Saturday, July 15, 2017

নীলাম্বরী কাপড় সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর-

নীলাম্বরী পোস্ট সূত্রে আমাদের ঢাকার বন্ধু শাহিনুর গুগল প্লাসএ শুধিয়েছিলেন - নীল ছাড়া কি অন্য কোন প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা যায় না?
আজ একজন ফোনে বলছিলেন নীলই নাকি বস্ত্র শিল্পের প্রধান রং। তাহলে বলা হয় কেন নীল চাষ শুরু করে বৃটিশরা?
আমাদের সম্ভাব্য উত্তর পেশ করা গেল- যদিও লেখাটা প্রয়োজনের তুলনায় বড় -
নামেই প্রকাশ নীলাম্বরী শাড়ি করতে বোধহয় নীল রঙ ব্যবহার জরুরী। অন্য কিছু দিয়ে নীল রঙ হয় কি না জানি না। নীলাম্বরী ছাড়া অন্য রঙ্গে শাড়ি ছোপাচ্ছি - সেগুলোর নাম - শ্বেতাম্বরী, পীতাম্বরী, রক্তাম্বরী।
বাংলা-বিহারের উর্বর এলাকায় যে নীল চাষ ব্রিটিশেরা শুরু করেন নি - এ তথ্য নতুন করে আরও একবার বলা দরকার। ১৮০০র আগে ইওরোপে প্রায় কিছুই উতপাদন হয় না যা ভারত বা এশিয়ার বাজারে চলতে পারে। ছিল ব্রিটিশ পশম - সেটা ভারতে বা এশিয়ার পরিবেশে অকম্মা। ১৬০০ সালের মাঝের দিকে যখন ভারত থেকে জাহাজ ভর্তি দামি কাপড়, সোরা, বিভিন্ন চাষের দ্রব্য, শিল্প দ্রব্য বয়ে ইওরোপে নিয়ে যেত বিভিন্ন ইওরোপিয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, জাহাজ ভারতে ফেরত আসত প্রায় ফাঁকাই - পণ্য বলতে থাকত শুধু আমেরিকা, ক্যারিবিয় আর আফ্রিকা লুঠ করা দামি ধাতু - সোনা রূপা আর রত্ন ভাণ্ডার - সেইগুলি দিয়ে বাংলা বা ভারতের অন্যান্য এলাকায় পণ্যগুলো কিনতে হত ইওরোপিয়দের।
নীল বাংলার অন্যতম প্রধান উৎপাদন। ভারতেরও। সে অন্যতম প্রধান রপ্তানি দ্রব্য ছিল বহুকাল। বাংলা-বিহারে সব থেকে বেশি উৎকৃষ্ট নীলের চাষ হত - রঙ তৈরি হত - মাত্র একটি চৈবাচ্চায় একফালি কাপড় ডুবিয়ে একেবারে নানান রঙ করার প্রয়ুক্তি আবিষ্কার করেছিল ভারতীয়রা(এটি পরমএর দুটি বস্ত্র সংখ্যায় আলোচনা হয়েছে হাল্কা করে)। ভারত থেকে এত বিপুল পরিমান নীল বিদেশে রপ্তানি হত যে, ইন্ডিয়ার নামে সেই পণ্যের নাম ইন্ডিগো হয়ে যায় - যদিও আমেরিকায় আর বিশ্বের কিছু কিছু জায়গায় যেমন জার্মানিতে নীল তৈরি হত - কিন্তু ভারতীয় নীলের কদর ছিল আলাদা। প্রায় দু হাজারেরো বেশি বছর আগে রোমে ভারতীয় নীল রঙ্গে ছোপানো মসলিন/ঢাকাই কাপড় পরা ছিল গর্বের বিষয়। গ্রিকেরা জানত সেই দ্রব্যর গুণ।
পঞ্চতন্ত্রের নীল বর্ণ শৃগালের গল্প নিশ্চই মা-দ্দিদিমার মুখে শুনেছেন যেটি ধোপার নীলের চৌবাচ্চায় পড়ে নীল রঙের হয়ে গিয়েছিল। সেই গল্পটি বেশ পুরোনো নয় কি? আর ঈশপ তো আরবী মাধ্যমে ইওরোপে চোলাই হয়ে যাওয়া পঞ্চতন্ত্রের গল্প। আজও আসম্প্রসারিত দূরদর্শনের কাঁচের রঙ নীল।
তো ভারতের ব্যবসায়ী আর উতপাদকেরা এতই অসভ্য ছিল যে কয়েক হাজার বছর ধরে নীল নিয়ে সারা বিশ্বে একচেটিয়া ব্যবসা করেও, ১৮৩৩ সালে সদ্য বেকার হয়ে যাওয়া আফ্রিকা আর ওয়েস্ট-ইন্ডিজের দাস ব্যবসায়ী ইওরোপিয় নীলকরদের মত বাঙ্গালি-বিহারি চাষীদের পিঠে চাবুক চালিয়ে পয়সা না দিয়ে, অন্য চাষের জমি কেড়ে, একচেটিয়া নীল চাষ করে নি। ভারতীয়রা কেউ নীলকর ছিল না - উতপাদক আর ব্যবসায়ী ছিল।
ইওরোপিয় শিল্প বিপ্লবীয় উতপাদন আর বিতরণ ব্যবস্থা আর সনাতন এশিয়/ভারতীয় উতপাদন ব্যবস্থার এই ছিল পার্থক্য।তবুও অন্তত ভদ্র বাঙ্গালিরা আজও হেদিয়ে মরি কেন ভারতে শিল্প বিপ্লব হল না এই খেদে। আর ছোট ব্যবসাকে কোনোদিনই ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি গুরুত্ব দেয়নি তার বড় উদাহরণ আজও শিল্পায়ণের মত অশ্লীল একটা শব্দ ছড়িয়ে রয়েছে শহুরে বাংলার হৃদমাঝারে।
অলমিতি।

No comments: