হাটতত্ব আর গ্রামীণ মেলা
বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ তাত্বিকভাবে কলকাতা অথবা বাঙলার শহরের বাইরে হাটভিত্তি করে বিক্রি হওয়া শিল্প যা আদতে গ্রামীণ বংশ পরম্পরায় চলা আসা ছোট উত্পাদকেদের বাজার, তাকে বোঝা, জানার চেষ্টা করছে. সরকারি উদ্যমে গ্রামীণ ছোট উত্পাকেদের উত্পাদন বিক্রির যে শহরমুখীনতা রয়েছে, তাকে প্রশ্ন করার চেষ্টা করে চলেছিল.
সংঘের বিশ্বাসছিল বিশ্বায়ণের করাল গ্রাস থেকে, ভারতকে ভারত রাখার চেষ্টায় হাটের অর্থনীতি আর দর্শণকে জোরদার করা অতীব জরুরি. একমাত্র হাটই ভারতকে ইওরোপ আমেরিকার ক্ষুদ্র নিদর্শন হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে. এই হাটেই পারম্পরিক উত্পাদন বিক্রিহওয়াটা ভীষন জরুরি গ্রামীণ আর্থনীতির ক্ষেত্রে. একমাত্র গ্রামীণ অর্থনীতিই ভারতকে বাঁচিয়ে এসেছে, আগামীদিনে ভারতকে বাঁচাতে সাহায্য করবে. ইওরোপ আমেরিকার অর্থনীতির ধস থেকে ভারত বেঁচেছিল গ্রামীণ অর্থনীতির বলে, তথাকথিত ইওরোপিয় মার্কেট ফান্ডামেন্টালিজমএর জন্য নয়. সেই গ্রামীণ অর্থনতির দিকে আমাদের আরও নজর দিতে হবে, এবং সেই দৃষ্টি ভারতীয় দর্শণের বলেই জন্মাতে হবে. ইওরোপ-আমেরিকীয় জ্ঞাণচর্চায় অভ্যস্ত পণ্ডিতদের দূরে রেখেই এই কাজটি সমাধা করতে হবে.
কথায় কথায় বাঙালি নোবেল জয়ী অর্থনীতির উদ্ধৃতি দিলে বিষটির গভীরে পৌঁছন যাবে না, কারন অমর্ত্যবাবুও উন্নয়ণের রাজনীতির মূল ধ্বজাধারী কাণ্ডারী. তিনি চান তথাকথিত পিছিয়ে পড়া ভারত ইওরোপিয় ঢংএ গড়ে উঠুক. সংঘ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে তারা তথাকথিত উন্নয়ণের রাজনীতির সরাসরি বিরোধী. এবং অমর্ত্যবাবুর অর্থনীতির পথের সরাসরি বিরোধী.
এই হাট জেরদার করা জরুরি কেননা হাটই ভারতের মহিলাদের মুক্তির পথ বজায় রাখে. কারু ও বস্ত্র শিল্পীদের পরিবারে অধিকাংশ উত্পাদনের কাজ করেন মহিলারা. এই হাটে সেই মহিলাদের তৈরি দ্রব্য বিক্রি হয়. সেই হাটদর্শণ অবলম্বন করে মেলা আয়োজনে, মহিলাদের নিজেদের মধ্যে প্রযুক্তি এবং ভাব আদানপ্রদানের সুযোগ বাড়ে.
আর হাট দার্শনিকভাবে একচেটিয়া অথবা বড় পুঁজির বিরোধী. ভীষণভাবে স্থানিক বাজারকে শক্তিশালী করে. বহুত্বের ধ্বজাধরে ভারতীয়ত্বর পতাকাকে উর্ধ্বে তুলেরাখে. উত্পাদনের বহুত্ব বজায় রাখা, পুঁজির এককেন্দ্রকতাকে রোধ করা আর স্থানিক দ্রব্যের গুরুত্বকে তুলে ধরে ভারতীয় হাটই. হাটই ভারতীয়ত্বের অন্যতম প্রধান উপাদান.
আদতে ইওরোপিয় তত্বে গ্রামকে পিছিয়ে পড়া বলে দেগে দিয়ে শহুরে আমরা নিজেদের পৃষ্ঠকণ্ডুয়ণ করেও বুঝি না আজও শহরগুলোর তুলনায় গ্রামগুলো, হাটগুলো নানান সামাজিক অর্থনৈতিক বন্ধন সৃষ্টকরে মহিলাদের নানান সামাজিক আর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীণতা বজায় রেখে চলেছে. মহিলাদের তথাকথিত ক্ষমতায়ণের রাজনীতি আসলে বিশ্বায়ণের হাতকেই পুষ্ট করছে. অন্ততঃ ভারতীয় গ্রামীণ মহিলাদের ইওরোপিয় নারীমুক্তির কারবারীদের থেকে বেশি কিছু শেখার নেই এ কথা সংঘ আরও স্পষ্ট ঘোষণা করে. ইওরোপিয় নারীমুক্তি আদতে মহিলাদের আরও বেশি কর্পোরেটেদের কাছে সঁপে দেওয়ার সরাসরি চক্রান্ত.
এই ভাবনা থেকেই সংঘ এবং আরও কয়েকটি সংগঠন মিলে ১০-২০মে, ২০১২য় যে উত্তররঙ্গ মেলা আয়োজন করে তারও উদ্দেশ্য ছিল গ্রামে উত্পাদন বিক্রি আর গ্রামীণ হাটের মাহাত্ম্যকথন. কলকাতা সংলগ্ন জোকা পঞ্চায়েত এলাকায় এই মেলাটি আয়োজিত হয়. অনেকে বলেছিল এত্তদূরে! কেউ কেউ ঠোনা মেরে বলেছিলেন জোকা কবে থেকে গ্রাম হল!!. তবে মেলার বিক্রির পরিমানে প্রায় সক্কলে সুখী হন. কিন্তু বলা দরকার সেই মেলাটি কিন্তু কলকাতার উপকণ্ঠে আয়োজিত হয়. সেই মেলার ক্রেতার অধিককাংশই কিন্তু কলকাতা সংলগ্ন এলাকা থেকে আসা.
তখন থেকেই সাংগঠনিকভাবে এক্কেবারে শহরের বাইরের গ্রামে একটি মেলার আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল সংঘের. সংগঠনের উত্তর দিনাজপুরের জেলা কমিটির উদ্যোগে একটি গ্রামীণ মেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা হল. মেলাটি কিন্তু হল এক্কেবারে গ্রামে, চান্দোলে. উত্তর দিনাজপুরের সীমান্ত শহর কালিয়াগঞ্জ থেকেও প্রায় আট কিমি ভেতরে. মূল কালিয়াগঞ্জ-বালুরঘাট রাস্তা থেকে প্রায় দুই কিমি গ্রামের ভেতরে.
এই পরিকল্পনাটি জানানো হয়, এশিয় জোট সদস্য বাঙলাদেশ আর নেপালকে. তাঁরা কথা দেন আসবেন.
আনন্দদার দোকান থেকে মেলার মেরাপ বাঁধার দৃশ্য, মেরাপের বাঁদিকে শাটারওয়ালা দোকান আর ডান দিকে পাকা হাট
রাতে সকলে কাজ শেষ করে আসছেন মিটিং করতে
মিটিং শেষে রাতের খাওয়া আনন্দদার দোকানে
তখন ম্যারাপ বাঁধা প্রায় শেষ
মাঠেই মিটিং
মিটিং
মিটিং
No comments:
Post a Comment