Friday, November 10, 2017

দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি

গুরুচণ্ডালীতে Tapas Das আমাদের আরাধ্য দীপেন্দ্রনাথ সম্বন্ধে অসাধারণ কিছু বাক্য ব্যয় করেছেন।তার সূত্র দিলাম - https://www.facebook.com/groups/guruchandali/permalink/1931532936864643/
Abhishek Sarkar আমায় জুড়েছিলেন। তাপসবাবুর চমৎকার লেখাটা থেকে জানতে পারলাম আজ তাঁর জন্ম দিন। যে আদ্যপান্ত কমিউনিস্ট সম্বন্ধে আজও অবামপন্থী আমি অনর্গল, তিনি দীপেনবাবু। তাঁর সম্বন্ধে প্রাক কৈশোরের কিছু পুরোনো স্মৃতি লিখলাম স্বইচ্ছায়...
...সিপিয়াইএর প্রাক্তন কার্ডধারী পরিবারের সন্তান আমি। ৪০ বছর আগে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেলে সে ক'টা হাতে গোনা মানুষের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করব তাঁদের মধ্যে দীপেন্দ্রনাথ থাকবেনই। প্রথম যৌবনে পড়েছি গগণ ঠাকুরের সিঁড়ি, বিবাহবার্ষিকী। বাড়িতে ডাঁই করে রাখা পরিচয়ে পড়েছি চাঁদ বণিকের পালার একক পাঠের সমালোচনা।
মনে আছে বেহালার আর্কেডিয়ায় বা যদুকলোনিতে এক বৃদ্ধ কমরেড একা থাকতেন, বাবা -মা মামু ডাকতেন আমি ডাকতাম মামুদাদু। মা দূরে চাকরি করতেন। শনিবার ফিরতেন কলকাতায় আমায় নিয়ে। বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রায় সন্ধ্যেয় তাঁর কাছে যেতাম। আর যেতাম ঝাউতলায় কালান্তরে - বই কিনতে যেতাম মনীষায় - এই তিন যায়গার মধ্যে প্রথম দুই জায়গায় ওনাকে দেখেছি বহুবার - মামুদাদুর বাড়িতে কেন তিনি বেশ কয়েকবার আসতেন জানি না - এখন বাবাকে জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারেন না - ভুলে গিয়েছেন।
ছোট্টছিলাম, আদর করতেন খুব - যে সব কমরেড বিদেশ যেতেন - যেমন বেহালার পুলক সেন রায় - তারা ফিরলে যে সব বৈঠক হত সেই সব বৈঠকে মনে হয় তিনি থাকতেন - বাবা-মায়ের হাত ধরে আম্মো। দীপেনবাবু চকোলেট ভালবাসতেন, বিদেশ যাওয়া যুবা কমরেডরা তাঁর জন্যে চকোলেট নিয়ে আসতেন। তার কিছু ভাগ আমরা ছোটরা পেতাম, বিনয় আইচের পুত্র সুস্নাত আমার সহপাঠী, সেআরও অনেকেই পেত।
মানুষটা আস্তে আস্তে কথা বলতেন। ছোট্ট চেহারা বলে একটু উঁচুতে বসতেন। মনে আছে একবার বেহালায় উনি আর যতদূর সম্ভব ননী ভৌমিক বা কামাক্ষীপ্রসাদ রাশিয়া থেকে ফিরে এসেছেন - একটা ঘরোয়া যৌথ সম্বর্ধনা হয়েছিল। খুব কথা হচ্ছিল সেখানে রাশিয়ার নানান বিষয় নিয়ে - হায় তার কুড়ি বছর পরে ধ্বসে যাবে স্বপ্ন সৌধ - তারা জানতেন না। মনে আছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে বড়িশা স্কুলের সামনে জমায়েত হয়েছিল প্রায় দিন তিনেকের ম্যারাপ খাঁটিয়ে - প্রচুর জিনিসপত্র ভিয়েনাম আর কম্বোডিয়ার প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল গোর্কি সদনে - এই দুই ঘটনায় বোধহয় দীপেন্দ্রনাথ ছিলেন।
তখন খুব একটা বুঝিনি দীপেনবাবুর মাহাত্ম্য। এক বেঘতা থেকে দেখা হাজারো নেতা-প্রখ্যাতদের মধ্যে যে দুচারজন পুরোনো বামপন্থীর দর্শন আজও আমায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ান, তাঁদের মধ্যে দীপেন্দ্রনাথের মর্ম বহু পরে বুঝেছি।
আর সব ফক্কা।
Tapas Das এতে গুরুচন্ডা৯ guruchandali
৪৩ বছর বেঁচেছিলেন মাত্র। বাংলাসাহিত্যের দিকপাল বলে তাঁকে কেউ চেনে না। চিনলে হয়ত তাঁর বাঁচাটাই ভুল হত, যেমনভাবে বাঁচতেন তিনি। পরিচয় পত্রিকাই ছিল তাঁর লেখালিখির অবলম্বন। এবং এই পরিচয়টুকুই তাঁর আইডেন্টিটি। বলা হয়, দেশভাগের পর যে শিল্পী উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন, আর সে উন্মাদনা যাঁর শিল্পকর্মে ছাপ ফেলে গেছে, তিনি ঋত্বিক ঘটক। আর এই লেখক, কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পাগল হয়ে গিয়েছিলেন, আর তাঁর লেখালিখিতে তার ছাপ স্পষ্ট রাখতেন। লেখালিখি নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের খবরদারি ছিল তাঁর নাপসন্দ। সে নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন, কিন্তু বজায় রেখেছেন কমিটমেন্টও। কিন্তু এসব কথা তাঁর লেখার পরিচায়ক নয়। তাঁর লেখাই, তাঁর পরিচয়, অন্য এবং অনন্য যে কোন লেখকের যেমনটা হয়।
জন্মদিন ঘিরে উৎসবের ন্যক্কার বড় বাড়াবাড়ি এখন। কিন্তু প্রায় বিস্মৃত কোনো মানুষকে স্মরণ করার জন্যে এ এক চমৎকার উপলক্ষও বটে। আজ, ১০ নভেম্বর দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন।

No comments: