Tuesday, November 28, 2017

বাংলার জাহাজ শিল্প ধ্বংসঃ ঔপনিবেশিক বৈষম্যের নিকষ খতিয়ান১৩ - ইন্দ্রজিত রায়

বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড দ্য ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলিউশন(১৭৬৭-১৮৫৭) থেকে

বাংলার জাহাজগুলি বাংলার বন্দরে ব্রিটিশ নাবিক ছাড়া কলকাতা-লন্ডন জলপথে অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর হয়ে গেল। তারা যদিও ব্রিটিশ নাবিকদের পাওয়া যাচ্ছেনা তাই বাংলার নাবিক ব্যবহার করছি এই মর্মে সরকারের প্রজ্ঞাপিত শংসাপত্র নিয়ে হয়ত লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারত হয়ত, এবং ফেরার পথে ব্রিটিশ নাবিক নিয়ে ফিরতে পারত, কিন্তু তাতে দ্বিগুণ নাবিকের খরচের বোঝা বইতে হত। এছাড়াও ব্রিটিশ নাবিকেরা একটি দিকে যাত্রার জন্য অনেক বেশি মাইনে দাবি করত হয়ত।
কলকাতা লন্ডন জলপথে পণ্য পরিবহনে কলকাতায় তৈরি জাহাজকে নিষিদ্ধ করা কলকাতার নৌশিল্পে বড় আঘাত। এর আগে কলকাতা থেকে পণ্য(মূলত আফিম আর বস্ত্র) চিনের দিকে যাওয়া যাহাজ চিন থেকে চা, পোর্সেলিন নিয়ে লন্ডনে নামিয়ে সেখান থেকে থেকে পণ্য নিয়ে কলকাতায় আসত। লন্ডন বন্দর তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের এবার থেকে চিন থেকে পণ্য নিয়ে কলকাতায় আসতে হত, কিন্তু চিন-বাংলা পন্য পরিবহন খুব একটা প্রচলিত রাস্তা ছিল না এবং বাংলায় চিনের খুব একটা পণ্য আসত না। একই সঙ্গে কলকাতা-ওয়েস্টিন্ডিজ জলপথে এক সময় কুলি আর চাল যেত, সেখান থেকে লন্ডনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চিনি যেত, সেটাও কলকাতার জাহাজগুলির কাছে বন্ধ হয়ে গেল। ফলে এদের আন্তঃবাণিজ্য পথেই যাতায়াত করতে হল The ports of Bombay and Calcutta are at the present moment filled with ships, not only perfectly seaworthy, but efficiently commanded .... They are not on the register of British ships, but the finest and largest of them are ships which were originally built for the East India  Company's trade.
এই অপ্রতিযোগিতামূলক আইন বিষয়ে ডিগবি লিখছেন, As, again and again, I have wandered through the records of obscurant administration in India during the past century, growing more and more woeful as instance after instance forced upon me the unteachability of the Anglo-Indian civilian, scarcely anything has struck me more forcibly than the manner in which the Mistress of the Seas in the Western World has stricken to death the Mistress of the seas in the East.
আমরা শেষ করতে পারি এই বলে যে, প্রকাশ্যে মুক্ত বাণিজ্যের কথা বললেও, ব্রিটিশেরা আইন করে বাংলার নৌশিল্পকে ধ্বংস করে দিল। অনেকেই জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের বাণিজ্য চক্রে মন্দা আসায়, প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা বা তামাদি হয়ে যাওয়া প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলার নৌশিল্পের পতন হল, কিন্তু এর আগে যে সব তথ্য নিয়ে আমরা ঘেঁটেছি তাতে দেখেছি, এ সব যুক্তি অসার।
বরং বলা দরকার ব্রিটিশ নেভিগেশন এক্ট তৈরি করে নৌশিল্পে যে বিপুল সাংরক্ষণিক এবং নেপোলিয়নএর সঙ্গে যুদ্ধের পরে পরিবহনে যে ঔপনিবেশিক বিপ্লব এল তার প্রভাবে বাংলার নৌশিল্প ধ্বংসের দিকে এগিয়ে গেল। যুদ্ধ কালীন সময়ে ব্রিটিশ নৌশিল্পে বিপুল বৃদ্ধি ঘটলে প্রচুর ব্রিটিশ নৌশিল্পে অন্তর্ভূক্ত হতে থাকে। ১৭৯২ সালে ৬০৯টা জাহাজ থেকে অন্তর্ভূক্তি বেড়ে হয় ১৮০৩ সালে ২২৮৬ খানা। ১৮১১ সালে আরও ৪০২৬টা। যুদ্ধে বিপুল জাহাজ ধ্বংস হলেও ২১ শতাংশ জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ১৮০৩-১৪ সালে। যুদ্ধের পরে শান্তির সময়ে প্রচুর জাহাজ নৌসেনার কবল থেকে মুক্তি পেলে বাণিজ্যের জন্য প্রচুর টনেজ যুক্ত হল। ফলে যুদ্ধের আগে নৌ শিল্পে টনেজের অভাবের জন্য যে আইন করা হল, তা নেপোলিয়নের যুদ্ধের পরে প্রয়োজন হল না।
যখন বাংলার জাহাজকে আর ব্রিটিশ আর্থিক উন্নতির কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া গেল, তখন দেশিয় জাহাজ শিল্পকে কিভাবে এই কাজে লাগানো যায় তার ব্যবস্থা করতে মাথা ঘামাতে হল ব্রিটেনকে। কোম্পানির পণ্য পরিবহনে ভারত তখনও রপ্তানি উদ্বৃত্ত দেশ, যার বাৎসরিক পরিমান ছিল ৩.১১ মিলিয়ন স্টার্লিং এবং কোম্পানি আর ব্যক্তিগত ব্যবসা মিলিয়ে ১৮১১-২৬(১৮২১-২২ বাদ দিয়ে) সালে দাঁড়ায় ৪.১৭ মিলিয়ন টাকা। এর একাংশ রাজস্ব রপ্তানি ছিল। কিন্তু বাকি অংশ ব্রিটেনে যেত না, যদি না ব্রিটিশ তৈরি জাহাজ সেই পরিবহন শুল্ক যতদিন না রোজগার করতে পারে। ফলে নিজের নৌশিল্পকে বাঁচাতে সে সারা বিশ্বে সংরক্ষণের নীতি নিল। ইমলা দেখিয়েছেন এই নীতির ফলে ১৮১৬-৩০এ ২৯.৭৮ মিলিয়ন পাউন্ড পরিমান পণ্য পরিবহনের ঘাটতি মেটাতে সারা বিশ্বের সঙ্গে অতিরিক্ত ২৯.৩৬ মিলিয়ন পাউন্ড পরিমান ব্যবসা করে থাকে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই দেশিয়াজ্জাহাজ শিল্পের গুরুত্বের কথা জানত। এক সময়ে তাদের কোর্ট অব ডিরেকটর্স বলছে - The continuance of its exertions would not depend altogether, nor perhaps chiefly, on the gain of the commodities carried to and from India; if commodities brought only prime costs and charges and yet the shipowners could make a profit from their ships, it might still be in their interest to carry on the trade

এবং আরও বৃহৎভাবে তারা লক্ষ্য করল, The transfer [ of goods] is not the sole end ... but in part the transfer is the means, and the ships the end। ফলে আমরা বুঝতে পারি কেন বাংলার নৌশিল্পকে ধ্বংস করে ফেলা হল; তার বড় কারণ হল, মেট্রোপলিটনের অর্থনীতিকে বাঁচাতে।

No comments: