দ্বিতীয় দিন
প্রথম দিনের প্রায় প্রত্যেকেরই বউনি হয়েছে.
শুধুই ধেকড় শিল্পী দিল্লি সরকার বিক্রি করেছে ৫০০০টাকা. বিক্রর অস্বাভাবিক পরিমান শুধু গ্রাম বলেই নয়, এই অঞ্চলটি ধোকড়ের জন্মদতা. ধনকোল(লেখা ধনকৈল) হাটে অস্বাভাবিক পরিমানে সপ্তাহের দুদিন অস্বাভাবিক পরিমান ধোকড় বিক্রি হয়.
দিল্লিকে তাঁর স্বামী এবং বড় ছেলে মেলায় আসার কথায় নিরুত্সাহ করেছিল. বলেছিল এই মেলায় ধোকড়া বিক্রি হবে না, শুধু লোক হাসবে. প্রথম দিন মেলার শেষে বাড়িতে ফেন করে ঘচনা বলায় বাড়ির লোক বিশ্বাস করে নি, শেষ পর্যন্ত দিল্লিকে বাড়ি গিয়ে বিক্রির প্রমাণ দেখাতে হয়.
দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের শিল্পীরা আসবেন. আমরা সকলে খুবই উত্তেজিত. একটা দল(বাপি আর শ্যামা) গেল ইটাহার আর বিশ্বেন্দু আর শঙ্কর গেল হিলি সীমান্ত.
বাংলাদেশ শিল্পীদের অভিজ্ঞতা
ভোর সাড়ে পাঁচটায় বেরিয়ে ১০০ কিমি দূরে হিলি পৈঁছলাম সকাল আটটা. ফোনে জানলাম ওরাও পৌঁছেছেন. কিন্তু নানান বাধা কাটিয়ে এদিকে আসতেই কেটেগেল বারোটা-সাড়ে বারোটা. এদিকে ঢাকা থেকে ফোন করে হিমাংশু জানাচ্ছে বাংলাদেশ সামান্তে ঘুষ নিচ্ছে, আপনি ভারতটা দেখেন.
আমরা ভারতীয় শুল্কচৈকি আর অভিভাসন দপ্তরে বলে রেখেছিলাম. তারা বিষয়টা জেনে সমস্তরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেন. এবং সকলেই কথা রেখেছিলেন. সকলকে অজস্র ধন্যবাদ. ভারতের সামান্ত চৌকি নিয়ে আনেক রটনা শুনেছিলাম. কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা.
ওঁরা বেরিয়ে আসার পরেও আমাদের দেখে খুব একটা আনন্দের ছটা দেখলাম না. ভাবলাম হয়ত ক্লান্তি. ভারত সূত্খরে বর পেলাম বাংলাদেশের দিকে হয়রানির কারন হল এঁদের একজনের ছাড়পত্র ছিল বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে, এসেছেন হিলি সীমান্তে. তাই গন্ডগোল.
ভাপত সীমান্তে খুব সাহায্য করলেন আশুতোষ সাহা নামে এক মুদ্রা ব্যবসায়ী. তিনি স্থানীয় তৃণমূল কর্তা. আমাদের উদ্বোধন করেছেন অমল আর ছিলেন অসীম শুনে(আমার বিশ্বাস না শুনলেও সাহায্য করতেন) আরও উদ্যোগী হলেন.
এদিকের সীমান্তে কোনও গন্ডগোলতো হলই না বরং সকলেই অস্বাভাবিকভাবে সাহায্য করলেন. এবং বেরিয়ে এসেই তাঁরা দাবি করলেন উদ্যোক্তাদের তাঁদের সীমান্ত খরচের সমস্ত ব্যয় দেতে হবে. প্রথমে আমরা ভাবলাম ওঁরা রসিকতা করছেন. পরে বুঝলাম রসিকতা নয় ওঁরা সত্যিই চাইছেন. আমরা বন্ধুত্বপূরর্ণভাবে পোর্টারদের ৪০০ টাকা আর বনগাঁ-হিলি অভিভাসন পরিবর্তনের ৫০০ টাকা উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দিলাম. ওরা ব্যাগ খুললেনই না. বললেন ওঁদের সব টাকা শেষ.
গাড়ি করে মেলায় এসে দেখলাম ইটাহার হয়ে আসা বাংলাদেশের শিল্পীরা এসেছেন.
হিলির শিল্পীরা নেমেই বললেন, এই গ্রামে আমাদের নিয়ে এলেন! আমাদের এত দামের পণ্য বিক্রি হবে না. ওদিকে মেলায় অন্য দুজন ভীষণ গণ্ডগোল শুরু করেছেন, দোকান ধোয়া ইত্যাদি নিয়ে. তাঁরা মোটেই সন্তুষ্ট নন. একজন বললেন তাঁরা বিশ্বজুড়ে ৩০টা মেলা করেছেন, কিন্তু এরকম অব্যবস্থার মেলা তাঁরা আর দেখেন নি. এবং তাঁরা চারজন চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে শুরু করলেন, আমি(বিশ্বেন্দু) একটু উঁচু গলায় বললাম, আমরা গ্রামীণ শিল্পীদের সংগঠণ, এই মেলার যায়গা, পরিচয়, মেলার চরিত্র নিয়ে একবিন্দুও লুকোই নি. আমরা অবস্থাপন্ন শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করি না. আর আমরা প্রধাণতঃই গ্রামে মেলা করি. আপনাদের অপছন্দ তবুও বলব আপনারা থেকে যান.
বললাম, আপনারা ফ্রেস হয়ে খেয়ে আসুন পরে দোকান সাজাবেন. অসন্তুষ্ট হয়ে, বকাঝকা করতে করতে তাঁরা থাকতে গেলেন. এদিকে আমি বাংলাদেশে ফোন করে সব বললাম. খাওয়ায় যায়গা থেকে ফোন করে বলল তাঁরা চলে যাচ্ছেন. মাটির বাড়ি দেখে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন. খাওয়ার যায়গাও তাঁদের পছন্দ নয়(আমরা ছিলাম গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে. শিক্ষকেরা উদার হৃদয়ে আমাদের সেখানে থাকতে এবং খেতে অনুমতি দিয়েছিলেন. সংগঠক এবং শিল্পীরা দুটো ঘরেই থাকতাম. আমরা সংগঠক বলে হোটেলে থাকব বা আলাদা থাকব এ ভাবনাও আমাদের মাথায় আসে নি.)
জেলা সম্পাদক ফোনো জানালেন ওঁরা চলে যাবেন বলছেন. বললেন যে মাটির বাড়িতে এঁদের রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল, সেই বাড়ির মহিলাদের ওপর হম্বিতম্বি করে ওঁরা কল থেকে জল তুলিয়েছেন, প্রত্যকৃত্য করেছেন এবং ঘর দেখে অসুস্থ হয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন.
ওঁরা এসে জানালেন চলে যাবেন. থাকতে পারছেন না. বিনয়সহকারে জানালেন আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছেন, কিন্তু তাঁদের এক সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁরা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন. সদস্যরা তাঁদের বিনীতভাবে থাকতে বলছিলেন. আমরাও তাঁদের চলে যাওয়ায় খুশি হইনি. কেননা অনেকেই বাংলাদেশের স্টল দেখতে আসবেন জানিয়েছিলেন. এবং আমরা সবাইকে বলেছিলাম বাংলাদেশ আসবে. অনেকের কাছে আমরা মিথ্যুক হব জেনেও তাঁদের চলে যাওয়ায় সিদ্ধান্তে আমরা ছোট্ট মিটিং করে সায় দিলাম. ওঁদের গাড়ি করে রেল স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া গেল.
এরপর মেলা শুরু হল.
তারপর মানুষের ঢল.
গাড়ি নিয়ে ৮ কিমি দূরের কালিয়াগঞ্জ থেকে এসেছেন মেলা দেখতে
দুই খুদে দর্শণার্থী
কেনাকাটা
খুদে শিল্পী
মেলার নিয়ম মেনে অন্য নানান দোকান বসেছে.
মানুষেক ঢল
ভাবী বৌ আর মাকে নিয়ে খুব শিল্পদ্রব্য কিনেছেন কাসেম
বহুরূপী সুলদাস বৈরাগ্য
মেলা শেষে ভাঙা শাটার বন্ধের প্রানান্তকর উদ্যম
রাত ১১.৩০, তখনও খন গান চলছে, অগুন্তি মানুষ
No comments:
Post a Comment