Sunday, November 26, 2017

বাংলার জাহাজ শিল্প ধ্বংসঃ ঔপনিবেশিক বৈষম্যের নিকষ খতিয়ান৮ - ইন্দ্রজিত রায়

বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড দ্য ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলিউশন(১৭৬৭-১৮৫৭) থেকে

কাঠ ছাড়া শিল্পের প্রয়োজন ছিল লোহা, তামা, কাঁসা এবং দস্তার কাজ। লোহার বার, শিট কপার এবং সীসা ইংলন্ড থেকে আসত। দস্তা আসত চিন থেকে, lignumvitae আসত আমেরিকা থেকে। তবে উদ্যমীরা স্থানীয়ভাবে নানান দ্রব্য তৈরি করাই পছন্দ করত। স্থানীয় কারিগরেরা এলাকার লোহা শিল্পের ওপরেই নির্ভর করত। The standing rigging (made of hempen coir), ejoo, plantain-rope, the blocks স্থানীয়ভাবে তৈরি হত, ক্যানভাস তৈরি হত ইওরোপের অর্ধেক দামে এবং তার গুণপনায় তার সমান। জাহাজ নৌকো তৈরির মূল কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে পাওয়া যেত, ব্রিটিশ উদ্যমীরা বাকিগুলি অন্য যায়গা থেকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করত, বিশেষ করে কিছু বিশেষ ধাতু, স্থানীয় কারিগরদের দিয়ে সেগুলি ব্যবহারের উপযোগী করে তুলত।
কাঁচামালের গুণ আর কারিগরি দক্ষতা, শিল্পকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। বাংলার জাহাজ শিল্পের তথ্যভাণ্ডারের পঞ্জিকা বলছে ১৭৮১-১৮৩৯এর মধ্যে মাত্র ছটা জাহাজ কুড়ি বছরের কম চালিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে হয়েছে। ২১টা জাহাজের, যেগুলির ভেঙ্গে ফেলার কারণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের মধ্যে সাতটা ভেঙ্গে ফেলতে হয়েছে বাকিগুলি সমুদ্রে ভেঙ্গে পড়ে বা ডুবে যায়। বাংলার জাহাজগুলির গড় বয়স ছিল কুড়ি বছর, সে তুলনায় লিভারপুর বা ব্রিস্টলের জাহাজের বয়স ছিল এগার বছর আর টেমসে বারো বছর। সে সময়ের লেখায় বাংলার জাহাজের এইগুণমানটা আমরা উল্লেখ পাই, The London-built Enterprise was obliged to be rebuilt here in Calcutta after four years' service, and ... finally condemned after twelve. The Forbes, on the contrary, built about twelve years ago in the Howrah dock, has never even required any repair except for accident, and has never had her copper sheathing removed, though constantly at work. Surely this speaks something for the superiority of substantial teak-built vessels, over the oak and fir ships of colder climates। সূত্রঃ Indian Steam Committee 12 October 1838। বাংলায় তৈরি জাহাজের আরেকটা গুণপনার উল্লেখ পাই, লয়েডের তথ্যভাণ্ডারে(Lloyd's register) - বাংলার তৈরি প্রত্যেকটা জাহাজ Al মার্কা পেয়েছে।
উৎপাদনের খরচের দিক থেকেও বাংলার নৌশিল্পতুলনামূলক শস্তা ছিল। ১৭৮১-৯১ সালে টন পিছু উৎপাদন ব্যয় ছিল ১৯০ টাকা, ১৮০০-১০ সালে ছিল ২৫০টাকা, ১৮১১-১৬ সালে ছিল ৩০৫ টাকা এবং ১৮১৭-২০এর সময় কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় সেটিও কমে হয় ২৫০টাকা। এই সময়ে ব্রিটিশ শিল্প কোনভাবেই বাংলার খরচের আশেপাশে দাঁড়াতে পারে নি। প্রথম দশকের বাংলার ২৫০টাকার তুলনায় ব্রিটেনে খরচ ছিল ৫১৫ টাকা, তৃতীয় শতকের ১৩৫টাকার তুলনায় ব্রিটেনের খরচ ছিল ২৪০টাকা। ৬.১০ তালিকায় লন্ডনে তৈরি লর্ড নেলসন আর বাংলায় তৈরি চারটি সেই শ্রেণীর জাহাজের খরচের তুলনা করা হয়েছে।
বাংলায় তৈরি ৮০০ টনের জাহাজের খরচ ছিল ৩৪৭০.৭৬ টাকা, লন্ডনে ছিল ৭৬৮৯.৫০ টাকা, ৫৫% কম। বাংলার জাহাজের ব্যবহারের জন্য ক্ষয়(wear and tear)ও লন্ডনের তুলনায় কম পাঁচটা সমুস্র যাত্রার গড় ক্ষয় ছিল ৫৬৯৪ পাউন্ড, সেখানে লন্ডনের ছিল ১১৫৭২ পাউন্ড। একটিজাহাজের বাংলায় সারাবার খরচও তুলনামূলকভাবে কম, ৩৭৬০ বনাম ৮৩২০ টাকা।

No comments: