Sunday, November 26, 2017

বাংলার কারিগর৩ - মুঘল দরবারে পোষাক প্রথা

আকবর হয় এই কারণে তার পরিধেয়গুলির নাম পরিবর্তন করান। জামার জায়গায় সারাবগতি(sarabgati সারা দেহ ঢাকার কাপড়), ইজেরের যায়গায় করলেন য়ারপাইরাহান(কোটের সঙ্গী), নিমতানা বা জ্যাকেট হল তেঞ্জাব হল ফতুয়া, পাটঘট, বোরখা বা ঘোমটা হল চিত্রগুপিতা, কুলা(টুপি) হল শিশোভা(মাথার শোভা), মুইবাফ(মাথার চুল বাঁধা) হল কেশঘণ, পাটকা বা ধুতি/অঙ্গবস্ত্র হল কাটজেব(কোমরে আঁটার জন্য কাপড়), পয়জর হল চরণধরণ ইত্যাদি।
আমরা দেখছি শব্দগুলিতে পারসির প্রভাব যথেষ্টই, কিন্তু হিন্দুস্তানির প্রভাবও রয়েছে। তবে এই পরিধেয়গুলো সাধারণের জন্য নয়, মূলত দরবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর অভিজাতদের জন্য। আগেও বলেছি কিভাবে পরস্পরের সঙ্গে সখ্য তৈরি করল আভিজাতরা নিজেদের অনেক কিছু পরম্পরা ত্যাগ করে।  
আকবর তার বাবা আর ঠাকুর্দার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেলেন জামা, ফারজি, উলবাগছা আর শালোয়ার। ভারতে নতুনত্বের দিশারী আকবর এক্কেবারে নতুন পরিধেয় আঙ্গিক তৈরি করালেন, তাঁর নিজের পছন্দসই, এবং বরাবরের জন্য যে মধ্য এশিয়ার পরম্পরা মোগলরা বয়ে নিয়ে চলছিল তার বদল এল স্থায়ীভাবে। আকবরের অন্তরঙ্গরা যে কটি তাঁকে নিয়ে যে ক’টা ইতিহাস রচনা করেছেন, সেখানে পাদশাহর যে ্পরিধান বর্ণনা করেছেন সেগুলি হল, takauchiya, peshwaz,dutahi, shah-ajida (royal stitch coat), suzani, qalami, qaba, gadar, farji, fargul, chakman, shalwar। প্রত্যেকতার নানান ধরণের রকমফের ছিল, কিন্তু সেগুলো কি কি ছিল তা আজ আর বলার সুযোগ নেই। আজকে সালতা যে আমরা দুভাঁজ করে পরি সেটা আকবরের তৈরি। সেইজন্য শালের আরেকনাম দোশালা – দুভাঁজশাল। তবে আজকের তুলনায় কিছুটা পার্থক্য আছে, তখন সালের দুপাশেই দুধরণের সুতোর কাজ থাকত, সেলায়ের সুতো কোন দিকেই দ্যাখা যেত না। অর্থাৎ দুদিকের পজিটিভ কাজ, নেগেটিভ কাজ কোন দিকেই নেই।
আকবরের সময় takauchiya(লাইনিং ছাড়া কোট)খুব বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এটি প্রথম পারসিক পরিধেয়, যেটির ভারতীয়করণ করা হল। এর থেকে পরিষ্কার করে দেওয়া হল শাসক মুঘলদের পক্ষ থেকে যে তারা ভারতীয় বনে গেল। এটা বাঁদিকে বাঁধা জামা। takauchiya  আস্তে আস্তে জামাটাকে প্রতিস্থাপিত করল। তাঁর রেশমের পরিধেয়গুলি সোনার সুতো দিয়ে কাজ করা। গ্রীষ্মে যেটা ব্যবহার করতেন তার নাম কাবা। সূক্ষ্ম সুতির কাপড়। আকবর তাঁর কাপড়ে যে সব পরিবর্তন এনেছেন সেটি নথিকরণ করা হয়েছে আবুলফজলের আইনিআকবরিতে। সেই নথিকরণ যে শুধু অঙ্গিক পরিবর্তনের কাজ নয় সেখানে যে পাদশাহের একটা পরিবর্তনশীল মন কাজ করছে সেটাও ধরা যায় তার আঙ্গিক পরিবর্তন আর নাম পরিবর্তনে।
দেশের উচ্চকোটির আর্থসামাজিক অবস্থার সুধু পরিবর্তন ঘটালো না মুঘলেরা, তাদের জীবনে কৃষ্টিগতভাবে গভীর পরিবর্তন এল। গোস্বামী লিখছেন, According to Abul Fazl, Akbar was wearing takauchiya, a coat with a round skirt and tied on the right side. Dutahi, was a coat with lining, shahajida, a royal stitch coat, with sixty ornamental stitches per girih. Suzani, a silken coat with cotton inside qalami is the same; qaba wadded coat, gadar, wider and longer than the qaba, was used in place of fur coat

পরিধেয় তৈরির উপাদানে যাতে পরিবর্তন আসে তার জন্য উদ্যমী হয়েছিলেন আকবর। প্রথমের দিকে মুঘলদের কাপড় দক্ষিণ বা বিদেশ থেকে আসত। বারনিয়ে বলেছেন কি কি উপাদান দিয়ে গ্রেট মুঘলদের উপহারের জন্য পরিধেয় তৈরি হত। প্রায় এগারো জাহার তাঁতি সূচিবিদ সারা বছর ধরে কাজ করতেন রাজ পরিবারের আত্মীয়দের কাপড় তৈরি করার জন্যে, আর পাদশাহ যে কাপড়টি পরতেন তাঁর জন্ম দিনে সেটি তৈরি হত সারাবছরের কারিগরীতে। তাঁর সময়ে ঢার মসলিন চোখে দ্যাখা যেত না। নাম ছিল বয়ে যাওয়া জল। আর যেহেতু সম্রাটেরা এই পরিবর্তনগুলো করতেন তাই সেগুলোর তারিখ পাওয়া মুশকিল ছিল। কিন্তু বড় পরিবর্তন করতেন সম্রাট – যেমন জাহাঙ্গীর নিয়ে এলেন নাদরি – যা কাবার ওপরে কোটের মত করে  পরতে হয়, হাতা ছাড়া হাঁটু ঝুলো। 

No comments: