আমি গান্ধীকে চিনিনা আম পাবলিকের থেকে বেশি। কিন্তু Somnath হিন্দ স্বরাজ পড়ে উত্তেজিত। আমি মহাপুরুষদের দূর থেকে দেখে প্রণাম ঠুকি। তো হিন্দ স্বরাজ বিষয়ে আলোচনা চলতে চলতে সোমনাথ আর Rouhinএর মধ্যে পলাশীপূর্ব সমাজ কেমন ছিল এবং আমরা বড় কারখানা করার যোগ্যতা রাখতাম কি না এ নিয়ে বিতর্কে এই অশিক্ষিতকে তারা মধ্যস্থ করতে ডাকে তারা।
---
আমাদের মধস্থতার বয়ান
উপনিবেশের থেকে যে ঢের ঢের ভাল ছিলাম এ সম্বন্ধে কোনও সন্দেহই নেই। যদিও এটা বিতর্ক নয়।
সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা যে বড় কারখানা করতে চাই নি, তার একটা উদাহরণ দিই। বাংলায় প্রথমে ডাচ পরে ব্রিটিশ এবং তারপরে ফরাসী আর শেষে আসা ডেন বিপুল সুতি কাপড় কিনত। এরা দেশিয় বণিকদের পরিমানে কাপড় হয়ত কিনত না কিন্তু তাদের অর্ধেকএর কিছু কম, একতৃতীয়াংশ কাপড় কিনত।১৭৪০এ মালদা থেকে ৩০ লক্ষ টাকার কাপড় বিদেশে যাচ্ছে - মালদা কিন্তু বাংলার খুব গুরুত্বপূর্ণ কাপড় উতপাদন এলাকা নয় - সেটা ছিল হুগলী, কাশিমবাজার আর ঢাকা। কিন্তু এর বাইরে শুধু মসলিন হত ঢাকায় নয়, বাংলা জোড়া ২২টা আড়ংএ। ১৬৩০এ ১০ লক্ষ গজ কাপড় ইয়োরোপে যাচ্ছে তার ৫০ বছর পর ১০ কোটি গজ যাচ্ছে। বাংলায় এই যে বিপুল উতপাদন বৃদ্ধি ঘটল, সে আমরা কীভাবে ইন্টারনালাইজ করলাম?
ওম প্রকাশ বলছেন(সুশীলবাবু মানছেন না) শুধু বাংলায় নতুন ১ লক্ষ কারিগরের কাজ হয়েছিল এই চাহিদা বৃদ্ধিতে। তো এই যে ১ লক্ষ কারিগরের কাজ হল, তার জন্যে তুলো চাষ বেড়েছে, তাঁত বেড়েছে, অন্যান্য কারিগর বেড়েছে, তাদের দক্ষতা বেড়েছে, আড়ংএর উতপাদন দক্ষতা বেড়েছে, কাঠামো বেড়েছে, সরবরাহ শ্রমিক ইত্যাদি বেড়েছে - আমরা কিন্তু শর্টকাটে কয়েকটা কারখানা করে এই উতপাদন বৃদ্ধির সমাধান খুঁজি নি, সমাধান খুঁজেছিলাম আরও আরও মানুষকে এই উতপাদন ব্যবস্থায় নিয়ে এসে কাজ দেওয়া যায় সেই দর্শন প্রয়োগ করার মধ্যেই। সেই জন্যে এটা সাম্যাবস্থা। সক্কলকে নিয়ে চলার ব্যবস্থা। হ্যাঁ কেউ একটু ভাল থাকত, কেউ কম।
এই যে তুলো চাষ বৃদ্ধি পেল তাতে কিন্তু বাংলায় মন্বন্তর হয় নি এবং বাংলার বাইরে খাদ্যশস্য রপ্তানি খাদ্যের অভাব হয় নি। মালদ্বীপে, দাক্ষিণাত্যে বাংলার খাদ্যশস্য না গেলে মন্বন্তর অবস্থা তৈরি হত। তাও তুলো চাষ বাড়ায় কিন্তু বাংলার অন্যান্য চাষ কমে নি।
কিন্তু বাংলায় কারখানা কি ছিল না? ছিল। রাষ্ট্র নিজেই বিশাল বিশাল কারখানা পুষত হাজার হাজার বছর ধরে, শুধু তথাকথিত মধ্যযুগেই নয়। কিন্তু সেটা সাদজারণ নিয়ম ছিল না, কিন্তু ব্রিটিশরা কারখানা চালিয়েছিল, ১৭৫৩র গোমস্তা ব্যবস্থা চালুর পর - এবং বাংলার বস্ত্র উতপাদন ব্যবস্থা পতনের জন্যে এই কারখানা আর গোমস্তা ব্যবস্থা দায়ি।
স্পষ্টভাবে বলা দরকার তাঁতিরা দাদন ফিরিয়ে দিতে পারত - এবং তাকে রাষ্ট্র বা কোম্পানি বা সমাজ বা বিপুল ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী যারা রাষ্ট্র কে ধার দিত, তারাও এদের পণ্য চুক্তিমত দাদনি বণিকদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য করতে পারত না। যতক্ষণনা হাত বদল হচ্ছে ততক্ষণ উৎপাদক তার উতপন্নের মালিক। ইওরোপে সেটা ছিল না – কারিগরকে কাঁচামাল দেওয়া হত।
পলাশীপূর্বে বাংলার বাণিজ্য বইতে আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি, কিভাবে সরকার কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে তাঁতি আর ছোট ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ইওরোপিয় শক্তিগুলি নিজেদের দেশে কারিগর পশুচারক চাষী উচ্ছেদ করে, তাদের উপনিবেশ বানিয়ে যে বস্ত্র উতপাদন এবং অন্যান্য প্রায় মানুষ মারা কারখানা করল, সেটা এশিয়া, আফ্রিকা বা আমেরিকায় উপনিবেশের আগে ভাবা যায় নি। তারা জন্যে গোটা বিশ্বের ওপরে উপনিবেশ চাপিয়ে দিতে হয়েছে, তথাকথিত শিল্পায়নের সময়ের মানুষ মারা, মানুষের শ্রম খাওয়া প্রযুক্তি চাপিয়ে দিতে হয়েছে। সারা বিশ্বের সমাজ, রাষ্ট্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তছনছ করে দিতে হয়েছে।
---
পলাশীপূর্ব সময়ে আমরা ভাল ছিলাম। অবশ্যই কোনও সমাজই আদর্শ সমাজ হতে পারে না। কিন্তু নবাবেরা চাষীদের অভিযোগে জমিদারদের বৈকুণ্ঠ দেখাচ্ছে এবং জমিদারেরা সত্যই ভয় পাচ্ছে, পাছে এধরণের অভিযোগ দরবারে ওঠে, এটা পলাশীর পর আজ অবদি ভাবতে পারে নি বাংলার রাষ্ট্র।
পার্থক্য এখানেই।
No comments:
Post a Comment