Friday, January 19, 2018

সুসঙ্গ(আরাকান) রাজসভায় বিদেশি - দৌলত কাজি, মরদন এবং আলাওল অবলম্বনে

শাহজাহানের রাজত্বের শেষের সময়ে আমলা চন্দ্রভান ব্রাহ্মণ সূত্রে পাওয়া মুঘল দরবারে বিভিন্ন দেশ(বিদেশিদের সে সময় কিন্তু বিলাইতি বলা হত, শুধু ইওরোপিয় নয়) ও জাতির অমাত্য অভিজাতদের হিসেবের সুমারি দেওয়ায় Arjundeb মনে করিয়ে দিলেন আজকের রোহঙ্গা এলাকায় সুসঙ্গে এক সময় বাংলা পড়ানো এবং সাহিত্য চর্চা হত। যেহেতু সেটি রেশম পথের একটা গুরুত্বপূর্ন অংশ ছিল তাই সেখানে বিপুল সংখ্যক বিদেশির আগাগোণা ছিল। ঔরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার তাড়ায় দারাও সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এখানে বাংলা সাহিত্য চর্চাকারীদের মধ্যে দৌলত কাজী অন্যতম। আর ছিলেন আলাওল। তিনি দৌলত কাজী রচিত অসমাপ্ত সতী ময়না-লোর চন্দ্রানী কাব্যটি সমাপ্ত করেন।
দৌলত কাজির সমসাময়িক ছিলেন কবি মরদন। তাঁর লেখায় আরাকানের কাঞ্চি নগরে মুসলিম ও হিন্দু বসতির পরিচয় পাই
ভুবনে বিখ্যাত আছে রোসাঙ্গ নগরী
রাবনের যেহেন কনক লঙ্কাপুরী ॥
সে রাজ্যেত আছে এক কাঞ্চি নামে পুরী
মুমীন মুসলমান বৈসে সে নগরী ॥
আলিম মৌলানা বৈসে কিতাব কারণ
কায়স্থগণ বৈসে সব লেখন পড়ন ॥
আরাকানের রাজধানীতে হাজারো পণ্ডিত ও গুণী ব্যক্তিদের ভিড় ছিল। তাদের মধ্যে ওলামা, সৈয়দ, শেখ প্রভৃতি যারা বিদেশী ছিলেন কিংবা স্বদেশী ছিলেন সবাইকে মুসলিম অমাত্যরা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে রাজ্যের উন্নতি যেমন নিশ্চিত করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে আরাকান রাজসভায় বিদেশী মুসলিম-অমুসলিম আরাকানে একত্রিত হয়ে আরাকানী সমাজ ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন।
কবি আলাওলের পদ্মাবতী থেকে পাচ্ছি।-
নানা দেশী নানা লোক
শুনিয়া রোসাঙ্গ ভোগ
আইসন্ত নৃপ ছায়াতল;
আরবী মিশরী শামী
তুরকী হাবশী রুমী
খোরাসানী উজবেগী সকল॥
লাহরী মুলতানী হিন্দি
কাশ্মীরী দক্ষিণী সিন্ধী
কামরূপী আর বঙ্গদেশী; ভূপালী কুদংসরী
কান্নাই মনল আবারী
আচি কোচী কর্ণাটকবাসী॥
বহু সৈদ শেখজাদা
মোগল পাঠান যোদ্ধা
রাজপুত হিন্দু নানা জাতি;
আভাই বরমা শাম
ত্রিপুরা কুকির নাম
কতেক কহিমু জাতি ভাঁতি॥

No comments: