Monday, November 20, 2017

বাংলা যখন বিশ্ব সেরা২ - বাংলার দাদনি বণিক - ইওরোপিয় কোম্পানির উদ্ধারকর্তা - বাংলার কার্যকর, বিস্তৃত, উন্নত ঋণ ব্যবস্থা - সুশীল চৌধুরী

(State and Finance in the Eurasian Continuum in the Early Modern Times: INDIAN MERCHANT/BANKERS TO THE RESCUE OF THE EUROPEAN COMPANIES, EASTERN INDIA, C. 1650 – 1757: SUSHIL CHAUDHURY)
১) পুঁজির দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি
আমরা যে সময়পর্ব নিয়ে আলোচনা করছি, শুধু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নয়, ডাচ, ফরাসি এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলোর, দীর্ঘস্থায়ী পু&জির ঘাটতি ছিল। ফেব্রুয়ারি মার্চে ইওরোপ থেকে জাহাজ পূর্বের পানে সমুদ্রে বেরোনোর সময়ই দাদনি বণিকদের পণ্যের জন্য দাদন/অগ্রিম দিয়ে দেওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। কিন্তু যতটা দেওয়া দরকার ছিল, কোম্পানিগুলোর হাতে তত পরিমান অর্থ থাকত না। আরও ঝামেলার ব্যাপার ছিল আগের বছরের বাণিজ্যের বকেয়া পড়ে থাকা অর্থ দেওয়ার মত অবস্থায় থাকত না কোম্পানিগুলো। প্রত্যেক বছরের এই সময়েই যখন ইওরোপ থেকে জাহাজ ছাড়ার এবং দাদনি বণিকদের অগ্রিম অর্থ দেওয়ার সময় হত, সেই সময় স্থানীয় দাদনি বণিকেরা এক দিকে আগের বছরের বকেয়া অর্থ আর চলতি বছরের কারিগরদের অগ্রিম দেয় অর্থ চাইত কোম্পানির আমলাদেরকে। প্রত্যেকটা ইওরোপিয় কোম্পানির বাংলা কাউন্সিলগুলি অসহায় ছিল।
এই ঘটনা কোম্পানিগুলোর বহু চিঠিপত্রে উল্লিখিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৭২০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কলকাতা কাউন্সিল বলছে তাদের বণিকদের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে কেননা তারা, daily complaining for want of usual advancement on Dadney besides their last year’s arrears due to them। অবস্থা নিতান্তই বিরক্তিকর হয়ে ওঠার নিদর্শন পাচ্ছি ১৭২১ সালের ১৯মে তারিখের ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিলের কনসাল্টেশনের বৈঠকের বর্ণনায় There being due … [a large amount] to our merchants on balance of past year’s account and we having no money to clear off those balances or advance them on this year’s contract … they are very clamourous for either money or bills at interest to be given them alleging they cannot perform the new contract without being forced to borrow all the money they can get at interest to send to the aurungs [production centers].
এই সমস্যা নিরন্তর কোম্পানিকে বিপদে ফেলতে থাকে। এমন কি ১৯২১ সালের ৮ আগস্ট চলে যাবার পরেও কাউন্সিল হতবাক হয়ে দেখছে, ‘We as yet having no news of any ship from England, Our merchants are very clamourous for the Dadney to be advanced them on the goods contracted for this year, and insist upon giving them Bills of Debt for that and the Balance of their last year’s account’।

২) পণ্য কেনার জন্য ঠিক সময়ে দাদন দেওয়া দরকার

আরেকটা সমস্যা হল ঠিক মরশুমে ঠিক পরিমান দাদন দিয়ে নির্দিষ্ট পণ্যটি আগ্রিমভাবে কেনার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা। এবং এই সময়টা শুরু হয় হাজাহ ছাড়ার সময় পেরিয়ে গেলেই। কেননা এর পরে যত দিন যায় পণ্যের দাম তত বাড়তে থাকে, এবং জাহাজ ছাড়ার দিন যত এগিয়ে আসতে থাকে এবং জাহাজ ছাড়া কাছাছি সময়ে পণ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে ইওরোপের পানে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পরে পরেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যের সময়টাই অগ্রিম দেওয়ার কাজ শেষ করার জন্যে আদর্শ। তার জন্য তাদের কিছু পুঁজি দরকার ছিল, যা দিয়ে তারা আগের বছরের বকেয়া মেটাবে এবং চলতি বছরের জন্য অগ্রিম দেবে। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই মোটামুটি কোম্পানির সুবিধে মত দামে পণ্যটি চুক্তির দামে পেতে, দাদনি বণিকদের অগ্রিম অর্থ দেওয়ার মত অবস্থায় থাকত না কোম্পানিগুলো। আমরা গেই দেখলাম, অগ্রিম দেওয়া ত দূরস্থান, আগের বছরের বকেয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার মত অবস্থায় থাকত না তারা। ফলে তাদের এই ঘাটতি মেটাতে নগদ ধারের অর্থের উৎসের দিকে নজর দিতে হত। 

No comments: