Wednesday, November 28, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮২

উমিচাঁদের মতই বাংলা ব্যবসা জগতে আরেকজন বড় ব্যবসায়ী আর্মেনিয় খ্বাজা ওয়াজিদ। ইনি অষ্টাদশ শতকের  চার আর পাঁচের দশকে বাংলার ব্যবসা জগতে বিপুল প্রভাব ফেলেছিলেন। তার মুল ঘাঁটি/গদি ছিল, ততকালীন বাংলার আর্থিক রাজধানী হুগলীতে। উমিচাঁদ যেমন ব্রিটিশদের সঙ্গে ব্যবসা করতেন, ফরাসী আর ডাচেদের সঙ্গে বিপুল বড় ব্যবসা ছিল খ্বাজা ওয়াজিদের। খ্বাজা ওয়াজিদ ছিলেন ভীষণ সুযোগ সন্ধানী এবং যে কোন মূল্যে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বাড়াবার আগ্রাসী মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি ক্ষমতার কাছে ব্যবসায়িক সুযোগসুবিধে পাওয়া মাত্রই তার আনুগত্য ঢেলে দিতেন অনায়াস দক্ষতায়। ১৭৪০এর দশকটায় তিনি বাংলার দরবারে প্রভূত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করায়, তার ব্যবসা আকাশ ছুঁতে শুরু করে। নবাবের ওপর তার রাজনৈতিক পকড়ের প্রভাবে ১৭৪০এর দশকের শেষ দিকে বিহারের সামগ্রিক ব্যবসা জগতে তার একচ্ছত্র প্রভাব কায়েম হয়। প্রাথমিকভাবে আর্মেনিয় বণিক হিসেবে জীবন শুরু করলেও, খুব তাড়াতাড়ি দরবারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং নবাবের অভয়হস্ত মাথায় নিয়ে বাংলার ব্যবসা জগতের কেষ্টুবিষ্টু হয়ে উঠে বাংলার দুটি বাণিজ্যপণ্য সোরা আর নুনের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে বসেন।
ওয়াজিদ সোরার একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার পান ১৭৫৩ সালে। ১৭৫৩ সালের ২ এপ্রিল ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল লিখছে ওয়াজিদ সোরা কেনার একচেটিয়া ফরমান অধিকার করে exclusive of any other purchasers (BPC, vo' l.26, f .110, 2 Apnl. 17 Sq; Beng. Letters Recd., vol. 22, para. 18, f. 410.)। সোরার থেকে আরও বিপুল লাভের ব্যবসা ছিল নুনের একচেটিয়া। ১৭৫২ সালে ন্যুনতম আমদানি শুল্ক(সায়ের) দিয়ে নুনের ব্যবসায় ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ করেন তিনি। ব্যাটসন লিখছেন ১৭৬৩ সালে, Coja Wazeed of.Hughly had the ·salt farm of Bengal for many, years for an,inconsiderable sum (Orme Mss. O.V. 134, f. 13)। ১৭৫২ সালে নামহীন একটি ব্রিটিশ পাণ্ডুলিপি থেকে জানতে পারি, Salt on account of Coja Wazeed is.exempted from these duties and pays only:
Import: -per 100 md. one rupee which is Rs. 0.8 percent
Export: per 100 md. one rupee which is Rs: 0.8 percent
Total: per 200 ~d. two rupee which is Rs. 1.0 percent(Mss. Eur., D. 283, f. 22)।
তিনি ১৭৪০এর দিকে সামুদ্রিক বাণিজ্যেও খুব সচল ছিলেন। ১৭৫০এর দশকে হুগলি থেকে যে সব জাহাজ বিদেশে বাণিজ্য করতে যেত, সেগুলির ওপর অধিকার কায়েম করে তিনি বহির্বাণিজ্যে বিপুল প্রভাব তৈরি করেন। ডাচ প্রধান কারসেবুম এবং ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল লিখছে খ্বাজার সুরাটে কুঠি ছিল(VOC, 2849, ff,105vo-106, 16 Feb. 1755; SC. Hill, Bengal in 1756-57, vol. II, p. 87)।

ওয়াজেদ তার ব্যবসা আগ্রাসী একচেটিয়া চরিত্রে ঢেলে সাজিয়ে ছড়িয়েছিলেন। তিনি বাংলার বাংলার দরবারে প্রভাব সৃষ্টি করে বিহার(বিহারকে সুশীলবাবু সুবা লিখছেন। কিন্তু বিহার কী সুবা ছিল? বিহার তো বাংলা সুবার অধীনে ছিল।) সুবার বাণিজ্য পরিবেশে একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করার উদ্যম নেন। তার বাণিজ্যিক-রাজনৈতিক প্রভাব এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তিনি এমন কোন বাণিজ্য চুক্তিতে যেতে হত না, যাতে অন্য কোন বণিককে তার জামিন হিসেবে দাঁড়াতে হয়(BPC; vol. 26, f. 132vo, 3 May 1753; C & B. Abstr., vol. 5, f. 424; Beng. Letters Recd., vol. 22, f. 412)। মুর্শিদাবাদের দরবারে তার প্রভাবের প্রতিপত্তির সঙ্গে তুলনা করা যায় জগতশেঠের প্রভাবের সঙ্গে একমাত্র। দরবারে তার প্রভাবের গুরুত্বের একটা ইঙ্গিত পাই এই ঘটনায় তিনি মাঝেমধ্যেই কলকাতা কাউন্সিল আর নবাবের মধ্যে দরকষাকষির মধ্যস্থ হতেন। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি খ্বাজা আহমেদ বাংলার রাজনৈতিক এবং বাণিজ্য জগতে কি পরিমান প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। 

No comments: