অষ্টাদশ শতাব্দ পর্যন্ত নানান সামাজিক-অর্থনৈতিক ঝড়-ঝাপটা সহ্যকরে বাংলার সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা দাঁড়িয়েছিল মাথা উঁচু করে। উইলিয়ম এডাম ১৮৩৫-৩৮ পর্যন্ত সমীক্ষা করে বাংলা-বিহারে অন্ততঃ এক লাখ পাঠশালা দেখেছেন। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই রেভারেন্ড এফ ই কে লিখছেন, “there was---, before the British Government took over the control of education in India, a widespread, popular, indigenous system। It was not confined to one or two provinces, but was found in various parts of India, though some districts were more advanced than others। In the inquiry made for the Madras Presidency in 1822-26, it was calculated that rather less than one-sixth of the boys of school-going age received education।।। In the similar inquiry made for the Bombay Presidency (1823-28), the number of boys under instruction was put down to about one in eight।।।” ১৮১৪ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডিরেক্টরদের পাঠানো প্রথম এডুকেশন ডেসপ্যাচ এপর নির্ভর করে এ পি হাওয়েল ১৮৫৪তে বলবেন, “There is no doubt that from time immemorial indigenous schools have existed।।। In Bengal alone, in 1835, Mr। Adam estimated their number to be 100,000; in Madras, upon an inquiry instituted by Sir Thomas Munro in 1822, the number of schools was reported to be 12,498, containing 188,650 scholars; and in Bombay, about the same period, schools of a similar order were found to be scattered all over the Presidency।
এর থেকে পরিষ্কার ভারতের প্রায় প্রত্যেক প্রান্তে দেশিয় পাঠশালার অস্তিত্ব বর্তমান ছিল। প্রত্যেক অঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিক্ষা কাঠামো, পাঠদান বা অন্যান্য পরিকাঠামো আলাদা আলাদা, সেই অঞ্চলের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে, ষ্পষ্টতঃই তখোনো বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্রিটিশ প্রণীত এককেন্দ্রিকতা গড়ে ওঠেনি। শেখার বিষয় হিসেবে মগধে পড়ানো হত তুলসিদাস রামায়ণের নানান ঘটনাবলী নির্ভর দান লীলা, সুদামা চরিত, রাম জনম। বাংলায়ও একই জিনিষ পড়ানো হত, তবে ভাষা আলাদা, বাংলা। ত্রিহুতের শিক্ষার মাধ্যম ছিল মৈথিলি বা ত্রিহুতিয়া। এই উচ্চ পাঠশালাগুলোতে সংস্কৃত বা পারসিক মাধ্যমে পড়ানো হত না। বাংলা প্রদেশের অভিজ্ঞতা থেকে পরিস্কার, বাংলার গ্রামে গ্রামে দেশজ ভাষায় পড়ানোর একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ শাসন আমলের অনেক আগে থেকেই। কারা পড়তেন! এডাম বলছেন, “Commercial accounts।।। are chiefly acquired by the class of money-lenders and retail traders, agricultural accounts।।। by the children of those families whose subsistence is exclusively drawn from the land, and both accounts by those।।। who expect to gain their livelihood as writers, accountants, etc। গ্রামের পাঠশালাগুলো ছিল গ্রামের নানান শ্রেণীর মানুষের চাষী, কর্মকার, শিল্পী আর ব্যবসায়ীদের সন্তানদের শিক্ষা কেন্দ্র। আর এস শর্মা বলছেন ছ শতাব্দ থেকে গ্রামের সমষ্টির মধ্যে শ্রেণীগত ঐক্য গড়ে উঠেছিল, আর গ্রামের নানান উত্পাদনের প্রক্তিয়ার মধ্যে দিয়ে গ্রামীণদের মধ্যে আত্মীয়তার আর পণ্যদ্রব্যগুলির প্রতি অধিকারবেধের গর্ববাখান তৈরি হচ্ছিল। কৃষির সঙ্গে কর্মশালার সরাসরি মেলবন্ধনে গড়ে উঠছিল নিজে কাজ করার গর্ব, কাজের প্রতি অধিকারবোধ, নিজের কৌমের প্রতি ভালবাসা এবং স্বনির্ভর গ্রাম গোষ্ঠী। গ্রামে জাতিবিভেদ ছিল কিন্তু গ্রামের সামগ্রিকতাবোধ এতই জোরালো ছিল যে, এই ভেদাভেদ উত্পাদনের কাজকর্মে খুব একটা বড় হয়ে দেখা দিত না। আর আমরা জানি কৃষি আর শিল্পে, উভয়ের বিকাশে গ্রাম পঞ্চয়েতের বড় একটা ভূমিকা ছিল। পঞ্চায়েত নিজের রোজগারে সেচ ব্যবস্থা, সাধারণ পতিত জমি উদ্ধারেরমত নানান কাজে অংশ নিত সরাসরি।
এডামের শিক্ষা সমীক্ষায় বলাহচ্ছে মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম বা ত্রিহুতেরমত জেলাতে বিস্তৃতভাবে সমীক্ষা করে লিখছেন, একলাখ পাঠশালায় গুরুমশাইদের কখোনো অর্থে আবার বা কখোনো পণ্যে বিদায় দেওয়া হত। পাঠশালার স্থান নির্বাচন করতেন গ্রামের মানুষেরাই। তিনি স্পষ্টভাবে লিখছেন, "indigeneous elementary schools।।। are those ।।। in which instruction in the element of knowledge is communicated, and which have been originated and are supported by the natives themselves, in contradistinction from those that are supported by religious or philanthropic societies"। এই উচ্চ পাঠশালাগুলি চালানোর দায় ছিল গ্রাম সমষ্টির। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আরও একটা বড় প্রচার ছিল যে, বাংলার হিন্দু-মুসলসমানের মুখ দেখাদেখি ছিলনা। এই ধারণা সর্বৈব মিথ্যে। এই পাঠশালাগুলোর বটুদের মধ্যে দুই ধর্মেরই শিশু পাঠ নিত এক সঙ্গে বসে। গুরুজীর সামনে সমাজের নানান বর্ণের বটুরা একসাথেই পাঠ নিত আট বছর পর্যন্ত। দক্ষিণ বিহারের এক পাঠশালার হিসেব দিচ্ছেন এডাম। শিক্ষকদের মধ্যে মুসলমান ছাড়াও ছিলেন কায়স্থ, মগধ, গন্ধবণিক, তিলি, কোইরি, সোনার শ্রেণীর। হিন্দুদের বটুদের মধ্যে ছিল দেসাধ, পাসি, সুশাহর, ধোবি, তাঁতি, কালাবর, বেলদার, গোয়ালা, নাপিত, কাহার, কুর্মি, কোইরি, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ইত্যাদি। বীরভূমে তিনি হিন্দু, মুসলমানএর সঙ্গে খ্রিষ্টিয় শিক্ষকের নাম পাচ্ছেন(এ সব সত্বেও সাম্রাজ্যবাদীদের অনুসরণ করে মেকলের পুত্রকন্যাদের বলতেই হবে, বাংলা তথা ভারতের সমাজ ছিল জাতপাত ভিত্তিক, একজাতের লোক অন্যজাতের ছোঁয়া পর্যন্ত মাড়াত না)। ৪০০ জন শিক্ষক ছিলেন হিন্দু এদের মধ্যে ছিল ২৪টি জাতি – চন্ডাল(হায়! আমি চন্ডালের কন্যাও লিখেফেল্লেন নোবেলিয় কবি, না হলে নোবেল লাভ!), ধোবি, তাঁতি, কৈবর্ত, গোয়ালাও। বটুদের মধ্যে ছিল মুসলমান, খ্রিস্টান, সাঁওতাল, ধাঙড়, ডোম, চন্ডাল, তেলি, ব্যধ, যুগি, তাঁতি, হাড়ি, কুর্মি, মালি, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ প্রভৃতি। এডাম স্পষ্ট লিখছেন, "Parents of good caste do not hesitate to send their children to schools conducted by teachers of an inferior caste and even of different religion। For instance, the Musalman teacher।।। has Hinuds of good caste among his scholars and this is equally true of the Chandal and other low caste teachers enumerated। ।।। "the Musalman tecahers have Hindu as well as Musalman scholars and the different castes of the former assemble in the same school-house, receive the same insturctions from the same teacher, and join in the same plays and pastimes। অথচ উন্নতিশীল বাংলার মধ্যবিত্ত আর বুদ্ধিজীবিদের প্রচেষ্টায় উঠেগেল বাংলার সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা। মেকলের আগেও জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশনের সদস্য হোল্ট ম্যাকেঞ্জি ১৮৩২এ বলছেন To provide for the education of the great body of the people seems to be impossible। আদতে পার্মানেন্ট সেটলমেন্টএর, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের হাত ধরে তৈরি হল এক শ্রেণীর জমিদার গোষ্ঠী, যাদের জমির মালিক হিসেবে অধিকার দেওয়া হল, যাদের গ্রামগুলোর উন্নয়ণে কোনও উত্সাহ ছিল না। গ্রামে যতরকম এজমালি, নিষ্কর জমি ছিল সব প্রায় দখল নিয়ে খাজনা আদায়ের ব্যবস্থা হল। গ্রাম সমাজের সলিল সমাধির সঙ্গে ভেঙেগেল সমাজের নিজস্ব শাসন ব্যবস্থার যত পরিকাঠামো, যা গড়ে উঠেছিল হাজার হাজার বছর ধরে তিল তিল করে গ্রামীণদের অনবরত প্রচেষ্টায়।
এর থেকে পরিষ্কার ভারতের প্রায় প্রত্যেক প্রান্তে দেশিয় পাঠশালার অস্তিত্ব বর্তমান ছিল। প্রত্যেক অঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিক্ষা কাঠামো, পাঠদান বা অন্যান্য পরিকাঠামো আলাদা আলাদা, সেই অঞ্চলের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে, ষ্পষ্টতঃই তখোনো বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্রিটিশ প্রণীত এককেন্দ্রিকতা গড়ে ওঠেনি। শেখার বিষয় হিসেবে মগধে পড়ানো হত তুলসিদাস রামায়ণের নানান ঘটনাবলী নির্ভর দান লীলা, সুদামা চরিত, রাম জনম। বাংলায়ও একই জিনিষ পড়ানো হত, তবে ভাষা আলাদা, বাংলা। ত্রিহুতের শিক্ষার মাধ্যম ছিল মৈথিলি বা ত্রিহুতিয়া। এই উচ্চ পাঠশালাগুলোতে সংস্কৃত বা পারসিক মাধ্যমে পড়ানো হত না। বাংলা প্রদেশের অভিজ্ঞতা থেকে পরিস্কার, বাংলার গ্রামে গ্রামে দেশজ ভাষায় পড়ানোর একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ শাসন আমলের অনেক আগে থেকেই। কারা পড়তেন! এডাম বলছেন, “Commercial accounts।।। are chiefly acquired by the class of money-lenders and retail traders, agricultural accounts।।। by the children of those families whose subsistence is exclusively drawn from the land, and both accounts by those।।। who expect to gain their livelihood as writers, accountants, etc। গ্রামের পাঠশালাগুলো ছিল গ্রামের নানান শ্রেণীর মানুষের চাষী, কর্মকার, শিল্পী আর ব্যবসায়ীদের সন্তানদের শিক্ষা কেন্দ্র। আর এস শর্মা বলছেন ছ শতাব্দ থেকে গ্রামের সমষ্টির মধ্যে শ্রেণীগত ঐক্য গড়ে উঠেছিল, আর গ্রামের নানান উত্পাদনের প্রক্তিয়ার মধ্যে দিয়ে গ্রামীণদের মধ্যে আত্মীয়তার আর পণ্যদ্রব্যগুলির প্রতি অধিকারবেধের গর্ববাখান তৈরি হচ্ছিল। কৃষির সঙ্গে কর্মশালার সরাসরি মেলবন্ধনে গড়ে উঠছিল নিজে কাজ করার গর্ব, কাজের প্রতি অধিকারবোধ, নিজের কৌমের প্রতি ভালবাসা এবং স্বনির্ভর গ্রাম গোষ্ঠী। গ্রামে জাতিবিভেদ ছিল কিন্তু গ্রামের সামগ্রিকতাবোধ এতই জোরালো ছিল যে, এই ভেদাভেদ উত্পাদনের কাজকর্মে খুব একটা বড় হয়ে দেখা দিত না। আর আমরা জানি কৃষি আর শিল্পে, উভয়ের বিকাশে গ্রাম পঞ্চয়েতের বড় একটা ভূমিকা ছিল। পঞ্চায়েত নিজের রোজগারে সেচ ব্যবস্থা, সাধারণ পতিত জমি উদ্ধারেরমত নানান কাজে অংশ নিত সরাসরি।
এডামের শিক্ষা সমীক্ষায় বলাহচ্ছে মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম বা ত্রিহুতেরমত জেলাতে বিস্তৃতভাবে সমীক্ষা করে লিখছেন, একলাখ পাঠশালায় গুরুমশাইদের কখোনো অর্থে আবার বা কখোনো পণ্যে বিদায় দেওয়া হত। পাঠশালার স্থান নির্বাচন করতেন গ্রামের মানুষেরাই। তিনি স্পষ্টভাবে লিখছেন, "indigeneous elementary schools।।। are those ।।। in which instruction in the element of knowledge is communicated, and which have been originated and are supported by the natives themselves, in contradistinction from those that are supported by religious or philanthropic societies"। এই উচ্চ পাঠশালাগুলি চালানোর দায় ছিল গ্রাম সমষ্টির। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আরও একটা বড় প্রচার ছিল যে, বাংলার হিন্দু-মুসলসমানের মুখ দেখাদেখি ছিলনা। এই ধারণা সর্বৈব মিথ্যে। এই পাঠশালাগুলোর বটুদের মধ্যে দুই ধর্মেরই শিশু পাঠ নিত এক সঙ্গে বসে। গুরুজীর সামনে সমাজের নানান বর্ণের বটুরা একসাথেই পাঠ নিত আট বছর পর্যন্ত। দক্ষিণ বিহারের এক পাঠশালার হিসেব দিচ্ছেন এডাম। শিক্ষকদের মধ্যে মুসলমান ছাড়াও ছিলেন কায়স্থ, মগধ, গন্ধবণিক, তিলি, কোইরি, সোনার শ্রেণীর। হিন্দুদের বটুদের মধ্যে ছিল দেসাধ, পাসি, সুশাহর, ধোবি, তাঁতি, কালাবর, বেলদার, গোয়ালা, নাপিত, কাহার, কুর্মি, কোইরি, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ইত্যাদি। বীরভূমে তিনি হিন্দু, মুসলমানএর সঙ্গে খ্রিষ্টিয় শিক্ষকের নাম পাচ্ছেন(এ সব সত্বেও সাম্রাজ্যবাদীদের অনুসরণ করে মেকলের পুত্রকন্যাদের বলতেই হবে, বাংলা তথা ভারতের সমাজ ছিল জাতপাত ভিত্তিক, একজাতের লোক অন্যজাতের ছোঁয়া পর্যন্ত মাড়াত না)। ৪০০ জন শিক্ষক ছিলেন হিন্দু এদের মধ্যে ছিল ২৪টি জাতি – চন্ডাল(হায়! আমি চন্ডালের কন্যাও লিখেফেল্লেন নোবেলিয় কবি, না হলে নোবেল লাভ!), ধোবি, তাঁতি, কৈবর্ত, গোয়ালাও। বটুদের মধ্যে ছিল মুসলমান, খ্রিস্টান, সাঁওতাল, ধাঙড়, ডোম, চন্ডাল, তেলি, ব্যধ, যুগি, তাঁতি, হাড়ি, কুর্মি, মালি, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ প্রভৃতি। এডাম স্পষ্ট লিখছেন, "Parents of good caste do not hesitate to send their children to schools conducted by teachers of an inferior caste and even of different religion। For instance, the Musalman teacher।।। has Hinuds of good caste among his scholars and this is equally true of the Chandal and other low caste teachers enumerated। ।।। "the Musalman tecahers have Hindu as well as Musalman scholars and the different castes of the former assemble in the same school-house, receive the same insturctions from the same teacher, and join in the same plays and pastimes। অথচ উন্নতিশীল বাংলার মধ্যবিত্ত আর বুদ্ধিজীবিদের প্রচেষ্টায় উঠেগেল বাংলার সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা। মেকলের আগেও জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশনের সদস্য হোল্ট ম্যাকেঞ্জি ১৮৩২এ বলছেন To provide for the education of the great body of the people seems to be impossible। আদতে পার্মানেন্ট সেটলমেন্টএর, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের হাত ধরে তৈরি হল এক শ্রেণীর জমিদার গোষ্ঠী, যাদের জমির মালিক হিসেবে অধিকার দেওয়া হল, যাদের গ্রামগুলোর উন্নয়ণে কোনও উত্সাহ ছিল না। গ্রামে যতরকম এজমালি, নিষ্কর জমি ছিল সব প্রায় দখল নিয়ে খাজনা আদায়ের ব্যবস্থা হল। গ্রাম সমাজের সলিল সমাধির সঙ্গে ভেঙেগেল সমাজের নিজস্ব শাসন ব্যবস্থার যত পরিকাঠামো, যা গড়ে উঠেছিল হাজার হাজার বছর ধরে তিল তিল করে গ্রামীণদের অনবরত প্রচেষ্টায়।
No comments:
Post a Comment