Thursday, March 29, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা২১ - ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং তার জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান ।। বারনার্ড কোহন

অধ্যায়২
ভারতীয় ভাষা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ গড়নের পথে
সংস্কৃত – ভারতীয় আইন আর উপকথার ভাষা
হেস্টিংসের সামনে প্রশ্ন এসে দাঁড়াল হিন্দু আইন আদপে কি? এর জন্যে তিনি বাংলা জোড়া এগারো জন প্রখ্যাততম এবং সম্মানিত পণ্ডিত বাছলেন, যারা এই সংক্রান্ত স্মৃতিশাস্ত্রর সংহিতা সংকলন করবেন। এর সঙ্গে তিনি এন বি হ্যালহেডকে এই সঙ্কলনের কাজ দেখাশোনা আর সেগুলি ইংরেজি অনুবাদের কাজে জুড়ে দিলেন। হ্যালহেদের ভাষায় আমরা জানতে পারি কিভাবে সেই স্মৃতিগুলি সংকলিত এবং অনুদিত হয়েছিল – দ্য প্রফেসরস অব দ্য অর্ডিন্যান্স হিয়ার কালেকটেড স্টিল স্পিক এন্ড অরিজিনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ইন হুইচ দে অয়ার কম্পোজড। ... আ সেট অব মোস্ট এক্সপিরিয়েন্সড লয়ার্স ওয়াজ সিলেক্টেড ফ্রম এভরি পার্ট অব বেঙ্গল ফর দ্য পারপাস অব কম্পাইলিং দ্য প্রেজেন্ট ওয়ার্ক, হুইচ দে পিকড আউট সেন্টেন্স বাই সেন্টেন্স ফ্রম ভেরিয়াস অরিজিনালস ইন দ্য স্যাংস্কৃট ল্যাঙ্গুয়েজ, নায়দার এডিং, নর ডিমিনিশিং এনি পার্ট অব দ্য এন্সিয়েন্ট টেক্সট। দ্য আর্টিকলস দাস কালেকটেড অয়ার নেক্সট ট্রানলেটেড লিটারালি ইন্টু পার্সিয়ান, আন্ডার দ্য ইন্সপেকশন অব ওয়ান অব দেয়ার ওন বডি; এন্ড ফ্রম দ্যাট ট্রান্সলেশন অয়ার রেন্ডার্ড ইন্টু ইংলিশ উইথ এন একুয়াল এটেনশন টু দ্য ক্লোজনেস এন্ড ফাইডালিটি অব দ্য ভার্সানস।
সঙ্কলনটির নাম হল বিবাদার্ণবসেতু। যেভাবে এই সঙ্কলনটি তৈরি হল সেই পদ্ধতিটি আগামী পনের বছরের মধ্যেই প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। হ্যালহেদের সংস্কৃত জ্ঞান খুবই সীমিত ছিল। তিনি পণ্ডিতদের করা সংস্কৃত শ্লোকগুলি বাংলা বা হিন্দুস্তানীতে অনুবাদ করিয়ে নিয়ে, সেগুলি কোন মুন্সিকে দিয়ে ফারসিতে অনুবাদ করাবার পরেই ইংরেজিতে অনুবাদ করতেন।
১৭৮৩ সালে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হয়ে জেন্টু ল’কে রোমান ডাইজেস্ট হিসেবে মনে করলেন, এবং এটির প্রামাণিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন(কিন্তু ছাড় দিলেন হ্যালহেডকে)। বললেন যদি মূল সংস্কৃততেই গণ্ডগোল থাকে, তাহলে অনুবাদেও বিপত্তি দেখা দেবে – বাট হোয়াটএভার বি দ্য মেরিট অব দ্য অরিজিনাল, দ্য ট্রান্সলেশন অব ইট হ্যাজ নো অথরিটি, এন্ড ইজ অব নো আদার ইউজ দ্যান টু সাজেস্ট ইনকুয়ারিজ অন দ্য মেনি ডার্ক প্যাসেজেস, হুইচ উই ফাইন্ড ইন ইট; প্রপার্লি স্পিকিং, ইন্ডিড, উই ক্যাননট কল ইট আ ট্রান্সলেশন; ফর, দো মি হ্যালহেড পারফরমড হিজ পার্ট উইথ ফাইডালিটি, ইয়েট দ্য পার্সিয়ান ইন্টারপ্রেটর হ্যাড সাপলায়েড হিম অনলি উইথ আ লুজ ইনজুডিসিয়াস এপিটোম অব দ্য অরিজিনাল স্যাংস্কৃট, ইন হুইচ এব্যাস্ট্রাক্ট মেনি এসেন্সিয়াল প্যাসেজেস আর অমিটেড... অল দিজ আই সে ইন কনফিডেন্স, হ্যাভিং অলরেডি পারসুড নো স্মল পার্ট অব দ্য অরিজিনাল উইথ আ লার্নেড পন্ডিত, কম্পেয়ারিং ইট, এজ ই প্রসেডেড, উইথ দ্য ইংলিশ ভার্সান।
কলকাতায় এসে সংস্কৃত শেখার কোন পরিকল্পনা জোনসের ছিল না – তিনি উইলকিনসকে বললেন, জীবন খুবই ছোট, আমার কাজকর্ম খুবই বিস্তৃত, ফলে এখন নতুন ভাষা শিক্ষার আর সময় নেই। কিন্তু জোনসের ভারতীয় দর্শন সম্বন্ধে আগ্রহ আর কলকাতার ক্রাউন কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজকর্ম তাকে সংস্কৃত ভাষার দিকে টেনে নিয়ে গেল। কলকাতায় আসার এক বছরের মধ্যেই জোনস বেনারসে গিয়ে মৌলভি, পণ্ডিত আর রাজাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইব্রাহিম খান, যাকে ব্রিটিশেরা জ্ঞানী আর বিচারপতি হিসেবে সম্মান করত। জোনসের আসা ছিল যে ইব্রাহিম তাকে ধর্ম শাস্ত্র মনু স্মৃতির পার্সি অনুবাদ করে দেবেন যেটি সে সময়ের এই শাস্ত্রের মূলানুগ অনুবাদ ছিল। কিন্তু ইব্রাহিমের কাছে ছিল ধর্মশাস্ত্রের মূল সংস্কৃত পাণ্ডুলিপি। সেটি বেনারসের পণ্ডিতেরা ফারসিতে অনুবাদ করে দিতে অস্বীকার করে।

জোনস মনে করছিলেন স্মৃতিশাস্ত্রের অক্ষম ফারসি অনুবাদ তার কোন কাজে আসবে না। ১৭৮৫ সালে উইলিয়াম পিট ইয়ংগারকে লিখলেন আমি আদালতের পণ্ডিতদের সায়েস্তা করতে সংস্কৃত শিখব ভাবছি। এক মাস পরে উইলকিনসকে লিখলেন হিন্দু স্মৃতিশাস্ত্রটা মূলানুগ হওয়া খুব জরুরি, নাহলে আমাদের সংস্কৃততে অজ্ঞতা সারাক্ষণ দেশিয় স্মৃতিবিদদের ওপর নির্ভর করিয়ে রাখবে। ১৭৮৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি আশ্চর্যজনক এবং শ্রদ্ধেয় ভাষাটির প্রাথমিক জ্ঞানটুকু শিখতে নদীয়া গেলেন। অক্টোবরে কলকাতা ফিরলেন নদীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় পিতৃসম অব্রাহ্মণ শিক্ষককে নিয়ে যিনি ব্রাহ্মণ শিক্ষার্থীদের ব্যকরণ এবং নীতিশাস্ত্র শিক্ষা দিতেন। তিনি জোনসের সংস্কৃত শিক্ষক হলেন এবং এক বছরের মাথায় জোনস বললেন যে তিনি টলারেবলি স্ট্রং ইন সংস্কৃত এবং ভারতের মিনোজ, মনুর স্মৃতিশাস্ত্র ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্যে তৈরি। 

No comments: