Tuesday, January 9, 2018

পরমের সম্মাননা পাওয়াতে কবি গবেষক দার্শনিক সোমব্রতর বন্ধুতা

আপন করেছেন। ভালো বেসেছেন। পরম পত্রিকাতে আমার মতো মানুষের কথালাপ ছেপেছেন। যত্ন করে পরম সংখ্যার রত্নগুলো আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। আমি যে আখড়া যাই, শ্মশানে থাকি, অঘোরী তান্ত্রিক ভৈরবী বাউল ফকির সহজিয়াদের সঙ্গে ওঠাবসা করি, সেই ডকুমেন্টটেশনের চেষ্টাটাকে যাঁরা সম্মান করেন Biswendu Nanda তাঁদের একজন। উৎসাহ পাই তাঁর মরমিয়া কথাবার্তার ভেতরে। আর এই ভদ্রলোকের অবাক করা হাতের তালুর মতো গ্রাম চেনার পথ ও পন্থাতে নতজানু হই। যাঁরা ওঁর সঙ্গে দু দণ্ড কথা বলেছেন তাঁরা জানেন কী অগাধ পড়াশোনা এই মানুষটার। এই মানুষটার প্রাণপ্রিয় পরম পত্রিকা এবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পরিচালিত সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন মেলাতে স্মারক সম্মান লাভ করছে। এই সম্মান ওঁর একার নয়। আমরা যাঁরা লোকায়ত বাংলা নিয়ে কথা বলি তাঁদেরও। ১১ তারিখ রবীন্দ্র - ওকাকুরা মঞ্চে পরম লোকায়ত বাংলার প্রতিনিধিত্ব করছে এর থেকে আনন্দের কী আর হতে পারে।

আমাদের উত্তর
কবি সুফলাংএর আগে বলেছেন সুজলাং, তাই যুক্তি ছাড়াই বাংলার মানুষদের কাঁদতে বিন্দুমাত্র বাধা নেই। আপনার লেখা পড়ে তীব্র আবেগে কাঁদলাম। যে কাজ কিছুদিন আগেও গৌণ ধর্ম বলে শিক্ষিত জগতে দুচ্ছাই হত, তাকে আপনি দার্শনিকভাবে অসাধারণ মমতায়, অসাধারণ শ্রদ্ধায়, অসাধারণ লেখনিতে, অনন্য পরিশ্রমে আমাদের সামনে এনেছেন।আমরা শূদ্র, মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের হাজার হাজার বছরের মেঠো কারিগরি, তার ব্যবসার তত্ত্ব, তার উৎপাদন কাঠামো খুঁজে বেড়াই হেথা হোথা। আপনি খোঁজেন তার অন্তরাত্মা। বাংলার কারিগর, তঁতি আর অভিকর শিল্পীরা যে দর্শনজাত শিল্প আর উৎপাদন তৈরি করেন, সেই দর্শন আপনি কবির কলম আর চোখ দিয়ে খুঁজে বেড়ান আথায় পাথায়। সেই কাজ আমাদের চোখ খুলে দেয়, তীব্রআশ্লেষে ঠেলে দেয় শেকড়ে থাকা নানান দার্শনিক আচারিক তত্ত্ব তথ্য খুঁজে বার করতে এবং সদর্থে আমাদের আন্তরাত্মাকে নতুন করে বাংলার আদিতম, বাংলার মাটি জাত আচার দির্শনে জারিয়ে নিতে।আমরা লেখক নই, বাধ্য হয়ে কলম ধরি আর চাবিটিপি। আপনি মূলত কবি। আমরা কবিতা বুঝি না। আমাদের মত অলেখকদের কেজো জগতকে আপনি ঠেলেদেন কাব্য সুষমাময় সজল বাংলার মায়াময় আঁচলে, যে আঁচলের দর্শন ধরে আজও বাংলার গাঁইয়ারা টিকে থাকেন নানান কর্পোরেট অত্যাচার প্রলোভন আর অভিচারের দিকে পিঠ করে। আপনি যে কথায় আমাদের অভিষেক করালেন তা আপনার মত বিরাট সজল হৃদয় মানুষদেরই পক্ষে করা সম্ভব।এ পত্রিকায় আমার নাম যায় ঠিকই কারণ চার বছর আগে পত্রিকা পরিকল্পনাকালে সম্পাদকমণ্ডলী তৈরির প্রস্তাবে জয়াদিদি বলেছিলেন কাউকে একজন দরকার যাকে পাঠক সরাসরি গালি দিতে পারে। সেই জন্য আমি, অন্য কোন কারণ নয়। এই পত্রিকার সম্পাদক আদতে পাঠকেরাই, তারাই পত্রিকা চালান। চলতে চলতে আর্থিক দুরবস্থায় মাঝে মাঝে হোঁচট খেতে হয়েছে, আবার দাঁড়িয়েছি আপনাদের মত কৃতি মানুষদের বাড়ানো হাত ধরে।
আর যারা এই কথাগুলো পড়ছেন, তাদের অনুরোধ করব পরমের ২৩ তম বাংলার সারস্বত অবদান সংখ্যায় আমাদের দার্শনিক, তাত্ত্বিক সোমব্রতর সাক্ষাৎকারটা দয়া করে পড়ুন। বাংলার ব্যতিক্রমী দার্শনিক-কবি আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবেন। বাংলার কারিগর, তাঁতি এবং অভিকর শিল্পীরা সোমব্রতর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি শত ব্যবস্ততা সত্ত্বেও বাংলার কারিগরদের একটি অনামী পত্রিকাকে সময় দিয়েছেন, অসাধারণ শুদ্ধতা এবং শ্রদ্ধায় তাঁর অধীত বিদ্যা জ্ঞান উন্মোচন করেছেন।
জয় বাংলা।
জয় গুরু।

No comments: