Thursday, January 25, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৩ - পশ্চিমি বিজ্ঞান কারে কয় - ক্লদ আলভারেজ

পশ্চিমি বিজ্ঞান বিশ্বজুড়ে যে বিপুল বিশাল ভৌগোলিক এলাকা দখল করার চেষ্টা করেছিল, বাস্তবিকভাবে সেই লক্ষ্যের আশেপাশে পৌঁছতে পারে নি। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দর্শন কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে সমাজে ছড়িয়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ বৌদ্ধমতের কথা বলতে পারি। এটির সঙ্গে পশ্চিমি বিজ্ঞানের কার্যকারণ সম্পর্ক(causation) যুক্ত আছে, ভারতের মাটিতে তার জন্ম, সেখান থেকে সে সারা সভ্যতায় ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানের মত সমাজে সে কয়েক শতাব্দ ধরে কাজ করে চলেছে। সমাজের চেহারা কি হওয়া উচিৎ এবং রাষ্ট্র আর সংঘের মধ্যে কি সম্পর্ক হবে, সেই বৈপ্লবিক ধারণা সম্বল করে বৌদ্ধমত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সমাজগুলিকে বৌদ্ধিকভাবে প্লাবিত করে দিয়েছিল। বৌদ্ধমতের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের যদি তুলনা করি, তাহলে বলতে হবে এটি অবশ্যই চিত্তাকর্ষক, কিন্তু খুব বেশি প্রভাবী নয়। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে আধুনিক বিজ্ঞানের মত বৌদ্ধমত হিংসার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে হয় নি।
স্বতন্ত্র মানবিক উদ্যম হিসেবে আধুনিক বিজ্ঞানের আদত স্ব-উপলব্ধি পশ্চিমি সমাজেই ২০০ বছরের বেশি পুরনো নয়। বৈজ্ঞানিক নামক শব্দটি(ধরে নিন শিল্পী শব্দের তুলনায়) প্রথম উচ্চারণ করেন ১৮৩৩ সালে উইলিয়ম হোয়াটওয়েল ব্রিটিশ এসোসিয়েশন ফর এডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের বৈঠকে। এই শব্দটিকে ভক্তিভরে তার উত্তরাধিকারীরা ব্যবহার করতে শুরু করেন এই(একবিংশ) শতাব্দের প্রথম ২৫ বছর থেকে।
অস্বীকার করার উপায় নেই বিশ্বের জনগণ আধুনিকতায় বিপুলভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। কঠোর বাস্তব। ঠিক যেভাবে তারা উন্নয়ন শব্দেও বিপুল প্রভাবে প্রতারিত হয়েছেন। আজ আমরা যেমন আমাদের চারপাশে উন্নয়নের বদবু পাচ্ছি, ঠিক তেমনি একবিংশ শতকের শুরুর তিন দশকের মধ্যেই আধুনিক বিজ্ঞান তার ‘সুগন্ধ’ ছড়াতে শুরু করে দিয়েছিল। এবং আজ উন্নয়নের মৃত্যুগাথা নিয়ে যে বক্তব্য বলা হয়, সেই বক্তব্যকে দ্বিধাহীনভাবে পশ্চিমি বিজ্ঞানের সম্বন্ধে বলা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায়।

বিজ্ঞান এবং উন্নয়ন – একটি জন্মগত সম্পর্ক
আমাদের সময়ের কল্পনার ওপর বিজ্ঞানের এই প্রভাবের কারণটা কি? একটা গুরুত্বপূর্ণ চলক তো হল বিজ্ঞান ও উন্নয়নের মধ্যেকার সম্পর্ক। তাদের দুজনকে আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করলে ভুল হবে এবং বোঝাও যাবে না। তিরিশ বছর আগের ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতি এ বিষয়ে তাদের চিন্তা পরিষ্কার করে দিয়েছে – “মানুষের নিজস্ব উদ্যমের পাশাপাশি, জাতীয় সমৃদ্ধির চাবিকাঠিটি লুকিয়ে আছে আধুনিক সময়ের তিনিটি গুরুত্বপূর্ণ চলক, প্রযুক্তি, কাঁচামাল এবং পুঁজির  পারস্পরিক মিলমিশে, যার মধ্যে প্রথমটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ - নতুন প্রযুক্তিগত বৈজ্ঞানিক কারিগরি উৎপাদনের উপকরণ(কাঁচামাল) এবং পুঁজির ঘাটতি মেটাতে পারে”(The key to national prosperity, apart from the spirit of the people, lies, in the modern age, in the effective combination of three factors, technology, raw materials and capital, of which the first is perhaps the most important, since the creation and adoption of new scientific techniques can in fact make up for a deficiency in national resources and reduce the demands on capital.)
আমরা মোটামুটি জেনে গিয়েছি যে আধুনিক বিজ্ঞানের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখার সর্বশেষ হাতিয়ার হল উন্নয়নের ধারণা। বিজ্ঞানের সঙ্গে জাতিবাদিতা, লিঙ্গবৈষম্য, সাম্রাজ্যবাদীতা, উপনিবেশিকতার মত লুঠেরা চরিত্র জোড়ার আগে, এনলাইটমেন্ট আর millennial claimsএর অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক ছিল। আজ উন্নয়নের সঙ্গে পশ্চিমি বিজ্ঞান সমার্থক হয়ে গিয়েছে এবং উনয়নের ভাবনাটার সঙ্গে আগে উল্লিখিত লুঠেরা চরিত্রগুলি লুকিয়ে রয়েছে।
উলফগাং শ্যাকস সম্পাদিত দ্য ডেভেলাপমেন্ট ডিক্সনারি, আ গাইড টু নলেজ এজ পাওয়ার থেকে

(ক্রমশঃ)

No comments: