Friday, November 17, 2017

বাণগড়।। দক্ষিন দিনাজপুর আট হাজার বছরের বেশি ইতিহাসের গর্বিত গর্ভগৃহ

বাংলায় ভ্রমণ বইটি লিখছে
...(অবিভক্ত) দিনাজপুর হইতে ১৮ মাইল দক্ষিণে দিনাজপুর রোড নামক রাস্তার পার্শ্বে পুনর্ভবা নদীর তীরে অবস্থিত গঙ্গারামপুরও একটি পুরাতন স্থান। ইহার নিকটে ধলদীঘি ও কালদীঘি নামে দুইটি পুরাতন দীর্ঘিকা আছে। মুসলমান আমলে গঙ্গারামপুরে একটি সীমান্তরক্ষী সেনানিবাস বা ছাউনি ছিল এবং সেই সময়ে এই স্থানের নাম ছিল দমদমা। ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকে এখানে একটি মুনসেফী আদালত ছিল। কাহারো কাহারও মতে এই দমদমাই কোটিবর্ষের অন্তর্গত্র প্রাচীন কোটিকপুর বা দেবকোটনগরী। বরেন্দ্রভূমির উত্তরভাগ নহুকাল ধরিয়া কোটিবর্ষ নামে পরিচিত ছিল। কোটিকপুরে জৈন মহামুণি জম্বুস্বামীর সমাধি ছিল। এখানকার রাজপুরোহিত সোমশর্ম্মার পুত্র ভদ্রবাহু জৈনদের ছয়জন শ্রুতকেবলীর শেষ শ্রুতকেবলী ও মহারাজ চন্দ্রগুপ্তের গুরু ছিলেন। দাক্কজিণাত্যে চন্দ্রগিরি পর্ব্বতে তিনি দেহ রক্ষা করেন।
গঙ্গারামপুরের দেড় মাইল উত্তরে পুনর্ভবা নদীর পূর্বতীরে বাণগড়ের বিস্তীর্ণ ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। সম্প্রতি(বইটি ১৯৪০ সালে প্রকাশিত) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এই ধ্বংসাবশেষ গুলিতে খনন কার্য্য চলিতেছে। এই কার্য্য সম্পূর্ণ হইলে মূল্যবান ঐতিহাসিতথ্য পাওয়া যাওবে বলিয়া অনুমিত হয়। প্রবাদ এই স্থানে অসুররাজ বাণের একটি দুর্গ ছিল। বাণরাজার সহস্র বাহু ছিল এবং শিবের বরে তিনি যুদ্ধে অজেয় ছিলেন বলিয়া পুরাণে বর্ণিত আছে। তাঁহার কন্যা ঊষার সহিত শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনুরুদ্ধের বিবাহ উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণের সহিত তাঁহার তুমুল যুদ্ধ হয় এবং সেই যুদ্ধে তাঁহার পরাজয় ঘটে ও ৯৯৮টি হাত কাটা যায়। বাণগড়ের বহু প্রাচীন কীর্ত্তি যে দিনাজপুর রাজবাটিতে রক্ষিত আছে তাহা বলা হইয়াছে। এই স্থান হইতে প্রস্তর ও ইষ্টক সংগ্রহ করিয়া নিকটবর্ত্তী বহু লোকে গৃহাদি নির্ম্মাণ করিয়াছে। অরণ্য মধ্যে বিক্ষিপ্ত ইষ্টক ও প্রস্তরখণ্ড এখনও এই স্থানের প্রাচীন সমৃদ্ধির স্মৃতি বহন করিতেছে। প্রবাদ গঙ্গারামপুরের বাণরাজার মহিষী কালারানী দ্বারা খনিত। ধলদীঘির আকৃতি দেখিয়া মনে হয় ইহা মুসলমান আমলে খণিত। গগারামপু হইতে দক্ষিণে তালদীঘি নামে একটি প্রকাণ্ড জলাশয় আছে; ইহাকে একটি হ্রদ বলিলেও চলে। ইহা বাণরাজা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বলিয়া কথিত। এই স্থানেও বাণ রাজার স্মৃতি বিজড়িত ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়।
বাণগড়ে পালবংশীয় প্রথম মহীপালদেবের একখানি তাম্রশাসন পাওয়া গিয়াছে; ইহা জানা যায় যে তিনি বাহুবলে হৃত পিতৃরাজ্য উদ্ধার করিয়া 'অবনীপাল' হইয়াছিলেন। তাম্রশাসন খানির দূতক তাঁহার মন্ত্রী বামনভট্ট।
মন্তব্যগুলি
Biswendu Nanda এবং জানতেই হবে তার অতীত। কেননা তার ভিত শক্ত অতীতের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে, ইওরোপ বর্ণিত কালো অতীত নয়।
পরিচালনা করুন
Paul Gomez সিংহশাবককে দর্পণ দেখিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া যে এতদিন ছাগল পরিবৃত হয়ে আছে বলেই তার ব্যা-ব্যা করার কোন দায় নেই l

No comments: