Saturday, July 13, 2019

ভারতীয়/বাংলাদেশ/পাকিস্তানী জ্ঞানচর্চা প্রযুক্তির ইতিহাস, অউচ্চবর্ণ, কালোঅক্ষরের প্রতি অসামান্য দৌর্বল্য এবং উপনিবেশিকতা

সবার আগে স্বীকার করতে হবে প্রাচীন ভারত/বাংলাদেশ/পাকিস্তানচর্চা একরৈখিক কালো অক্ষরের জ্ঞানচর্চা নয়।এই ভারত/বাংলাদেশ/পাকিস্তানভূমির অনৌপনিবেশিক যতকিছু সব/অধিকাংশ অউচ্চবর্ণের তৈরি, তারপরে অন্যান্য কথা। তথাকথিত ভারতীয় প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে বিপুল কাজ হয়েছে। অসাধারণ সব মানুষজন নানান কাজ করেছেন। কিন্তু যে সব কাজ "প্রামাণ্য" হিসেবে সাধারণভাবে অনুসৃত হয়, সেগুলি অধিকাংশই ইওরোপজাত। আর ভারতবর্ষের যত জ্ঞান, প্রযুক্তির ইতিহাস ইত্যাদি লিখিত হয়েছে তার সবকটি/অধিকাংশই প্রায়, কিছু কাজ বাদ দিলে, লিখিত সংস্কৃত/ইংরেজি সূত্র অনুসারে - অর্থাৎ সাহেবেরা কি বলে গিয়েছিলেন, সেটি আপ্তবাক্য হিসেবে ধরে নিই। ভারত/বাংলাদেশ/পাকিস্তান বলে যে ভূখণ্ড জানি তার প্রযুক্তি জ্ঞানচর্চা কি ছিল সেটার সঠিক মূল্যায়ণ হয় না।
কেন?
যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, সেখানে যাই আগে। আগে স্বীকার করুন এ ভারত/বাঙ্গালাদেশ/পাকিস্তান আদতে অভদ্রলোকেদের জ্ঞানচর্চায় তৈরি হয়েছে - এই যে কৃষক পরনির্ভর ভদ্রবিত্তকে দুমুঠো খেতে দিচ্ছে এই কাঠামোটা অতীতকালেরই তৈরি। বিপুল বিশাল অভদ্রজনের অলিখিত মৌখিক জ্ঞানচর্চা নিয়ে Joya Mitra অনুপম মিশ্র, Shahinur Rashid Tutul Chandan Shafiqul Kabir ইত্যাদি কাজ করেছেন। কিন্তু বাকিরা কালো অক্ষরের প্রতি অসীম শ্রদ্ধায় নত। আমরা ইংরেজি শিক্ষিত প্রগতিশীলেরা - অর্থাৎ যারা আদতে ইওরোপমন্য তারা গ্রাম ভারত/বাংলাদেশ/পাকিস্তানের দিকে চোখ ফেরাই না আমরা ইওরোপের অপার করুণায় প্রচন্ড বিশ্বাসী।গ্রামে যে জ্ঞানচর্চা হত, কাঠামো তৈরি হত এটার ধারণাটাই নেই, তার কারণ উপনিবেশ।
এই ইওরোপমন্যরা দুধরণের তাঁবুতে বিভক্ত
১। সঙ্ঘপরিবারের মতানুযায়ী কিছু মানুষ - যারা মনে করে কোম্পানি ভারতকে উদ্ধার করেছে ম্লেচ্ছদের কবল থেকে, ফলে তারা শুদ্রদের শিল্পকাঠামো ধ্বংস করা ভিক্টোরিয়ার পুজো করে এবং ইওরোপের মতই জাতিরাষ্ট্রবাদী
২। আর বামেদের মত শিক্ষিত যারা, মনে করে ব্রিটিশ ভারতকে উদ্ধার করেছে সামন্ততন্ত্র থেকে। লুঠফুট ধারণা যারা করে তারা ফুটুক।ইওরোপের পায়ে ডাইভ দাও।
আদতে ভারত বললে আদতে গ্রাম বোঝায়, গ্রামীণ প্রযুক্তি বোঝায়। প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তি বোঝাতে প্রগতিবাদীরা সুল্বাসূত্র আর সঙ্ঘীরা গণেশের মাথা জোরা বোঝান। কিন্তু ভারত/পাকিস্তান/বাংলাদেশ চর্চায় যে গ্রামের দিকে তাকাতে হয়, সেটাই আদতে সত্যকারের ভারতবর্ষ/পাকিস্তান/বাংলাদেশ, সেই ধারণাটা বহুকাল ডান বাম কারোর মাথায় আসে নি - সেচ ব্যবস্থা থেকে নানান ধরণের চাষ থেকে নৌকো চালানো থেকে তাঁতের প্রযুক্তি থেকে ধাতু প্রযুক্তি থেকে হাজারো প্রযুক্তি দর্শন।
অতীত ভারত চর্চায় অশিক্ষিত ডানেদের বাদই দিচ্ছি, কিন্তু সার্বিকভাবে কেরলের কিছু জ্ঞানচর্চা আন্দোলন বাদ দিলে, বামেরা দেশজ জ্ঞানচর্চা, লুঠ ইত্যাদি নিয়ে এই সেদিন অবদি খুব একটা মনোযোগ দেন, দিলেও খুব বেশি গুরুত্ব দেন নি। যদিও মৃদুলা মুখার্জী বা ইপিডবলিউ এ বিষয়ে কিছুটা দ্বার খুলেছে। কিন্তু বামেরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আজও ইওরোপমন্য তার প্রধান উদাহরণ ইরফান হাবিবের মুঘল আমলে কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে কাজ এবং তার নেওয়া সিদ্ধান্ত এবং হরবংশ মুখিয়ার সামন্ততন্ত্র বিতর্ক বইতে বামেদের অবস্থান।
অর্থনীতির ইতিহাসে একমাত্র ব্যতিক্রম অমিয় কুমার বাগচী মশাই - যিনি এই সময়টাকে বলছেন ভারতের ওপর চাপিয়ে দেওয়া স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসির সময়।
ফলে প্রাচীন ভারতচর্চা যে একরৈখিক কালো অক্ষরেই লিখিত নেই, এটা মাথায় রাখুন।

No comments: