Tuesday, November 21, 2017

বাংলা যখন বিশ্ব সেরা৭ - বাংলার দাদনি বণিক ইওরোপিয় কোম্পানির উদ্ধারকর্তা - বাংলার কার্যকর, বিস্তৃত, উন্নত ঋণ ব্যবস্থা - সুশীল চৌধুরী

(State and Finance in the Eurasian Continuum in the Early Modern Times: INDIAN MERCHANT/BANKERS TO THE RESCUE OF THE EUROPEAN COMPANIES, EASTERN INDIA, C. 1650 – 1757: SUSHIL CHAUDHURY)

উচ্চ সুদের হার
১৭৪০ পর্যন্ত বাংলা সুবায় উচ্চসুদের হার কোম্পানির পক্ষে বিপুল পুঁজি ধার করার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কোম্পানির কেন্দ্রিয় দপ্তর বারবার ১২ শতাংশ হাতে ধার নেওয়ার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিতে থাকে। এই সুদের হার ‘অত্যাধিক’ তাদের ব্যবসায় ‘rank poison’। তারা প্রায়শই বিভিন্ন কুঠিয়ালদের ঋণ নিয়ে অনুতসাহিত করত কেননা, ‘the interest of which eats deep and insensibly’। কিন্তু আমরা দেখেছি, কুঠিয়ালেরা ঋণ নেওয়া বন্ধ করে নি, এবং একে অত্যাবশ্যক ঝামেলা বলেই মনে করত।

১৭৪০এ কোম্পানির জন্য সুদ শেঠ এবং অন্যান্য স্রফে ৯ শতাংশে কমালেও, এই হারেও কুঠিয়ালদের পক্ষে ধার নেওয়া মুশকিল ছিল। বহু সময় কোম্পানির অসহায় অবস্থা দেখে ব্যাঙ্কার/স্রফেরা বেশি সুদ দাবি করে বসত। ১৭৪৬ সালে ব্রিটিশ ফ্যাক্টর লিখল, ‘১২%এর নিচের সুদে বাজার থেকে ধার তোলা সম্ভব হয়ে উঠছে না’ এবং তারা কলকাতার কাউন্সিলের কাছে অনুমতি চাইল এই হাতেই তাদের ধার করার অনুমতি দেওয়া হোক।

কলকাতা কাউন্সিল লিখল, ‘positively ordered that on no account they give more than 9 percent for money at interest
for it would be of utmost ill consequence to our Hon’ble Masters should they give any higher premium to any person and we doubt not that who have money to spare will let them have at the same rate as we get everywhere else’। এর উত্তরে ঢাকার কুঠিয়ালেরা ১৬ সেপ্টেম্বর ১৭৪৬এ লিখল, ১২ শতাংশে ধার করার জন্য আমরা স্রফেদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। ১২ অক্টোপবর ১৭৪৬এ কলকাতাকে লিখল, ‘স্রফেদের থেকে ১২ শতাংশের নীচে ৯ শতাংশে ধার পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে’।

কলকাটা কাউন্সিলের বিশ্বাস ছিল, ইওরোপ থেকে অক্টোবরে জাহাজ এলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, ‘we hope the arrival of these ships will give them credit to Borrow money at the usual rate’। ঢাকা প্রত্যুত্তরে লিখল; না ধার পাওয়া যাচ্ছে না। ১৭৪৭এ ঢাকা লিখল তারা ৯ শতাংশে কোন ধার পাচ্ছে না। এবং নভেম্বরেও কোন জাহাজ ইওরোপ থেকে এসে না পৌঁছনোয় অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়ে পড়ে। ঢাকা লিখল, ‘no one being willing to let them a single rupee, their credit being quite gone, none of the Company’s ships arriving with treasure’। ইতোমধ্যে ইওরোপ থেকে পাঁচটি জাহাজ এসে পৌছনোয় কলকাতা লিখল, ‘it will raise their credit to enable them to go on with the Investment’। কিন্তু তাতেও সমাধান হল না। ১৭৪৮ সালে তারা লিখল কলকাতা আর কাশিমবাজার থেকে কোন রকম আর্থ সরবরাহ নবা থাকায় তারা কোন রকম পণ্যদ্রব্য পাঠাতে পারছে না।

শেষ কথা
অবশ্যই পুরো অবস্থা পাল্টে গেল ১৭৫৭র পরে – ইওরোপ থেকে দামি ধাতু আর মশলা আনতে হল না। এরপর থেকে ব্রিটিশ কোম্পানির বাংলার অর্থের বাংলার পণ্য কেনার পুঁজি জোগাড় হল। অন্যন্য ইওরোপয় কোম্পানির অবস্থা দুর্দশাগ্রস্ত হল। ব্রিটিশেরা ইওরোপিয় আর এশিয় প্রতিযোগীদের বাজার থেকে হঠিয়ে দিল। পলাশীর পর বাংলা থেকে বিপুল অর্থের লুঠ হল, যার নাম পলাশীর লুঠ। তারপরে এতদনের অধমর্ণ ইওরোপ উত্তমর্ণে পরিণত হল(লুঠ আলোচনার জন্য সুশীলবাবুর The Prelude to Empire এবং Holden Furber, John Company at Work আর নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিংহের Economic History of Bengal দেখুন)।


(শেষ)

No comments: