Sunday, March 18, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৬ - ঔপনিবেশিকতাবাদের জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান ।। বারনার্ড কোহন

সংখ্যাতাত্ত্বিক/তালিকাভুক্তির পদ্ধতি
অধিকাংশ ব্রিটিশ আমলাদের দৃষ্টিতে ভারত মানেই যেন বিপুল পরিমান সংখ্যার সমষ্টি বিশেষ। এই মানসিকতার বিকাশ ঘটে সপ্তদশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ সওদাগরি বণিকদের এদেশে পদার্পনের সময় থেকে। ব্যবসার জন্যে তারা বিভিন্ন পণ্যের তালিকা, দাম, শুল্ক চুঙ্গিকর দেওয়ার তথ্যাদি সংগ্রহ করে নিজেদের দেশে পাঠাতে শুরু করে; পরের দিকে এই পদ্ধতিটাই কোন একটি অপরিচিত অজ্ঞান বিসদৃশ ভূমিখণ্ডকে নানান ধরণের বিশ্লেষণের কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তারা শাসনের প্রথম দিকে যখন ভারতের বিভিন এলাকার জনসমষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সমীক্ষার কাজ শুরু করে, বুঝতে পারে খুব সহজ সঙ্খাতাত্ত্বিক প্রকল্পও চরিত্র বোঝার সমস্যা নিয়ে এসে দাঁড়ায়।
সিপাহি যুদ্ধের পরে ভারতের জাতীয়করণ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে যখন বিপুলভাবে সেটলমেন্টের কাজ শুরু হল, ভারত সরকার বেশ কয়েকটি জনগণনার(সেন্সাস) কাজ শুরু করে। তাদের ধারণা ছিল এই কাজের মাধ্যমে তারা ভারতের জনগণের বিভিন স্তরের কাছে সাম্রাজ্যের সাফল্য আর প্রগতির দিকটি তুলে ধরতে পারবে। এই কাজ করতে করতে ১৮৮১ সালে তারা একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির কার্যপ্রণালী তৈরি করতে পারল যার নাম হল জনগণনা, যার মাধ্যমে তার আশা করল যে সাম্রাজ্য প্রত্যেক শাসিত জনগনের কিছু মৌলিক তথ্য যেমন বয়স, পেশা, জাতি, ধর্ম, শিক্ষা, জন্মস্থান এবং বর্তমান বাসস্থান ইত্যাদির তালিকা তৈরি করতে পারবে। ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ, যার অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবা করা, নেওয়া হল এই জনগণনার কাজে। প্রকাশিত এই গণনা সমীক্ষায় শুধু যে জনগণের থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংকলনের সংক্ষিপ্তয়ায়ণ করা হল তাই নয়, তার সঙ্গে বিশদে বিশ্লেষিত হল মানুষের জাতি ব্যবস্থা, ধর্ম, জন্মহার এবং মৃত্যু হার, বাড়ির ব্যবস্থাপনা, এবং ভারতের আর্থিক কাঠামোও। জনগণনা হল ভিক্টোরিয় মূল্যবোধভিত্তিক কোন দেশের সামগ্রিক জ্ঞান সংগ্রহ করার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো।

আমার অনুমান(হাইপোথিসিস) হল এই জনগণনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, প্রশাসনিক স্তরে ভারতের জনগণকে শাসন করার জন্যে সামাজিক শ্রেণী আর স্তর নির্ধারণ করা। ব্রিটিশেরা মনে করল জনগণনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য আদতে ভারত সম্বন্ধীয় সামাজিক তথ্যের সমাহার। এটা তারা করল কিন্তু সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে ভারতের মানুষকে সামাজিক কৃষ্টিগত এবং ভাষিক চরিত্রে ভাগ করে ফেলা হল। ভারতের জনসংখ্যার চরিত্র সম্বন্ধে যে বিহঙ্গ দৃষ্টি ব্রিটিশেরা র্জন করছিল সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে, এবং এর দ্বারা ভারতকে একটি রাজনৈতিক সংগঠনে চরিত্রায়িত করা গেল, যে ভারতীয় চরিত্র সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসকের দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রশাসনিকভাবে ব্যবহার করে বজ্র মুষ্টিতে ভারতকে পরিচালিত করা যায়।

No comments: