Saturday, November 18, 2017

বেরা ভাসান উৎসব৯ - সমুদ্র যাত্রার পাঁচালি - রীলা মুখার্জী

দরয়া-ইয়ে খিজরঃ জল, জীবন এবং চৈতন্য
গবেষকেরা মোটামুটি স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন খজরের উতপত্তি কাস্পিয়ান সমুদ্রের তীরে ঘটেছে। বাড়(Bahr) এবং দরিয়া দুই শব্দই সমুদ্রের অনুষঙ্গে জড়িত। খাজার সমুদ্র শব্দবন্ধটা সাধারণত ব্যবহার করে থাকেন তুর্ক, আরব এবং পারসিকরা। আরবেরা উচ্চারণ করে কাজভিন, ইওরোপিয় উচ্চারণে হয়েছে ক্যাসপিয়ান। ক্যাসপিয়ান সাগরের আরও কিছু নাম আছে - Tabarestan, Bahr-e (sea) Jorjan (Gorgan), Abskoun-e Deilam, Bahr-e (sea) A'ajem, Jilan (Gilan), Astarabad, Sari, Shirvan, Mazandaran, Moghan, Badkoubeh, Haji Tarkhan, Gol-o-Galan, Talisan, Kamroud, Zereh Ojestan, Akfoudeh Darya (Dera Akfoudeh), Kharazm, Khorassan, Jili, Bahr-ol-Ajam, Jebal and Bab-ol-Abvab। আরব ভুগোলবিদ নাভিরি সূত্রে আরও একটি নাম পাচ্ছি ফার্স বাড়(Fars Bahr) বা হজ(Hoz) বা পারস্য (উপ)সাগর। একটি সমুদ্রের এতগুলি নামের পেছনে কারনগুলি হল ১) এই সব এলাকাজুড়ে নানান ধরণের সমাজের মানুষ বাস করে, তারা তাদের মত নাম দেয়, ২) আশেপাশের শহরের নামে, ৩) উপকূল এলাকার শহরগুলির নামে সমুদ্র চিহ্নিত হয়, ৪) সমুদ্রের সমনাম শব্দ Deniz, Darah, Darya, Sala, Sihaie, Zarayeh, and Voroushka থেকে এসেছে, ৫) এই সমুদ্র দিয়ে যাওয়া আসা করা মানুষজন ভুল করে অন্য সমুদ্রের নামে কাজভিনকে ডাকা থেকে।

হ্রদ আর সমুদ্র, দুটি চরিত্র নিয়েই কাজভিন বা ক্যাসপিয়ান সমুদ্র। কখোনো কখোনো একে বিশ্বের সব থেকে বড় মিঠে জলের হ্রদ বলেও বর্ণনা করা হয়। এটি ভুগোলের ভাষায় endorheic অর্থাৎ এখান থেকে কোন প্রাকৃতিক জল নির্গমনের(বাষ্পীভবন ছাড়া) জায়গা নেই, ফলে সমুদ্র হিসেবে কাজভিন অস্থিতিশীল। শত শত বছর ধরে বহুবার এর জলস্তর কখোনো বেড়েছে, কখোনো কমেছে। এই সমুদ্রের স্থানীয় মাছগুলির প্রজাতি হল kutum, roach, bream and salmon। ফলে এই ধরণের অস্থিতিশীল জলাশয়ে যে সমুদ্র রক্ষাকারী দেবতার উদ্ভব হবে সেটা কি খুব আশ্চর্যের?

পুরুত্থানিক চেহারায় খিজর, ডিওনিসাস, হার্মেজ(ইদ্রিস), ওসাইরিস এবন্মগ স্কন্দ-কুমারের সঙ্গে তুলনীয় হবেন। এটা মনে রাখা দরকার অল-খিদর আদিরূপকে(archetype) সুফিরা তাঁকে প্রাকৃতিক সব কটি শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত করেন। কেউ কেউ আবার বলছেন শিবের পুত্র স্কন্দের রূপক থেকে দক্ষিণ এশিয় সুফিবাদের হাত ধরে অল অল-খিদরএর বিবর্তন ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়ায়, স্কন্দ অল-স্কন্দ নামে পরিচিত, যিনি আবার ডিওনিসাসের সমান্তরাল। অল-স্কন্দ, ইসলামি ইস্কান্দারে পরিণত হন। এই নামে এশিয় কৌম স্মৃতিতে আলেকজান্দার আজও টিকে আছেন। এর আগে আমরা দেখেছি খজা খিজিরের সঙ্গে আলেকজান্ডারের সম্পর্ক কি ছিল।



খিজর নিয়ে আরও একটি ইন্তারপ্রিটেশন আছে। পবিত্র কুরাণের অষ্টাদশ সুরা আলোচনায় কার্ল গুস্তাভ য়ুং, খিজর পাতার সবুজ অংশের ক্লোরফিলের দ্যোতকই নন, বা সুর্যালোক জলের মিশ্রেণে তার বেঁচে থাকা আর পুষ্টিই নয়, বা আলোর বর্নালীর মধ্যের সবুজ আলোটাই সে নয়, সেটি প্রাথমিক মৌলিক শুদ্ধ চেতনার অংশ বিশেষ। য়ুং বলছেন খিজর হলেন আত্ম অহং। সব কটি সূত্র থেকে একটাই বিষয় উঠে আসে, সেটি হল খিজর ইসলামে রুক্ষাকর শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, কেননা খ্রিস্টধর্মের মত ইসলামে মোক্ষ(salvation)র ধারনাটিই নাই, শুধু আছে পথপ্রদর্শকের হাত ধরে আত্মজাগরণ(revelation)।

No comments: