Wednesday, January 17, 2018

বাংলার কংসবণিক - মেটাল ক্রাফটসম্যান অব ইন্ডিয়া১ - মীরা মুখোপাধ্যায়

বাংলার ধাতু শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতি কংসবণিক। কংস মানে কাঁসা(বেল মেটাল) একটি সংকর ধাতু যেটিতে ৭ ভাগ তামা, ২ ভাগ টিন। বণিকের অর্থ ব্যাপারী। কংসবণিকদের কাজ হল কাঁসার পণ্য কেনা বেচা।
বাংলার যে সব ধাতু কেন্দ্র গিয়েছি তাঁর ছটিতে কংসবণিকেরা শুধু পণ্যগুলিই বিক্রি করে না, উতপাদনও করে থাকে। এই এলাকাগুলি হল খাগড়া, নবদ্বীপ, কলকাতার নতুন বাজার, সিমলা স্ট্রিট, গোয়াবাগান এবং ক্যাওড়াতলা।
এটা ভাবা ঠিক হবে না বৃহত্তর কলকাতার নানান কাঁসার পণ্য উৎপাদন কেন্দ্রগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। কারিগরেরা তাদের বসতি এলাকা থেকে কলকাতায় পরিযায়ী হয়ে এসে সঙ্গে নিয়ে আসা জ্ঞান আর দক্ষতা প্রয়োগ করে প্রত্যেকটি আঙ্গিকের এক একটা চলন্ত জাদুঘর তৈরি করেছে। যেমন ক্যাওড়াতলার কারিগরেরা পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু, তারা তাদের ছেড়ে আসা গ্রাম লোহাজানের আঙ্গিকের মত করে তৈজসপত্রাদি নির্মান করেন আজও।
এই কেন্দ্রগুলির কঙ্গবণিকেরা সাংঠনিকভাবে সুসংহত। তারা তাদের সমাজ আর উৎপাদন নিয়ে গর্বিত।
অন্যন্য উৎপাদন কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ জাতি কিন্তু কংসবণিক নয়, যদিও তাদের উপস্থিতি আমরা লক্ষ্য করি। তাদের প্রভাব নগণ্য। এই অঞ্চলগুলি হল বিষ্ণুপুর, পাত্রসায়র, বাঁকুড়া, কলকাতার কাঁসারিপাড়া, ঘাটাল।
অন্য এলাকায় কংসবণিকেরা কাঁসা নয় পিতলের ব্যবসা করে যা তামা আর দস্তার সঙ্কর ধাতু – এই এলাকাগুলি হল নতুনবাজার, ক্যাওড়াতলা, বাঁশবেড়িয়া শান্তিপুর।
কোথাও কোথাও দ্যাখা যায় কংসবণিকেরা তামা, পিতল আর কাংস সবধরণের ধাতু নিয়েই ব্যবসা করে।

এই বৈচিত্র্য সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি কংসবণিকেরা তাদের প্রাথমিক ব্যবসা কাঁসার উৎপাদন নিয়েই ব্যবসা করা জাত। খাগড়ার কংস কারিগর এবং কংসবণিক উভয়েই পরম্পরার পণ্য উৎপাদন এবং বিক্রি করে থাকে। তাদের কাঁসা সত্যকারের কাঁসা। তারা ধাতুর মণ্ড অবস্থাতেই কঠোরভাবে ৭/২ অনুপাতে তামার সঙ্গে টিন মিশিয়ে কাঁসা তৈরি করে। তারা এর সঙ্গে অন্য কোন ধাতু মেশায় না। খাগড়ার কাঁসা ধাতুর মণ্ড শুধুই হাতুড়ি দিয়ে পেটাই করে পণ্য তৈরি হয়। তাদের পণ্যের শক্তি, তাদের ফিনিশ, তাদের পরম্পরা আদতে খাগড়ার কারিগর আর বণিকদের গর্বের বস্তু। তারা মনে করে তারা নিজেদের জাতিতে বংশপরম্পরায় যে কাজ করে চলেছে সেই দীর্ঘ দিনের দক্ষতা আর জ্ঞান তাদের জাতি থেকে সব থেকে ভাল কারিগর তৈরি করে এসেছে। 

No comments: