Friday, March 16, 2018

জাগতিক সম্পত্তি নয় - জ্ঞান, দক্ষতা আর কুশলতাই - সম্পদ স্বচ্ছল পরম্পরার গ্রাম বাংলার অবলম্বন

শূদ্র-্মুসলমান-অন্যান্য কারিগরের ভিত্তি পরিবারের সম্পত্তি নয়, তার কারিগরি সমাজ, তার দক্ষতা, তার গ্রাম সমাজের স্বাধীনতা, তার গ্রাম সমাজের দেওয়া সামাজিক নিরাপত্তা, তার নিজস্ব কাঁচামাল এবং বাজার - যে সমাজকে ঔপনবেশিক বাবু সমাজ ব্রিটিশদের লব্জ ধার করে দলিত, প্রান্তিক, নিপীড়িত বলছে - এবং প্রাণপনে চেষ্টা করেছে কিভাবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিজের মত বড় পুঁজির দাসানুদাস তৈরি করা যায় - যাতে তার দালালি, চাকরি আর নেতৃত্ব বজায় থাকে। কারিগরের জ্ঞান, কারিগরের প্রযুক্তি, কারিগরের দক্ষতা, কারিগরের কুশলতা, কারিগরের বাজারকে সে স্বীকারই করে নি - তাতে কারিগরদের বয়েই গেছে। 
এই ব্যতিক্রমী কারিগরি উৎপাদন ব্যবস্থা জ্ঞান, দক্ষতা আর কুশলতা ভিত্তিক - শ্রম ভিত্তিক নয়। তাই বড় পুঁজির চক্ষুশূল - বাবুদের চক্ষুশূল বলে ভদ্রবিত্তেরও অপছন্দ। 
---
কুলে গোত্রে বিয়ে হওয়াকে ভদ্রজন বড় পুঁজির স্বার্থ অনুসারে রিগ্রেসিভ, জাতব্যবস্থা দেগে দিল, তাতে অন্তত বাংলার কারিগর সমাজের কিছু যায় আসে নি, আজও কারিগর অধিকাংশ নিজেদের পেশার মধ্যেই বিয়ে দেয়। পেটেন্টের জন্যে নয়, দক্ষতা আটকে রাখার জন্যে নয় অথবা সম্পত্তি রাখার জন্যে নয়, দক্ষতা আর জ্ঞানের আদানপ্রদানের জন্যে। 
সঙ্গঠন করতে গিয়ে দেখেছি, একটি কারিগর গ্রামে কারিগরদের পরিবারে পরিবারে নানান ধরণের জ্ঞান, কারিগরি, কুশলতার সূক্ষ্ম-ভিন্নতা থাকে থাকে যা আমরা বাইরে থেকে চট করে আলাদা করতে পারি না। যেমন - প্রত্যেক পট দেখলে বা ছো মুখোশ দেখলে যেন এক মনে হয় - কিন্তু ভেতরে ঢুকলে দ্যাখা যাবে পরিবারে পরিবারে এই কুশলতা আঙ্গিক দক্ষতা কিছুটা হলেও আলাদা। বাইরতের মানুষ, যে নিয়মিত দেখে তার চোখে ধরা পড়বে এটা নেপালদার মুখা, এটা হরিপ্রসাদের মুখা বা এটা রঞ্জিতের পট বা এটা রাণীর প্‌ এটা মধুদার মেল্লি ইত্যাদি। এটা প্রত্যেক কারিগরির জন্যে প্রযোজ্য। এই কাজের একটা বড় অংশ মেয়েরা করেন যাদের চোখের সামনে দ্যাখা যায় না।
কারিগর পরিবারের মেয়েরা বিয়ে হ'য়ে তাদেরই পালটি কারিগর ঘরে যায়। সে যে যৌতুক নিয়ে যায় সেটা অসামান্য - জ্ঞান, কুশলতা আর দক্ষতা। সে আরেকটি আঙ্গিকের কারিগরি, তার দক্ষতা, জ্ঞান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যায়। সেটা সে সেখানে গিয়ে তার জ্ঞান দক্ষতা প্রযুক্তি কারিগরি আঙ্গিক মেলায় - নতুন ধরণের একটা কারিগরির সূক্ষ্মতম পরিবর্তন আসে। 
আইটিসি সোনারবাংলার কাজে বহু ধরণের কারিগর এসেছিলেন। প্রায় ১০ দিন একসঙ্গে কাজ করেছেন। ছো মুখা শিল্পীরা বুঝলেন তারা যে প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে এখন মুখার মেড়ের সজ্জা করছেন সেটা পাল্টাতে পারে এবং আয়াসসাধ্য হিসেবে শোলার ফুল দিয়ে সজ্জা করলে। সেটা হয়ত বিক্রিও হবে ভাল। 
এই জ্ঞান প্রবাহ না থাকলে বড় পুঁজির লাভ। সে অজ্ঞান দায়বোধহীন শ্রমিক পায়। যার জ্ঞান আছে, দক্ষতা আছে, কারিগরি আছে, কাঁচামাল আছে, কারিগরি ভিত্তিক বাজার আছে সে কেন বড় পুঁজির খিদমত খেটে বামপন্থীদের লব্জে সর্বহারা শ্রমিক হতে যাবে? তার বিশাল কারিগরি পরম্পরা আছে, সেটা তার সামাজিক বৌদ্ধিক নিরাপত্তা।
আদতে এইভাবেই কারিগরির বিবর্তন হয়।
---
ভারতের অন্য যায়গার কথা জানি না, বাংলার কারিগরেরা সম্পত্তি আর্থিক স্বচ্ছলতার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন দক্ষতা, জ্ঞান আর কুশলতা আদানপ্রদানে। 
অসাধারণ গবেষক ছো মুখা শিল্পী উদ্ভাবক নেপাল সূত্রধর বলেন আমাদের ওপর বাবা বিশ্বকর্মার অভিশাপ আছে যে আমরা কোন দিন বড়লোক হব না। যতই যাই করি। আমাদের হাতে টাকা থাকবে না। আমাদের কাজ করেই খেতে হবে। 
---
সম্পদ নয় আত্মিক সম্পদে সে অনেক বেশি আগ্রহী। 
ফলে এখানে অর্থনৈতিক বামপন্থা তার নানান আবেদন সত্ত্বেও নাক গলাতে, মূল ধারনাটি বুঝতে ব্যর্থ।

No comments: