেন্দ্রিভবন তার ভিত্তিভূমি। কেন্দ্রিভূত বড় পুঁজি বৈচিত্রে, বিকেন্দ্রিভবনে বিশ্বাস করে না। দুটোই তার অস্তিত্বের চরমতম শত্রু। সে চায় তাঁর তৈরি করা এককেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সারা বিশ্বকে টেনে নিয়ে আসা। সে ছোট অর্থনীতির অসাধারণ জীবনীময় বৈচিত্র্য আর বিকেন্দ্রিকতা অস্বীকার করে তাদের জ্ঞানচর্চায়।
গত আড়াইশ বছরের ঔপনিবেশিক অত্যাচার, লুঠ, গণহত্যা, প্রযুক্তি, জ্ঞান, বাজারকে ধ্বংস করেও সে এই গ্রামের অর্থনীতিতে পকড় বাড়ানোর কাজটি করে উঠতে পারে নি। যদিও তার জন্য সে কখনো গণহত্যার পরিবেশ তৈরি করেছে(ছিয়াত্তর/পঞ্চাশ), কখনো সরাসরি গ্রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে(ফকির-সন্ন্যাসী স্বাধীতা সংগ্রাম, ঘড়ুই স্বাধীতা সংগ্রাম, খয়রা মাঝি স্বাধীতা সংগ্রাম, চাকমা স্বাধীতা সংগ্রাম, নীল ও আফিম চাষী স্বাধীতা সংগ্রাম, মালঙ্গী স্বাধীতা সংগ্রাম, পাহাড়িয়া স্বাধীতা সংগ্রাম, সুবান্দিয়া স্বাধীতা সংগ্রাম, নায়েক স্বাধীতা সংগ্রাম, গারো স্বাধীতা সংগ্রাম, ওয়াহবী স্বাধীতা সংগ্রাম, ফরাজী স্বাধীতা সংগ্রাম, সাঁওতাল-মুণ্ডা স্বাধীতা সংগ্রাম, সিপাহি স্বাধীতা সংগ্রাম ইত্যাদির বিরুদ্ধে ভদ্রলোকেদের সামনে রেখে নিয়ে যুদ্ধ), কখনো পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ উচ্ছেদ করেছে(স্বাধীনতার পরে নেহরুর আমল থেকে মোদির আমল পর্যন্ত, হকার, খাটাল, রাজারহাট, সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম...), কখনো কর্পোরেটদের লুঠের ক্ষেত্র তৈরির জন্য বড় পুঁজির বাহক ব্যাঙ্ক গ্রামে ঢুকতে না পারলে তাকে রাষ্ট্রীয়করণ করে গরীব মানুষের ওপর কর চাপিয়ে গ্রামে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেছে, এবং সম্প্রতি কৌশল খাটিয়ে মানুষের গচ্ছিত সঞ্চয়কে কালো টাকা হিসেবে দেগে, নোট বাতিল করে, সেগুলিকে রাষ্ট্রের কবলে নিয়ে এসে তা দিয়ে কর্পোরেট সিন্দুক ভরাবার পরিকল্পনা সফল করেছে
শেষতম ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াটির আগে সে যে গ্রামের অর্থনীতি বানচাল করতে খুব একটা সফল হয়েছে তা বলা যাবে না, নইলে সে মাথা খাটিয়ে সেনা শাসিত রাষ্ট্রের নীতি অবলম্বন করে, সর্বব্যপ্ত টাকা বাতিলের নীতি প্রয়োগ করে গ্রামীন অর্থনীতিকে বড় পুঁজির অর্থিনীতিতে জোড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করত না। এই রণনীতি নানান ধরণের হতে পারে – তার জনমুখী মুখোশও থাকে বহু সময়। যেমন পরম্পরার গ্রাম উতপাদন কেটেছেঁটে শহুরে বাজারে বিক্রি করতে দিল্লিতে একটি আস্ত মন্ত্রক বরাদ্দ হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে সেই সরকারি প্রকল্পে গ্রাম বাজার বিমুখ অ-পণ্য তৈরি হচ্ছে গ্রামকে মেনস্ট্রিমের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যোগ্য করে তুলতে বহু প্রকল্পে প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে কাজের কাজ খুব একটা কিছু হচ্ছে কীনা বোঝা যাচ্ছে না গ্রামীণদের অংশগ্রহণ খুব কম স্বাধীতার পর ভারতে শুরু হয়েছিল টেকনলজি ট্রান্সফার প্রকল্প ইওরোপ-আমেরিকা-জাপান প্রযুক্তির ঋণ নিয়ে দাঁড়াল রাজনেতা, আমলা, ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাব্রতীদের সামনে উদ্দেশ্য তিনটে পাখি মারা - এক, পশ্চিমি প্রযুক্তি সর্বশক্তিমান, আধুনিক এবং সর্বরোগহর, এই দর্শ গাঁয়ে পৌঁছে দেওয়া গেল। দুই, যতটুকু দেশিয় প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা টিকে ছিল, তাকে প্রাচীণ, গ্রামীণ, পারম্পরিক, প্রিমিটিভ দেগে, উচ্ছেদ করে সসম্মানে জাদুঘরে সাজানোর প্রকল্প জুটল শিক্ষিত শহুরেদের জন্য গ্রাম সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, অর্থনীতি মারার জন্য লোকসংস্কৃতি গবেষণার, জাদুঘর ব্যবস্থাপনার, নানান এনজিও কর্মের, নানান বিদ্যালয়ে শহুরে শিল্পবিপ্লবীয় তত্ত্বে গ্রাম ব্যবস্থা বিশ্লেষণের সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতির, নৃতাত্ত্বিক ইত্যাদি চাকরি, গবেষণা, মাঠ কর্মীর পদ তৈরি হল তিন, পশ্চিমি যন্ত্রপাতির বাজার শহর ছাড়িয়ে গ্রামে তৈরি হল শাঁখের করাত প্রাচীণ যন্ত্রটি প্রায় কাজ হারিয়েছে এসেছে বিদ্যুতে চলা কাটাই যন্ত্র বহু ছোট শাঁখারি উচ্ছেদ হচ্ছেন ড্রিল মেশিনে সূক্ষ্ম কাজ অসম্ভব নষ্ট হচ্ছে বাজার বিদেশি বাতিল যন্ত্রে দেশি প্রযুক্তির সর্বনাশ
আমরা যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, যে নামেই এই লেখাটা তৈরি করা হচ্ছে, সেটি মূলত বাঙলার পরম্পরার বৈশ্য-শূদ্র উদ্যমীদের তৈরি – যাদের ঔপনিবেশিক ভদ্রলোক বাঙালি ভালবেসে মৃতপ্রায় লুপ্রপ্রায় হস্তশিল্পী ডেকে থাকে। এই উতপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থার মূল চরিত্র হল সেটির কোন কেন্দ্র নেই, হাজারো উতপাদক হাজারো বিক্রেতাবিপুল পরিমান আর্থব্যবস্থা, কিন্তু সেই ব্যবস্থা জাত লাভ কিছু মানুষের হাতে জড়ো হওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকে নাএই ব্যবস্থার প্রযুক্তি উতপাদক এবং বিতরকেদের নিজস্ব, তার জন্য অন্তত এদের অজানা অচেনা কাউকে যন্ত্রের দামের বাড়তি(যার একটা পেটেন্টের জন্য ব্যয় হয়) গ্যাঁটের কড়ি গুণতে হয় না। যন্ত্র খারাপ বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে, হয় নিজেরা বা এলাকার প্রযুক্তিবিদেরা সারিয়ে নিতে পারেন। যন্ত্র চালাতে তার যে শক্তি প্রয়োজন হয়, সেটি হয় সে নিজের বা সামাজিকভাবে তার এলাকাতেই পাওয়া যায়। যন্ত্র আর শক্তি দিয়ে এই উতপাদন ব্যবস্থাকে কর্পোরেট অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কাঁচামালেও নয়। কাঁচামাল মূলত মেলে তার নিজস্ব এলাকায়, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়েবাজার মূলত তার নিজস্ব। জানা। বাজার তাকে নিয়ন্ত্রণ করে না, সে বাজারের অংশিদার যদি কিছু উদ্বৃত্ত তৈরি হয়, তা সে বিক্রি করে বিদেশি(তার এলাকার বাইরের) বাজারের জন্য। রয়েছে গ্রামে থাকার সামাজিক নিরাপত্তা বোধ পূর্বজদের থেকে পাওয়া যে জ্ঞান, সেই জ্ঞান তার পরবর্তী প্রজন্মকে কিনতে হয় না। স্থানীয় জ্ঞান, বংশপরম্পরার বয়ে যায় তার মত করে। সে জ্ঞান বিক্রি করে না, বইয়ে দেয় – হয় তার পরিবার না হয় তার সমাজে। পরিবারে থাকলেও সেটি তার সমাজেই থাকে। আর যেহেতু বিনিয়োগ উতপাদন-বিতরণ ব্যবস্থার অন্যতম খুঁটি নয়, বড় পুঁজির হয়ে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রক, ব্যাঙ্ক তাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। উল্টো দিকে এমএসএমই উতপাদকেরা মূলত বড় পুঁজির অনুসারী শিল্প। তার ছোটখাট যারা নিজের কোমরের জোরে বাজার করেন, তাদের উতপাদনের জন্য নির্ভর করতে হয় বড় পুঁজির সরবরাহ করা শক্তি, কাঁচামাল, প্রযুক্তি আর ‘শিক্ষিত’ শ্রমশক্তির ওপর, বাজার মূলত বড় পুঁজির নিয়ন্ত্রণে, ছোটখাট ব্যতিক্রম বাদ দিলেপুঁজি প্রযুক্তি/কাঁচামাল/পণ্যের প্রকৃতি পাল্টালে উদ্যমীর মাথায় হাত। তাকে আবার ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজের উতপাদন ব্যবস্থা বা সম্পদ বাঁধা দিয়ে টাকা ধার করে প্রযুক্তি, প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি কিনতে হয়, না হলে তার উতপাদন বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ বসে যেতে হয়। এমএসএমইর নিয়ন্ত্রক বড় পুঁজিই। তার উতপাদন-বিতরণের অন্যতম যোগ্যতা সে ব্যাঙ্কেবল কি না, অর্থাৎ বড় পুঁজির ব্যবস্থাপকেরা তাকে ঋণ দেওয়ার উপযুক্ত ভাবছে কি না। সেই দায় পরম্পরার অর্থনীতির নেই।
অথচ শিল্পবিপ্লবপরবর্তী সময়ে যে সব শিল্পপরিচালন ব্যবস্থার আগ্রাসী দখলদারি নীতিমালা ধীরে ধীরে তৈরি হয় সারা বিশ্ব জুড়ে, সেগুলি এশিয় উতপাদন ব্যবস্থায় ছিল না। একজন উতপাদক অন্য উতপাদক/দের উতপাদন তার/তাদের অনিচ্ছেয় কিনে নিতে পারবে(হোস্টাইল টেকওভার), এই গায়ের জোয়ারি, সাম্রাজ্যপ্রভুসুলভ ব্যবস্থাপনার অস্তিত্ব ছিলই না এশিয়-ভারতীয়-বাংলার উতপাদন জগতে। অথচ বাঙলা জুড়ে ছিল উতপাদকেদের ছিল বিপুল আড়ং, যেখানে উতপাদকেরা প্রায় সমবায় প্রথায় নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রেখে উতপাদন করতে পারতেন।
স্বাভাবিকভাবেই শুদ্র-বৈশ্য-মুসলমানদের তৈরি উতপাদন-বিতরণ ব্যবস্থা কর্পোরেট উতপাদন ব্যবস্থার তত্ত্বের বিপরীতে দাঁড়িয়েএদের কোন কেন্দ্র নেই। সেই আর্থব্যবস্থা স্থানীয় অর্থনীতিকে জোরদার করে, স্থানীয় শ্রম বাজারকে চাঙ্গা করে। প্রত্যেক বাজার অন্য বাজারের চরিত্র থেকে আলাদা। প্রত্যেক বাজারের উতপাদন, বিনিময় চরিত্র, লেনদেনের চরিত্র আলাদা। চাইলেই বড় পুঁজি ইকনমিক হিটম্যান সেজে দূর বাজারের চরিত্রের ছোট অদলবদল ঘটিয়ে গোটা গ্রাম বাজার মেরে ফেলতে পারে না।  একটা বাজারে জেনেশুনে কোন দুষ্কর্ম ঘটিয়ে দিলে অন্য বাজারে তার খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। আর যদি কিছু প্রভাবও পড়ে তা সে তার বিকেন্দ্রিকৃত, উতপাদন-বিতরণের চরিত্রের জন্য সমস্ত অতিচার সহ্য করে নিয়ে গা ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারে নতুন করে। বড় পুঁজি সেটা জানে। সেই ১৭৫৭র পর থেকে সে তার প্রধান শত্রু গ্রামীন ছোট উদ্যোগকে আঘাত করে তার বাজার এবং উতপাদন-বিতরণ ব্যবস্থাকে ধ্বংস, না হলে আত্তীকরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার, বাজার বাড়াবার জন্য।
নোট বাতিল গ্রাম উতপাদন বিরোধী যুদ্ধের শেষতম কর্পোরেটিয় উদ্যম। গ্রামের উতপাদন ব্যবস্থার যতটুকু স্বাতন্ত্র্য রয়েছে তাকে কেড়ে, তাকে অস্থির লুঠেরা অর্থনীতির অংশ করে এবং জুয়াড়ি পুঁজিবাদের অংশ করে নেওয়ার চেষ্টা, যাতে যে কোন সময়ে মুহূর্তের ইঙ্গিতে তাকে ধ্বংস করে দেওয়া যায় সোজা গ্রামীন শিরদাঁড়াকে বেঁকিয়ে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে দেওয়া যায় গলবন্ধপরা বড় পুঁজির ব্যবস্থাপকেদের সামনে, গ্রামের শেষ উদ্বৃত্তটুকু চেঁছে পুঁছে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতে
তাতে আনেকগুলো কাজ একসঙ্গে সমাধা হয় – ১) স্থানীয় বাজার আর বিশ্ব বাজারের ধাক্কা থেকে আলাদা থাকে না। ফলে মায়ের আঁচলের একটাকা দখলের মতই সেই ছোট ছোট বাজারগুলোর ওপর দখলদারি বজায় রাখতে পারে। ২) স্থানীয় কাঁচামালের এবং বিক্রির বাজার একদা মীর জাফরের সময় ব্রিটিশ বড় পুঁজি গায়ের জোরে দখল নিয়েছিল, ঠিক তেমনি করেই, গাঁয়ের এজমালি এলাকার সম্পদ, জঙ্গল জাতি রাষ্ট্রের ভূমিসংস্কারের ধাক্কার পরে যতটুকু বেঁচে রয়েছে, তাও দখল হবে যদি বাজারটাকে উথালপাথাল করে দেওয়া যায়। ছোট উতপাদকের কাঁচামাল কেনা আর উতপাদন বিক্রি কাজ বড় পুঁজিকে ছাড়া আর চলবে না। ৩) তার ঘাম ঝরানো সম্পত্তি যদি ব্যাঙ্কের হাতে চলে যায় প্লাস্টিক টাকার ব্যবহার জোর করে করানোর মাধ্যমে, তাহলে আর কোন ঝামেলা নেই, মুহূর্তেই ব্যাঙ্ক ফেল করতে পারে, ফাটকার শেয়ার বাজার ধ্বসে যেতে পারে, ব্যাঙ্কের একাউন্ট হ্যাক হয়ে সেই টাকা ফাঁকা হতেই পারে। বড় পুঁজির ইচ্ছে, তার কারিকুরিতে গ্রামের একটাও স্বেদবিন্দুর কামাই গ্রামে থাকবে না, চলে যাবে দিল্লির দালাল হয়ে বেজিং বা নিউ ইয়র্ক।
দিল্লিতে তৈরি হয়েছে ক্রাফটস রিভাইভ্যাল কাউন্সিল। তাদের উদ্যমে গ্রামে ছোট উত্পাদকের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রকল্প শুরু হয়েছে অল ইন্ডিয়া আর্টিজান এন্ড ক্রাফ্টওয়র্কার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন তৈরি করে পেছনে ফ্যাব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন প্রধান উইলিয়ম বিসল, ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর জেনারেল রতি বিনয় ঝা, দস্তকরের প্রধান লয়লা তয়বজী প্রমুখ সংঘজুড়ে আছেন বিদেশে পড়াশোনা, কর্পোরেটে চাকরি করে আসা যুবা, কর্পোরেটিয় কেষ্টুবিষ্টু আর ভারতের ব্যবসায়ী দালালেরা বিপুল সাহায্য আসছে ফোর্ড ফাউন্ডেশন, ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইবে ফাউন্ডেশন, ফ্যাবইন্ডিয়া, দোরাবজী টাটা ট্রাস্ট, দুর্ণীতিতে ডুবে থাকা রয়েল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ডএরমত কর্পোরেট দাতাদের থেকে শুরু হয়েছে ক্রাফ্টমার্ক প্রকল্পএরা শংসাপত্র দেবে দেশের কোনটা পরম্পরার উতপাদন আর কোনটা নয়, মুদ্রারাক্ষসের বিনিময়ে। কর্পোরেট স্বেচ্ছাব্রতীরা বড় পুঁজির স্বার্থ দেখে টাকার বিনিময়ে সংঘের স্বাক্ষরে গ্রামশিল্পীদের ভবিষ্যত তৈরি হচ্ছে এটি সরকারি প্রকল্প নয় সামাজিক দায়বদ্ধতাও নেই অর্থবলে আর ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করা এই সংঘটি প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে সরকারগুলোকে
শুধু টাকা বাতিল নয়, ভেতরে ভেতরে ক্রাফটমার্ক প্রকল্পের মত নিরব উচ্ছেদের কর্মসূচী নিয়ে কর্পোরেট ইন্ডিয়া চেষ্টা চলছে এই অর্থনীতির পাঁজর ভেঙ্গে দেওয়ার। তবুও এই রক্তবীজের বংশধরেরা বড় পুঁজির বিরুদ্ধে দাঁত কামড়ে লড়াই দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের মত করে আমরা যেন মনে রাখি সারা বিশ্বে অসম লড়াইতে কিন্তু কর্পোরেট লুঠ, অত্যাচার, খুন শেষ পর্যন্ত জেতেনি – ভিয়েতনামে, আফগানিস্তানে, ইরাকে বা সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে, নিকারাগুয়ায়, কিউবায় তাদের মাথা নামিয়ে আবার বোর্ডরুমে ফেরত যেতে হয়েছে, নতুন করে অস্ত্র শানাতে সংবাদমাধ্যমে কাজ করা অনুগত মধ্যবিত্ত চেষ্টা করে বোঝাতে যে, কর্পোরেটরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, তাদের রোখার ক্ষমতা কারোর নেই মধ্যবিত্ত জগতে এমন একটা তাত্ত্বিক পরিবেশ তৈরি হয়েছেকিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে – ভারতে এশিয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ৪৬০টা প্রকল্পের মধ্যে ৪০০ বেশি প্রকল্প, বা চিনের নতুন রেশমপথ প্রকল্পের বিশাল দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবস্থা তৈরির বিনিয়োগ বিশ্বের প্রায় সব দেশে দাঁড়িয়ে পড়েছে গ্রামীনদের বিরোধিতায়
এই বঙ্গবাসী সম্মেলনে ওয়াপাগ মনে করছে টাকা বাতিল ঘটনায় হয়ত গ্রামীন উতপাদন-বিতরণ ব্যবস্থার দুটো পা ভেঙ্গেছে, কিন্তু তাকে মেরে ফেলতে পারে নি। তারা আবার সেরে উঠে দাঁড়াবে, লড়াই দেবে। বড় পুঁজির বিজয় এত তাড়াতাড়ি হবে না – হয়ত হবেই না শেষ পর্যন্তকোথাও একটা গ্রামীন পরম্পরার বিশ্বাস কাজ করে। হাজারটা গাছ উপড়ে ফেললে একটা জঙ্গল উজাড় হয়ে যায়, কিন্তু লক্ষ-হাজারটা ঘাস উপড়োলেও তৃণভূমি শুকিয়ে যায় না। এটাই  ইতিহাসের শিক্ষা। শেকড়ের প্রত্যয়। তাকে মেরে ফেলা কঠিন।
প্রথম বছর ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪২৪ ।। জুলাই-আগস্ট ২০১৭
সম্পাদক মণ্ডলী ।। বিশ্বেন্দু নন্দ, উদ্দীপন নাথ, ড ললিতা ঘোষ, সায়নী বাগ, তনুশ্রী দত্ত, মধুমঙ্গল মালাকার, নারায়ণ মাহাত, নুরুল ইসলাম এবং দীপঙ্কর দে, কামেশ্বর দেশি, রঘুনাথ দাস, ফুলমণি বেসরা, শাল্কু টডু, খগেন মন্ডল, নমল মুর্মু, বিমল মুর্মু, রাজীব ঠাকুর, প্রতাপ কার্জী, মালনবালা সরকার, দয়াল অধিকারী, উষা অধিকারী, গণেশ রবিদাস, শ্যামা সরকার, অফিজুল, শ্যামল দেবশর্মা, ছামি কিস্কু
আদি লোক মঞ্চ।।  দিনাজপুর নাট্য সমাজ।। প্রয়াস।। আদিবাসী সমাজ সুসার লোক সংস্কৃতি ঝুমুর নাট্য দল ।। বীরবাহা জিয়ো জাদৌসি আখড়া ।। গঙ্গারাম্পুর লোকচৈতন্য গীতি নাট্য সংস্থা ।। কাতলামারী আদিবাসী নাট্যদল ।।  সাঁওতা চিরদৈল আখড়া ।। কনকটি বোড়ো কৃষ্টি আফাত ।। চৌদুয়ার মহিলা নাট্য দল ।। শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য শিশু কল্যাণ আশ্রম ।। মনমোহিনী কলা মুদ্রা ।। বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘ ।। বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সঙ্ঘ ।। কলাবতী মুদ্রা ।। ফ্রেন্ডস অব ওয়াটাগ ।। জং জারি মোর্শিয়া ।। সাওরিয়া ঘোড়া নৃত্য সংস্থা Top of Form

।। 

Saturday, July 22, 2017

ব্রিটিশ-পূর্ব সময় বোঝার ৬টি জরুরি প্রচেষ্টা ও গবেষণা

পার্থ পঞ্চাধ্যায়ী, বিশ্বেন্দু নন্দ, এবং কলাবতী মুদ্রার নথিকরণ দল

*** মুঘল আডমিনিস্ট্রেশন
*** এনেকডোটস অফ আওরঙ্গজেব
*** লাইফ অব মীর জুমলা
*** উনবিংশ এবং বিংশ শতে রাষ্ট্র এবং দেশজ চিকিৎসা ব্যবস্থা ১৮০০-১৯৪৭
*** ইন্ডিয়ান টিচার্স অব বুদ্ধিস্ট ইউনিভার্সিটি
*** দ্বিতীয় ইতিহাসঃ লুঠেরা ইংরেজ, সাথী মধ্যবিত্ত, সাংস্কৃতিক গণহত্যা আর গ্রামীন স্বাধীণতা সংগ্রাম

বহুদিনের চেষ্টায় কয়েকটি বই অনুবাদ করলাম
মুঘল আমল বোঝার ক্ষেত্রে তিনটি বই -

যদুনাথ সরকারের
১) মুঘল আডমিনিস্ট্রেশন - যেখানে আচার্য মুঘলদের অনুসৃত প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্পষ্ট ভাবে বিবৃত করেছেন - মুঘলদের সম্বন্ধে নানান ধরণের ভুল ধারণা এই বইটি দূর করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়াও ব্রিটিশ আমলে দুর্বিসহ অবস্থায় পড়ার আগে, সব থেকে বেশি লালন পালন পেত দুটি পেশা কৃষক আর কারিগর - কারণ তারা জানতেন এরা মুঘল সাম্রাজ্যকে খাওয়ায় পরায়।

২) আনেকডোটস অফ আওরঙ্গজেব – আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান - হামিদুদ্দিন খাঁ বাহাদুরের রচনা। আচার্য যদুনাথ সরকারের আহকমইআলমগিরির ইংরেজি অনুবাদের বাংলা অনুবাদ - এতে বাদশা আলমগিরের পারিবারিক, বৈদেশিক যোগাযোগ, তার কঠোরতা-কোমলতা, তার অনন্যতা, তিন ভায়ের মধ্যে তার বীরত্ব কাহিনী এবং মুঘল রাজত্বের নানান সুস্বাদু অজানা কাহিনী - যা মানুষটাকে নতুন করে, নতুন ভাবে চিনতে সাহায্য করবে।

৩) জগদীশ নারায়ণ সরকারের, লাইফ অব মীর জুমলায় আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার দাক্ষিনাত্যের প্রশাসন, তার বিপুল হীরের খনি, ইওরোপিয়দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, সুজার বিরুদ্ধে আক্রমনে বাংলায় নৌকোর রণনীতি সজ্জা - যে খান থেকে ব্রিটিশদের পন্টুন ব্রিজের ধারণা চুরি এবং সব শেষে অসম আক্রমণ ও মৃত্যু। ঔরঙ্গজেবের সময় দাক্ষিনাত্য এবং বাংলা-অসমের উদ্বৃত্ত অর্থনীতির ঝলক পাওয়া যায় এই বইটিতে।

ওপরের এই তিনিটি বই আমদের দেখায় ব্রিটিশ সময়ের আগে বাংলার নানান এলাকার অবস্থা। আমাদের কাজ যেহেতু বাংলার লুঠ এবং পলাশীর আগের বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার পরম্পরার সমাজ যে উদ্বৃত্ত বাংলা তৈরি করেছিল, তাকে জানা, সেহেতু আওরঙ্গজেবের আশেপাশের সময় জানা এবং জানানো খুব প্রয়োজন ছিল। অব্যবহিত ব্রিটিশপূর্ব সময় জানা বোঝা না গেলে এই কর্পোরেট ব্যবস্থার বদলে কোন উৎপাদন ব্যবস্থা কেন চাইছি, কেন আমরা বারবার বলছি ১১৬৫/১৭৫৭র আগে আমরা ফিরে যেতে চাইছি সে তত্ত্বটা বোঝানো সম্ভব নয়।

এ ছাড়াও মুঘল আমল শেষে ব্রিটিশ আমলের শুরু থেকে ভারত ভাগ পর্যন্ত
৪) পুনম বালার উনবিংশ এবং বিংশ শতে রাষ্ট্র এবং দেশজ চিকিৎসা ব্যবস্থা ১৮০০-১৯৪৭
পুণম বালা গবেষণার কাজটা করেছিলেন ব্রিটিশ বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থা বিষয়য়ে সেটা জানা প্রয়োজন ছিল, কারণ সে সময় আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থার কি হালত ছিল। করে, কখন রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় পশ্চিমি চিকিৎসা ব্যবস্থা থানা গেড়ে বসল, তা জানাটাও জরুরি ছিল যেহেতু আমরা দেশজ চিকিতসা ব্যবস্থা প্রসারে উৎসাহী।

আর ইসলামি আমলের আগে ভারতে আর তিব্বতে বাংলা তথা ভারতীয় শিক্ষাবিদ আর বিশ্ববিদ্যালয়
৫) ফণীন্দ্র নাথ বোসের ইন্ডিয়ান টিচার্স অব বুদ্ধিস্ট ইউনিভার্সিটি
প্রায় অর্ধেক অনুদিত হয়ে রয়েছে
ফনিন্দ্রনাথ বোসের বইটা খুব জরুরি এই কারণে ১৮৩৬ সালের উইলিয়াম এডাম শিক্ষা সমীক্ষায় আমরা দেখতে পাচ্ছি গ্রামে অনুচ্চবর্ণই প্রধাণত এই শিক্ষা ব্যবস্থার ধারক-বাহক ছিলেন। ফলে তার আগের প্রাতিষ্ঠনিক বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থাটা কেমন ছিল সেটা জানাও জরুরি। এছাড়াও এডাম সমীক্ষায় জনগণের সমীক্ষা ছিল বিকেন্দ্রিভূত - অথচ রাষ্ট্র দ্বারা পোষিত বৈদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা যে চরম কেন্দ্রিভূত ও রাজানুগ্রাহি ছিল সেটাও আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
---

এছাড়াও
দ্বিতীয় ইতিহাসঃ লুঠেরা ইংরেজ, সাথী মধ্যবিত্ত, সাংস্কৃতিক গণহত্যা আর গ্রামীন স্বাধীণতা সংগ্রাম
এখানে বাংলার লুঠ, পলাশীর পর স্বাধীনতার লড়াই, নবজাগরণকে নতুন করে দেখা, সাংস্কৃতিক দাসত্ব ইত্যাদির চেষ্টা করা হয়েছে।

---

অনুবাদের সময় ফেসবুকে যারা এই নালায়ককে প্রতিনিয়ত সঙ্গ দিয়েছেন, যারা এই পল্লবগ্রাহীকে টেনে শেকড়ে গুঁজে রাখতে পেরেছেন তাদের অসম অধ্যাবসায়ে, তাদের সক্কলকে আমার শ্রদ্ধাভরা প্রণাম, ভালবাসা। যারা এগুলি পড়ে মন্তব্য করেছেন, যারা পড়েন নি, যারা অযাচিতভাবে আমার ভুল শুধরে দিয়েছেন, তাদের সক্কলকেই আমার প্রণাম সালাম।

সক্কলে সুস্থ থাকুন। আর মাঝে মাঝে আমাদের মাথায় হাত রাখুন।
অলমিতি।

Friday, July 21, 2017

ওয়াপাগের বঙ্গবাসী সম্মেলনের উদ্দেশ্য

এক বন্ধু জানতে চেয়েছিলেন সম্মেলনের উদ্দেশ্য। শুধু সম্মেলন নয় গিল্ডেরও
তাঁর মাত্র কয়েকটা-
১) ছোটলোক - শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান ও অন্যান্য পরম্পরার সমাজের কারিগর অর্থনীতির উতপাদকেদের এক জোট করা।
২) লুপ্ত হওয়া নানা উৎপাদন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার।
৩) খাদক জাতিরাষ্ট আর কর্পোরেট হাত থেকে সার্বিক ছোটলোকদের স্বার্থ দেখা।
৪) আবার ১১৬৪/১৭৫৭র আগে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা - যাতে ছোটলোকেরা ব্যবসার দখল করে আগের মত বাংলাকে উদ্বৃত্ত অর্থনীতি বানাতে পারে - কারন কর্পোরেট আর জাতিরাষ্ট্রের নেতাদের একমাত্র উদ্দেশ্য দেশের সম্পদ বিদেশে পাঠানো আর দেশের জ্ঞান নষ্ট করা
৫) ছোটলোকেদের জ্ঞানচর্চাকে নতুন করে আলোচনার পরিসরে আনা।
৬) নষ্ট হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ব্যবসার যোগাযোগগুলো বাড়িয়ে তোলা।
৭) কর্পোরেট-জাতিরাষ্ট্র আঁতাত ধ্বংস করে সামাজিক উদ্যমকে জোর দেওয়া।
8) নিজের বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ প্রযুক্তি, পুঁজি নিরপেক্ষ হাজার হাজার উৎপাদক হাজার বিক্রেতা সমন্বিত জ্ঞানচর্চা, দক্ষতা, নিজের হাট-বাজার ও গ্রাম-সমাজের নিরাপত্তা ভিত্তিক ব্যবস্থাকে রক্ষা এবং জোরদার করা।
এ ছাড়াও হাজারো কিছু...