জনৈক বামপন্থী হেরোর ব্যবহার করা হাহুতাশের ছবি জুড়ে লেখাটা শুরু করলাম...
তিনুদের রাজত্বে বাংলায় 'অরাজক' অবস্থা ফিরে আসছে এমন একটা ধারণা ফেবুতে অন্তত ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন হেরো বামপন্থীরা - কেন, তাঁর উত্তর নিশ্চই অনেকের জানা।
তাই অরাজক শব্দটা নিয়ে কিছু বৃথা কালক্ষেপ করা যাক...
বাঙালি (ইংরেজি)শিক্ষিত মধ্যবিত্তের ভাষায় অরাজক বলতে বোঝায় পাল রাজাদের পূর্বের মাৎস্যন্যায় অবস্থা - বড় মাছ যেভাবে ছোট মাছকে গিলে খায়। এই শব্দটি সন্ধ্যাকর নন্দীর লেখায় পাই, রামচরিতএ ব্যবহার করেছেন। বৌদ্ধ আমলের খালিমপুর তাম্র শাসনেও এই শব্দটি একই অবস্থা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।ঐতিহাসিকেরা বলছেন ২৫ বঙ্গপূর্বাব্দে(ঔপনিবেশিকদের লব্জে ৬২৫ খৃ) শশাঙ্কের মৃত্যুর পর আর পালেদের রাজত্বের আগে, বাংলায় কেন্দ্রিয় ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে ওঠেনি। বৌদ্ধ ঐতিহাসিক তারানাথও বহু পরে বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে সে সময়ের বাংলা নিয়ে একই মন্তব্য করেছেন।
অথচ জানি সে সময় ছিল বৌদ্ধ-তান্ত্রিক বাংলা - ঘোষ, পোদ, বিশ্বাস, বাউরি, বাগদি, মালোসহ হাজারো নমঃ সমাজের সময় - সেই অরাজক অবস্থা থেকে বাংলাকে 'উদ্ধার' করতে পালেদের সিংহাসনে আরোহন। সে পালেদের বিরুদ্ধে পরের দিকে লড়াই করেছিলেন কৈবর্ত প্রধান দিব্যোক-ভীম(এখনও বাংলাদেশে দিব্যোকের ভাইপো ভীমের সময়ের তৈরি জাঙ্গাল রয়েছে)। তাঁর মানে সেই 'অরাজক' অবস্থায় ভীম -দিব্যোকেরা ভাল ছিলেন - তাই পালেদের ''স্থিতিশীল' রাজত্বে তাঁরা লড়াই দিয়েছিলেন। যে কৈবর্তদের মত 'নমঃ' সমাজ বাংলায় অরাজক অবস্থা তৈরি করেছিল - অর্থাত বাংলায় মাৎস্যন্যায় অবস্থার সৃষ্টি করেছিল তাদের পালেরা সমূলে উৎপাটন করেন। অর্থাৎ কৈবর্তদের মত সমাজের 'রাজত্ব' আদতে বাংলার অরাজক অবস্থাই।
আজ যেন আমরা সেই 'অরাজক'তার ধারণার প্রতিধ্বনি শুনছি বামপন্থীদের লেখায়। শব্দগুলোর মানে যদি ভেঙে লেখা যায় তা হলে হবে তিনুদের রাজত্বে বাংলার ঘোষ, পোদ, মালো, মুণ্ডা, বাউরি, বাগদিরা জেগে উঠছে...
তাঁরা বলছেন সাধু(মধ্যবিত্ত) সাবধান...
কে সাধু আর কেইবা চোরচামার... আর চামারেরা তো চোরেরই স্যাঙ্গাৎ... অন্তত ভদ্রলোকিয় ভাষায়।
No comments:
Post a Comment