দীপঙ্কর(দে)দা, ফেসবুকে কয়েক ঘণ্টা আগে একটা পোস্ট করেছিলেন তাঁর শেষ দিকটার স্তবকগুলি ছিল-
...আমরা কি তবে বিজ্ঞানের নামে নিজেরাই অন্ধ কুসংসার প্রচার করেছি?
দলিত ও মুল্নিবাসী দের জ্ঞান কে ধংস করেছি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে?
বিজ্ঞানী ও তথাকথিত বিজ্ঞান কর্মী দের দলে তো উচবর্ণের ই আধিপত্য !
আমাদের বক্তব্য - সেই জ্ঞান ধ্বংস হয় নি আজও - মধ্যবিত্তের বহুল ব্যবহৃত 'লুপ্তপ্রায়' শব্দবন্ধকে দুচ্ছাই করে সেই হাজার হাজার বছরের জ্ঞানচর্চার ধারা (লিখিত ও মৌখিক) চলে আসছে। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে অনেক কথা বলার আছে। একটা লেখায় সব ধরা যাবে না। তবু বলা যাক-
সম্প্রতি মানুষের ভাল করার জন্য তৈরি এলোপ্যাথিক বড় বড় ডাক্তারবাবুদের একটা সংগঠনের আ্লোচনাচক্রে আমরা সাগ্রহে যোগ দিয়েছিলাম। গ্রাম্য (কবিরাজি নয় কিন্তু) পরম্পরার চিকিতসা ব্যবস্থা নিয়ে বলতে উঠলেই আমাদের দাগিয়ে দেওয়া হল ভুডু, কালা জাদু, তন্ত্রমন্ত্র ব্যবস্থারূপে। আমাদের বলার ছিল এলোপ্যাথি চিকিতসা (আমরা মনে করি আধুনিক চিকিতসা চলে গিয়েছে বড় পুঁজির তৈরি যন্ত্রদানবের খপ্পরে - চিকিতসক, চিকিতসাকর্মীরা ক্রীড়ানকমাত্র, তাঁরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন তার ওপর স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ নেই বিন্দুমাত্র) আজও ১৫ শতাংশএর বেশি মানুষের কাছে পৌছতে পারে নি। তার পরেও যারা এই ব্যবস্থার অংশই নয় তাদের দেওয়া করে বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ, ভর্তুকি, মনোযোগ আকর্ষণ করে এই চিকিতসাব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় স্তরে বিকাশের কাজ হয়।
আজও নানান ভাবে গ্রাম্য চিকিতসা পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে বেঁচে রয়েছেন এদেশের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ। এই জ্ঞানব্যবস্থা বিকেন্দ্রিত। হাসপাতাল নেই। চিকিতসকের চেম্বার নেই। ডাক্তারকে রোগীর বাড়ি যেতে হয়। রোগের নিদান তৈরি হয় গ্রামের ধনসম্বলে(শুধু গাছগাছড়া বললাম না কেননা এখানে ধাতুও ব্যবহার হয়, প্রযুক্তি চিকিতসাকর্মীর নিজস্ব), চিকিতসকের দক্ষতাতে আর রোগীকে তার পরিবেশে রেখে ব্যক্তিগতভাবে জেনে সারিয়ে তোলার অবশ্যম্ভাবী শর্তে - একে বিগত কয়েক দশক ধরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে তারস্বরে - ডাক্তার সাহিত্যিক বনফুল লিখেছেন অগ্নীশ্বর - দেশিয় চিকিতসাব্যবস্থাকে তুশ্চু করে - তা নিয়ে রমরমা সিনেমাও হল - আজও তা নাকি কাল্ট সিনেমা। হায়! ওষুধ যদি গ্রামে তৈরি হয় তাহলে ডাক্তার আর বড় পুঁজি আর তার ধারক মধ্যবিত্তের গঙ্গাযাত্রা - এই ব্যবস্থায় ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের পুনর্বাসনের ঠাঁই নেই। মধ্যবিত্ত যে ইওরোপিয় কেন্দ্রিভূত জ্ঞানকে,তাঁর নিজস্ব জ্ঞান বলে ভাবে নিয়েছে বিগত দুশ বছরের ঔপনিবেশিকতায়, সেই ব্যবস্থা আদতে বিকেন্দ্রিত জ্ঞান ব্যবস্থাকে বিন্দুমাত্র সহ্য করতে পারে না - তাই দক্ষিণ-বাম-মধ্যপন্থীদের জ্ঞানচর্চায় কেন্দ্র উপসর্গীয় শিক্ষাকেন্দ্রগুলির রমরমা(কলকাতায় সেন্টার নামে এক বাম প্রভাবিত মধ্যবিত্ত পুনর্বাসন নামক শিক্ষাকেন্দ্র রমরম করে সরকারি ভর্তুকিতে আজও চলছে)। গ্রামের পরিবেশ, জ্ঞানেই যদি রোগ সারে তাহলে গ্রামীনদের চুষে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে ডাক্তারি পড়া মধ্যবিত্তের গ্রামে যাওয়ার বিতর্কের - গ্রামের ভাল করার প্রশ্ন উঠছে না। গ্রাম আজও নিজে জানে নিজের ভাল কোথায়। এখানেই মধ্যবিত্ত আর তার পালক, বড় পুঁজির অস্তিত্ব সংকট - তাঁরা চায় না গ্রাম স্বনির্ভর হোক - শহরের আর ইয়োরোপ আমেরিকার উপনিবেশ হয়ে বাঁচুক। বড় পুঁজির দরকার লাভ, মধ্যবিত্তের প্রয়োজন চাকরি আর ইওরোপিয়কেন্দ্রিক গণতন্ত্রীয় রাজনীতিতে পুনর্বাসন। রোগী চুলোর দোরে যাক - বেঁচে থাক বড় পুঁজি আর পুঁজির দ্বাররক্ষক মধ্যবিত্ত। তাই এনজিও, স্বাস্থ্য আন্দোলন, বিজ্ঞান কর্মীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন বড় পুঁজির, কেন্দ্রিভূত জ্ঞানের এলোপ্যাথি ব্যবস্থাকে যত দূর সম্ভব গ্রামে পৌছে দেওয়ার।
আরও একটা কথা, সলভিনসএর ছবিগুলি প্রকাশনা করাগিয়েছিল এই বিষয়টি প্রমান করার জন্য - এলোপ্যাথির আগেও, কেন্দ্রিয় কবিরাজি চিকিতসার বাইরেও ভারতে কোটি কোটি মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে জানতেন নিজের মত করে হাজার হাজার বছর ধরে। তাদের রোগও হত, চিকিতসাও হত। তখনকার যে সব পেশাদার মানুষের ছবি এঁকেছেন সলভিনস তাতে দেখা যাচ্ছে, পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সুঠাম, বড় চেহারার মানুষ। আর দীপঙ্করদা যে বিজ্ঞান আন্দোলনের কথা বলেছেন, সেই বিজ্ঞান স্বাস্থ্য আন্দোলন ইওরোপের জ্ঞানচর্চার বিজ্ঞান আন্দোলনকে খুঁটি ধরে আজও টিকে রয়েছে। কলকাতা ভিত্তিক এক বিজ্ঞান সংগঠনের বই - আয়ুর্বেদে বিজ্ঞানএ তাঁরা খুঁজতে যান বিজ্ঞান মানে তাঁরা যা বোঝেন, তা আয়ুর্বেদে রয়েছে কি না - এবং সেই জ্ঞান নির্ভর করে পাতার পর পাতা তাঁরা ভেঙ্গিয়েই যাচ্ছেন আয়ুর্বেদকে, এক চিকিতসককে। আয়ুর্বেদ নিয়ে প্রচুর নাড়াচাড়াঘাঁটা হয়েছে। তা নিয়ে অন্তত আমাদের মাথা ব্যথা নেই - আয়ুর্বেদের কেন্দ্রিয় জ্ঞান চর্চার সঙ্গে গ্রামীন জ্ঞান চর্চার আসীম দূরত্ব - তবুও সেই ব্যবস্থার সমব্যথী আমরা। কিন্তু ইংরেজি শিক্ষিত বিজ্ঞানকর্মী, স্বাস্থ্য কর্মীরা যা করছেন তা আদতে পশ্চিমী জ্ঞান চর্চার দাঁড়িয়ে অন্য - পূর্বের জ্ঞান চর্চাকে বোঝার চেষ্টা - ঈশপের গল্পের হস্তি দর্শনের সমতুল্য।
এই যে পশ্চিমিয় জ্ঞানচর্চায় বেড়েওঠার ফল ফলছে তাদের গবেষনায়। পড়ছি অবভাস প্রকাশিত 'ভারতের পটভূমিতে চিকিতসা বিজ্ঞানের ইতিহাস' বইটি - লিখেছেন ভারত-পশ্চিমের নানান গুণী - মূলত ইওরোপিয়দের নানান প্রকাশনার অনুবাদ - মূলতঃ ইংরেজিতেই লিখিত নিম্নবর্গের ইতিহাসের ছোঁয়া রয়েছে। নিম্নবর্গের ইতিহাসবিদদের আলোচনা যেমন আধুনিকতা ,পশ্চিমি গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদ(না এলে সমাজতন্ত্র আসবে না তাই কর্ণওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে আভিবাদন জানিয়ে প্রগতিশীল তকমা দেওয়া হয় - দেশিয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা রাষ্ট্রকে কর না দিয়ে, জমি অর্পন না করে জমি লুকিয়ে রাখছেন তার বিশদ বর্ণনাও রয়েছে এবং জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সেই দেশজ প্রতিক্রিয়াশীলদের থেকে জমি উদ্ধার করে ব্রিটিশ রাষ্ট্রের হাতে অর্পন করে প্রগতিশীল আখ্যা পাচ্ছেন, বা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি খারাপ কিন্তু ব্রিটিশ গণতন্ত্রের মহিমার শেষ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি) বিকাশের অবশ্যম্ভাবী পথের ভিত্তি ধরে আলোচনা এগোয়, তেমনি, আপনি মানুন ছাই না মানুন, এই বইএর নানান প্রবন্ধে ধরে নেওয়া হয়েছে শল্য চিকিতসাই, চিকিতসা শাস্ত্রের অগ্রগতির অন্যতম সোপান। আশ্চর্য, এই বইতে কোথাও বলা নেই ভারতে হিংসক(শল্য চিকিতসা) এবং অহিংসক(জৈন অশল্য) চিকিতসাবিদ্যার ধারা ছিল। বাউল গানে হেঁট মুণ্ড উর্দ্ধপদ বাক্যবন্ধ বা সেই দেশের কথা রে মন ভুলে গিয়েছ... গান প্রমান করে শারীরবিদ্যা জানায় তন্ত্র খুব কম যায় না। বইতে খুবই হাহুতাশ করা হয়েছে ইওরোপের মত ভারতে শল্যবিদ্যা নির্ভর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতে চিকিতসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ঔপনিবেশিক কোম্পানি আমলে ইওরোপিয় হাসপাতাল, ডাক্তার, ওষুধ কেন্দ্রিক পশ্চিমি চিকিতসাধারা ব্যবস্থাকে এ দেশে প্রবেশের - এদেশের মানুষকে উদ্ধারের ছুতোয় - এ ধরণের জ্ঞানচর্চার প্রয়োজন আজও আছে। এধরণের চিকিতসাবিদ্যা গবেষণায় মৌখিক পরম্পরা ধরার কোনো চেষ্টাই থাকে না । বা বলা হয় না ভারতের চিকিতসাবিদ্যা অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে ইওরোপিয় চিকিতসাবিদ্যার ভিত।
ফলে মধ্যবিত্তের উন্নয়নের গ্রামবিলাস তাই হয়ে ওঠে ইওরোপিয়তার ঔপনিবেশিকতার বড় পুঁজির হাত শক্ত করার নতুনতম হাতিয়ার। আর মধ্যবিত্তের পুনর্বাসনের হাতিয়ার।
...আমরা কি তবে বিজ্ঞানের নামে নিজেরাই অন্ধ কুসংসার প্রচার করেছি?
দলিত ও মুল্নিবাসী দের জ্ঞান কে ধংস করেছি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে?
বিজ্ঞানী ও তথাকথিত বিজ্ঞান কর্মী দের দলে তো উচবর্ণের ই আধিপত্য !
আমাদের বক্তব্য - সেই জ্ঞান ধ্বংস হয় নি আজও - মধ্যবিত্তের বহুল ব্যবহৃত 'লুপ্তপ্রায়' শব্দবন্ধকে দুচ্ছাই করে সেই হাজার হাজার বছরের জ্ঞানচর্চার ধারা (লিখিত ও মৌখিক) চলে আসছে। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে অনেক কথা বলার আছে। একটা লেখায় সব ধরা যাবে না। তবু বলা যাক-
সম্প্রতি মানুষের ভাল করার জন্য তৈরি এলোপ্যাথিক বড় বড় ডাক্তারবাবুদের একটা সংগঠনের আ্লোচনাচক্রে আমরা সাগ্রহে যোগ দিয়েছিলাম। গ্রাম্য (কবিরাজি নয় কিন্তু) পরম্পরার চিকিতসা ব্যবস্থা নিয়ে বলতে উঠলেই আমাদের দাগিয়ে দেওয়া হল ভুডু, কালা জাদু, তন্ত্রমন্ত্র ব্যবস্থারূপে। আমাদের বলার ছিল এলোপ্যাথি চিকিতসা (আমরা মনে করি আধুনিক চিকিতসা চলে গিয়েছে বড় পুঁজির তৈরি যন্ত্রদানবের খপ্পরে - চিকিতসক, চিকিতসাকর্মীরা ক্রীড়ানকমাত্র, তাঁরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন তার ওপর স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ নেই বিন্দুমাত্র) আজও ১৫ শতাংশএর বেশি মানুষের কাছে পৌছতে পারে নি। তার পরেও যারা এই ব্যবস্থার অংশই নয় তাদের দেওয়া করে বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ, ভর্তুকি, মনোযোগ আকর্ষণ করে এই চিকিতসাব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় স্তরে বিকাশের কাজ হয়।
আজও নানান ভাবে গ্রাম্য চিকিতসা পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে বেঁচে রয়েছেন এদেশের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ। এই জ্ঞানব্যবস্থা বিকেন্দ্রিত। হাসপাতাল নেই। চিকিতসকের চেম্বার নেই। ডাক্তারকে রোগীর বাড়ি যেতে হয়। রোগের নিদান তৈরি হয় গ্রামের ধনসম্বলে(শুধু গাছগাছড়া বললাম না কেননা এখানে ধাতুও ব্যবহার হয়, প্রযুক্তি চিকিতসাকর্মীর নিজস্ব), চিকিতসকের দক্ষতাতে আর রোগীকে তার পরিবেশে রেখে ব্যক্তিগতভাবে জেনে সারিয়ে তোলার অবশ্যম্ভাবী শর্তে - একে বিগত কয়েক দশক ধরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে তারস্বরে - ডাক্তার সাহিত্যিক বনফুল লিখেছেন অগ্নীশ্বর - দেশিয় চিকিতসাব্যবস্থাকে তুশ্চু করে - তা নিয়ে রমরমা সিনেমাও হল - আজও তা নাকি কাল্ট সিনেমা। হায়! ওষুধ যদি গ্রামে তৈরি হয় তাহলে ডাক্তার আর বড় পুঁজি আর তার ধারক মধ্যবিত্তের গঙ্গাযাত্রা - এই ব্যবস্থায় ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের পুনর্বাসনের ঠাঁই নেই। মধ্যবিত্ত যে ইওরোপিয় কেন্দ্রিভূত জ্ঞানকে,তাঁর নিজস্ব জ্ঞান বলে ভাবে নিয়েছে বিগত দুশ বছরের ঔপনিবেশিকতায়, সেই ব্যবস্থা আদতে বিকেন্দ্রিত জ্ঞান ব্যবস্থাকে বিন্দুমাত্র সহ্য করতে পারে না - তাই দক্ষিণ-বাম-মধ্যপন্থীদের জ্ঞানচর্চায় কেন্দ্র উপসর্গীয় শিক্ষাকেন্দ্রগুলির রমরমা(কলকাতায় সেন্টার নামে এক বাম প্রভাবিত মধ্যবিত্ত পুনর্বাসন নামক শিক্ষাকেন্দ্র রমরম করে সরকারি ভর্তুকিতে আজও চলছে)। গ্রামের পরিবেশ, জ্ঞানেই যদি রোগ সারে তাহলে গ্রামীনদের চুষে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে ডাক্তারি পড়া মধ্যবিত্তের গ্রামে যাওয়ার বিতর্কের - গ্রামের ভাল করার প্রশ্ন উঠছে না। গ্রাম আজও নিজে জানে নিজের ভাল কোথায়। এখানেই মধ্যবিত্ত আর তার পালক, বড় পুঁজির অস্তিত্ব সংকট - তাঁরা চায় না গ্রাম স্বনির্ভর হোক - শহরের আর ইয়োরোপ আমেরিকার উপনিবেশ হয়ে বাঁচুক। বড় পুঁজির দরকার লাভ, মধ্যবিত্তের প্রয়োজন চাকরি আর ইওরোপিয়কেন্দ্রিক গণতন্ত্রীয় রাজনীতিতে পুনর্বাসন। রোগী চুলোর দোরে যাক - বেঁচে থাক বড় পুঁজি আর পুঁজির দ্বাররক্ষক মধ্যবিত্ত। তাই এনজিও, স্বাস্থ্য আন্দোলন, বিজ্ঞান কর্মীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন বড় পুঁজির, কেন্দ্রিভূত জ্ঞানের এলোপ্যাথি ব্যবস্থাকে যত দূর সম্ভব গ্রামে পৌছে দেওয়ার।
আরও একটা কথা, সলভিনসএর ছবিগুলি প্রকাশনা করাগিয়েছিল এই বিষয়টি প্রমান করার জন্য - এলোপ্যাথির আগেও, কেন্দ্রিয় কবিরাজি চিকিতসার বাইরেও ভারতে কোটি কোটি মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে জানতেন নিজের মত করে হাজার হাজার বছর ধরে। তাদের রোগও হত, চিকিতসাও হত। তখনকার যে সব পেশাদার মানুষের ছবি এঁকেছেন সলভিনস তাতে দেখা যাচ্ছে, পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সুঠাম, বড় চেহারার মানুষ। আর দীপঙ্করদা যে বিজ্ঞান আন্দোলনের কথা বলেছেন, সেই বিজ্ঞান স্বাস্থ্য আন্দোলন ইওরোপের জ্ঞানচর্চার বিজ্ঞান আন্দোলনকে খুঁটি ধরে আজও টিকে রয়েছে। কলকাতা ভিত্তিক এক বিজ্ঞান সংগঠনের বই - আয়ুর্বেদে বিজ্ঞানএ তাঁরা খুঁজতে যান বিজ্ঞান মানে তাঁরা যা বোঝেন, তা আয়ুর্বেদে রয়েছে কি না - এবং সেই জ্ঞান নির্ভর করে পাতার পর পাতা তাঁরা ভেঙ্গিয়েই যাচ্ছেন আয়ুর্বেদকে, এক চিকিতসককে। আয়ুর্বেদ নিয়ে প্রচুর নাড়াচাড়াঘাঁটা হয়েছে। তা নিয়ে অন্তত আমাদের মাথা ব্যথা নেই - আয়ুর্বেদের কেন্দ্রিয় জ্ঞান চর্চার সঙ্গে গ্রামীন জ্ঞান চর্চার আসীম দূরত্ব - তবুও সেই ব্যবস্থার সমব্যথী আমরা। কিন্তু ইংরেজি শিক্ষিত বিজ্ঞানকর্মী, স্বাস্থ্য কর্মীরা যা করছেন তা আদতে পশ্চিমী জ্ঞান চর্চার দাঁড়িয়ে অন্য - পূর্বের জ্ঞান চর্চাকে বোঝার চেষ্টা - ঈশপের গল্পের হস্তি দর্শনের সমতুল্য।
এই যে পশ্চিমিয় জ্ঞানচর্চায় বেড়েওঠার ফল ফলছে তাদের গবেষনায়। পড়ছি অবভাস প্রকাশিত 'ভারতের পটভূমিতে চিকিতসা বিজ্ঞানের ইতিহাস' বইটি - লিখেছেন ভারত-পশ্চিমের নানান গুণী - মূলত ইওরোপিয়দের নানান প্রকাশনার অনুবাদ - মূলতঃ ইংরেজিতেই লিখিত নিম্নবর্গের ইতিহাসের ছোঁয়া রয়েছে। নিম্নবর্গের ইতিহাসবিদদের আলোচনা যেমন আধুনিকতা ,পশ্চিমি গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদ(না এলে সমাজতন্ত্র আসবে না তাই কর্ণওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে আভিবাদন জানিয়ে প্রগতিশীল তকমা দেওয়া হয় - দেশিয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা রাষ্ট্রকে কর না দিয়ে, জমি অর্পন না করে জমি লুকিয়ে রাখছেন তার বিশদ বর্ণনাও রয়েছে এবং জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সেই দেশজ প্রতিক্রিয়াশীলদের থেকে জমি উদ্ধার করে ব্রিটিশ রাষ্ট্রের হাতে অর্পন করে প্রগতিশীল আখ্যা পাচ্ছেন, বা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি খারাপ কিন্তু ব্রিটিশ গণতন্ত্রের মহিমার শেষ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি) বিকাশের অবশ্যম্ভাবী পথের ভিত্তি ধরে আলোচনা এগোয়, তেমনি, আপনি মানুন ছাই না মানুন, এই বইএর নানান প্রবন্ধে ধরে নেওয়া হয়েছে শল্য চিকিতসাই, চিকিতসা শাস্ত্রের অগ্রগতির অন্যতম সোপান। আশ্চর্য, এই বইতে কোথাও বলা নেই ভারতে হিংসক(শল্য চিকিতসা) এবং অহিংসক(জৈন অশল্য) চিকিতসাবিদ্যার ধারা ছিল। বাউল গানে হেঁট মুণ্ড উর্দ্ধপদ বাক্যবন্ধ বা সেই দেশের কথা রে মন ভুলে গিয়েছ... গান প্রমান করে শারীরবিদ্যা জানায় তন্ত্র খুব কম যায় না। বইতে খুবই হাহুতাশ করা হয়েছে ইওরোপের মত ভারতে শল্যবিদ্যা নির্ভর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতে চিকিতসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ঔপনিবেশিক কোম্পানি আমলে ইওরোপিয় হাসপাতাল, ডাক্তার, ওষুধ কেন্দ্রিক পশ্চিমি চিকিতসাধারা ব্যবস্থাকে এ দেশে প্রবেশের - এদেশের মানুষকে উদ্ধারের ছুতোয় - এ ধরণের জ্ঞানচর্চার প্রয়োজন আজও আছে। এধরণের চিকিতসাবিদ্যা গবেষণায় মৌখিক পরম্পরা ধরার কোনো চেষ্টাই থাকে না । বা বলা হয় না ভারতের চিকিতসাবিদ্যা অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে ইওরোপিয় চিকিতসাবিদ্যার ভিত।
ফলে মধ্যবিত্তের উন্নয়নের গ্রামবিলাস তাই হয়ে ওঠে ইওরোপিয়তার ঔপনিবেশিকতার বড় পুঁজির হাত শক্ত করার নতুনতম হাতিয়ার। আর মধ্যবিত্তের পুনর্বাসনের হাতিয়ার।
No comments:
Post a Comment