ব্রিটিশ সংগঠনের দৃষ্টিতে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ
কিছু ঐতিহাসিক বিশ্বাস করতেন, উত্তমাশা অন্তরীপ পেরিয়ে আসার পরই বহু ব্রিটন ওরিয়েন্টের দিকে যাওয়ার সময় একটা অদ্ভুত মনোভাব চারিয়ে যেত যে তারা একটা অদ্ভুত এলাকায় প্রবেশ করছেন। এই মনোভাব ছড়িয়ে যেত ইওরোপিয়দের হাতে চালিত ভারতীয় প্রশাসন চালনায়, এবং প্রভাব পড়ত মেট্রোপলিটনে(at home) ব্রিটিশ সমাজেও।
তিনটি বিষয়ের আলোচনা এই অবস্থা বুঝতে সাহায্য করবে। বোর্ড অব কন্ট্রোল কিন্তু ওয়েলেসলির ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ সংক্রান্ত প্রকল্পটিতে খুব উৎসাহী হয়ে পড়ে। কিছু হাতে গোণা ধর্মযাজক বলেছিল উপনিবেশের পরিবেশে বেশি দিন থাকলে খ্রিষ্টিয় নৈতিকতা হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু সে বক্তব্য খুব বেশি পাত্তা পায় নি। শুধু তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক দর্শন পাড়ানোর যোগ্য মানুষ নেই বলে কোর্ট অব ডিরেক্টর তাদের খরচে মেট্রোপলিটন থেকে একজন স্কটিশ জ্ঞানী জেমস ডুইন্ডল(১৭৪৬-১৮১৫)কে পাঠান। পুর্বের সঙ্গে ব্যবসা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, ডুইন্ডল কিন্তু বিষ্ফোরক বিশেষজ্ঞও ছিলেন এবং ফরসাসীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিষ্ফোরক বিষয়ে শেষতম গবেষণা সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন।
কলেজের শুরুর পর্বে ওয়েলেসলির বিপুল বিনিয়োগ কিন্তু কোম্পানির অংশিদারেরা ভালোভাবে নেয় নি কেননা, কোম্পানির লভ্যাংশ কমায় ততদিনে কোম্পানির অংশিদারদের দেয় লাভের পরিমান, ডিভিডেন্ড কমেছে। কিন্তু ওয়েলেসলি দেশিয় আইরিশ অভিজাতদের সঙ্গে রক্ষণশীল লর্ড ক্যাসেলরে(Castlereagh)র সক্রিয় সমর্থন পেয়েছেন। ক্যাসলরে ১৮০২ সালে বোর্ড অব কন্ট্রোলের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তিনি ওয়েলেসলির বিপ্লব বিরোধী মনোভাবকে মান্যতা দিতেন বলেই এই প্রস্তাবের গুরুত্বটা বুঝেছিলেন। ফলে কোম্পানির উচ্চতম কর্তৃপক্ষ ওয়েলেসলির পাশে দাঁড়ানোয় এই প্রকল্পকে বানচাল করা অংশিদারদের পক্ষে সম্ভব না হলেও, তাদের চাপে কোম্পানি একটা সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়। সিদ্ধান্ত হয় যে ইওরোপিয় কৃষ্টি বিষয়ে শিক্ষা ইংলন্ডেই দিতে হবে বাকিটা ভারতে হোক। কোম্পানির অন্যতম কর্তা ডেভিড স্কটের ভাষায়, ‘the College was sacrificed to the private trade agitation।
এতদ সত্ত্বেও ওয়েলেসলি, যৌথভাবে ভারতীয় এবং ইওরোপিয় শিক্ষকদের দিয়ে পড়ানোর পরিকল্পনায় ডেঁটে থাকলেন। ১৮১৬য় যখন হেলিবেরিতে নতুন শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপিত হল, তখন ব্রিটিশ অর্থনীতিক টমাস ম্যালথাস পড়াতেন; এছাড়াও ভারত থেকে শিক্ষক নিয়ে গিয়ে সেখানে পড়ানো হত। ওয়েলেসলির পরিকল্পনার সুফল ভোগ করে গিয়েছে কোম্পানি। ১৮৩১ সালে কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ থেকে প্রত্যেক বছর বের হওয়া ৪১ জন পড়ুয়া কোম্পানিতে যোগ দিতেন। এরা ভারতে অন্তত দশ থেকে কুড়ি বছর কাটিয়ে মানুষেরা লন্ডনে ফিরিতেন ব্যাঙ্গার্থে ‘নবোব’ উপাধি নিয়ে এবং হয় কোম্পানির উচ্চতম পদে অথবা রাজনীতিতে যোগ দিতেন। কিছু সফল নবোব পার্লামেন্টেও পৌঁছে যেতেন, কিছু মানুষ বিজ্ঞানের সেবক হতেন। এটাও মনে রাখা দরকার, ১৮৩০এর ভারত এবং ব্রিটেনে চলতে থাকা ফোর্ট উইলিয়ামকেন্দ্রিক শিক্ষা কেন্দ্রিক বিতর্কের মধ্যে দিয়ে উঠে এলেন জেমস মিল আর ব্যাবিঙ্কটন মেকলে। ওয়েলেসলির প্রকল্পে তৈরি হল নতুন ধরণের ভদ্রবিত্ত যারা পেশাদার, মেট্রোপলিটন স্বার্থিক যে কোন কাজ সম্পাদনে দক্ষ।
১৮৫৮সালে কোম্পানি আর তার সঙ্গে হেলিবেরির বিলয়ে আমলা তৈরির কারখানার দায়িত্ব দেওয়া হল অক্সফোর্ডকে। ১৮৮৩ দসালে অক্সফোর্ডের আধুনিক ইতিহাস পাঠনের দপ্তর, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউটে যে সংস্কৃত শ্লোকটি খোদিত করে বসানো হয়, সেটিতে স্পষ্টভাবে স্বীকার করা হয় যে ঔপনিবেশিক কাঠামোয় প্রশাসকেরা তৈরি হয়েছেন - This Building, dedicated to eastern sciences, was founded for the use of Aryas (Indians and Englishmen) by excellent and benevolent men desirous of encouraging knowledge. . . . By the favour of God may the learning and literature of India be ever held in honour, and may the mutual friendship of India and England constantly increase।(আর্যত্ব বিষয়ে এটা কপিলের মন্তব্য, অনুবাদকের নয়)
যদি মেনেও নিই, ভারতে কাজ করা ব্রিটিশেরা দুর্বিনীত ছিল। এই তত্ত্ব মেনে নিয়েই বলছি, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বিষয়ে ওঠা বিতর্ক, উপনিবেশ এবং মেট্রোপলিটনে উভয় ক্ষেত্রের শিক্ষানীতি প্রণয়নে বিপুল প্রভাব ফেলেছিল। আমি এখানে পাঠকদের এতদিনের তৈরি করা উল্টো মনোভাবটাও মাথায় রাখতে বলব উপনিবেশে আধুনিকতার তত্ত্ব প্রয়োগের গবেষণাগার ছিল মেট্রোপলিটন – এটা সম্ভব হয়েছিল সেই তত্ত্ব সফলভাবে চর্চিত হওয়া এবং সেটি উপনিবেশে প্রয়োগের সফল প্রক্রিয়া প্রণয়নে।
No comments:
Post a Comment