"খুব খারাপ লাগে যখন দেখি বিপ্লবীরা বনে গেছে শেয়াল, হুক্কাহুয়া করে যাওয়াই তাদের খেয়াল। যারা নতুন কিছু আনছি বলে গলা ফাটায় , ও মা তারাও দেখি খুব খুশী মৌলবাদের গু চাটায়। আহা, এ লীলাখেলা কী অনবদ্য।"
শুনলাম এটা কবিতা। আমরা গাঁইয়া। কবিতারই কিই বা বুঝি! আমরা একে অভিজাত ভদ্রদের উপদেশ হিসেবে ধরে নিয়েছি - কেউ কেউ বলেন গালাগালি। এগুলি শোনার দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে আমাদের পূর্বজদের - আমাদেরও - দীর্ঘ আড়াইশ বছরের পরম্পরা! অভ্যেস যাবে কোথা!
এবারে আমাদের ছোটলোকেদের কথা-
১। উদ্বৃতির চরণগুলি শ্রদ্ধেয় বামপন্থী Shyamalবাবুর লেখা। আমাদের নাম নেন নি। ফরহাদ মজহারএর মূর্তি সংক্রান্ত লেখা আমাদের দেওয়ালে প্রকাশ করায় কথাগুলি বলেছেন। এর আগেও আমরা তাঁর লেখা প্রকাশ করেছি। ওপরের চরণগুলিকে গালি দেওয়া বোঝায় কিনা ভদ্ররা ঠিক বুঝবেন - এটা তাদের উত্তরাধিকার কিনা।
২। গতকাল আমাদের দেওয়ালে যে প্রশ্নগুলি তুলেছিলেন, গাঁইয়াদের মত করে সশ্রদ্ধ উত্তর দিয়েছি। প্রত্যুত্তর পাই নি।
৩। আমরা বিপ্লবী? এমন দাবি করেছি? প্রমান দেখান। বিপ্লব ভদ্রলোকের জন্মগত একচেটিয়া - ভ্যানগার্ড অব দ্য প্রলেতারিয়েরত। গাঁইয়াদের? খ্যা খ্যা খ্যা...
৪। "যারা নতুন কিছু আনছি বলে গলা ফাটায়" - তাঁরা বিদ্যাসাগর-বঙ্কিম প্রণীত ঔপনিবেশিক বাঙলা ভাল বোঝেন আর আমরা ছোটলোকিয় গাঁইয়া। এটাও বামপন্থীসুলভ হয়ে গেল না! আমরা ছোটলোকেরা বলেছি গাঁয়ে শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের যে উতপাদন-বিতরণ ব্যবস্থা রয়েছে তার পাশে আছি আর যা ভেঙ্গে গেছে তাকে পুরোনো রূপে পাওয়ার চেষ্টা করছি। "নতুন কিছু আনছি" এই দাবি করেছি দেখান।
৫। আমরা যারা গাঁইয়া তাঁর শব্দ চয়নে বিন্দুমাত্র অবাক হই নি। জানি মার্ক্স আমাদের কি ভাষায় সম্বোধন করেছেন, নবজাগরণের সময় আমাদের কি কি বলা হয়েছে। বরং তাঁর বর্ণিল উত্তরাধিকারীদের তুলনায় তিনি বোধহয় একটু কমই দিলেন - শুধুমাত্র "মৌলবাদীদের গু চাটা", "শেয়ালের হুক্কাহুয়া", "বিপ্লবীরা বনে গেছে শেয়াল" বলেই খান্ত দিয়েছেন - আমরা তাঁদের কুলীন পূর্বজদের ধারায় আরও কিছু অতিরিক্ত আশা করছিলাম - বেশি বেশি খেয়ে অভ্যেস হয়ে গিয়েছে না!। বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!
৬। এই সংক্রান্ত তাঁর আরেকটি প্রকাশনায় ভদ্র অভিজাতরাও কপাল কুঁচকেছেন - আমাদের বক্তব্য তারা পড়েছেন তার কোন নিদর্শন পাই নি। তারা কারা? তাঁরা কেউ প্রাক্তণ কর্পোরেটজীবি কেউ বা বর্তমানেও কর্পোরেট সেবাদাস। আমরা নিশ্চিত তাঁরা আমাদের ভাল চাইছেন। কিন্তু আমাদের বক্তব্য পড়েন নি - পড়লে আমাদের লেখা থেকে একটা একটা করে বিষয় তুলে প্রতিবাদ বা সমর্থন জানাতেন - যেমন করে Rouhin বা Dhrubajyoti করেছেন। আমাদের বা ফরহাদএর আলাদা আলাদা উত্তরও পেয়েছেন।
৭। হেফাজতের বিষয়েও আমাদের অবস্থান লুকোই নি। সে মন্তব্য এখানে তুলে দেব না। যদি কারোর মনে হয় জানা দরকার ছোটলোকেদের সেই প্রকাশনা কষ্ট করে দেখে নিতে হবে। এটা এমসিকিউ প্রশ্ন নয়। হ্যাঁ বা নায়ে উত্তর হয় না। সেগুলি না পড়ে যদি তাঁদের মনে হয় এই বাংলায় আমরা ফরহাদ মজহারএর প্রচার দিচ্ছি, বা হেফাজতের কথা বলছি তাহলে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ভদ্রলোকিয় কর্পোরেট রাজনীতির ভাবনা ছড়িয়ে দেবার দায় আপনারই।
৮। একটাই প্রশ্ন কর্পোরেট রাজনীতির বিরোধিতা। সেটা করতে গিয়ে ভদ্র বাঙ্গালির বিরাগভাজন হতে হয়েছে, হবে - ফরহাদ মজহার বা হেফাহত উপলক্ষ্য মাত্র। ব্যাপারটা স্বাভাবিকই। হয়ত ভবিষ্যতে হেফাজতিরাও চাপাতির নিদান দেবেন।
৯। তবুও এবাংলায় শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার ছোটলোক সমাজ নিজেদের সংগঠন তৈরি করেছে এবং নিজেদের যোগ্যতায় চালাচ্ছে। শূদ্র-বৈশ্য সভ্যতা কয়েক হাজার বছরের। তারা ছিল আছে থাকবে।
১০। বাংলায় অভিজাত ভদ্রপ্রযোজিত কর্পোরেট খুন অত্যাচার লুঠের মোটামুটি আড়াইশ বছর পূর্ণ হল। তাদের কর্পোরেট করণ পদ্ধতিও মোটামুটি জানা। কোম্পানি আমল থেকেই তাঁরা মুক্ত বাণিজ্যের ধ্বজাধারী, আজকে নিওলিবারেলেজিম নামক নব্যসাম্রাজ্যবাদেরও।
১১। গাঁইয়ারা আর কি করে। তারা তো সর্বংসহা। ভদ্রদের উপদেশগুলি বেমালুম গিলে খেয়ে নিতে হয়। সেটাই তো ছোটলোকেদের ধর্ম।
ভদ্রচৈতন্য দীর্ঘজীবি হোক!
"ফাক নিওলিবালেজিম!"
জয় বাঙলা!
বাঙলা আমার মা!
জয় কর্পোরেট দর্শন বিরোধী শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজ!
No comments:
Post a Comment