Thursday, November 30, 2017

ছোটলোকেদের কিছু কথা

কতগুলো কথা স্পষ্টভাবে বলা দরকার-
১) ১৭৫৭র আগের উৎপাদন ব্যবস্থা ছোটলোক নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল। প্রযুক্তি, দক্ষতা, জ্ঞান এবং কিছুটা সামাজিক সুরক্ষা ছোটলোক সাপেক্ষ ছিল। তারপরে বাংলা জুড়ে ছোটলোক উৎপাদন ব্যবস্থার বিপক্ষে কর্পোরেট ব্যবস্থার শেকড় গজাবার চেষ্টা করা হয় - রামমোহন দ্বারকানাথেদের তৈরি করে।
২) ব্রিটিশ পূর্ব সময়ে কিছুটা হলেও উৎপাদন ব্যবস্থায় ছোটলোকেদের পকড় ছিল - রাষ্ট্রনীতি এই উৎপাদন ব্যবস্থা উতপাদকেদের পক্ষে ছিল। তাই ছোটলোকেরা ১৭৫৭র আগের উৎপাদন ব্যবস্থায় যেতে চায়।
৩) যে সব ছোটলোক/শুদ্রদের সংগঠন বড় পুঁজির রাষ্ট্র যন্ত্র এবং শিল্পবীয় প্রযুক্তি আর উৎপাদন ব্যবস্থার গুণগান করেন, তারা সামগ্রিক ছোটলোকেদের স্বার্থ বিরোধী।
৪) এই সরকারি শিক্ষা উৎপাদন ব্যবস্থার কোন অংশই ছোটলোকদের তৈরি সমাজ বা অর্থনীতি বা প্রযুক্তির অনুকুল নয়। ফলে দলিতদের জন্য বর্তমান পাঠ্যসূচী অনুযায়ী আরও একটা বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদতে ছোটলোকেদের সামগ্রিক স্বার্থ বিরোধী।
মন্তব্যগুলি
Samik Saha ১। কারিগরি বিদ্যায় ১৭৫৭-র আগে ফিরে যাবো, এই কথাটা বার বার ভুল ব্যাখ্যা করছে অনেকে, এটা আরও স্পষ্ট করে বলা দরকার।

১৭৫৭র আগে কারিগরি বিদ্যা বা জ্ঞান ছিল অঞ্চল সুনির্দিষ্ট তাই সেই অঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী নিখুঁত। কিন্তু ঔপনিবেশিক কাঠামো বিশ্ব ব্যাপী বাজার 
গড়ে তোলার তাগিদেই, এই অঞ্চল 'অনুযায়ী নিখুঁত' এই ধারণাটাকেই ত্যাগ করে, গড়পড়তা মান কিন্তু সংখ্যায় প্রচুর পণ্য বানানোর প্রযুক্তির বিকাশ ঘটায়। এর ফল শ্রুতিতেই পরিবেশ ধ্বংস ও মানুষের উচ্ছেদ যাত্রা, উন্নয়নের নামে অধঃপাত শুরু হয়। পুরো প্রক্রিয়ার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে বৃহৎপুঁজির লুটে খাবার লক্ষ্যমাত্রা।

আমরা এই লুটে খাওয়ার প্রযুক্তির বিরুদ্ধে, তাই গড়পড়তা মান কিন্তু সংখ্যায় প্রচুর পণ্য বানানোর বিরুদ্ধে। আমরা আবার যত বেশি সম্ভব অঞ্চল ভিত্তিক স্বয়ং সম্পূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থায় ফিরতে চাই। যে প্রযুক্তি আঞ্চলিক উৎপাদকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, বৃহৎপুঁজি বা রাষ্ট্র তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। আমরা মনে করি সেটা সম্ভব, প্রযুক্তিগত ভাবে ও বিপণনের দিক দিয়ে উভয়ত।

২। ভারতের মূল উৎপাদন ব্যবস্থা ও অর্থনীতি একে বারেই শূদ্র/ছোটলোক নির্ভর। এই সত্যকে চাপা দেবার লক্ষ্যেই বৃহৎ পুঁজির ধ্বংসাত্মক অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা, প্রযুক্তি সমস্ত কিছুকেই বিজ্ঞাপনের ঢপলিং দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করা হয়।

৩। আধুনিক শিক্ষার প্রসারের নাম করে, আধুনিক কর্ম সংস্কৃতির নাম করে, সংরক্ষণ ব্যবস্থার নাম করে শূদ্র সমাজের সেরা মেধাদের সমাজ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। শূদ্রদের স্বয়ংসম্পূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থাকে কানা করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সংরক্ষণের রাঙামুলো নাকের ডগায় ঝুলিয়ে গোটা ভারতীয় সমাজের সেরা শূদ্রদের বৃহৎপুঁজির দালাল রাষ্ট্র কাঠামোর সাথে বলদের মত জুতে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে তারা বলদের মত শুধু বলই দান করবে, তাদের মেধা শক্তিকে কাজে লাগানোর কোন সুযোগই দেওয়া হবে না। এদিকে শূদ্রদের উৎপাদন ব্যবস্থাও কানা হয়ে যাবে, কারণ তাদের সেরা মেধা সম্পদকে ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে বৃহৎপুঁজি। এই ভাবে গোটা ভারতীয় সমাজ ধীরে ধীরে বৃহৎপুঁজির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। যারা শূদ্রদের সংরক্ষণের দাবী নিয়ে সোচ্চার তারা বুঝে বা না বুঝে শূদ্র সমাজের পায়ে কুড়ুল মারছেন।
পরিচালনা করুন
Samik Saha ৪। আমরা এখনি সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেবার পক্ষে নই, কিন্তু শূদ্ররা নিজস্ব সম্পদ ও মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়েই চিরকাল ভারতীয় সমাজ ও অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। শূদ্র অর্থনীতির বাইরের যে অর্থনীতি চলে সেটা লুটেরা অর্থনীতি। শূদ্ররাই পারে লুটেরা অর্থনীতিকে দমন ...আরও দেখুন
পরিচালনা করুন
Paresh Debnath · Samik Saha এবং অন্যান্য 46টি জনের বন্ধু
পোস্টটি সেভ করে রাখলাম।পরে পড়ে জানাব।
পরিচালনা করুন
Dipankar Shibu আমার মনে হয় ১৭৫৭ আগের উৎপাদন ব্যবস্থা যে sustainable production process (সঠিক বাংলা কি হবে?) সেটাও জোর দিয়ে বলা দরকার।
পরিচালনা করুন
Sukanta Mondal খুব সময় উপযোগী লেখা ভীষণ ভালোলাগল কিছু সংযোজন, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে আধা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে তৈরি করার মধ্যে দিয়েই শুরু হয় লিখিত উন্নয়ন যাত্রা। ভারতীয় সামন্ত সংস্কৃতির যে মানবিক মুল্যবধ,সামাজিক ন্যায় নীতি যা বৃহত্তর সমাজকে ঘিরে ছিল, বৃত্তের কেন্দ্রহিসাবে ছিল শুদ্র ছোট লোকেরা। সামাজিক অনুষ্ঠান গুলিতে তাদের অংশগ্রহণ ছিল অপরিহার্য। বৈষম্য ছিল। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা ছিল গভীর। ১৭৫৭র আগে থেকে তা পরিবতন হতে থাকে। যখন ছোট ছোট কৌম গুলোকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা হয় ভাষা উপনিবেশবাদের মধ্যে দিয়ে। তাই বিগত ২৫০ বছর নয়!
পরিচালনা করুন
Rafiq Akhand আরো যেসব ধারণা স্পষ্ট হওয়া উচিতঃ ক, কৃষিঃ ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা পূরণে ছোটপূঁজির লোকেরা কীভাবে যোগান দেবে ? করপোরেট ব্যবস্থিত আধুনিক কৃষিপদ্ধতি, উৎপাদন ও বিপননের বিকল্প ব্যবস্থা কীভাবে ? খ, বৃহৎ পূঁজির শিল্পোৎদান ব্যবস্থার বাইরে প্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান কীভাবে ? গ, বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগ, করপোরেট নিয়ন্ত্রিত যাতায়াত পরিবহন ব্যবস্থার বিকল্প কী ? ঘ, বড়পূঁজির নিয়ন্ত্রণাধীন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প কোন পথে ?
পরিচালনা করুন
Samik Saha এখানে অনেকটা বিশদে পাবেন - www.omipress.org/manifesto
An incomplete manifest
OMIPRESS.ORG
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda একে একে উত্তর দিই-
ক) ১১৭০এর গণহত্যার পরে যে সব বাংলা-বিহার জোড়া ঔপনিবেশিক সময়েই আরও প্রচুর গণহত্যা(উপনিবেশ বলবে মন্বন্তর - বিশেষ করে রেল লাইন চালু হবার পর - যাকে বাল মুকুন্দ ভাটিয়া বলছেন ফেমিন লাইন - সে সব হত্যায় খুব কম মরেছিল ৫০ হাজার সর্বোচ্চ ৫০ লক্
...আরও দেখুন
পরিচালনা করুন
Rafiq Akhand ক, এর আংশিক প্রতিক্রিয়াঃ যখনই চাতুর্যপূর্ণ লুটেরা পদ্ধতির পথে কোন কিছু প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে, তা ঐ কায়েমী স্বার্থবাদীরা হতে দেবে কেন ? কোন গণদাবিই কেউ কোনকালে সহজভাবে পূরণ হতে দেয় না | গ, ট্রেন, বাস, ট্রলারের আন্তঃজেলা, থানা, ইউনিয়ন সংযোগ কঠিন বাস্তবতা | অটো, টোটো এখন গ্রামীণ বাহন | দ্রুততা ও সহজসাধ্যতায় এর বিপরীত পুরণো ঐতিহ্যে ফিরবে কি না মানুষ ? ঘ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় যদি এ পশ্চাদপদতাই থাকে, তাহলে কথিত ছোটলোকরা ঔপনিবেশিক সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সংস্কৃতির দৌরাত্ম্যের মোকাবেলা করবে কীভাবে ?
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda অনেকগুলো ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে মুখোমুখি আলোচনা না হওয়ায়। এ আলোচনা সামনা সামনি হোক। আমি অন্তত আর আলোচনায় যাচ্ছি না। প্রশ্নগুলো তোলা রইল।
পরিচালনা করুন
Arupsankar Maitra মুখোমুখি আলোচনা স্বাগত। মুক্তমনা আলোচনা। মুক্তমন মানে অন‍্যমতের প্রতি শ্রদ্ধা, শোনা, ভাবাই নয়। অপরের ভিন্নমত শোনার সময় সততার সঙ্গে ভাবা যে হয়ত আমিই ভুল, ও ঠিক। যাচাই করি।
বিপদ হল, আমাদের (আমার তো ভীষণভাবে) চিন্তার পদ্ধতি হল Thinking fast and slow. Fast thinking আমাদের bias তৈরি করে দেয়। এখানেই বিপদ। Biswendu Nanda
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Rafiqদা উত্তর দিতে হাত চুলকোচ্ছে, তাই চাবি টিপলাম, 
ক) কায়েমি স্বার্থের মাজা ভেঙ্গে গ্যাছে - যে জন্য ট্রাম্প, মমতা জেতে, টাটা সালেম হারে। কর্পোরেরটের যতটা শক্তি আছে ভাবি ততটা তার আর নেই, আগেও ছিল না, এখন দিন দিন কমছে, ভারত জুড়ে ৪৫০টা এডিবির প্রকল্পের ম
ধ্যে ৪৩০টার বেশি জন প্রতিবাদে আটকে আছে - এটা বাস্তব। তাই সারা বিশ্বে রাষ্ট্রের নখ দাঁত ক্রমশঃ বার হচ্ছে তীক্ষ্ণভাবে।
খ) নানান ধরণের প্রযুক্তি সমান্তরালভাবে বরাবরই ছিল, কাঁচাবাড়ির পাশাপাশি বিশাল বিশাল ৭০০ ৮০০ ঘরের হর্ম্য তৈরি হত না কি?
গ) গোটা বিশ্ব টিকে আছে সাধারণ মানুষের জ্ঞানে, ঔপনিবেশিক জ্ঞান বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তাই বললাম "অনেকগুলো ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে মুখোমুখি আলোচনা না হওয়ায়। এ আলোচনা সামনা সামনি হোক। আমি অন্তত আর আলোচনায় যাচ্ছি না। প্রশ্নগুলো তোলা রইল।"
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Arupsankar Maitra আপনার তত্ত্ব বোঝা সাধারণাভবে মুশকিল। সামনা সামনির দাওয়াই রইল।