Friday, November 30, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮৬

বাংলার সওদাগরী বিশ্বে আমরা বলেছি ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎএর যেমন অস্তিত্ব ছিল তেমনই বিভিন্ন জাত, বিভিন্ন অঞ্চলের নানান ধরণের ব্যবসায়ীর অস্তত্ব ছিল যাদের আন্তর্জাতিকস্তরে ব্যবসা ছাড়াও দেশিয় নানান গঞ্জ এবং ব্যবসায়িক অঞ্চলে ব্যবসাসূত্র ছিল। ১৭৩০ সালে অস্টেন্ড কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগ করে জুড়ে থাকার প্রেক্ষিতে আলেকজান্ডার হিউম বাংলার ব্যবসায়ী সমাজকে নানান ভাগে ভাগের বিশ্লেষণ করেছে(আলেকজান্ডার হিউমের মেমোরি, Memorie', Stadsarchief Antwerp, GIC 5769)। যে ২৪ জন ব্যবসায়ীর কাজকর্মের বিশ্লেষণ করেছেন তিনি, তার মধ্যে ২১ জন হিন্দু, ৩ জম মুসলমান ১ জন আর্মেনিয়। হিন্দু ব্যবসায়ীরা নানান জাতিতে বিভক্ত যেমন সেন, দত্ত, মজুমদার, খান, নন্দী, মল্লিক – নন্দী আর মল্লিককে তিনি আলাদা করে তাঁতি আখ্যা দিয়েছেন। এই ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই যেমন আর্মেনিয় খ্বাজা ‘Mahmet’ ফজল বা গুজরাটি মণিকচাঁদ খুবই বড় রকমের ব্যবসা করত। মহম্মদ বকর বা রামজীবন সেনের মত কয়েকজন ছোট মধ্যস্থ মূলত আড়তে কমিশনের বিনিময়ে কাজ করত, কোম্পানির থেকে দাদনের অগ্রিম নিয়ে বিভিন্ন আড়ংএ থাকা তাদের গোমস্তাদের কাজের বরাত দিত। হিউমের সমীক্ষায় মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নবাবের প্রশাসনের যে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সেটা স্পষ্টই বোঝা যায়। তিনি সোজাসাপটাভাবে লিখছেন খাজা ফজলে great influence over the Moors government। বিভিন্ন ক্ষমতাধারীর থেকে ব্যবসায়ীকে কাজ দেওয়ার সুপারিশ আসে। উদাহরণস্বরূপ বলরাম নন্দীকে হিউমের কাছে পাঠান ফতেহচাঁদের গোমস্তা বৈজনাথ। কিন্তু অন্যদিকে দরবারি আমলা বা তার সঙ্গে জুড়ে থাকা ব্যক্তিদের থেকে সুপারিশ কার্যকর করা থেকে সাবধান করে দিয়েছেন কোম্পানি কর্মচারীদের, কেননা স্বাভাবিকভাবে তাদের থেকে বকেয়া আদায় করা মুশকিল হয়ে যায়। সাধারণভাবে বাংলার ব্যবসা সমাজে যে কোন ধরণের সুপারিশ করার সাধারণ প্রথা হল, whoever recommends a man to any business is answerable for him। ব্যবসায়ীরা তাদের নিজেদের পুঁজি লাগিয়েই ব্যবসা করত, যদিও অনেকেই পুঁজির বাজার থেকে আর কেউ কেউ শাসকদের কাছাকাছিঃ থাকা মানুষদের থেকে টাকা ধার করত। সব ব্যবসায়ীই প্রায় সব ধরণের পণ্য নিয়েই ব্যবসা করত, হিউমের সমীক্ষা বলছে, কিছু কিছু ব্যবসায়ী বিশেষ বিশেষ পণ্য নিয়ে ব্যবসার দক্ষতা অর্জন করে। গুজরাটি ব্যবসায়ী মাণিকচাঁদ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি লিখছেন, মোটের ওপর গুজরাটি ব্যবসায়ীরা সাধারণত মুদ্রা পরিবর্তন, গয়না, সোনা রূপো, আফিম এবং অন্যান্য পাটনাজাত পণ্যনিয়ে ব্যবসা করত কিন্তু পিস-গুড তাদের ব্যবসার এক্তিয়ারে ছিল না। এই তথ্যের সঙ্গে পরবর্তীকালের আরেকটি তথ্য মিলে যাচ্ছে যে সব ব্যবসায়ীরা সিল্ক-পিস পণ্যের ব্যবসায় বিশেষজ্ঞ হয়েছিলেন(উদাহরণস্বরূপ এর আগে আমরা দেখেছি, ১৭৪৪ সালে কাশিমবাজার ফ্যাক্টরেরা জানিয়েছিলেন যে মুর্শিদাবাদের মাত্র ৩ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী কোম্পানিকে শুধুই তাফেতা দেয় এবং the other merchants do not care to meddle in, কয়েকজন গুরা সরবরাহ করতেন; এমন কি রেশম ব্যবসাতে থেকেও মাত্র কয়েকজন রংপুর রেশম নিয়ে ব্যবসা করতেন, কিন্তু গুজরাট বা কুমারখালি নিয়ে প্রায় সব ব্যবসায়ীই ব্যবসা করতেন।

No comments: