Friday, March 16, 2018

আমরাই যাত্রা আমরাই পালা আমরাই তাদের পৃষ্ঠপোষক কালোমাথার মানুষ

বড়পুঁজির সংবাদমাধ্যম মায়ের ভোগেযাক।
আমরাই বাংলা!
প্রাণপ্রিয় তাত্ত্বিকArupsankar Maitra নিচের লেখাটি লিখেছেন প্রাসঙ্গিকভাবে এবং জরুরি মনে করেই। আমরা মনে করি উনি সঠিক যায়গায় ভুল মনোব্যথা পেশ করছেন।
সেই ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলার যাত্রা এবং গ্রামীন প্রকাশভঙ্গী উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষিত সমাজের কাছে স্রেফ দুয়োরাণী। অরূপদা তাঁর নাটকে নিজেই লিখেছেন কিভাবে গ্রাম কলকাতার দেশিয় বিনোদনকে অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রখ্যাত বাবু বুদ্ধিজীবি মহল আর পালক ব্রিটিশ সাম্রাজ্য।
গত আড়াইশ বছর ধরে শিক্ষিত বাঙালি এমন একটা প্রজন্ম যে বাউল জানে কিন্তু লেটো জানে না, পট জানে কিন্তু খন জানে না, জং জারি মোর্শিয়া, দং, ধুয়া, ব খেলা কিস্যু জানে না এবং এই তালিকা লিখে শেষ করা যাবে না। এমনি কৃষ্টিগত অশিক্ষিত শহুরে অভিজাতরা।
তার কৃষ্টি পৃষ্ঠপোষণার তালিকাতে যাত্রা হল নেসেসারি এভিল। লোকোসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞরা আদতে ব্যর্থ সাহিত্যিক, তারা যাত্রাকে ইওরোপিয় ফোকিয় সূত্র অনুসারে বিন্দুমাত্র কল্কে দেন নি। ফলে বাউল ছোএর মত কিছু লোকোসংস্কৃতিচর্চা ভদ্রবিত্তের পাতে পড়লেও যাত্রা ব্রাত্য থেকে গিয়েছে বাবু সমাজের চেতনায় - যাত্রা দেখে ফাত্রা লোকে।
যে ব্যাটা-বেটি গত কাল ইংরেজিশিক্ষিত মায়ের পেট থেকে পড়ে কান্নাটুকুও দেওয়ার সময় পায় নি, সেও ইওরোপমুখ্য আঁতেল সিনেমা আর থিয়েটার বানাবার চক্করে জুড়ে যেতে কেউ এনসডি না হয় পুণে, নাহলে এসারএফটিয়াই না হলে অন্তত যাদবপুরের ফিল্ম স্টাডিজে ভর্তি হতে তদ্বির লাগায় বা অমুকবাবুকে ধরে অমুকজনের শাখা খোলার জন্যে বসু-মুখোপাধ্যায়-সেনগুপ্তদের চ্যালাদেরকে তেল লাগায় যাতে কেন্দ্রিয় সরকারের লাখি গ্রান্টটা তার সংগঠনে আসে এবং সে ওগুলো নিজের ভোগেই লাগায়।
অরূপদা, আমরা কষ্ট পাই না। বড় পুঁজির সেবাদাস ভদ্রবিত্ত বাঙ্গালির চিত্তরূচি আমরা জেনে গিয়েছি। বাঙালি বড় পুঁজি আদতে তার ভদ্রবিত্ত চাকরদের মতই শেকড় হীন। সে কেন শেকড়ের কথা বলবে অরূপদা? আমরা ঠিক জানি ঠিক যে রকম ঝাঁকসু, হরকুমার গুপ্ত, করুণাকান্ত হাজরা, মাধাইদাস মহান্ত, সুবলদাস বৈরাগ্য, নেপাল সূত্রধর, কামেশ্বর দেশি, আলতা সরকার, শাল্কু টুডু, ওয়াহাব আলি... বড় পুঁজির সংবাদমাধ্যমকে গুরুত্ব দিতেন না, দেন না, দেবেননা। মুখ দেখাবার জন্যে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন না আজও।
তেমনি শ্যামলবাবু জানতেন পুঁজির স্বস্তির বন্ধু ভদ্রবিত্তেরা যাত্রাকে পাত্তা দেয় না।কারণ একটাই। তিনি জানেন রোজ কলকাতার যতমানুষ আনন্দবাজার পড়ে তার থেকে বেশি মানুষ তাঁর যাত্রা দেখে। প্যাণ্ডেলে লাখের কাছাকাছি, কোথাও আরও বেশি মানুষ হয়! নয়ের দশকে দেখেছি মালাবতী বা পোস্তবালার বা সালাবত মাহাতর ঝুমুইর অনুষ্ঠানে লাখো কালো মাথা - শুনলে গল্পকথা মনে হয়।
শেকড়ের শিল্পীর কি বয়ে গেছে এই শেকড় হীন, নির্জীব, দাসানুদাস, বাবুভজা, বড়পুঁজির সরাসরি দালাল দাসদের হাতে থাকা সংবাদমাধ্যমকে রেয়াত করতে। তার একটা ডাকে লাখো মানুষ কাঁদেহাসেগানগায়।
আমরা দুঃখ করি না। কারণ আমরাই যাত্রা আমরাই পালা আমরাই মানুষ। বড়পুঁজির সংবাদমাধ্যম মায়ের ভোগেযাক।
আমরাই বাংলা!
নীচে অরূপদার হৃদয়ে মোচড় দেওয়া লেখাটি---
---
বড় কষ্ট পাচ্ছি। যাত্রা জগতের বিখ্যাত অভিনেতা শ্যামল চক্রবর্তী দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত মারাই গেলেন।এই নিয়ে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে কোনও হেলদোল নেই। ফেসবুকে অনেকগুলো নাটকের দল গ্রুপ আছে যারা অভিনয় করে, নাটক করে, সেখানেও তেমন হেলদোল দেখলাম না। ইনি পেশাদার যাত্রা শিল্পী ছিলেন। টেলিভিশন সিনেমায় অভিনয় করে কিংবা অন্য কোনও পেশায় থেকে শৌখিন পার্টটাইম অভিনেতা ছিলেন না। রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যে অভিনয় করতেন না। এই মুহূর্তে কলকাতার বিখ্যাত অভিনেতা যাঁদের কথায় কথায় আনন্দবাজারে বিশাল সাক্ষাত্কার বেরোয় তাঁদের মোট দর্শকের চেয়ে শ্যামলবাবুর দর্শক অনেক অনেক গুণ বেশি।
এটাই বেহায়া ভদ্রলোক বাঙালিদের চরিত্র। কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকার যে টাকার হরির লুট দিচ্ছে তা কুড়িয়ে পকেট ভরার জন্য পাগলের মতো উঠোনে হুমড়ি খাচ্ছে থিয়েটারওয়ালারা। নাট্য বিশেষজ্ঞরা দৈনিক পত্রিকায় একটু জায়গা পাবার জন্য কিংবা রাশিয়া ফ্রান্স চীনে সেমিনারে ডাক পাবার জন্য পাগলের মতন দরবার করে বেড়াচ্ছে এখানে সেখানে। তারা কখনও কোনওদিন যাত্রা নিয়ে সেমিনার করবে না কিংবা লিখবে না। জানেই না কিছু লিখবে কী?
আমার এই পোস্ট পড়ে নাট্যদরদি কেউ হয়তো রিপ লিখবে কেউ হয়তো তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করবে, আবার কেউ কেউ হয়ত গালাগাল করবে।
তবে বেশির ভাগ এড়িয়ে যাবে যেন চোখেই পড়েনি।
ইংরেজি ভাষা নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ ভাষা কিন্তু বিদেশি আমার মাতৃভাষা নয়। ঠিক তেমনি থিয়েটার অত্যন্ত সমৃদ্ধ মাধ্যম কিন্তু আমার মাতৃভাষা নয়। আমার মাতৃভাষা বাংলা আমার মাতৃভাষা পালাগান।
বিশিষ্ট অভিনেতা শ্যামল চক্রবর্তীর মৃত্যু হয়েছে কিন্তু যাত্রার মৃত্যু হয়নি। পালাগানের মৃত্যু হয়নি। মাটি কখনও মরেনা। মাটির উপর যতই থিয়েটার, কোরিওগ্রাফি, শেক্সপিয়র, ব্রেখটের কংক্রিটের ঢালাই করা হোক না কেন।
আমার এই পোস্ট পড়ে এলিট অ্যাংলিসাইজড ভদ্রলোক জগতের এই অন্যায় অবজ্ঞার জন্য যে দু এক জন কষ্ট পাবেন তারা দয়া করে আরও অনেককে জানানোর জন্য এই পোস্ট কপি পেস্ট করুন। প্লিজ।

No comments: