Wednesday, January 24, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - শেকড়ে থেকে মাটির ঘ্রাণ নেওয়ার দুঃসাহস

১৭৫৭র পর বাংলার দেশজ কারু-বস্ত্র-অভিকর শিল্পীদের জীবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মত গুরুত্ব দেওয়ার কাজ কেউ করে নি - সামাজিক গুরুত্ব আর আর্থিক গুরুত্বও। অভিকর শিল্পীরা মাসে ১০০০টাকা ভাতা পাচ্ছেন, তার সঙ্গে নিয়মিত অনুষ্ঠান। ভাবাযায় না। আগের সরকার তাঁদের শুধু পরিচয়পত্র দিতে যেভাবে গড়িমসি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য।

মমতা সরকার যেভাবে শিল্পীদের নানান কাজে তাঁদের উৎপাদন আর শিল্পের চরিত্র বজায় রেখে সরকারের নানান কাজে সামিল করছেন তা উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। জেলায় বিভিন্ন মেলার সংখ্যা এত বেড়েছে যে পরমএর দোকানে পণ্য দেওয়ার মত যোগ্য শিল্পী মিলছে না। গ্রাম বাংলার পরম্পরার উতপাদন-বিতরণের ইতিহাসে বিশ্ববাংলার থেকে বড় ঘটনা ঘটে নি।

কেউ লক্ষ্য করছেন কি না জানি না, গ্রাম বাংলায় সরাসরি এই মানুষদের হাতে সম্পদ জড়ো হচ্ছে শুধু নয় তারা বুঝছেন, সরকার তাঁদের পাশে রয়েছে। এতদিন এই টাকাটা শহরের মানুষই ভোগ করতেন নানান ভাবে এই মানুষদের জন্য কাজের ছুতোয় - ইওরোপ কথিত তথাকথিত ফোক/ট্রাইবাল বা লোকসংস্কৃতির গবেষণা করতে। সেই মধ্যবিত্তীয় লুঠের সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা মমতা সরকার খুব বেশি রাখেননি।

শুধু মাত্র ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে এই কথা বলার আগে দুবার ভাবতাম। ভাবতাম শুধু তোয়াজ করার কাজ করছে। কিন্তু তাঁদের সারাবছর অনুষ্ঠান করতে দিতে হবে - এর থেকে বড় সিদ্ধান্ত কোনো সরকার নেয় নি। এর আগে আমরা বেশ কিছু মেলা করেছি, কিছু কলকাতায় কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে। দেখেছি ছোট উতপাদকেরা নিজেদের জিনিসপত্র বিক্রি করে রোজগার করতেন। কিন্তু অভিকর শিল্পীদের সেই সুযোগ নেই। তাহলে? আমাদের বহু কষ্ট করে টাকা যোগাড় করতে হত তাঁদের দেওয়ার জন্য।

এই ভাবনাটা মমতা করেছেন। সারা বছর সরকারি অনুষ্ঠান এর আগে এনজিওরা নিয়ে চলে যেত - অথচ তাঁরা কোটি কোটি টাকা দান পান। তাঁরা আমলাদের রসেবসে রেখে কাজ তুলতেন। সেই কোম্পানিগুলিকে কাজ থেকে হঠিয়ে দিয়েছেন মমতা। এই কাজ করতে শুধু প্রশাসনিক দক্ষতা, দৃঢতা বা বিশ্বাযোগ্যতা প্রয়োজন হয় তাই নয় প্র্য়োজন হয় মাটির ঘ্রাণ নাকে নেওয়ার দুঃসাসহকে। এই গণতন্ত্রতে মধ্যবিত্তকে চটিয়ে টিকে থাকা যায় না - বিগত ৩৪ বছর তার প্রমান। বামফ্রন্ট বিগত ৩৪ বছরে গ্রামীন মধ্যবিত্তকে তোয়াজ করে বেঁচেছে আর সাধারণদের খুদকুঁড়ো দিয়েছে। সেই কাজের চাল-ফেরতা করে দিলেন মমতা। অসংখ্য কুর্ণিশ।

আপনি যতদিন গ্রামীন মানুষদের পাশে রয়েছেন ততদিন আপনি বাংলার দিদি।

জয় বাংলা!

No comments: