
এমনই এক
পড়ন্ত সময়ে বাঙলার লৌকিক ও আদিবাসী সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে কাজ করা কলাবতী মুদ্রা, গুরুসদয়
সংগ্রহশালা, বাঙলার ব্রতচারী সমিতি, বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ
এপ্রিল মাসের ১১ দিনের একটি উত্তরবঙ্গভিত্তিক লোক উতসব, প্রদর্শণী, এবং সম্মান
প্রদর্শণ করল গুরুসদয় সংগ্রহশালায়, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি প্রতিনিধিস্থানীয় লোকনাট্য
আর শোলাশিল্পকে সামনে রেখে।
কলাবতী
মুদ্রা ।। গুরুসদয় সংগ্রহশালা ।। বাঙলার
ব্রতচারী সমিতি ।। বঙ্গীয়
পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ । উত্তরঙ্গ
১২।। ১১ ।

যে
লোকনাট্য একদা প্রাণিত করেছিল পশ্চিমবঙ্গের নানান নাট্য পুরোধাকে, সেই নাট্যগুলির
গায়ে কেন ধূসর মৃত্যুর ছোঁয়া। বিভাস চক্রবর্তীর নির্দেশনায় হালুয়া
হালুয়ানির আঙ্গিক নিয়ে মাধব মালঞ্চী কইন্যার প্রয়োজনা ছাড়িয়ে যায় সমস্ত নাট্য
রেকর্ড। কিন্ত গ্রামীণ নাট্য সেই প্রান্তে। কলাবতী মুদ্রা
এবং তত্প্রণোদিত দুইটি সংস্থা, বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু
ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ এবং বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সংঘ প্রত্যেক বছরই মে
মাসের ১০ থেকে ২০, এগার দিনের একটি উত্তরবঙ্গভিত্তিক উত্সব – উত্তররঙ্গ আয়োজন করতে থাকবে। যে উত্সবে থাকবে
উত্তরবঙ্গ সহ বাঙলার লোকনাট্য লোকনৃত্য, লোকসঙ্গীত উত্সব, পারম্পরিক শিল্প
প্রদর্শণী, বাঙলার হস্তশিল্প মেলা, গল্পবলা এবং শিল্পী এবং শিল্পী বন্ধু সম্মাননা। থাকবে কর্মশালা
এবং প্রত্যেক সন্ধ্যায় শিল্পী এবং শিল্পবন্ধুদের গল্পবলার আসর – যে আসরে নিজেদের
উন্মুক্ত করে শিল্পীরা বলবেন তাঁদের জীবনের, কর্মের, নানান লড়াই, আনন্দের কাহিনী –
আর শহুরে গবেষকদের ভাষ্যে নয়, পারম্পরিক শিল্পীরাই হবেন নতুন সময়ের ভাষ্যকার।

প্রথম মেলাটি উদ্বোধন করলেন লোকনাট্য খনএর শিল্পী মাধাই রায় মহান্ত।
গ্রাম শিল্পের অভিভাবক মহাশ্বেতা দেবী কথা দিয়েও আসতে পারেন নি।
তিনি দুটি আশীর্বাণী দিয়েছেন। বর্তমানেও
লিখেছেন। প্রধাণ অতিথির আসন অলংকৃত করতে অনুরোধ করা হয়েছিল
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী ড. মানস ভুঁইয়ামহাশয়কে। তিন
আসতে পারেন নি। জনপ্রতিনিধি ও ভাওয়াইয়া গায়ক ড.
সুখবিলাস বর্মা এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন।
ছিলেন বাঙলার ব্রতচারী সমিতির কর্মকর্তারা।

২০১২র মে মাসের ১০ থেকে ২০, এই এগার দিনই নানান সাংস্কৃতিক
কর্মাকান্ড উদযাপিত হল।

বাঙলার পারম্পরিক শিল্পীরাই তাঁদের বন্ধুদের সম্বর্ধনা দিলেন।
সম্বর্ধনা পেলেন গ্রামজীবনের বাইরে থাকা নাগরিক জীবনের নানান মানুষ, যাঁদের
প্রচেষ্টায় এই পারম্পরিক গ্রামীণ শিল্পীদের কিছুটা হলেও সুগম ও উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
সংগঠণ এই সম্মাননার নাম রাখছে শিল্পীদের জন্য লোকবঙ্গ সম্মাননা আর
শিল্পীদের বন্ধুদের জন্য লোকবন্ধু সম্মাননা। লোকশিল্পীরা এ বছর লোকশিল্পীদের
প্রাণপ্রিয় অভিভাবক সুখবিলাস বর্মামহাশয়কে স্মরণ-বরণ-সম্মান প্রদর্শণ করলেন
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের দিনে।

অন্ততঃ
পাঁচ প্রজন্মের শোলাশিল্পী মধুমঙ্গল মালাকারের আচারভিত্তিক নানান সৃষ্টি নিয়ে একটি
প্রদর্শণী আয়োজন করা হল। উল্লেখ্য মধুমঙ্গল নিজে বাঙলার শিল্পীদের নিয়ে তৈরি
দুটি গণ সংগঠণের যুগ্ম-সম্পাদকও বটে। এই প্রদর্শণীতে প্রদর্শিত হল আদিবাসী,
হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের বিয়ের মুকুট বা ফুল, দশ ধরণের মনসার এবং চন্ডীর
মেল্লি(মঞ্জুষ), আকাশপ্রদীপ বা আকাশ বাতি, ফানুষ, অথায়-পাথায়, বেড়া ভাসান, মহরমের
ঘোড়া , তাজিয়া, আদিবাসী ঘোড়া, গ্রাম পুজার নানান আচার সামগ্রী, সরস্বতীসহ নানান দেবদেবীর গয়নার সেট, শোলার মুখোশ,
শোলার ফুল, কদম, বাঁশের বোনা মুখোশসহ মোট ৪৫টি সৃষ্টি।
প্রত্যেকটি
সৃষ্টির সঙ্গে একটি করে লেখনী ছিল, যার দ্বারা মধুমঙ্গলের পারম্পরিক কাজকর্মের
নানান দিক উদ্ভাসিত হয়।



১। শবরশিল্প – মধু
নায়েক, পশ্চিম মেদিনীপুর ২। শোলাশিল্প –
মধুমঙ্গল মালাকার, দিনাজপুর ২। বাঁশ
শিল্প ও আসবাবপত্র – গৌরাঙ্গ বর্মন, কুচবিহার ৩। দার্জিলিংএর কাঠ
শিল্প – ভবানী বিশ্বাস, দার্জিলিং ৪। শীতলপাটি
ও শীতলপাটির নানান দ্রব্য- জোত্সনা দে, কুচবিহার ৫। উত্তরবঙ্গের
কাঠের মুখোশ –সোমেশ সরকার, দিনাজপুর ৬। বাঁশের
মুখোশ, আসবাব – শান্তি বৈশ্য, রতন বৈশ্য, দিনাজপুর ৭। ধোকড়া –
মালনবালা সরকার, দিনাজপুর ৮। কলাগাছের
আঁশের পাটি - মালনবালা সরকার, দিনাজপুর ৯। ছো
মুখোশ – নেপাল সূত্রধর, চড়িদা ১০। চা
গাছের আসবাবপত্র - ভবানী বিশ্বাস, দার্জিলিং ১১। পেতলের
কাজ – রবীন্দ্রনাথ পাল, নবদ্বীপ, ১২। পাট –
নারায়ণ পৈত, ২৪ পরগণা ১৩। পাথরের তৈজস –
শ্যামল মিস্ত্রি, বেলপাহাড়ি ১৪। ঝুড়ি,
কুলো - শান্তি বৈশ্য, দিনাজপুর ১৫। পট -
জামেলা চিত্রকর, বাহার চিত্রকর, মেদিনীপুর ১৬। ডোকরা – পারমার
১৭। কৃষ্ণনগরের পুতুল – ধর্মরাজ পাল, নদিয়া ১৮। তালপাতার সেপাই –
সুনীল দাস, ২৪ পরগণা ১৯। মাটি –
ধনঞ্জয় পাল, ২৪ পরগণা ২০। বীজের গয়না –
খুশবু, বীরভূম ২১। গয়না –
গড়বেতা, বীরভূম, বর্ধনাম, কলকাতা, নবদ্বীপ ২২। প্রাণনাথ
দাস – বেত ২৩। হরিদাস নন্দী –
শঙ্খ, বাঁকুড়া ২৪। পোড়া মাটির গয়না –
শ্যামলী দত্ত, কলকাতা, ২৫। গয়না –
পাখি, নবদ্বীপ, ২৫। গয়না –
শেখ বাদল, বর্ধমান, ২৬। গয়না শেখ
মনোজ। বীরভূম এবং আরও অনেকে...

১। ১০ মে ২০১২ –
উদ্বোধন – বিকেল ৪টেয় - মাধাই মোহান্ত। ৪.২০ সুখবিলাস রুবি পালচৌধুরী ও
অন্যান্য সুধী বরণ, ৪.৩৫ - লোকবঙ্গ ও শিল্পীবন্ধু সম্মাননা, ৫.৩০ – ৮.০০ – খন
লোকনাট্য, বন্ধুয়ালা গান, ব্রতচারী নৃত্য
২। ১১ মে, ৫ টা
থেকে ৬টা কর্মশালা, ৬টা থেকে ৮টা – গমীরা, খন এবং তুখ্যাগান,
৩। ১২ মে, ২০মে,
১১-৭টা শোলা শিল্প প্রদর্শনী, ২-৯টা মেলা, ৫ টা থেকে ৬টা কর্মশালা, ৬টা থেকে ৭টা -
বাঙলার লোকনৃত্য

No comments:
Post a Comment