ঘুষের লুঠ
সে সময়ে হেস্টিংসের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল ক্লেভারিং আর ফিলিপ
ফ্রান্সিস বিলেত থেকে এলেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নিদান দিতে। কাজে কাজেই
হেস্টিংসের দুই লুঠেরা হাত, কান্তবাবু আর গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের বড়লোকিতে কাতর মহারাজা
নবকৃষ্ণ, সাহেবদের সামনে ঠুকে দিলেন এক পত্র বোমা, An account of the money received by Governor Hastings and other
gentlemen from the Zaminders, Talookdars and Farmers of the subah of Bengal
from his accession to the government till the arrival of the General(Clavering)
and other gentlemen; exclusive of Nuzzers(presents), pearls, Jewels, Cloths and
complementary presents…
Dacca Rs।
Ready
money 5,00,000
Mr.Barwell 4,00,000
Rungpore etc
Ready
money 1,00,000
Promisery 1,00,000
Moorshidabad-Exclusive
of Mr।Middleton 3,00,000
Dinagepore 2,00,000
Boglepore 2,00,000
Beerbhum, Bishnupur
etc।, 1,50,000
Midnapore
Mr।Vansitart and other Gentlemen 3,50,000
Raja Kissenchand 1,50,000
Burdwan-Exclusive
of Mr। Chas Stewart
Through
Diwan Brojkishore 2,00,000
Phoolbundy 1,50,000
Mundalghat
salt contract 1,50,000
Hooghly, Hijli etc।
Ready
Money 1,00,000
Settlement
for salt 6,00,000
Jessore etc।,
On account of sault
of Raymangal etc।, 2,00,000
Farmers of 24
praganas 0,50,000
From Raja Huzuri
Mul and Madan Duttfor relinquishing the farm of
Poornea 1,00,000
Profit of Butta,
premium of bills from Raja Huzuri Mal & Doyalchand 1,50,000
From servants wages 1,00,000
Total 42,00,000
Governor Hastings
received from Nawab Shuja-ud-Daula & others without participation as
follows –
From
Nawab Mubarak-ud-Daula through Munny Begam
Munny
Begam 2,00,000
From
the sets 50,000
Raja
Rajbullav 1,00,000
From the Zamindari
of Rani Bhowani 1,25,000
From Nawab
Shuja-ud-Daula in cash 5,00,000
Promisory 5,00,000
From the raja of
Benaras in cash 2,00,000
Promisory 1,00,000
17,75,000
Mr। George Vansittart without participation –
From Shuja-ud-Daula 2,00,000
From the raja of
Benaras 1,00,000
62,75,000
(সূত্রঃ রজতকান্ত রায় – পালাশির
ষড়যন্ত্র ও সেকালের সমাজ)
মোটামুটি ওপরের তালিকায় পলাশি উত্তর কালের কয়েক দশকের মধ্যেই ঘটে যাওয়া
কপালে চোখ তোলা বাঙলা একটিমাত্র প্রান্তে দেওয়া ঘুষের অংকটি বাঙলা সুবা থেকে
ইংরেজদের ওপর মহলের ঘুষ আদায়ের গা ছমছমে উপন্যাস নাহলেও নভেলাতো বটেই। এই
লুঠ(কু)কর্মটি পরবর্তী দেড় শতাব্দকালে ক্রমশঃ ক্রমশঃ গায়েগতরলাগা বালিশসম উপন্যাসের
চেহারা নেবে। কত
অর্থ ইংলন্ডে ঘুষ বাবদ গিয়েছে যদিও তা হিসাব করা অসম্ভব, তবুও এই পরিমান আঁকতে
পারলে যেকোনো রহস্য উপন্যাস হার মেনে যেতে পারে, যে উপন্যাস সভ্যতার রঙিন মুখোশপরা
ইংরেজদের সরাসরি নগ্ন করে দাঁড় করয়ে দিতেপারে খোলা বাজারে। অনেকেই সাফাই
গাইছেন, ইংরেজ উচ্চপদস্থ আমলারা মাঝের অথবা নিচের তলার কর্মচারীদেরমত সরাসরি ঘুষের
টাকাটা নিতেন না। যাঁরা
এই দাবি করছেন তাঁরা ক্লাইভ, হেস্টিংস, পিটদের সরাসরি রোজগার দেখতে পাননি। পরের স্তবকে
দেখব রাণী ভবানী শুধু হেস্টিংসকে সরাসরি দিয়েছেন সেযুগের ১,২৫,০০০ টাকা ঘুষ, মির
জাফরের বিধবা মুন্নি বেগম ক্লাইভকে দিয়েছে সে যুগে ৫ লক্ষ টাকা। এ কিন্তু চোখে
দেখা হাতে লেখা হতিহাস। এর বাইরে! যদি চোখ বুজেই ধরেই নেওয়া যায় যে, প্রাগুক্ত প্রবক্তাদের কথাই
বেদবাক্য, তাহলে বামহস্তক্রিয়ার শেকড় চারিয়ে যায় অনেক নিচ পর্যন্ত। এঁদের দাবি
অনুযায়ী যারা মহামহিম কোম্পানির বড় আমলাদের জন্য হাতে হাতে অর্থ নেওয়ার
বামহস্তক্রিয়ায় জড়িয়ে থাকতেন, সেই মাঝারিতলার না দেখতে পাওয়া মুখেদের, বাম হাতের
রোজগার বড় কম ছিল না বোধহয়। বড়, মাঝারি আর ছোট রুইকাতলাদেরসঙ্গে পুঁটিমাছেদের বেসরকারি ঘুষ
প্রাপ্তিযোগ জুড়লে লুঠের বখরার টাকা আজকের অর্থেরমানে আকাশ ছাড়িয়ে যাবার আশংকা
থাকে। এর
সঙ্গে যদি সারা বাঙলার বখরা জোড়া যায়, সেই অংক কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানেন না।
শুধু রাণী ভবানীর জমিদারির হিসেব করলেই বিষয়টা নতুন করে খোলতাই হতে পারে। বাঙলা সুবা
জুড়ে তখন ঘুষের আর লুঠের রাজত্ব। সূর্যাস্ত আইনে জমিদারি বাঁচাতে রাণী ভবানী হেস্টিংসকে ১,২৫,০০০টাকা ঘুষ
দিয়েও পার পেলেন না। তিনি
সদাশয় পালক ইংরেজ বাহাদুরকে স্পষ্ট জানালেন ১১৭৯ আর ১১৮০তে নিজের জমিদারি ইজারা
নিতে সেলামি দিতে হয়েছে ৪,৪০,০০১টাকামাত্র। মুরলী পোদ্দার, সদানন্দ পোদ্দার আর হটু বিশ্বাসের হাত দিয়ে হেস্টিংসের
দেওয়ান কান্তবাবু সরাসরি নিয়েছেন ১,২৫,০০০টাকা। যুগল উকিল,
রূপ পোদ্দার আর মুরলী পোদ্দারের হাত দিয়ে আর প্রায় মরতে বসা জগতশেঠের কুঠির
মাধ্যমে শান্তিরাম সিংহ ২ লক্ষটাকা রোজগার করেছেন। এর মধ্যে এক
লক্ষ টাকা রাজবাড়ি আর শেঠভবনে গয়নাগাটি বেচে জোগাড় করতে হয়েছে। এ ছাড়াও যে
তৃতীয় ব্যক্তিটি প্রণামী পেয়েছেন তার নাম ভবানী মিত্র। নয়ান পোদ্দার,
মুরলী পোদ্দার, রামকৃষ্ণ পোদ্দার, অখিল পোদ্দার, সদানন্দ, আনন্দরাম উকিল, পরীক্ষিত
মোরারের হাতে হাতে এবং আনন্দরাম উকিলের মধ্যস্থতায় মোতিচাঁদ শেঠের পাট ও দর্পনারায়ণ(ঠাকুর!)
উকিলের মাধ্যমে পরগণা নুরুল্লাপুরের উপর ঢাকায় প্রদেয় পাট মার্ফত মোট ৩,৭৫,৪৫২
টাকা পেয়েছেন। এতসব
ঘুষঘাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত রাণীর হারবন্দ পরগণা হেস্টিংসের বেনিয়ান কান্তবাবুর
পুত্র লোকনাথ নন্দীর গ্রাসে পতিত হয়। কান্তবাবুর স্বজাতি দেওয়ান দয়ারাম রায়ও রাণীকে বন্ধকীমহলের ওপর ধার দিয়ে
জমিদারির একঅংশ দখল করে নাটোরের পাশে দীঘাপাতিয়া জমিদার রাজ সৃষ্টি করেন। ১৭৮১তে উত্তর
স্বরূপপুর নামক বিরাট পরগণা কলকাতার বেনিয়ান দর্পনারায়ণ ঠাকুরকে বেচে দেওয়া হয়। সমগ্র বাঙলার
শ্রদ্ধা অর্জণকরা নাটোরের রাণী ভবানীরমত বাঙলা সুবাতে একডাকে চেনা এক জমিদারিতেই
ইংরেজরা যদি এই ঘুষের রাজত্বের লুঠতরাজ চালাতে পারে, তাহলে সমগ্র বাঙলা জুড়ে
শুধুমাত্র কত ঘুষের টাকা ব্রিটেনে গিয়েছে তা আদপেই অংক কষার বাইরে।
ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া, আরও গভীরভাবে বললে, বাঙলা সুবা থেকে বছরে বছরে লুঠ
হয়ে যাওয়া অর্থে আর প্রযুক্তিতেই ব্রিটেনের মানুষমারা, পৃথিবী ধংসকারী
শিল্পবিপ্লবের ভিত গড়ে ওঠে। এর সঙ্গে ঢাকের বাঁয়া হিসেবে যোগদেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের দাস ব্যবসা ভিত্তিক
চিনি(আখ)র ব্যবসা আর আফ্রিকা থেকে লুঠ করে আনা দাস ব্যবসার উদ্বৃত্ত। ইংলন্ডের
মূলধন নানান ইওরোপিয় দেশে বিনিয়োগ হত। ১৮১৫ থেকে ১৮৩০ পর্যন্ত ইওরোপিয় রাষ্ট্রগুলির সরকারি সিকিউরিটিতে প্রায় ৫
কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং মূলধন নিযুক্ত হয়। লাতিন
আমেরিকায় ২ কোটি পাউন্ড আর আমেরিকায় প্রায় ১ কোটি পাউন্ড নিবেশিত হয়। এইসব উদ্বৃত্ত
জমা হয়ে ইংলন্ডের শিল্পজাত দ্রব্যের বিকাশ হতে থাকে বছরের পর বছর। এ প্রসঙ্গে
১৯১৩কে ভিত্তিবর্ষ ধরে ব্রিটেনের ঐ সময়ের জিডিপির ইতিবৃত্ত – ১৭২০-২১ – ২.১, ১৭৬০-৬১ – ২.৬, ১৭৭০-৭১ – ৩.৩, ১৭৮০-৮১ – ৩.৫, ১৭৯০-৯১ – ৪.৬, ১৮০০-০১ – ৫.৭, ১৮১০-১১ – ৭.১, ১৮২০-২১ – ৯.৭, ১৮৩০-৩১ – ১৮.৩, ১৮৪০-৪১
– ১৯.৬। লক্ষ্য করার বিষয় ১৮০০র পর থেকে ব্রিটেনের জিডিপি ৫ ছাড়িয়ে উর্ধমুখী। ১৮৩০এর পর
লাফিয়ে লাফিয়ে দুই অংক ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে কুড়ির ঘরে প্রবেশ করেছে। তবুও মার্শাল
আর আর তার পূর্বসূরীদের পথ বেয়ে বলতেই হবে বাঙলা লুঠের অর্থে ইংরেজদের
শিল্পবিপ্লবসাধন একটি অতিকথামাত্র, এর মধ্যে বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই বললেই চলে। এর পাশাপাশি বাঙলা
থেকে শিল্পজাত পণ্যদ্রব্য ও কাঁচামাল আমদানি রপ্তানির হিসেবটুকু দেওয়া যাক –
১৮৭০ ১৮৯২ ১৯০৭
শিল্পজাত
পণ্যদ্রব্য
টাকার হিসাব
আমদানি ২৫৯,৮৬৫,৮৭২ ৩৬২,২৩১,৮২৭ ৬৯৮,৮৯৫,০০০
রপ্তানি ৫২,৭৮০,৩৪০ ১৬৪,২৪৭,৫৬৬ ৩৯২,৯৮১,০০০
কাঁচামাল
টাকার হিসাব
আমদানি ১৩৭,৫৫৫,৮৩৭ ২৬৩,৮১৮,৪৩১ ৫৯৯,৬৬৮,৩৭৪
রপ্তানি ৫৯৬,৭২৭,৯৯১ ৮৫৫,২০৯,৪৯৯ ১,১৪১,২৩১,৩৩৫
No comments:
Post a Comment