Friday, January 24, 2020

আনন্দ রাম মুখলিস(১৬৯৭?-১৭৫১) - আমলা যখন সাহিত্যিক

(প্রথম ছবি মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাএর সম্মুখে আনন্দ রামের কর্তা প্রধানমন্ত্রী ইতিমদঅলদৌলাকামারঅলদিন।। দ্বিতীয় ছবিটা কারনামাইইশকের একটি পাতা।। তৃতীয় ছবিটা আনন্দ রামের পরী খানার একটা পাতা)
মুঘল দিল্লি(ইতিহাসে যে সময়টাকে আরভিংএর ভাষায় ল্যাটার মুঘলস বলা হয়)র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমলা। আনন্দ রামের জন্ম পাঞ্জাবি অমুসলমান ক্ষত্রি পরিবারে, যে জাতি থেকে মুঘল আমলে প্রচুর আমলা করণিক হয়েছে। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রে প্রবেশ। সে সময়ের একটি সুবার প্রধানমন্ত্রীর দরবারি উকিল(দিল্লি দরবারের প্রতিনিধি) ছিলেন। রায়রায়াঁ উপাধি পান। প্রশাসনিক পরিচয় ছাড়াও অন্যতম পরিচয় ছিল তিনি সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কবি এবং কবিদের খুব কাছের মানুষ।
দিল্লি শহরে নিয়মিত রাজনৈতিক গোলোযোগ এবং আক্রমন সত্ত্বেও শহরের সাহিত্যিক পরিবেশ অসামান্য উজ্জ্বল ছিল। দিল্লিজুড়ে বিপুল মুশায়ারা আয়োজিত হত। কাব্য এবং গদ্যের সাহিত্যগুণসম্পন্ন মানুষেরা রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করেছিলেন।
আমলা এবং কবি আনন্দরাম সে সময়ের প্রখ্যাত লেখকদের মধ্যে অন্যতম। সে সময়ের আমলারা চিঠি লেখাকে কাব্যের আকারে রূপান্তরিত করে ফেলেছিলেন। তাঁর আগের সময়ের দুই প্রখ্যাত অমুসলমান আমলা চন্দরভান ব্রাহ্মণ, বা হরকরণ দাস কম্বুও চিঠি লেখার আঙ্গিক ইনশা-র বই রচনা করেন। এই প্রবাহের অন্যতম উত্তরাধিকারী আনন্দ রাম। তার ঘোরাফেরার স্মৃতি কথা নিয়েও তিনি পুস্তক রচনা করেন।
তিনি শুধু কবি ছিলেন না হস্তাক্ষরবিদ আর ছবিয়াল ছিলেন। তাঁর রচিত ডিক্সনারি মীরাটিউলইস্তিয়াক বা কারনামাইইশক আজকেও পড়া হয়। ১৭৩১এর কারনামাইশক হল শাহজাদা গৌহর এবং শাহাজাদী মালিকাইজামানির প্রেম কাহিনী।
আনন্দরামের বাড়িটিতে সে সময়ের প্রখ্যাতরা এসে জুটতেন কাব্য আলোচনার জন্যে। তাঁর বন্ধু ছিলেন আরেক আমলা, যদিও তাঁর মত উচ্চপদে উঠতে পারেন নি, টেকচাঁদ বাহার। দুজনেই সিরাজ আলদিন ওরফে আরজুর শিষ্য ছিলেন।

No comments: