Friday, September 8, 2017

পলাশীপূর্ব বাংলা১ - কৃষি ও শিল্প

যদুনাথ সরকার ইন্ডিয়া অব আওরঙ্গজেবে সুজন রায় ভাণ্ডারীর খুলাসাত-উৎ-তাওয়ারিখ গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। সুজন বাংলার সমতলভূমির কথা বলছেন চট্টগ্রাম থেকে রাজমহলের তেলিয়াগড়ি পর্যন্ত চারশ ক্রোশ লম্বা, উত্তরে পর্বত থেকে দক্ষিণে হুগলির মন্দারণ পর্যন্ত দুশ ক্রোশ চওড়া। যদুনাথ সরকারের ইন্ডিয়া অব আওরঙ্গজেবেই রায় ছত্রমন চাহার গুলশনের অনুবাদে দেখছি বাংলার জরিপ করা জমির পরিমাণ দিয়েছেন ৩৩৪৭৭৫ বিঘা। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ১৭৫৮র এনুয়্যাল রেজিস্টারে এবং রবার্ট ওরমে(আ হিস্ট্রি অব মিলিটারি ট্রাঞ্জাকশান ইন ইন্দোস্তান) বা আলেকজান্দার ডাও(ইন্দোস্তান) বাংলার শষ্যশ্যালিমার দাদ দিচ্ছেন মে থেকে আগস্টের বর্ষার জলে ভেসে আসা পলিকে।
বাংলার প্রধান ফসল ধান। এক ফার্দিংএ দুপাউন্ড ধান পাওয়া যায়। অল্প আয়াসে যে কোন ফলস ফলে। সর্বত্র আখের চাষ হয়। গরু মোষ প্রচুর – কম দুধ দেয়, কিন্তু সংখ্যায় এত বেশি যে পুষিয়ে যায়। মাছ প্রচুর। প্রচুর লবণ তৈরি হয়। অবসর সময়ে চাষীরা রেশম ও কার্পাস বোনে। বাংলায় সব থেকে বেশি কাপড় তৈরি হয়। কাঁচা রেশম আর কাপড় ভারতের বিভিন্ন স্থানে আর ইওরোপে চালান যায়। এছাড়াও চাল, সুপারি, আদা, লম্বা লঙ্কা, হলুদ অন্যান্য ভেষজ ও কৃষিজাত সামগ্রীও রপ্তানি করে।
বাংলার সম্পদ কৃষি। ডাও বলছেন প্রকৃতি যেন নিজের হাতে বাংলাকে কৃষির জন্য তৈরি করেছে। বাংলায় এত জাতের ধান উৎপন্ন হয় যে প্রতিটি জাতের একটা করে চালের কণাও যদি ভাণ্ডে রাখা যায় তাহলে ভাণ্ডটি পূরণ হয়ে যায়। বাংলার কোন কোন জমিতে তিনিটি করে চাষ হত। ওলান্দাজ স্ট্যাভোরিনাস বলছেন প্রচুর গম চাষ হত এবং সেটা বাটাভিয়ায় চালান যেত।
কোম্পানির প্রথম সার্ভেয়ার রেনেল জার্নাল-এ বিভিন্ন জেলার চাষের খবর আছে। রঙ্গপুরে ভাল চাষ হয় – আখ, গম, তামাক প্রধান। ময়মনসিংহের বাগানবাড়ি ও চিলিমারির মধ্যে ব্রহ্মপুরের পশ্চিম তীরের সমভূমিতে ধানের ক্ষেত দেখেছিলেন। বাগানবাড়ি থেকে মোবাগঞ্জের ব্রহপুত্রের দুই পাড়ে ধানের ক্ষেত আর আলে সুপুরি গাছ। উত্তরবঙ্গের বাহারবন্দে ঐ একই দৃশ্য – ক্ষেত আর সুপুরির বাগান। রিয়াজ-উস-সালাতিন বলছে মাহামুদাবাদ সরকারে লঙ্কার চাষ হত। রংপুর বিহারের পূর্ণিয়ার মাঝে গম আর আফিমের চাষ হত। বারাসাত থেকে যশোহরের উন্মুক্ত প্রান্তরে ধান, কলাই, মুগ, মসুর, মটর ইত্যাদি ডাল চাষ হত। কলকাতা থেকে হাজিগঞ্জ রাস্তাটা ধানের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। জলঙ্গীর পাঁচ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে মহেশপুন্দা নালার আশেপাশে ধান আর তুলার বিপুল চাষ হত।
(ক্রমশঃ)

No comments: