আজ সকালে রেডিওর খবরে শুনলাম দশটা 'হস্তশিল্প'কে শিল্পতালুকে পরিণত করা
হচ্ছে। এ নিয়ে এখনও কোন সরকারি সমীক্ষা চোখে পড়েনি বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও
বস্ত্র শিল্পী সংঘের -ফলে তার কি করতে চাইছেন তাও জানা যায় নি। কিন্তু
বিষয়টা আলোচনাযোগ্য - কেননা লক্ষ লক্ষ গ্রামীন উতপাদকের রুটি রুজির ভবিষ্যত
নির্ভর করছে এই পরিকল্পনায়।
সেই জন্য কিছু কথা বলা দরকার বলে মনে করছে সংঘ।
আশ্চর্যের বিষয় হল যে, ভারতের এবং রাজ্য সরকারগুলির গ্রাম শিল্পগুলিকে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে ফেলছে।দেখে নেওয়া যাক ক্ষুদ্র আর ছোট শিল্পের সংজ্ঞা কি। এই দপ্তরের নীতিতে যে শিল্প সেবা ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা আর উতপাদনের ক্ষেত্রে ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ(এ নিয়ে পরে আলোচনায় আসছি) করতে পারে তাঁরা ক্ষুদ্র শিল্প বলে পরিচিত হয়। ছোট শিল্প তকমা পাওয়া যায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে।
এবারে বলা যাক গ্রাম শিল্পগুলি বিষয়ে। যে মানুষটি/গুলি সমাজে থেকে মূলত গ্রামের বাজারের জন্য বাঁশের, মাটির, পাটের, কাগজের মণ্ডের, গালার, শীতলপাটির ইত্যাদির জিনিস বানাচ্ছেন, তাদের বিনিয়োগ কি সেই প্রশ্নে ঢোকা যাক। তার কাঁচামাল সংগ্রহ করেন তাদের স্থানীয় এলাকা থেকে - হয়ত তাদের নিজেদের সম্পত্তি থেকেই। কাঁচামাল কিনতে খুব বেশি মানুষকে বাজারে যেতে হয় না - ব্যতিক্রম শাঁখ, গালা, ধাতু ইত্যাদি হাতে গোণা কিছু উতপাদন। ফলে তারা কাঁচামালে বিনিয়োগ করলেও তা খুব অল্পই। তাদের শ্রম নিজেদের বা স্থানীয় এলাকা থেকেই পাওয়া যায় - শিক্ষণকেন্দ্রর প্রয়োজন হয় না। দক্ষতা তৈরি হয় পুর্বপুরুষের জ্ঞানে। হাতিয়ার বলতে কিছু লোহা বা কাঠের যন্ত্রপাতি - যা ব্যবহার করতে বিদ্যুতের বিন্দুমাত্র প্রয়োজন হয় না। আর কাজের যায়গা বলতে তার বাড়ির উঠোন। এরা কেউ বড় শিল্পপতি হতে চাননা। কেউ প্রাণান্তকর চেষ্টায় তার পাশের উতপাদন ব্যবস্থা কিনে নিয়ে নিজের তহবিল বাড়াতে চান না - চাইলেও পারেন না। হাজার উতপাদক, হাজার হাজার বিক্রেতা - এই উতপাদন ব্যবস্থার এটাই জোর। এই উতপাদন ব্যবস্থার কোনো কেন্দ্র নেই। তাই বহু চেষ্টায় একে মেরে ফেলা যাচ্ছে না। এরা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ব্যাঙ্কের ঋণ ব্যবস্থার বাইরে। এদের চেষ্টা হয়েছে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে - কিন্তু খুব একটা সফল হয়নি ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি। আর এরা ব্যাংকের ধার চাওয়া নিয়েও খুব একটা ব্যস্ত বলে শুনিনি। ফলে পশ্চিমি শিল্পবিপ্লবীয় ছাঁচে, ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র থেকে ছোট থেকে মাঝারি শিল্প হয়ে ওঠার বিন্দুমাত্র প্রণোদনা নেই এই শিল্প উদ্যোগীদের। এরা কেউ বড় পুঁজির তৈরি বাজারের সরবরাহ শৃংখল হয়ে উঠতে খুব একটাও যে চেষ্টা করবেন, তারো উপায় নেই এই উতপাদন ব্যবস্থায়। যে কাজটা হকারদের নিয়ে করার চেষ্টা করা হয়েছে - তাদের আইন এনে।
যে সংগঠনগুলি এই মানুষদের নিয়ে কাজ করেন(যার মধ্যে ব্যতিক্রম সংঘ, সে শিল্পীদের জন্য কাজ করে না, সেটি গ্রামশিল্পী বা গ্রাম উতপাদকেদের নিজস্ব সংগঠন) তারাও কোনোদিন এই বিষয়গুলি নিয়ে ভেবছেন কিনা জানা যায় না। তাঁরা বরাবর চেষ্টা করেছেন সরকারি নীতিতে এই মানুষগুলিকে কিভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায় তার আপ্রাণ চেষ্টা করা। আদতে এই সঙ্গঠনগুলির মূল লক্ষ্য - যে কোন উপায়ে দান সংগ্রহ করে ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের চাকরি নিশ্চয় করা।
একটা ছোট উদাহরণ দেওয়া যাক। আমাদের কাছে এসেছিলেন ভারত সরকারের এনএসডিসির দান পাওয়া এক সংগঠন যারা দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে ইচ্ছুক। তাদের প্রশ্ন ছিল আমরা তাদের সঙ্গে মিলেগ্রাম শিল্পীদের দক্ষ করে তুলতে পারি কি না। তাঁরা প্রায় বিনা মূল্যে দেওয়া শিক্ষণ শেষে শংসা পত্র দেবনে - যাতে তাই নিয়ে চাকরির বাজারে নামতে পারেন তাঁরা। আমরা বিনীতভাবে বলেছিলাম এই প্রকল্পে আমরা যোগ দিতে পারছি না। কেননা এই প্রকল্পর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের চাকরি যোগ্য করে তোলা। কিন্তু গ্রাম শিল্পীদের চাকরি দরকার নেই। এরা সক্কলে দক্ষ। এদের কি করে নতুন করে দক্ষ করে গড়ে তোলা যাবে। এরা কেউ কর্পোরেট চাকরিযোগ্য হতে চায় না।
ফিরি পুরনো কথায়, এই সংগঠনগুলো কেউ সরকারকে বলনা যে এই গ্রাম উতপাদকেদের জন্য প্রয়োজন আলাদা নীতি তৈরি করা। তাঁরা তা জানেন, বোঝেন কিনা জানিনা।সরকার বা সরকারি সংগঠনগুলিকে এই বিষয়ে জানানোর কোনো তাগিদ তাদের আগেও ছিল না আজও নেই। তাদের উদ্দেশ্য যেন তেন উপায়ে সরকার বা বিদেশ থেকে প্রকল্প সংগ্রহ আর তার রূপায়ন। তার পর সক্কলে উচ্ছনে যাক তা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
ফলে রাজ্য সরকার যে ডিআইসির মার্ফত এই শিল্পতালুকএর প্রস্তাব করছেন, তা ভবিষ্যতে মার খেতে বাধ্য। এই শিল্প তালুকের ধারণার সঙ্গে ছোট গ্রামীন উতপাদনের কোনো যোগ নেই। একটি বড় এনজিও চেষ্টা করছেন আমলাদের রসেবশে রেখে যে কোনো উপায়ে কর্মসাধন। তার সঙ্গে গ্রাম শিল্পের উতপাদকেদের ব্যবসার উন্নয়নের কোনো যোগ নেই।
সেই জন্য কিছু কথা বলা দরকার বলে মনে করছে সংঘ।
আশ্চর্যের বিষয় হল যে, ভারতের এবং রাজ্য সরকারগুলির গ্রাম শিল্পগুলিকে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে ফেলছে।দেখে নেওয়া যাক ক্ষুদ্র আর ছোট শিল্পের সংজ্ঞা কি। এই দপ্তরের নীতিতে যে শিল্প সেবা ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা আর উতপাদনের ক্ষেত্রে ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ(এ নিয়ে পরে আলোচনায় আসছি) করতে পারে তাঁরা ক্ষুদ্র শিল্প বলে পরিচিত হয়। ছোট শিল্প তকমা পাওয়া যায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে।
এবারে বলা যাক গ্রাম শিল্পগুলি বিষয়ে। যে মানুষটি/গুলি সমাজে থেকে মূলত গ্রামের বাজারের জন্য বাঁশের, মাটির, পাটের, কাগজের মণ্ডের, গালার, শীতলপাটির ইত্যাদির জিনিস বানাচ্ছেন, তাদের বিনিয়োগ কি সেই প্রশ্নে ঢোকা যাক। তার কাঁচামাল সংগ্রহ করেন তাদের স্থানীয় এলাকা থেকে - হয়ত তাদের নিজেদের সম্পত্তি থেকেই। কাঁচামাল কিনতে খুব বেশি মানুষকে বাজারে যেতে হয় না - ব্যতিক্রম শাঁখ, গালা, ধাতু ইত্যাদি হাতে গোণা কিছু উতপাদন। ফলে তারা কাঁচামালে বিনিয়োগ করলেও তা খুব অল্পই। তাদের শ্রম নিজেদের বা স্থানীয় এলাকা থেকেই পাওয়া যায় - শিক্ষণকেন্দ্রর প্রয়োজন হয় না। দক্ষতা তৈরি হয় পুর্বপুরুষের জ্ঞানে। হাতিয়ার বলতে কিছু লোহা বা কাঠের যন্ত্রপাতি - যা ব্যবহার করতে বিদ্যুতের বিন্দুমাত্র প্রয়োজন হয় না। আর কাজের যায়গা বলতে তার বাড়ির উঠোন। এরা কেউ বড় শিল্পপতি হতে চাননা। কেউ প্রাণান্তকর চেষ্টায় তার পাশের উতপাদন ব্যবস্থা কিনে নিয়ে নিজের তহবিল বাড়াতে চান না - চাইলেও পারেন না। হাজার উতপাদক, হাজার হাজার বিক্রেতা - এই উতপাদন ব্যবস্থার এটাই জোর। এই উতপাদন ব্যবস্থার কোনো কেন্দ্র নেই। তাই বহু চেষ্টায় একে মেরে ফেলা যাচ্ছে না। এরা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ব্যাঙ্কের ঋণ ব্যবস্থার বাইরে। এদের চেষ্টা হয়েছে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে - কিন্তু খুব একটা সফল হয়নি ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি। আর এরা ব্যাংকের ধার চাওয়া নিয়েও খুব একটা ব্যস্ত বলে শুনিনি। ফলে পশ্চিমি শিল্পবিপ্লবীয় ছাঁচে, ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র থেকে ছোট থেকে মাঝারি শিল্প হয়ে ওঠার বিন্দুমাত্র প্রণোদনা নেই এই শিল্প উদ্যোগীদের। এরা কেউ বড় পুঁজির তৈরি বাজারের সরবরাহ শৃংখল হয়ে উঠতে খুব একটাও যে চেষ্টা করবেন, তারো উপায় নেই এই উতপাদন ব্যবস্থায়। যে কাজটা হকারদের নিয়ে করার চেষ্টা করা হয়েছে - তাদের আইন এনে।
যে সংগঠনগুলি এই মানুষদের নিয়ে কাজ করেন(যার মধ্যে ব্যতিক্রম সংঘ, সে শিল্পীদের জন্য কাজ করে না, সেটি গ্রামশিল্পী বা গ্রাম উতপাদকেদের নিজস্ব সংগঠন) তারাও কোনোদিন এই বিষয়গুলি নিয়ে ভেবছেন কিনা জানা যায় না। তাঁরা বরাবর চেষ্টা করেছেন সরকারি নীতিতে এই মানুষগুলিকে কিভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায় তার আপ্রাণ চেষ্টা করা। আদতে এই সঙ্গঠনগুলির মূল লক্ষ্য - যে কোন উপায়ে দান সংগ্রহ করে ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের চাকরি নিশ্চয় করা।
একটা ছোট উদাহরণ দেওয়া যাক। আমাদের কাছে এসেছিলেন ভারত সরকারের এনএসডিসির দান পাওয়া এক সংগঠন যারা দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে ইচ্ছুক। তাদের প্রশ্ন ছিল আমরা তাদের সঙ্গে মিলেগ্রাম শিল্পীদের দক্ষ করে তুলতে পারি কি না। তাঁরা প্রায় বিনা মূল্যে দেওয়া শিক্ষণ শেষে শংসা পত্র দেবনে - যাতে তাই নিয়ে চাকরির বাজারে নামতে পারেন তাঁরা। আমরা বিনীতভাবে বলেছিলাম এই প্রকল্পে আমরা যোগ দিতে পারছি না। কেননা এই প্রকল্পর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের চাকরি যোগ্য করে তোলা। কিন্তু গ্রাম শিল্পীদের চাকরি দরকার নেই। এরা সক্কলে দক্ষ। এদের কি করে নতুন করে দক্ষ করে গড়ে তোলা যাবে। এরা কেউ কর্পোরেট চাকরিযোগ্য হতে চায় না।
ফিরি পুরনো কথায়, এই সংগঠনগুলো কেউ সরকারকে বলনা যে এই গ্রাম উতপাদকেদের জন্য প্রয়োজন আলাদা নীতি তৈরি করা। তাঁরা তা জানেন, বোঝেন কিনা জানিনা।সরকার বা সরকারি সংগঠনগুলিকে এই বিষয়ে জানানোর কোনো তাগিদ তাদের আগেও ছিল না আজও নেই। তাদের উদ্দেশ্য যেন তেন উপায়ে সরকার বা বিদেশ থেকে প্রকল্প সংগ্রহ আর তার রূপায়ন। তার পর সক্কলে উচ্ছনে যাক তা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
ফলে রাজ্য সরকার যে ডিআইসির মার্ফত এই শিল্পতালুকএর প্রস্তাব করছেন, তা ভবিষ্যতে মার খেতে বাধ্য। এই শিল্প তালুকের ধারণার সঙ্গে ছোট গ্রামীন উতপাদনের কোনো যোগ নেই। একটি বড় এনজিও চেষ্টা করছেন আমলাদের রসেবশে রেখে যে কোনো উপায়ে কর্মসাধন। তার সঙ্গে গ্রাম শিল্পের উতপাদকেদের ব্যবসার উন্নয়নের কোনো যোগ নেই।
No comments:
Post a Comment