Saturday, January 27, 2018

উপনিবেশ পূর্ব শূদ্র প্রযুক্তি চর্চা - লোহা-ইস্পাত প্রযুক্তি পরম্পরা - লোহার, লোহা কারিগর

দুবছর আগে বোলপুর গিয়েছিলাম - খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি - দাঁড়াবার সময়টুকু নেই।

বোলপুরের দেখলাম লোহারেরা তাঁদের লোহা তৈরি প্রযুক্তিকর্ম নিয়ে বসে রয়েছেন রাস্তার ধারে। ঠিক যেমন করে কয়েক হাজার বছর ধরে পরিযায়ী তাঁরা ভারতের বিভিন্ন গ্রামের বাইরে বসতেন জংছাড়া লোহা পেটানো সরঞ্জাম নিয়ে, গৃহস্থদের নানান দ্রব্য তৈরি করে দিতেন। পেতেন জীবন চালাবার মত নানান বিনিময় দ্রব্য। সে গ্রামের কাজ শেষ হলে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতেন অন্য গ্রামে। গৃহস্থকে এই সেবা কত বছর ধরে তাঁরা দিয়ে আসছেন কেউ জানে না। পশ্চিম এক ধরণের প্রগতির কথা বলেছে, লোহা যুগ, তামা যুগ ইত্যাদি। আমাদের সে সব নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

আজ কয়েক হাজার বছরের প্রযুক্তিবিদদের বাংলার এই আন্তর্জাতিক শহরে দেখে মনে হল এটাই ভারতবর্ষ। হাজার হাজার বছর ধরে হাজারো খুনে, লুঠেরা, অভিযাত্রী এদেশে এসেছেন এদেশের সম্পদের টানে, কেউ থেকেছে নিজের দেশ হিসেবে, কেউবা চলে গেছে, কেউবা থকে গিয়েও লুঠেরাদের মত চরিত্র প্রকাশ করেছে। লুঠের জন্য ব্রিটিশরা ভারতকে নিজেদের মত করে বদলাতে চেয়েছে। কিছুটা যে বদল হয় নি তাও বলা যাবে না। বহু জ্ঞানী মহাজন সাধারণ মানুষকে পাল্টাতে চেয়েছেন তাঁদের ধারণায়। তাঁরাও কিছুটা সফল।

কিন্তু সাধারণে এই সব অসাধারণ জ্ঞানী, প্রযুক্তি বাহক, দক্ষতা সম্বল করে নিজেদের মত করে বয়ে নিয়ে চলেছেন গ্রামীন শূদ্র ভারতে বিকশিত আত্মাকে, ভারতে বিকশিত অকেন্দ্রিভূত দর্শনকে, গ্রাম ভারতের অসামান্য প্রযুক্তিকে। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গত করেন গ্রামে থাকা, শহরে থাকা গ্রাম থেকে নানা কারণে উচ্ছেদ হয়ে আসা গ্রামীনেরা - যারা এই মানুষদের সেবা নেন, বিপুল বড় কর্পোরেটদের এই ধরণের উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও, তাঁরা তাঁদের চাহিদা কেনেন এই পরম্পরার প্রযুক্তি বাহকদের থেকে। আজও তাঁরা বেঁচে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। সমাজে বাস করা ৬% ভদ্রবিত্তকে এড়িয়ে এই আবহমানকালের বাজারের রেশে খুঁজে পাই ধরতে পারি আমার মানুষকে, আমার স্বজনকে।

এত দুর্বিপাক, এত বিভীষিকা, এত জ্ঞানচুরি, জ্ঞানহত্যার পরেও এই জ্ঞানী গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ কয়েক হাজার বছরের ভারতীয় পরম্পরা বয়ে নিয়ে চলেন অবহেলে, উন্নয়নের সমস্ত হাতছানি ব্যর্থ করে, ইওরোপিয় জীবনযাত্রা দুচ্ছাই করে, আধুনিকপ্রযুক্তির দিকে না তাকিয়েই।











তাঁদের সঙ্গে আজও জড়িয়ে রয়েছেন গ্রামের সাধারণ, ভারতের শেকড়ে দাঁড়িয়ে থেকে দৃঢভাবে। আর শহুরে গবেষকদের লুপ্ত/লুপ্তপ্রায় প্রযুক্তি/জীবনযাত্রা শব্দবন্ধ ব্যবহারের মুখে নুড়ো ঘষে।

এই আমার ভারত। যে ইন্ডিয়া থেকে বহু দূরে কিন্তু আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে বাস করে।

সেই দেশ, সেই মাটি, সেই মানুষকে প্রণাম।

জয় গ্রামীন ভারত!

No comments: