Friday, November 30, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮৮

এছাড়াও বাংলার ব্যবসায়ীরা কেউই ইওরোপিয় কোম্পানির মাইনে করা কর্মচারী ছিলেন না। অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে বাংলায় বাস করা এশিয় ব্যবসায়ীরা তাদের পা মাটিতে গেঁথে, ইওরোপি কোম্পানিগুলির এক তরফা শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সফলভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন(সপ্তদশ শতকের শেষে এবং অষ্টদশ শতকের শুরুর সময়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাঙ্গালি ব্যবসায়ীর বর্ণনা দেখুন S Chaudhuri, Trade and Commercial Organization, pp. 62-85; I. Ray, 'The French Company and the' Merchants·of"Bengal', IESH!l, VIII (1971), PP. 46-48)।Partnership or interdependence as distinct from a later period·of subjugation was the keynote of the relationship between Asian merchants and European traders. This only confirms the views- held by historians from case studies of, different parts of India (P.J Marshall, East Indian Fortunes, pp. 44-4!i; S. Arasaratnam, 'Trade and Political Dominion in South India, 1750-1790: Changing British Indian Relationships', MAS, vot. 13, pt! I, Feb. 1979, pp. 21-22; Holden Furber, Rival Empires, pp. 315-16)।  অষ্টাদশ শতকের গোটা প্রথম পাদে এশিয় ব্যবসায়ীরা তাদের পরম্পরার ব্যবসার ব্যবস্থাপনার কাঠামো বজায় রেখে এসেছেন কোনো রকম বাইরের চাপ ছাড়াই, যদিও there had to extend the scope of methods generally practised। নতুন ব্যবসায়িক পরিবেশে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির বর্ধিত চাহিদার দিকে নজর রেখে এশিয়দের কোন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হয়নি। বাংলা ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক খিদে কোনও ভাবেই ইওরোপিয় ব্যবসায়ীদের তুলনায় কম ছিল না। এই ব্যবসায়ীদের ব্যবসাকর্ম এবং ব্যবসা পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে পাচ্ছি যে ক্রেতা আর বিক্রেতাদের মধ্যে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা চলত যাতে তারা এক্সক্লুসিভ তথ্যটি সবার আগে পেতে পারে এবং দেশিয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে একচেটিয়া ব্যবসার দিকে যাওয়ার যে একতা ছিল, যেটা ইয়োরোপীয় কোম্পানিরা ভাংতে চাইছে, কিন্তু কোনও রকম সাফল্য ছাড়াই। ব্যবসা কিন্তু একধরণের ইন্টারেস্টের গোষ্ঠী করত না বরং ব্যক্তিই করত। Men tended to  act as individual merchants, as members of, families, at most orie in a group thrown together in the course of business impersonal cooperation in the institution of business, as had already been developed in Europe by this time, was relatively uncommon. Even cooperation at a personal level was not easy to come by. As in other parts of lndia, a commercial venture was mainly,the risk of,an individual merchant or a very small group of merchants taking part in it.

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮৭

বাংলার ব্যবসায়ীদের একটা সাধারণ প্রথা ছিল যে তারা যেমন নিজেদের নামে ব্যবসা করতেন তেমনি তারা তাদের বিভিন্ন ধরণের আত্মীয় এমনকি ছেলেমেয়েদের নামেও, দেখাগ্যাছে নাবালকেদের নাম নিয়েও ব্যবসা করতেন। তারা এক কাজটা করতেন অনেক সময় মালিকের নিজেদের পরিচয় লুকোতে, এবং এর ফলে রাজনৈতিক বিপক্ষকে কিছুটা হলেও যাতে ধোঁকা দেওয়া যায়। ব্রিটিশ কোম্পানি আমলারা কোন এক মধ্যস্থের দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলা এক তদন্তে ১৭৩১ সালে দেখে বিষ্ণুদাস শেঠ এবং তার অংশিদার উমিচাঁদ কোম্পানির বরাত দেওয়া দাদনি পণ্য যেমন নিজেদের নামেও সরবরাহ করত তেমনি তাদের সন্তানদের নামে আর কিছু কল্পিত নামেও সরবরাহ করত(BPC, vql. 8, ff. 424-424vo, 26 July 1731.)। এই ধরণের প্রথা খুব ব্যতিক্রমী ছিল না। ১৭৬০ সালের প্রথমের দিকের একটি ডাচ সমীক্ষার এক উদাহরণে দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা এই ধরণের রণনীতি অবলম্বন করত হামেশাই। ডাচেদের ঢাকা কুঠি সন্তোষ রায় নামে এক বণিককে দাদন দেয়, যার আসল নাম ছিল রঘুনাথ মিত্র যিনি ডাচেদের বস্ত্র সরবরাহ করে আসছিলেন বহুকাল। ১৭৬২ সালে তিনি নিজের নামে নয়, ডাচ কোম্পানির জন্যে বস্ত্র জোগাড় করেন তার পুত্র আনন্দময় মিত্রের নামে(Louis Taillefert's 'Memorie', HR 246, ff. 93-95, 17 Nov. 1763)। এছাড়াও যেসব ব্যবসায়ী সময়মত কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির নানান তফশিল পূর্ণ করতে পারছেন, তাদের পাশে অপর ব্যবসায়িরা দুর্গতির দিনে দাঁড়াতেন। উদাহরণস্বরূপ ১৭৫০ সালে উমিচাঁদ তার নিজের বরাদ্দ বাদে কোম্পানিকে আরও ৩০ হাজার টাকার বস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন, যে বস্ত্র চুক্তি অনুযায়ী পিতাম্বর শেঠ, গঙ্গাবিষ্ণু মেন্দ্রু(?) এবং অন্যান্য শেঠেদের  সরবরাহ করার কথা ছিল(BPC, vol. 23, f. 185vo, l July 1750)।

আরেকটা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে ১৭৫০এর প্রথমের দিকে কোম্পানি যখন দাদনি থেকে গোমস্তা প্রথায় চলে গ্যাল, সেই ব্যবসায়িক রণনীতির কারণ ব্যখ্যা করতে গিয়ে বহু গবেষকের বক্তব্য বাংলার ব্যবসা আর ব্যবসায়ীদের সার্বিক পতনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল বলেই ব্রিটিশ কোম্পানি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আমরা আলোচনা করে দেখিয়েছি, পলাশীপূর্ব বাংলায় ব্যবসা বা ব্যবসায়ীদের কোন দুর্দশা ঘটে নি, পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যম বদলের কারণ ভিন্ন, তার সঙ্গে ব্যবসার ওঠাপড়ার কোন যোগ নেই। কলকাতার প্রখ্যাত দুই পরিবার যেমন শেঠ আর বসাক বা মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারের কাটমা পরিবার পঞ্চাশের দশকেও তাদের ব্যবসায় মাহির ছিলেন। বড় ব্যবসায়ি যেমন জগতশেঠ, উমিচাঁদ বা খ্বাজা ওয়াজিদ এই সময়ে তাদের ব্যবসায়িক সম্ভাবনার শীর্ষে উঠেছিলেন। যতদিন এই বড় ব্যবসায়িরা সচল ছিল ততদিন বাংলার ধারের বা পুঁজির বাজার তেজি ছিল এবং পুঁজি পাওয়া কোন সমস্যা ছিল না এমন কি ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও। আসল ব্যাপার হল দাদনি ব্যবসায়ীরা তাদের দেওয়া শর্ত ছাড়া কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে অস্বীকার করে ১৭৫৩ সালে। সেই টালমাটাল সময়ে ব্যবসায়ীরা নিজেদের বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত ছিলই। সে সময় কোম্পানির আমলাদের দেওয়া শর্ত অর্থাৎ দাদনি মোট চুক্তি অঙ্কের ৩০ শতাংশের বেশি অগ্রিম দেবে না, যদিও আগে এই অগ্রিমের অঙ্কটা ছিল ৮৫ শতাংশ এটা মানতে রাজি হয় না। এছাড়াও আরও একটা শর্ত চাপানো হয় যে কোন ধরণের পণ্য সরবরাহের ঘাটতির জন্যে ১০% জরিমানা ধার্য হবে (Ibid., vol. 26, f. 164, Annex. to Consult. 7 June t,753)। এই সব শর্ত ব্যবসায়ীদের কাছে অযৌক্তিক এবং অন্যায্য বলে মনে হয়েছিল। এছাড়াও কোম্পানির আমলাদ্দের ব্যক্তিগত ব্যবসা পঞ্চাশের দশক থেকে দ্রুতগতিতে কমছিল, এবং কোম্পানির আমলাদের কাছে দাদনি থেকে গোমস্তা ব্যবস্থায় চলে যাওয়ার অর্থ নিজেদের ব্যবসাকে আবার বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ করে নেওয়া। 

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮৬

বাংলার সওদাগরী বিশ্বে আমরা বলেছি ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎএর যেমন অস্তিত্ব ছিল তেমনই বিভিন্ন জাত, বিভিন্ন অঞ্চলের নানান ধরণের ব্যবসায়ীর অস্তত্ব ছিল যাদের আন্তর্জাতিকস্তরে ব্যবসা ছাড়াও দেশিয় নানান গঞ্জ এবং ব্যবসায়িক অঞ্চলে ব্যবসাসূত্র ছিল। ১৭৩০ সালে অস্টেন্ড কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগ করে জুড়ে থাকার প্রেক্ষিতে আলেকজান্ডার হিউম বাংলার ব্যবসায়ী সমাজকে নানান ভাগে ভাগের বিশ্লেষণ করেছে(আলেকজান্ডার হিউমের মেমোরি, Memorie', Stadsarchief Antwerp, GIC 5769)। যে ২৪ জন ব্যবসায়ীর কাজকর্মের বিশ্লেষণ করেছেন তিনি, তার মধ্যে ২১ জন হিন্দু, ৩ জম মুসলমান ১ জন আর্মেনিয়। হিন্দু ব্যবসায়ীরা নানান জাতিতে বিভক্ত যেমন সেন, দত্ত, মজুমদার, খান, নন্দী, মল্লিক – নন্দী আর মল্লিককে তিনি আলাদা করে তাঁতি আখ্যা দিয়েছেন। এই ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই যেমন আর্মেনিয় খ্বাজা ‘Mahmet’ ফজল বা গুজরাটি মণিকচাঁদ খুবই বড় রকমের ব্যবসা করত। মহম্মদ বকর বা রামজীবন সেনের মত কয়েকজন ছোট মধ্যস্থ মূলত আড়তে কমিশনের বিনিময়ে কাজ করত, কোম্পানির থেকে দাদনের অগ্রিম নিয়ে বিভিন্ন আড়ংএ থাকা তাদের গোমস্তাদের কাজের বরাত দিত। হিউমের সমীক্ষায় মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নবাবের প্রশাসনের যে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সেটা স্পষ্টই বোঝা যায়। তিনি সোজাসাপটাভাবে লিখছেন খাজা ফজলে great influence over the Moors government। বিভিন্ন ক্ষমতাধারীর থেকে ব্যবসায়ীকে কাজ দেওয়ার সুপারিশ আসে। উদাহরণস্বরূপ বলরাম নন্দীকে হিউমের কাছে পাঠান ফতেহচাঁদের গোমস্তা বৈজনাথ। কিন্তু অন্যদিকে দরবারি আমলা বা তার সঙ্গে জুড়ে থাকা ব্যক্তিদের থেকে সুপারিশ কার্যকর করা থেকে সাবধান করে দিয়েছেন কোম্পানি কর্মচারীদের, কেননা স্বাভাবিকভাবে তাদের থেকে বকেয়া আদায় করা মুশকিল হয়ে যায়। সাধারণভাবে বাংলার ব্যবসা সমাজে যে কোন ধরণের সুপারিশ করার সাধারণ প্রথা হল, whoever recommends a man to any business is answerable for him। ব্যবসায়ীরা তাদের নিজেদের পুঁজি লাগিয়েই ব্যবসা করত, যদিও অনেকেই পুঁজির বাজার থেকে আর কেউ কেউ শাসকদের কাছাকাছিঃ থাকা মানুষদের থেকে টাকা ধার করত। সব ব্যবসায়ীই প্রায় সব ধরণের পণ্য নিয়েই ব্যবসা করত, হিউমের সমীক্ষা বলছে, কিছু কিছু ব্যবসায়ী বিশেষ বিশেষ পণ্য নিয়ে ব্যবসার দক্ষতা অর্জন করে। গুজরাটি ব্যবসায়ী মাণিকচাঁদ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি লিখছেন, মোটের ওপর গুজরাটি ব্যবসায়ীরা সাধারণত মুদ্রা পরিবর্তন, গয়না, সোনা রূপো, আফিম এবং অন্যান্য পাটনাজাত পণ্যনিয়ে ব্যবসা করত কিন্তু পিস-গুড তাদের ব্যবসার এক্তিয়ারে ছিল না। এই তথ্যের সঙ্গে পরবর্তীকালের আরেকটি তথ্য মিলে যাচ্ছে যে সব ব্যবসায়ীরা সিল্ক-পিস পণ্যের ব্যবসায় বিশেষজ্ঞ হয়েছিলেন(উদাহরণস্বরূপ এর আগে আমরা দেখেছি, ১৭৪৪ সালে কাশিমবাজার ফ্যাক্টরেরা জানিয়েছিলেন যে মুর্শিদাবাদের মাত্র ৩ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী কোম্পানিকে শুধুই তাফেতা দেয় এবং the other merchants do not care to meddle in, কয়েকজন গুরা সরবরাহ করতেন; এমন কি রেশম ব্যবসাতে থেকেও মাত্র কয়েকজন রংপুর রেশম নিয়ে ব্যবসা করতেন, কিন্তু গুজরাট বা কুমারখালি নিয়ে প্রায় সব ব্যবসায়ীই ব্যবসা করতেন।

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮৫

সাধারণত বাংলায় ব্যবসা করা ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি রপ্তানি পণ্য জোগাড়ের জন্যে বেশ কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হত, যে সব ব্যবসায়ী বিপুল পরিমান পণ্য কেনাবেচা করতে পারেন একলপ্তে। বাংলার ব্যবসায়িক জগতে উমিচাঁদ বা খ্বাজা ওয়াজিদ এবং সবার ওপরে জগতশেঠের ব্যবসা বিশ্ব, যা আমরা এর আগে আলোচনা করেছি, তাদের সঙ্গে আর্মেনিয় Hovhahnesদের সঙ্গে ঠিক তুলনীয় না হলেও তারা অবশ্যই মেদিচি বা ফুগার বা ট্রিপ পরিবারের সঙ্গে তুলনীয় তো বটেই। এর আগে আমরা দেখেছি এদের বিশাল ব্যবসা ব্যপ্তির পরিমান কি ছিল এবং বাংলায় তারা নানান ধরণের পণ্যক্ষেত্র কিভাবে একচেটিয়া কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এই রাজ্যে জগতশেঠ ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি। এটা পরিষ্কার যে জগতশেঠ, উমিচাঁদ বা খ্বাজা ওয়াজিদদের নেতৃত্বে যে ব্যবসা পরিমন্ডল তৈরি হয়েছিল বাংলায় সেটি ফুগার বা ক্রানফিল্ডের পরিবারদের ব্যবসার মত বিস্তৃত দক্ষ সাংগঠনিক ব্যবসার জন্যে তৈরি ছিল। ফলে আমরা এই উদাহরণ থেকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি, এশিয় ব্যবসা উদ্যমীদের কাঠামোর মধ্যে ছিল হকার বা পথ ব্যবসায়ী যেমন, তেমনি বড় ব্যবসায়ীরাও – যদিও তারা ব্যবসায়িক কাঠামোয় personal business-formএর জয়েন্ট স্টক কোম্পানির চাইতে অনেক বেশি তুলনীয় ছিল ভেনিসিয় ফ্রাতির্নার সঙ্গে।
এশিয় ব্যবসা ক্ষেত্রে বাংলার বড় ব্যবসায়ী পরিবারগুলি অধিকাংশ ছিল ভ্যান লাতুরের ভাষায় ছিল political animal। তার বক্তব্য এই অভিজাত ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার কাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে গাঁটছড়া বেঁধে রাজনৈতিক ব্যবসায় অংশ নিত বাংলার অভিজ্ঞ এশিয় ব্যবসায়িদের সহায়তায়। তিনি লিখছেন, ... the wealthy merchant class was allied to the mighty who exercises social and political authority(J.G. van Leur, Indonesian Trade and Society, p. 204)। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে জগতশেঠ, উমিচাঁদ আর খ্বাজা ওয়াজিদের ব্যবসা পদ্ধতির কাঠামোর মিল খুঁজে পাই। আমরা এর আগের আলোচনার দেখেছি কিভাবে বড় ব্যবসায়ীরা সম্পদ ব্যবহার করে দরবারি ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষণা অর্জন করত। আমরা এটাও দেখেছি, জগতশেঠের অতুল সম্পদ অর্জন আর ক্ষমতাকে প্রভাবিত করার সুযোগ এসেছিল দরবারি পৃষ্ঠপোষনার ফলেই। ক্ষমতার অভয় হস্তর আশ্বাস জগতশেঠেদের মত ব্যবসায়ীদের ব্যবসার কাজে এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, যে মুহূর্তে পলাশীর চক্রান্তের পরে ক্ষমতার কাঁটা বেড়া তাদের পাস থেকে সরে গ্যাল, সেই মুহূর্তে তাদের ব্যবসা জগত তাসের ঘরের মত দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে ভূমিশয্যা ধরল। একই ঘটনার প্রতিফলন দেখি উমিচাঁদ আর খ্বজা ওয়াজিদের ক্ষেত্রেও। বাংলার ব্যবসা জগতে আমাদের আলোচ্য শতকের চার আর পাঁচের দশকে এই মানুষ তিনজন এত গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠতে পেরেছিল কারণ তাদের সঙ্গে ছিল বাংলার নবাবি দরবারের অভয় হস্ত।
বাংলার বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শাসকদের ঘনিষ্ঠ যে সম্পর্ক আমরা আবিষ্কার করলাম, যার বলে তারা রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল, ঠিক তার বিপরীত ঘটনা দেখি ষোড়শ শতকের গুজরাটের এবং অষ্টাদশ শতকের সুরাটে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা সূত্রে(M.N.Pearson, Merchants and Rulers: Ashin Das Gupta, Indian Metchants)। গবেষক দুজনেই, দুই ব্যবসায়ীকে স্বতন্ত্র একক হিসেবে ধরেছিলেন, যাদের ক্ষমতাধরদের সঙ্গে খুব বেশি দহরম মহরম ছিল না। কিন্তু বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা ব্যবসায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেন। রাষ্ট্র ব্যবসায়ীদের ভালমন্দ দ্যাখাশোনা করত এবং তার বিপরীতে তারা রাষ্ট্রের কাছে নানান ধরণের অভাব অভিযোগ জানাত সরাসরি এবং এই ব্যাপারটা ১৭৪৮-৪৯এর ঘটনায় চাক্ষুষ দেখতে পাই। হুগলী ব্যবসায়ীদের জেড্ডা আর বসরা থেকে দুটি আর্মেনিয় জাহাজ ১৭৪৮ সালে ব্রিটিশরা আটক করে। হুগলী ব্যবসায়ীদের একটি দৌত্য দল এ ব্যাপারে নবাব আলিবর্দি খানের কাছে অভিযোগ জানায় এবং আলিবর্দি কোম্পানিকে চিঠি লিখে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দ্যান এবং লেখেন, The Syeds, Mogulls, Armenians and merchants of Hooghly have complained .... These merchants are the Kingdom's benefactors. Their imports and exports are an advantage to all men and their complaints are so grievous that I cannot forebear any longer giving ear to them (BPC, vol. 22, f .. 96, Annex. to Consult., 9 Jan. 1149)। ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক ক্ষমতার হাত এত দূর বিস্তৃত ছিল যে তারা কলকাতা কাউন্সিলকে লিখে জানাল, The skirts of the government are in our hands and we will not cease seeking their justice until we have full satisfaction. (Ibid., vol. 22, ff. 134vo-135, Annex. to Consult., 20 Feb. 1749)।

Wednesday, November 28, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮৪

যে সব বড় ব্যবসায়ী পলাশীর চক্রান্তে জুটেছিলেন তাদের মধ্যে খ্বাজা ওয়াজিদ সব শেষে চক্রীদের সঙ্গে যোগ দ্যান। খ্বাজা ছিলেন সিরাজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরামর্শদাতা চক্রের মধ্যে কূট, পরিশ্রমী, বিবেকহীন ঘনিষ্ঠতম মধ্যস্থ। ১৭৫৭র চক্রান্তে, তিনি ছিলেন চক্রীদের সর্বশেষ দেওয়াল, যাকে সঙ্গে পাওয়ার পর মেন মাসে কাজ সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দ্যায়(এবং জুনে কাজটা সমাপ্ত হয় - অনুবাদক)। তিনি চক্রী দলে যোগদান করেন কেননা তার ব্যবসা সাম্রাজ্য রক্ষার তাগিদ ছিল, তাগিদ ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ক্ষমতা দখল করার। কিন্তু তিনি জুয়ায় গোহারাণ হেরেগেলেন। পলাশী বিপ্লব বাংলার সব কটা বড় ব্যবসায়ীর পতন ডেকে আনল – কেউ সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে গ্যাল কেউ পরে গ্যাল। ১৭৫৭র পরে খ্বাজা আর উমিচাঁদ বুঝলেন কি ভুলটাই না তারা করেছেন। পলাশী বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দরবারি পৃষ্ঠপোষকতা গ্যাল, ফলে একচেটিয়া ব্যবসার পরিবেশ গ্যাল এবং ইওরোপিয় কোম্পানিদের সঙ্গে তারা যে শয়ে শয়ে কোটি টাকার ব্যবসা করতেন সেটাও জলে গ্যাল(এবং এদের প্রাণটাও গ্যাল - অনুবাদক)।
৫.৩ ব্যবসায়ী আর শাসক

সপ্তদশ শতকের এশিয়ার ব্যবসা জগত নিয়ে সাধারণ আলোচনায় J.C. van Leur বিশদে আলোচনা করেছেন সপ্তদশ শতকে ছোট ব্যবসায়ী এবং হকার(peddler)দের চরিত্র এবং তারা কিভাবে বিশাল এলাকাজুড়ে বাণিজ্যিক পণ্য বিতরণের জাল তৈরি করেন। তিনি ভারত এবং চিনের ছোট ছোট হকার এবং বড় পাইকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন, কিন্তু একই সঙ্গে বলেছেন, But all that does not change the fact that there appears to be only one conclusion regarding international Asian trade .... It was a small-scale peddling trade, a trade in valuable high quality products(J.C. van Leur, Indonesian Trade and Society, pp. 132-33, 197-201, 219-20)। Niels Steensgaard সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকের স্থলপথে ক্যারাভানে করে ব্যবসা এবং বন্টনের তত্ত্বের সঙ্গে ভ্যান ল্যুয়রের হকার তত্ত্বকে নতুন মাত্রা দিয়ে বলেছেন এশিয় ব্যবসায় হল, কোটি কোটি সাধারণ হকারের অসাধারণ উদ্যমী চরিত্রর মোট ব্যবসার পরিমান। তিনি মনে করেন হকারদের ব্যবসার সঙ্গে অত্যাধুনিক ব্যবসা সংগঠন পদ্ধতির কোন ব্যতিচার নেই, কিন্তু এরই সঙ্গে তিনি বলছেন, Nevertheless the ordinary entrepreneur operates on the pedlar level, and there is nothing in the sources to indicate the existence of comprehensive coordinated organizations of an Armenian, Turkish or Persian version of a Fugger, Cranfield or Tripp(Niels Steensga~rd, Asian Trade Revolution, p. 30)। কীর্তি নাথ চৌধুরী স্পষ্ট বলছেন, আর্মেনিয়, তুর্কি বা পারস্যের ব্যবসায়ীর কাজকর্ম তাদের ব্যবসায়িক কাগজপত্রের সূত্র ধরে আলোচিতই হয় নি এত দিন তাই এই মন্তব্যকে মাথা নামিয়ে মেনে নেওয়ার এখনও পর্যন্ত কোন কারণ ঘটে নি। ইওরোপিয় সূত্র থেকে আমরা জানতে পারছি যে Hovhannes বা বানজারাদের উপস্থিতিতে এটা মনে করার কারণ নেই যে ভারত বা মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসা শুধুই হকারদের দিয়ে চালিত এবং সাধিত হত(পাদটিকায় সুশীলবাবু লিখছেন Steensgaard refers to Hovhannes' journal which fndicates only small scale transactions of the Armenia~ merchant; but he was actually a .factor operating in India and Tibet for his principals in Ispahan; banjaras were grain merchants who traded in Indian villages while moving from one part of the country to another and were involved in small retail trade)। ভারতে, এটা সত্য যে, হকারেরা ব্যবসার এজক্তা বর ভূমিকা পালন করত, কিন্তু সেটা স্থানীয় ব্যবসা। তারা গরুর গাড়ি করে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে গিয়ে পণ্য ফেরি করত। আর্মেনিয় ব্যবসায়ীরা অন্য চরিত্রের। তারা highly skilled arbitrage dealersদের এক গোষ্ঠী, যারা লাভের সুযোগ আছে এমন যে কোন পণ্য ব্যবসা করতে অতিউতসাহী (K.N. Chaudhuri, Trading World, pp. 135-39, 145-51)। বাংলার তাদের একজনের কেসস্টাডিতে দেখলাম, তিনি আমস্টার্ডাম বা লন্ডনের যে কোন উতকৃষ্ট ব্যবসায়ীর সমতুল। অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার ব্যবসা পরিবেশের দুই আর্মেনিয় বণিক, খ্বাজা ওয়াজিদ বা খ্বাজা সরহদ ইস্রায়েলের কর্মকাণ্ড আমাদের ওপরের আলোচ্য বিষয়টিকে প্রমান করে(For Khwaja Surhaud Israel, see, S. Chaudhuri, Trade and Commercial Organization, pp. 94, 96, 124, 131, 134, 135)। 

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮৩

খ্বাজা যে মুর্শিদাবাদের দরবারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলেন এটা আজ আমাদের কাছে স্পষ্ট। কোম্পানির  সোরার বরাত কাকে দেওয়া উচিত উমিচাঁদকে না খ্বাজাকে, কলকাতা কাউন্সিলের এই বিতর্কের ফল খ্বাজার দিকে ঢলে পড়া থেকে বুঝতে পারি মুর্শিদাবাদের দরবারে তার প্রভাব, যেটা ব্রিটিশ কুঠিয়ালরা আঁচ করেছিল। অধিকাংশ সদস্য তাকে হয় উল্লেখ করেছিল দরবারের আমলা হিসেবে অথবা দরবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জুড়ে থাকা ব্যবসায়ী হিসেবে(BPC, vol. 26, ff. l3lvo-I32vo, 3 May 1753)। ওরমের ভাষায় ওয়াজিদ হলেন the principal merchant of the Province (Orme, Military Transactions, vol. II, ·sec. I, p. 58.)। কাশিমবাজার কুঠির ওয়াটস এবং কোলেট ১৭৫৬ সালে লিখছেন, Coja Wazeed the greatest merchant in Bengal.. .resides in Hughley and had great influence with the Nabob (Records of Fort St. George, Diary attd, Consultation Book, 1756. vol. 86, p. 32; Orme Mss., O.V. 19, p. 104)। ডাচ প্রধান কুঠিয়াল জাঁ কারসেবুম ১৭৫৫তে লিখছেন খ্বাজা ওয়াজিদকে '..Faqqur Tousjaar' [Fakhr-ut-tujar] অর্থাৎ supporter of the treasure । তিনি বলছেন আলিবর্দি খাঁর দরবারে সম্পদের সমুদ্র বইয়ে দেওয়ার অধিকারী ছিলেন খ্বাজা। তিনি নবাবকে নানান রকমের দামিতম উপহার দিতেন এমনি এমনিই, কোন রকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই, এবং এই কারণের ডাচ প্রধান কুঠিয়াল পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁর সঙ্গ কোম্পানির ভবিষ্যতের পক্ষে খুবই আশীর্বাদী হবে(১১০)। এখানে বলা দরকার যে বাংলার প্রধান কুঠিয়াল কারসেবুমের স্থলাভিষিক্ত হয়ে আসা টেইলফার্ট কোম্পানির গ্রাম চুঁচুড়ায় বাসকালে গুরুত্বপূর্ণভাবে মন্তব্য করেছেন যে কোম্পানির উচিত হবে না, respectable persons of so high standing as the Moorish merchant Coja Wazeed who trade overseas or who have such internal trade that in some respects they can be considered as competitors of the Company, and who deem themselves to be on an equal footing with the Directors [ ডাচ কোম্পানির], if not their superiors(এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাদটিকায় সুশীলবাবু লিখছেন Taillefert's 'Memorie', VOC, 2849, f. 128vo, 14 Feb. 1755. It is obvious from this reference that Wazid lived {n Chinsurah for ~ome time. But this must have been for a short period because in early 1750, in a letter from Bengal, Wazid was referred to as 'the merchant who' was removed' (from Chinsurah), vpc, 2732, f.9vo, Hughli to Heeren XVII, 11 Feb. 1750. It is of interest that in the Dutch records Wazid was frequently referred to as 'Moor Merchant' (Moors Koopman). There can be hardly any doubt that Wazid was an Armenian and there is no evid_ence that he was ever converted to Islam. It might have been possible that because of his close.connection with the Muslim rulers, the Dutch referred to him as 'Moor merchant' or 'Khoja Mhamet Wazid'. There is evidence that the Armenian merchants changed their names often for the sake of convenience in trade. Thus in the early seventeenth century, Khwaja Philipos of New Julfa was known as Philippe d.e Zagly· in Courlande while in Persia his name was Imam Kuli Beg (Robert Gulbenkian, 'Philippe de Zagly, merchand armenien de Julfa, et I'e'tablissement du Commerce persan en <2ourlande 1626="" eu="" span="">Revue des etudes armeniennes, n.s. 7, 1970, pp. 361-369). So it might be possible that Wazid also added 'Muhammed' to his name to enhance his business prospects.)।

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮২

উমিচাঁদের মতই বাংলা ব্যবসা জগতে আরেকজন বড় ব্যবসায়ী আর্মেনিয় খ্বাজা ওয়াজিদ। ইনি অষ্টাদশ শতকের  চার আর পাঁচের দশকে বাংলার ব্যবসা জগতে বিপুল প্রভাব ফেলেছিলেন। তার মুল ঘাঁটি/গদি ছিল, ততকালীন বাংলার আর্থিক রাজধানী হুগলীতে। উমিচাঁদ যেমন ব্রিটিশদের সঙ্গে ব্যবসা করতেন, ফরাসী আর ডাচেদের সঙ্গে বিপুল বড় ব্যবসা ছিল খ্বাজা ওয়াজিদের। খ্বাজা ওয়াজিদ ছিলেন ভীষণ সুযোগ সন্ধানী এবং যে কোন মূল্যে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বাড়াবার আগ্রাসী মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি ক্ষমতার কাছে ব্যবসায়িক সুযোগসুবিধে পাওয়া মাত্রই তার আনুগত্য ঢেলে দিতেন অনায়াস দক্ষতায়। ১৭৪০এর দশকটায় তিনি বাংলার দরবারে প্রভূত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করায়, তার ব্যবসা আকাশ ছুঁতে শুরু করে। নবাবের ওপর তার রাজনৈতিক পকড়ের প্রভাবে ১৭৪০এর দশকের শেষ দিকে বিহারের সামগ্রিক ব্যবসা জগতে তার একচ্ছত্র প্রভাব কায়েম হয়। প্রাথমিকভাবে আর্মেনিয় বণিক হিসেবে জীবন শুরু করলেও, খুব তাড়াতাড়ি দরবারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং নবাবের অভয়হস্ত মাথায় নিয়ে বাংলার ব্যবসা জগতের কেষ্টুবিষ্টু হয়ে উঠে বাংলার দুটি বাণিজ্যপণ্য সোরা আর নুনের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে বসেন।
ওয়াজিদ সোরার একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার পান ১৭৫৩ সালে। ১৭৫৩ সালের ২ এপ্রিল ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল লিখছে ওয়াজিদ সোরা কেনার একচেটিয়া ফরমান অধিকার করে exclusive of any other purchasers (BPC, vo' l.26, f .110, 2 Apnl. 17 Sq; Beng. Letters Recd., vol. 22, para. 18, f. 410.)। সোরার থেকে আরও বিপুল লাভের ব্যবসা ছিল নুনের একচেটিয়া। ১৭৫২ সালে ন্যুনতম আমদানি শুল্ক(সায়ের) দিয়ে নুনের ব্যবসায় ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ করেন তিনি। ব্যাটসন লিখছেন ১৭৬৩ সালে, Coja Wazeed of.Hughly had the ·salt farm of Bengal for many, years for an,inconsiderable sum (Orme Mss. O.V. 134, f. 13)। ১৭৫২ সালে নামহীন একটি ব্রিটিশ পাণ্ডুলিপি থেকে জানতে পারি, Salt on account of Coja Wazeed is.exempted from these duties and pays only:
Import: -per 100 md. one rupee which is Rs. 0.8 percent
Export: per 100 md. one rupee which is Rs: 0.8 percent
Total: per 200 ~d. two rupee which is Rs. 1.0 percent(Mss. Eur., D. 283, f. 22)।
তিনি ১৭৪০এর দিকে সামুদ্রিক বাণিজ্যেও খুব সচল ছিলেন। ১৭৫০এর দশকে হুগলি থেকে যে সব জাহাজ বিদেশে বাণিজ্য করতে যেত, সেগুলির ওপর অধিকার কায়েম করে তিনি বহির্বাণিজ্যে বিপুল প্রভাব তৈরি করেন। ডাচ প্রধান কারসেবুম এবং ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল লিখছে খ্বাজার সুরাটে কুঠি ছিল(VOC, 2849, ff,105vo-106, 16 Feb. 1755; SC. Hill, Bengal in 1756-57, vol. II, p. 87)।

ওয়াজেদ তার ব্যবসা আগ্রাসী একচেটিয়া চরিত্রে ঢেলে সাজিয়ে ছড়িয়েছিলেন। তিনি বাংলার বাংলার দরবারে প্রভাব সৃষ্টি করে বিহার(বিহারকে সুশীলবাবু সুবা লিখছেন। কিন্তু বিহার কী সুবা ছিল? বিহার তো বাংলা সুবার অধীনে ছিল।) সুবার বাণিজ্য পরিবেশে একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করার উদ্যম নেন। তার বাণিজ্যিক-রাজনৈতিক প্রভাব এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তিনি এমন কোন বাণিজ্য চুক্তিতে যেতে হত না, যাতে অন্য কোন বণিককে তার জামিন হিসেবে দাঁড়াতে হয়(BPC; vol. 26, f. 132vo, 3 May 1753; C & B. Abstr., vol. 5, f. 424; Beng. Letters Recd., vol. 22, f. 412)। মুর্শিদাবাদের দরবারে তার প্রভাবের প্রতিপত্তির সঙ্গে তুলনা করা যায় জগতশেঠের প্রভাবের সঙ্গে একমাত্র। দরবারে তার প্রভাবের গুরুত্বের একটা ইঙ্গিত পাই এই ঘটনায় তিনি মাঝেমধ্যেই কলকাতা কাউন্সিল আর নবাবের মধ্যে দরকষাকষির মধ্যস্থ হতেন। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি খ্বাজা আহমেদ বাংলার রাজনৈতিক এবং বাণিজ্য জগতে কি পরিমান প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। 

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮১

পাটনায় উমিচাঁদের সোরা উৎপাদন এবং টাঁকশালে নিয়ন্ত্রণ এবং আফিম ব্যবসায় একচেটিয়া পকড় সম্ভব হয়েছিল দেশের শাসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ফলেই। আলিবর্দিকে নানান মন মাতানো উপহার দিয়ে তিনি দরবারে তার ঘনিষ্ঠ প্রভাব তৈরি করতে পেরেছিলেন(Hill, Bengal in 1756-57, vol. II, pp. 63-64)। আলিবর্দির নাতি সিরাজের ওপরেও তার প্রভূত প্রভাব ছিল। পলাশী চক্রান্তে তার বিপজ্জনক ভূমিকার জন্যে তিনি বাংলার ইতিহাসে খলনায়ক হয়ে আছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি জ্ঞান, বাজারের ওঠাপড়া এবং ব্যবসায়িক দক্ষতার জোরেই নিজেকে বাংলার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে তৈরি করেছিলেন। তার ঘনিষ্ঠ ইওরোপিয়, ওরমের বয়ানে বলতে পারি, Among tlre Gentoo merchants established in Calcutta, was one·named Omichund, a man of great sagacity and understanding, which he had employed for forty years with unceasing diligence to increase his fortune ... he was become the most opulent inhabitant of the colony. The extent of his habitation, divided into various departments; the number of his servants continually employed in various occupations, and a retinue of armed men in constant pay, resembled more the state of a prince than the coridition of a merchant(Orme, Military Transactions, vol.II, Sec. I, pp. p0-51)।

উমিচাঁদ যে সম্পদশালী ব্যবসায়ী ছিলেন এ বিষয়ে আজ আর কোন বিতর্ক চলতে পারে না। তিনি কোম্পানির ঘাটতি পড়া পুঁজির এক তৃতীয়াংশ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা কোন রকম অগ্রিম জামানত ছাড়াই বিনিয়োগ করতে পারতেন। ১৭৫০ সালে তার গদিতে কোম্পানির ধার ছিল ১৬ লক্ষ টাকারও বেশি(BPC, vol. 23, f. 186, 1 July 1750)। ১৭৫৬ সালে সিরাজের কলকাতা আক্রমনের সময় তার তিজোরিতে পাওয়া যায় ৪ লক্ষ টাকা নগদ এবং অন্যান্য দামি রত্ন্রারাজি(Orme, Military Transactions, vol. II, Sec. I, p.78)। তার ভাই পাটনাস্থিত দীপচাঁদের বাতসরিক রোজগার যদি সে যুগের ১ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে উমিচাঁদের বাৎসরিক রোজগারের পরিমান আন্দাজও করা যায় না(BPC, vol. 17, f. 372vo, 1 Dec. 1744)। সে সপময়ের কলকাতার সব থেকে বড় এবং সুন্দর হর্ম্যের অধিকাংশের এবং অন্যান্য বিষয় সম্পত্তির মালিক ছিলেন উমিচাঁদ। উমিচাঁদের চাপরাশি আর সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা ছিল ৩০০(Orme, Military Transactions,, vol. II, Sec. I, pp. 60, 128)। ইচ্ছাপত্রে তিনি পারিবারিক সদস্যদের ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বিতরণ করে বাকি অংশ নানকজীর উদ্দেশ্যে দেবোত্তর করে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংলন্ডে ম্যাগডালেন হাউস এবং ফন্ডলিং হাসপাতালে সে যুগে ৩০ হাজার টাকা দান করার পরেও তার এস্টেটের মূল্যমান দাঁড়ায় ৪২ লক্ষ টাকা!

Tuesday, November 27, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৮০

উমিচাঁদ শুধু যে কোম্পানির খাতায়কলমে দাদনি বণিক হিসেবেই প্রখ্যাত ছিলেন একথা বলা ঠিক হবে না, অন্যান্য দাদনি বণিকের মত তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোম্পানির সাহায্য ছাড়াই বিপুল ব্যবসাও করতেন। সে সময় বড় ব্যবসায়ীর মতই তিনি যে সব পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতেন, সেগুলোর কয়েকটির একচেটিয়াকরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ১৭৩১ সালের প্রথম দিকে কাশিমবাজারের কুঠিয়ালেরা লিখল, উমিচাঁদের গোমস্তা বেআইনিভাবে রঙ্গপুরের ফৌজদারের থেকে বেশ কিছু অর্থের বিনিময়ে সেই অঞ্চলের আফিম উৎপাদকেদের উৎপাদন দখল আর তার ব্যবসার একচেটিয়াকরণ করেফেলেছে, তার ভাই দীপচাঁদ, গোমস্তা হিসেবে শ্যামজীকে দরবারে উকিল নিয়োগ করে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ সুরক্ষার উদ্যম ন্যায় এবং উচ্চপদস্থ আমলাদের বিপুল উপঢৌকন দ্যায়(Ibid., vol. 8, ff. 400-400vo, 21 June 1731; vol. 9, f. 22vo, 3 Aprif 1732)। ১৭৩৪ সালে লন্ডনের কর্তারা লিখল উমিচাঁদ is no longer worthy of our protection(DB., vol. 105, ff. 453-54, para. 124, 11 Feb. 1732)। কে কার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে! বিহারের পণ্য কেনার জন্যে আবার উমিচাঁদের সখ্য প্রয়োজন হয়ে পড়ল কোম্পানির। ১৭৩০এর শেষের দিকের থেকে ১৭৪১ পর্যন্ত উমিচাঁদ আলিবর্দি সরকারের পাটনার আমলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলতেন এবং সেখানে একটা টাঁকশালও নিয়ন্ত্রণ করতেন(Ibid., vol. 106, f. 182, para. 39, 29 Jan. 1734)। ভাই দীপচাঁদ সরকার সারণের ফৌজদার ছিলেন। সরকার সারণ ছিল সে সময়ে সোরা উতপাদনের বিহার এবং উপমহাদেশেরও প্রধানতম এলাকা(C & B. Abstr., vol. 4, f.376, 11 Dec. 1741)। উমিচাঁদ, দীপচাঁদ এবং খ্বাজা আহমদের ব্যবসায়িক জোট গোটা বিহারের ব্যবসা পরিবেশে থাকা ছোট ছোট উৎপাদন এবং ব্যবসায়ীদের পরিসরও দখল করেছিল। উমিচাঁদের উৎসাহ ছিল সোরা আর আফিম ব্যবসা, পরের দিকে তিনি সেই ব্যবসার একচেটিয়া দখল নেন(BPC, vol. 17, f. 769, 16 Dec. 1744)। কোম্পানিকে তিনিই অধিকাংশ সোরা সরবরাহ করতেন। বিহার প্রশাসন এবং সোরা উতপাদকেদের ওপর তাদের প্রভূত নিয়ন্ত্রণের জন্যে উমিচাঁদ, দীপচাঁদ বিহার উৎপাদন এবং ব্যবসায় প্রায় একচেটিয়া ব্যবসা কায়েম করে ফেলেছিলেন(Home Misc. Series, vol. 192, f. 64)।

মুর্শিদাবাদের প্রশাসনেও উমিচাঁদের ব্যাপক পকড় ছিল। ১৭৩৫ সালে যখন কোম্পানি দাদনি বণিকদের তালিকা থেকে উমিচাঁদের নাম মুছে দ্যায়, সে সময় আমিবর্দিখাঁইয়ের ভাই হাজি আহমদ, দরবারে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণতম মানুষ, উমিচাঁদের হয়ে কোম্পানিকে লিখে জানান কোম্পানি উমিচাঁদকে নতুন করে দাদনি ব্যবসায় অন্তর্ভূক্ত করুক এবং তার জন্যে কোম্পানির সিন্দুকে যত টাকা জামিন রাখতে হয়, তিনি সেই পরিমান দেওয়ার জন্যে তৈরি(Fact. Records, Kasimbazar, vol. 5, 21 Jan. 1736)। হাজি আহমদের মত গুরুত্বপূর্ণতম মানুষের উমিচাঁদের প্রতি এই আস্থা এবং সমর্থন থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে প্রশাসনে তার পকড় কি ধরণের ছিল।  

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৭৯

ডাচ কুঠির বাংলা প্রধান কারসেরমবুমের পরের কুঠিয়াল লুই টেইলফার্ট(Louis Taillefert)ও জগতশেঠেদের হিন্দুস্থানের শ্রেষ্ঠ মহাজন হিসেবে স্বীকার করে নেন। তিনিও লিখলেন, জগতশেঠ হিন্দুস্থানের শ্রেষ্ঠ মহাজন। তিনি আরও লিখলেন জগতশেঠের নাম হল্যান্ডে পাঠানো চিঠিতে এতবার লিখিত হয়েছে যে, অনেক সময় তাদের কর্তাদের মনে হত এই ব্যক্তি আদৌ বাস্তবে আছেন কি না। তিনি লিখলেন জগতশেঠেদের হুগলী কুঠি শেঠ মানিকচাঁদ এবং শেঠ আনন্দচাঁদের নামে চলত, ঢাকার কুঠি শেঠ শেঠ মাণিকচাঁদ এবং জগতশেঠ ফতেহচাঁদের নামে, পাটনার কুঠি শেঠ মাণিকচাঁদ এবং শেঠ দয়াচাঁদজীর নামে ব্যবসা করত। এই তথ্যটা খুবই গুরুত্বপূর্ন যে জগতশেঠের কুঠি কিছুটা বিহার আর বাংলার সামগ্রিক মহাজন এবং টাকা নিয়ে ব্যবসা করা স্রফেদের কুঠিকে তাদের কুঠির প্রায় অধীনস্থ কুঠি বানিয়ে ফেলেছিল। যারা শেঠেদের কুঠির ব্যবসা নীতি মানত না তারা সরকারের সহায়তায় সেই সব শেঠ স্রফ ইত্যাদিদের ব্যবসায় লালবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে ব্যবসা থেকে দূর করে দিত। বিনিময় হারের বাটা এবং বিল অব এক্সচেঞ্জের হার সরাসরি জগতশেঠের কুঠি নির্ণয় করত সরকারকে বিপুল অঙ্কের অর্থ উপঢৌকন দিয়ে(Louis Taillefert's 'Memorie', voe, 2849, f. 24 7vo-248vo, 27 Oct. 1755)।

অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদের শেষ তিন দশকে আরেক বিপুল বড় ব্যবসায়ী উমিচাঁদ বাংলার ব্যবসা/আর্থিক জগতে বিপুল ভূমিকা পালন করেছিলেন। আগরার ব্যবসায়ী(১৭৪৭সালের এক নথিতে উমিচাঁদ এবং দীপচাঁদকে আজিমাবাদের বাসিন্দা আগরওয়ালা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে Fact. Records, Patna, vol. 2, 3 April 1742 আরেক নথিতে বলা হচ্ছে উমিচাঁদ আগরার প্রাক্তন অধিবাসী see BPe, vol. 17, f. 276vo) অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় শতক থেকে বাংলায় এসে ব্যবসা করতে গিয়ে থানা গেড়ে বাংলাতেই থেকে যান। তিনি কলকাতায় ব্যবসা চালাতেন দাদনি বণিক বিষ্ণুদাস শেঠের সহযোগিতায়, যিনি একদা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যস্থ ছিলেন(Sinha, Economic History of Bengal, vol. l, p.6)। ১৭৩০ সালেই তিনি বাংলার শ্রেষ্ঠতম ব্যবসায়ীদের অন্যতম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেফেলেন। দুটি ভৌগোলিক এলাকায় তার কাজ সীমাবদ্ধ ছিল বিহারে যার অর্থনীতি মূলত পাটনা ভিত্তিক ছিল; আর ছিল কলকাতার আশেপাশের এলাকা জুড়ে আর্থিক নানান ব্যবসা এবং পণ্য আদান প্রদান। ১৭৩১ সালে তিনি এবং কোম্পানির মধ্যস্থ বিষ্ণুদাস শেঠের জোটের বিরুদ্ধে দাদনি নিয়ে দুর্ণীতির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কলকাতা কাউন্সিল উমিচাঁদের দাদনি দুর্ণীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে ভয় পায় কারণ তার সহযোগিতা না পেলে বাংলায় ব্যবসার সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং তাকে আবারও দাদনির ছোটমোট অংশ দিয়ে কোম্পানির ব্যবসায় জুড়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় for fear he should leave us to go to the French or other European nations(BPC, vol. 8, f. 419, 21 July 1731; vol. 9, ff. 17vo-18, 23 March 1732)। ১৭৩৫ সালে আবারও উমিচাঁদের বিরুদ্ধে পুঁজি নিয়ে নানান দুর্ণীতির অভিযোগ তোলে কলকাতা কাউন্সিল, এবং কলকাতা কাউন্সিল আবারও সিদ্ধান্ত ন্যায় যে let him have any more Dadne:y ... and to record him disqualified ever to serve! the Company as a merchant again(C & B. Abst, vol,,4, f. 82, para. 14.4, 24 Jan. 1731)। তাঁকে আবার দাদনি বণিক হিসেবে কোম্পানিতে নেওয়া হয় ১৭৩৯ সালে এবং ১৭৫৩ পর্যন্ত যতদিন না দাদনি ব্যবস্থা গোমস্তা ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হচ্ছে, কোম্পানিকে তাদের ঘাটতি পড়া পুঁজি সরবরাহ করত। ১৭৪৭ সালে তিনি কোম্পানির মোত বিনিয়োগের একতৃতীয়াংশ যা in·equal proportion for ready money। কাউন্সিলের অধিকাংশ উমিচাঁদের প্রস্তাবে রাজি হলেও জন জ্যাকসন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলে, he thinks it imprudent to lift up any pah,icular'one too high above the rest (BPC, vol. 19, f. 277vo, 8 J u~e 17 4 7; Beng. Letters Recd,, vol. 21, ff. 2.19-20; FWIHC, vol. 1, pp. 193-94)। জ্যাকসনের উত্তরে কাউন্সিলের আরেক সদস্য জন ফস্টার লেখেন যে উমিচাঁদ, not raised above them by this contract with us but was before their superiority, his natural and acquired'car,acity for business, his extraordniary knowledge of the Inland trade and his greater command of money all which qualities I think render him a proper person to deal with for ready money (BPC, vol. 20, f.109-9vo, 15 Aug. 1747)। উমিচাঁদকে শেষ পর্যন্ত ঐ একতৃতীয়াংশ অর্থাত ৯ লক্ষ টাকার বরাত দেওয়া হয়(Ibid., vol. 19, f. 298, 25.June 1747)। 

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - রাষ্ট্রীয় উদ্যমে দেশিয় প্রযুক্তির অন্তর্জলী যাত্রা - পশ্চিমই প্রযুক্তির শেষ কথা এটা একমাত্র ভদ্রবিত্তরাই জানে

ঔপনিবেশিক নীতি অনুসরণ করে স্বাধীন উপমহাদেশের দেশগুলো তিলে তিলে এই প্রযুক্তিবিদদের ঘেটো বন্দী করে দিলাম - বাংলায় সরকারি উদ্যমে বর্ধমানে, বাঁকুড়ায়, পুরুলিয়ায় ইত্যাদি। একদা বাংলার বিশ্বজয়ী প্রযুক্তি স্রেফ নেই করে দিলাম ঘর সাজানোর পণ্য তৈরির গাজর দেখিয়ে - লোকউদ্যম বলে সরিয়ে রেখে দিলাম ভদ্রবিত্ত শিক্ষিত লোক সংস্কৃতিপিয়াসীদের খাদ্য করার জন্যে, শখ, পিএইচডি আর কেরিয়ার ভিত্তিক বিদেশ ভ্রমণ সম্পন্ন সম্পন্ন করার জন্যে।
কেননা লোহার, ডোকরা কামার, বিশ্বকর্মা ইত্যাদিরা বিপুলাকারে উৎপাদন করতে থাকলে কর্পোরেটদের ভয়ঙ্কর সমস্যা। জং পড়া ধাতু প্রযুক্তির বাজার পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। 
এঁরা একসময় পরিযায়ী ছিলেন, গ্রামে গ্রামে গিয়ে গৃহস্থের কাজ করতেন - কমল মজুমদারের একটা ছোট্ট দেড় পাতার লেখা আছে পড়ে দেখতে পারেন। এরা যদি গৃহস্থের সেবাই দ্যায় পুরোনো ভাঙ্গা ব্যাঁকা ধাতুর তৈজস গলিয়ে তাহলে কর্পোরেট বিপুল বিশাল মিলের নিকৃষ্ট কিন্তু বিজ্ঞাপনীয়ভাবে উতকৃষ্টি পণ্য বিক্রি হবে কি করে?
ঠিক যেমন মিলে ভাল কাপড় না হলেও আজও মিল কোম্পানিরা সরকারের বিপুল ভর্তুকি পেয়ে থাকে - আর তাঁতিরা স্রেফ উপেক্ষা।